নতুন বাংলাদেশের জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি
Published: 25th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বিচার, সংস্কার এবং নতুন বাংলাদেশের জন্য, নতুন সংবিধানের জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। সেই নতুন সংবিধানে আপনার-আমার অধিকারের কথা থাকবে। সিলেটের মানুষের মর্যাদার কথা থাকবে।’
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনসিপির পথসভায় নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। এর আগে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে চৌহাট্টা এলাকা থেকে এনসিপির নেতা–কর্মীরা পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে পথসভা শুরু হয়।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘যে দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছে, আপনার-আমার দায়িত্ব হচ্ছে সেই বাংলাদেশের জন্য কাজ করা। ১৭ জনেরও অধিক শহীদ রয়েছে এই সিলেট অঞ্চলে ও সিলেট জেলায়। আমরা সেই সব শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে আজকে সিলেটে এসেছি।’
নাহিদ ইসলাম তাঁর বক্তব্যে সিলেটের প্রবাসীদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। এ সময় তিনি সিলেট এনসিপির অন্যতম দুর্গ হবে বলেও মন্তব্য করেন।
সিলেটকে তেল, গ্যাস, খনিজ এবং পাথর সম্পদে সমৃদ্ধ উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘এই সিলেটকে আধুনিক শিল্পোন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিলেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে।’ তিনি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায়ে ঢাকার সমাবেশে সবাইকে অংশগ্রহণের জন্যও আহ্বান জানান।
ইতিহাস-ঐতিহ্যে সিলেটকে অনন্য জনপদ হিসেবে আখ্যায়িত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সিলেট কেবল প্রশাসনিক জেলা নয়, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির আলোকে আমাদের সিলেটকে দেখতে হবে। যুগ যুগ ধরেই সিলেট বাংলাদেশের ইতিহাসকে ধারণ করে আছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানে সিলেট লড়াই করেছে বুক চিতিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। এ দেশের জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে সিলেট ছিল অগ্রগামী।’
‘আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এনসিপি উঠে এসেছে’পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এনসিপি কোনো চাঁদাবাজের দল নয়। এনসিপি কোনো টেন্ডারবাজের দল নয়। এনসিপি উঠে এসেছে সংকট থেকে। সমস্যা সমাধান করে এনসিপি উঠে এসেছে। ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করে এনসিপি উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এনসিপি উঠে এসেছে। আপনারা এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করুন। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, পরবর্তী বাংলাদেশ জনগণের বাংলাদেশ করার জন্য।’
নতুনভাবে দেশে আবার ‘মুজিববাদের পাহারাদার’ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘এত দিন পর্যন্ত আমাদের দেশটা হয়েছে ধনিক শ্রেণির। আমাদের দেশটা হয়েছে বসুন্ধরার, আমাদের দেশটা হয়েছে প্রশাসনের, আমাদের দেশটা হয়েছে আর্মিদের। আমাদের দেশটা জনগণের হয়ে ওঠে নাই। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এনসিপির নেতৃত্বে ক্ষমতা জনতার হাতেই আমরা ফিরিয়ে দেব।’
পথসভায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের অনেকেই বলছে, আমরা অ্যান্টি-বিএনপি পলিটিকস করি। আমরা বিএনপির বিরোধী নই, আমরা খালেদা জিয়ার বিরোধী নই, আমরা তারেক জিয়ার বিরোধী নই, আমরা জিয়াউর রহমানের বিরোধী নই। তবে বাংলাদেশে আমরা চাঁদাবাজদের ঠাঁই দেব না, ঠাঁই দেব না। বাংলাদেশে আমরা কোনো সিন্ডিকেট ঠাঁই দেব না, ঠাঁই দেব না। বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসীদের আমরা ঠাঁই দেব না।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘আগামীতে যদি ঐক্য হয়। আগামীতে যারা আমাদের সহযোদ্ধা হবে তাদের একটি শর্ত মেনে আসতে হবে। বাংলাদেশে চাঁদাবাজি করা যাবে না, বাংলাদেশে সন্ত্রাস করা যাবে না, বাংলাদেশে সিন্ডিকেট করা যাবে না, বাংলাদেশে জনগণের রাজনীতি করতে হবে।’
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পথসভা সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব ও এহতেশাম হক, এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল হুদা জুনেদ, সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন শাহান প্রমুখ।
কর্মসূচিতে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার, যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশ এবং জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকেলে এনসিপির নেতারা সুনামগঞ্জে পদযাত্রা ও সভায় অংশ নেন। সেখান থেকে সিলেটে ফেরার পথে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আসাদুল্লাহ আল গালিব।
আজ রাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম দ শ র জন জনগণ র র জন য স ল টক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব