‘হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ৯০ শতাংশই জানেন না সংক্রমণের কথা’
Published: 28th, July 2025 GMT
ছোট্ট একটি ভাইরাস, চোখে দেখা যায় না, বহুদিন পর্যন্ত কোনো উপসর্গও দেখা দেয় না। কিন্তু একসময় তা মানুষের লিভারকে নিঃশব্দে নিঃশেষ করে দেয়। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস এমনই ভয়ানক দুটি সংক্রমণ, যা বাংলাদেশে প্রতিদিন মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর ৯০ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিই জানেন না সংক্রমণের তথ্য। অথচ এই সংক্রমণ প্রতিরোধযোগ্য, এমনকি নিরাময়যোগ্যও।
প্রতি বছর ২০ হাজার প্রাণহানি
ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, হেপাটাইটিসের কারণে দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া, লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর পেছনে ৬০–৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী এই ভাইরাস। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ৯০ শতাংশ আক্রান্তই জানেন না যে তারা সংক্রমিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মারা যাচ্ছেন হেপাটাইটিসে। এই হিসাব বাংলাদেশেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, প্রতিরোধ থেমে আছে
দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত, যা সংখ্যায় প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭ লাখ, নারী ২৮ লাখ এবং শিশু প্রায় ৪ লাখ। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আলাদা করে নির্ধারণ করা কঠিন হলেও, এ ভাইরাস লিভার সিরোসিসের ৩০ শতাংশ এবং লিভার ক্যান্সারের ১৭ শতাংশের জন্য দায়ী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়ালাইসিস গ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের হার ১০-১৫ শতাংশ, যেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি ১ শতাংশেরও কম।
নবজাতকদের জন্য বার্থডোজ ঐচ্ছিক
শিশুদের জন্য টিকাদান কর্মসূচিতে হেপাটাইটিস বি টিকা থাকলেও জন্মের ১২ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া বার্থডোজ এখনো বাধ্যতামূলক নয়। অথচ এই সময়েই প্রতিরোধমূলক টিকা কার্যকরভাবে শিশুর শরীরে ভাইরাস রোধে কাজ করতে পারে।
ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, “ইপিআই শিডিউলে যদি বার্থডোজকে বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে।”
শুধু শহরে চিকিৎসা, গ্রামে অন্ধকার
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণ মোকাবিলায় চিকিৎসা ও পরীক্ষার সুবিধা শহরকেন্দ্রিক। অধিকাংশ উপজেলা বা গ্রামাঞ্চলে এখনো হেপাটাইটিস সচেতনতামূলক কার্যক্রম খুব সীমিত। অথচ দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে।
চিকিৎসা আছে, খরচ আকাশ ছোঁয়া
হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের জন্য বাংলাদেশেই কার্যকর ওষুধ তৈরি হচ্ছে। হেপাটাইটিস বি’র ক্ষেত্রেও টিকা সহজলভ্য। কিন্তু সমস্যা হলো—চিকিৎসার খরচ এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
প্রায় ৫০ শতাংশ রোগী চিকিৎসা শুরুর পর আর চালিয়ে যেতে পারেন না খরচের কারণে।
ভুল ধারণাই বড় বিপদ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস নিয়ে সমাজে এখনো কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা প্রচুর। অনেকে মনে করেন একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়ায় সংক্রমণ হয়। আবার অনেক কর্মক্ষেত্রে হেপাটাইটিস আক্রান্তদের প্রতি রয়েছে বৈষম্য। অথচ এসব ধারণা বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন।
অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা.
সমাধানের পথ
বিশেষজ্ঞরা হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন:
নবজাতকদের জন্য জন্মের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ‘বার্থডোজ’ বাধ্যতামূলক করা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরীক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা। সরকারি হাসপাতালে হেপাটাইটিস ক্লিনিক চালু করা। গরিব ও মধ্যবিত্তের জন্য চিকিৎসা ব্যয়ে ভর্তুকি ও সহায়তা তহবিল গঠন করা। গণমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা প্রচার। কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য রোধে নীতিমালা প্রণয়ন।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ
সোমবার ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আসুন রুখে দিই: সঠিক তথ্য জানুন, পদক্ষেপ নিন’। বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এখনো অনেকটা পথ বাকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস শুধু লিভারের রোগ নয়, এটি জনস্বাস্থ্যের এক নীরব সংকট। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এই রোগ হবে আরও ভয়াবহ। এখনো সময় আছে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও ব্যক্তিগত সচেতনতা মিলেই পারে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে।
ঢাকা/এএএম/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ প ট ইট স ব হ প ট ইট স স স ক রমণ র জন য ম লক ক
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী