ছাত্ররাজনীতির পুনর্জাগরণ নাকি আবার আশার গুড়ে বালি
Published: 29th, July 2025 GMT
১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু) তার ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা দাবি, ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থান কিংবা নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলন—প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রামে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে।
দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ডাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ২৯ জুলাই ঘোষণা করা হবে এবং ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সেই অনুযায়ী ঢাবি প্রশাসন বেশ কিছু প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে, যেমন গঠনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন, আচরণবিধি ঠিক করা এবং নিরাপত্তাব্যবস্থার দিকেও নজর দেওয়া।
ইতিমধ্যে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি সাত সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধি রয়েছেন। তবে অতীতে এ রকম উদ্যোগ অনেকবার দেখা গেলেও নির্বাচন শেষ পর্যন্ত আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তাই এখনো অনেক শিক্ষার্থীর মনে প্রশ্ন, এবার কি সত্যিই নির্বাচন হবে, নাকি আগের মতোই আশার বুদ্বুদ মিলিয়ে যাবে?
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সরকারগুলোর মধ্যে একধরনের অনীহা লক্ষ করা গেছে, যার ফলে ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১৯ বার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৭ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৯৯১ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচন একেবারে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে হাইকোর্টের রায়ের পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের কারণে নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে; অর্থাৎ একানব্বই–পরবর্তী সময়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরে এলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতন্ত্রচর্চার গলা চেপে ধরা হয়।
বারবার থমকে যায় ডাকসু নির্বাচনপর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ১৯৯০ সালের পর, ১৯৯১ সালের ১৮ জুন ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময় সহিংসতার কারণে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু ছাত্রলীগের বিরোধিতার কারণে নির্বাচন হয়নি।
১৯৯৬ সালে অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী উপাচার্য হওয়ার পর একাধিকবার ডাকসু নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
১৯৯৮ সালে ডাকসু কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল; কিন্তু সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। মাঝেমধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন এবং সিনেটে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও এসেছে। তবে তাতে কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
২০০৫ সালে ডাকসু নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করলেও, ছাত্রলীগের বিরোধিতার কারণে নির্বাচনটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই সময় ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করলেও, ছাত্রলীগের প্রতিরোধের কারণে তাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়নি।
এরপর ২০১২ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, ধর্মঘট, কালো পতাকা মিছিল এবং ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনের
দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ তৈরি করা হয় এবং লাগাতার আন্দোলনও চলে বেশ কিছুদিন। তবে নির্বাচনের দাবি উঠলেও তা খুব জোরালো হয়নি।
এর উত্তর হলো, ঐতিহাসিকভাবে ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে থেকে প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। যেমন ১৯৭২ সালে ছাত্র ইউনিয়ন, জিয়া ও এরশাদের শাসনকালে জাসদ/ বাসদ ছাত্রলীগের প্যানেল কয়েকবার বিজয়ী হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলও বিজয়ী হয়েছে।
এটি স্পষ্ট যে ক্ষমতায় থাকা দলের বিপরীত ছাত্রসংগঠনগুলো ডাকসু নির্বাচনে ভালো ফল করেছে। ফলে যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা কখনোই ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী হয়নি। তারা ধারণা করেছে যে ডাকসু নির্বাচন হলে তাদের বিপরীত দলের ছাত্রসংগঠন থেকে ভিপি এবং জিএস নির্বাচিত হতে পারে। এ কারণে ক্ষমতাসীন দল ডাকসু নির্বাচন এড়িয়ে চলতে চেয়েছে।
এবারও ডাকসু ঘিরে পুরোনো ‘ষড়যন্ত্র’এবারের ডাকসু নির্বাচন ঘিরেও একধরনের পুরোনো ‘ষড়যন্ত্রের’ আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিগত এপ্রিল ও জুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন, টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকায় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটানোর মাধ্যমে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষার্থী সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এবং তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রস্তুতি বানচাল করতে কিছু সংগঠন এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। শুধু ককটেল বিস্ফোরণই নয়, টিএসসিতে ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কর্মসূচিতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, অতীতে যেভাবে ডাকসু নির্বাচনের সময় একাধিকবার ককটেল বিস্ফোরণ, অরাজকতা এবং সংঘাতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, এবারও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ডাকসু বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রয়োজন সংস্কারসাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ডাকসু ঘিরে এসব সহিংসতা ও ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়োজন ডাকসুর সংস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন তাই ডাকসুকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশ করেছে।
সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংস্কার প্রস্তাব করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তারা সর্বমোট ৩৭৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোটারদের বয়সসীমা তুলে দেওয়া এবং সভাপতি পদে সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচনের আয়োজন।
এ ছাড়া নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ সৃষ্টি, নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপহীনতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন স্বাধীন সিন্ডিকেট গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। ছাত্রদলের মতে, এসব সংস্কার ছাড়া ডাকসু প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক হবে না।
ছাত্র ইউনিয়নও ডাকসুতে কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য ১২১টি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদে সরাসরি ভোটের দাবি জানিয়েছে এবং একই সঙ্গে বর্তমান সভাপতি পদে একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতা খর্ব করে কার্যকর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চায়।
এ ছাড়া সংবিধান সংশোধন, নতুন সম্পাদক পদ সংযোজন এবং কার্যনির্বাহী পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবিও রয়েছে তাদের প্রস্তাবে। ছাত্র ইউনিয়নের দাবি, এই সংস্কারগুলো ডাকসুকে একটি সক্রিয় ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষার্থী সংগঠনে রূপান্তর করবে।
ছাত্রশিবিরের সংস্কার প্রস্তাবগুলো মূলত সভাপতির ক্ষমতা কমিয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদের হাতে মূল দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে। তারা চায়, সভাপতির পদটি আলংকারিক রাখা হোক।
প্রস্তাবে আরও রয়েছে, ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক’ পদের নাম পরিবর্তন করে ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক’ করা, কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক পদ দুটি ভাগ করে আলাদা করা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদের একত্রীকরণ এবং নতুনভাবে ‘নারী ও সমতাবিষয়ক’ ও ‘ধর্ম ও সম্প্রীতিবিষয়ক সম্পাদক’ পদ সংযোজন। শিবির মনে করে, এসব পরিবর্তনে ডাকসু একটি কার্যকর ও শক্তিশালী ছাত্রসংগঠনে রূপ নেবে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর তৎপরতাডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। লক্ষ্য তাদের একটাই, ভোটারদের মন জয় করা।
ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রদল বিগত ১৬ বছর নানা নির্যাতনের শিকার হয়ছে। ফলে তারা মনে করছে, অনেক শিক্ষার্থীর মনে তাদের জন্য একধরনের সহানুভূতি তৈরি হয়েছে। ছাত্রদল সেটা কাজে লাগিয়ে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সহায়তা দেওয়া, পাখির বাসা তৈরি, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন কিংবা ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়—এই সবকিছু মিলিয়ে তারা একটা ভালো ইমেজ তৈরি করার চেষ্টা করছে। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা নির্বাচনে তাদের বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরও বসে নেই। তারা প্রতিটি হলে ব্যাপক ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যার উদ্দেশ্য হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। তারা মেডিকেল কিট দিচ্ছে, পানির পিউরিফায়ার বসাচ্ছে, আরও নানা রকম ছাত্রকল্যাণমূলক কাজ করছে। এসব দেখে অনেক ছাত্রই ইতিবাচকভাবে ভাবছেন আর সেখান থেকেই গড়ে উঠতে পারে তাদের ভোটব্যাংক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐতিহাসিকভাবেই বামপন্থী সংগঠনগুলো শক্তিশালী। তাদের মধ্যে অনেক নেতার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও এখনো রয়েছে, যা নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে।
অপর দিকে এনসিপির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) মনে করছে, সাম্প্রতিক গণ–আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে থাকার কারণে তারা এবার ভালো কিছু করতে পারে। তাদের অনেক নেতাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ। যেসব শিক্ষার্থী কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন, তাঁরা যদি বাগছাসের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন, তাহলে তা একটি শক্তিশালী ভোটব্যাংক হিসেবে কাজ করবে।
সম্ভাব্য তিনটি চিত্রঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের ঘোষিত সময়সীমা আগামী সেপ্টেম্বর, নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এই ঘোষণার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যৎ রাজনীতির সম্ভাব্য তিনটি চিত্র।
প্রথম চিত্রটি অত্যন্ত পরিচিত। অতীতেও দেখা গেছে, কোনো একটি প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের আপত্তি বা অজুহাতের কারণে নির্বাচন পিছিয়ে গেছে। এবারও যদি ‘সব সংস্কার বাস্তবায়িত হয়নি’ কিংবা ‘এই মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত নয়’, এমন কথা বলে নির্বাচন স্থগিত করার চেষ্টা করা হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
দ্বিতীয় দৃশ্যপটটি আরও আশঙ্কার। ডাকসু নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে টানাপোড়েন ও সহিংসতা তৈরি হতে পারে, যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।
নির্বাচনটি যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, যেখানে সব পক্ষ ফলাফল মেনে নেবে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকবে। এমনটা হলে এটি শুধু ডাকসুর পুনর্জাগরণ নয়; বরং দেশের গণতন্ত্রের জন্য এক নতুন অধ্যায় সূচনার মাইলফলক হতে পারে।
এই তিন সম্ভাবনার কোনটি বাস্তবে রূপ নেবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু যদি এই নির্বাচনে অস্থিরতা বা প্রহসনের জন্ম হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই—একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন যেখানে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না, সেখানে জাতীয় পর্যায়ে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সরকার কতটা প্রস্তুত?
ডাকসু নির্বাচন তাই শুধু ছাত্ররাজনীতির নয়, হয়ে উঠতে পারে জাতীয় রাজনীতির একটি বড় ‘রেফারেন্ডাম’ বা নির্ধারক ঘটনা।
সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মাদ ঈসা ইবন বেলাল গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স ক র প রস ত ব গণত ন ত র ক স গঠনগ ল র জন ত র প রস ত ত ছ ত রদল র জন য ব ষয়ক স গঠন ক ষমত হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএলে বিদেশি দল, এনসিএলে বিদেশি ক্রিকেটার
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন আজকের নয়। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ যে মানের হয়, যেভাবে আয়োজন হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে হরহামেশা। অতীতে সমালোচনার পর কিছুটা মান বেড়েছে। কিন্তু তারপরও ‘আপ টু মার্ক’ হয়নি।
বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দিব্যি পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা যখন জাতীয় দলে এসে ধুকতে থাকেন তখন তারতম্য প্রকটভাবে ফুটে উঠে। এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসতে চায় বিসিবি। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে যুক্ত করতে চায় বিদেশি দল।
বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
তিন সপ্তাহের জন্য আসছেন উড, মনোবিদ স্কট
সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার বেলায়েত হোসেন মারা গেছেন
বিসিএল শুরু থেকে ছিল ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতা। ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন, প্রাইম ব্যাংক সাউথ জোন, ইসলামী ব্যাংক ইষ্ট জোন ও বিসিবি নর্থ জোন নামে চারটি দল শুরুর কয়েক বছর বিসিএলে অংশ নিয়েছে। পেশাদারিত্বের ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তিনটি ফ্রাঞ্চাইজি ধীরে ধীরে সরে যায়। পরবর্তীতে বিসিবি চারটি দলই নিজস্ব খরচে পরিচালনা করে বিসিএল চালু রাখে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতার অভাব বোঝা যায়।
এজন্য বিসিবি সামনের আসরে বিদেশ থেকে একটি দল নিয়ে আসতে চায়। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। বিসিএল যেই সময়ে আয়োজন করতে চাচ্ছে সেই সময়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। আফগানিস্তানকে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। বিসিবির পুরো খরচেই অতিথি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বাকি তিনটি দল গঠন করবে বিসিবি।
আকরাম খান বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথমবারের মতো বিসিএলে একটি বিদেশি দলকে পেতে যাচ্ছি। হয়তো তারা এ দল হিসেবে আসবে। নয়তো অন্য কোনো নামে। এক মাস এই টুর্নামেন্ট চলবে। ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’
এদিকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটার অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা যুক্ত হবেন, কিভাবে আসবেন, পারিশ্রমিক কত হতে পারে সেসব নিয়ে এখনও কোনো উপায় খুঁজতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ভালোমানের বিদেশি খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে।
তাদের পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করা, পুরো আসরে অ্যাভেইলেভেল থাকবেন কিনা সেসব নিয়েও কাজ হচ্ছে। এজন্য আগেভাগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না আকরাম।
আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দুই স্তরে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আট দলে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার রাখার ইচ্ছা বিসিবির। অতীতে বিদেশি ক্রিকেটার জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়েছে। ইমরান ফরহাদ, আমির ওয়াসিমরা খেলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির এই টুর্মামেন্টে।
মূলত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং মান বাড়াতে এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে আয়োজকরা। যদিও একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম প্লেয়িং কন্ডিশনে সব সময়ই ছিল, ছিল সর্বশেষ মৌসুমেও। বিভাগীয় দলগুলো আগ্রহ না থাকায় বিসিবিও জোর দেয়নি। তবে এবার বিসিবি বিদেশি ক্রিকেটারকে যুক্ত করবে। পাশাপাশি তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও দেখভাল করবে।
ঢাকা/ইয়াসিন