পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল কোনো ব্যক্তি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে। জিডি গ্রহণ করা ছাড়া থানা থেকে কোনো ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। এই সুপারিশের বিষয়ে সরকার একমত। একই সঙ্গে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পর্যায়ক্রমে দেশের সব থানায় অনলাইনে জিডি করা যাবে। তখন থানায় জিডি না নেওয়ার আর কোনো অভিযোগই থাকবে না।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ২৩ জুলাই একটি সভা হয়। এই সভার কার্যবিবরণীতে জিডি–সংক্রান্ত সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় মোট ১১টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই সভায় আইজিপির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, আইন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও সরকারি কর্ম কমিশনের সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ২৩ জুলাই একটি সভা হয়। এই সভার কার্যবিবরণীতে জিডি–সংক্রান্ত সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।অনলাইন জিডির বিষয়ে সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ইতিমধ্যে ৭৫ ভাগ থানায় ও ইউনিটে অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালু হয়েছে। সব থানায় পর্যায়ক্রমে অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ২২ জুলাই পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯৩৪টি জিডি (কিছু হারানো–সংক্রান্ত জিডি ছাড়া) করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮০৬টি জিডি অনলাইনে করা হয়েছে। মোট জিডির ২৫ ভাগ বর্তমানে অনলাইনে হচ্ছে।
অনলাইনে মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) চালুর সম্ভাব্যতা নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল মামলার এফআইআর গ্রহণে অনীহা বা বিলম্ব করা যাবে না। এ সম্পর্কে সভায় জানানো হয়, এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হচ্ছে। অনলাইন এফআইআর চালুর জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধনীর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ অধিদপ্তর। অনলাইন এফআইআরের ফরম্যাট (ছক) তৈরির কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত দল গঠন করতে হবে। এই দলের তদন্ত–সংক্রান্ত ইউনিট ও থানা ছাড়া অন্যত্র বদলি করা যাবে না। এ বিষয়ে সভার আলোচনায় উঠে আসে, বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছে। এ বিষয়ে সভায় স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি ও আইজিপি বাহারুল আলম উল্লেখ করেন, প্রতিটি থানায় মামলার তদন্ত তদারক করার জন্য পরিদর্শক (তদন্ত) নিয়োজিত আছেন। বিদ্যমান কাঠামোতে আলাদা বিশেষায়িত দল গঠন করা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এর জন্য নতুন নিয়োগ ও পেশাগত রূপরেখা (ক্যারিয়ার প্ল্যানিং) প্রয়োজন হবে। তবে বিদ্যমান কাঠামোতে, বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় মোট ১১টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই সভায় আইজিপির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, আইন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও সরকারি কর্ম কমিশনের সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন।এ বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পাইলট বা পরীক্ষামূলকভাবে হলেও পৃথক বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিট চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সভায় জানানো হয়, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য বাছাইকৃত ১২১ প্রস্তাবের মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩টি (মূলত ১১টি) সংস্কার প্রস্তাব আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।
নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি
পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের বর্তমান ব্যবস্থাকে গতিশীল এবং কাঠামোগত দক্ষতা বৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আওতায় সহকারী পুলিশ সুপারের নিয়োগে কিছু সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সুপারিশে বলা হয়, বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ধরনের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার প্রয়োজন, তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এ জন্য বর্তমান বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগের জন্য আলাদাভাবে শারীরিক যোগ্যতা (উচ্চতা ও ওজন ইত্যাদি পরিমাপ, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত করে আবেদনের যোগ্যতা নিরূপণ করা যায়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক মতাদর্শ চাকরিপ্রার্থীর ‘ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ (যাচাই প্রতিবেদন) এর অংশ হবে না। এ ছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে সব ধরনের পুলিশ ‘ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।এই সুপারিশের বিষয়ে সভার আলোচনায় এসেছে বিদ্যমান নীতিমালায় পুলিশ এবং আনসার ক্যাডারের জন্য পৃথক শারীরিক যোগ্যতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট সুপারিশ বাস্তবায়নে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন প্রতিবেদন দেবে।
সংস্কার কমিশনের আরেকটি সুপারিশ ছিল, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভায় পুলিশের এজেন্ডা থাকলে আইজিপিকে বোর্ডে উপস্থিত রাখা। এ সুপারিশের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে পদায়নের জন্য ‘ফিটলিস্ট’ (যোগ্যদের তালিকা) প্রস্তুত করে নিয়মিত বিরতিতে হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছিল সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে সভায় জানানো হয়, ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রদান করবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক মতাদর্শ চাকরিপ্রার্থীর ‘ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ (যাচাই প্রতিবেদন) এর অংশ হবে না। এ ছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে সব ধরনের পুলিশ ‘ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।
জবাবদিহির সংস্কৃতি
পুলিশ সংস্কার কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর একটি প্রতিবেদন দেবে। এ ছাড়া বেআইনি সমাবেশে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের স্বীকৃত পাঁচটি ধাপ অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলছে বলে সভায় জানানো হয়।
প্রতিটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে একটি মানবাধিকার সেল থাকার বিষয়ে কমিশন সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে সভায় বলা হয়, বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি ‘সেল’ আছে, যেখানে মানবাধিকারসহ পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে সংঘটিত যেকোনো অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ করা যায়। এমন ‘সেল’ র্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয়েও স্থাপন করার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর ছ স বর ষ ট র র তদন ত সরক র র গঠন কর প রস ত র জন য য গ যত ইউন ট ব বরণ আইজ প
এছাড়াও পড়ুন:
রাবিপ্রবিতে ‘ফ্রম ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার’ বিষয়ক সেমিনার
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) ক্যারিয়ার গঠনে ‘ফ্রম ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ এর সভা কক্ষে ম্যানেজমেন্ট বিজনেস সোসাইটির (এমবিএস) আয়োজনে এবং খাগড়াছড়ির অ্যাডুলাইফ আইটি ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
জুলাই সনদে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি: ইউপিডিএফ
রাঙামাটিতে পিসিসিপির ডাকা হরতাল প্রত্যাহার
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, “যেকোনো ক্যারিয়ারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গকে- অন্তর্ভুক্তি, স্বাধীনতা এবং প্রাধিকার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যে চাকরিতে এই তিনটি জিনিস থাকবে, সেসব চাকরি স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ হবে।”
শিক্ষার্থীদেরকে তাদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্কিলে উন্নত করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “দক্ষতার ঘাটতিগুলো শনাক্ত করে সেগুলো কাটিয়ে উঠে নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সততা দিয়ে ক্যারিয়ারে সফল হতে হবে। এছাড়াও নিজেদের যে পেশায় আগ্রহ ও দক্ষতা আছে, তা বেছে নিতে হবে।”
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ জুনাইদ কবির, প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক সাদ্দাম হোসেন, ম্যানেজমেন্ট অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রহিম উদ্দিন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সূচনা আখতার প্রমুখ।
এছাড়া অ্যাডুলাইফ আইটি ইনস্টিটিউটের সিইও আমির হোসেন রোজেলসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তারা ক্যারিয়ার গঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
ঢাকা/শংকর/মেহেদী