১৯৬৩ সাল। আমেরিকার কালো মানুষদের অধিকারের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে জেলে গেছেন মার্টিন লুথার কিং। কিন্তু দমে নেই, বার্মিংহাম জেলে বসেই তিনি দেশের কৃষ্ণকায় মানুষদের নাগরিক অধিকারের আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। দেশজুড়ে ধরপাকড়, গোপন নজরদারি। জেলে গেছে হাজার হাজার মানুষ। শ্বেতকায় গুন্ডারা প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছে কালো মানুষদের। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কৃষ্ণকায়দের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

ঠিক এমন সময় আন্দোলন প্রত্যাহার করার অনুরোধ নিয়ে মার্টিন লুথার কিংকে একটি চিঠি লিখলেন আটজন শ্বেতকায় ধর্মযাজক। তাঁরা ড.

কিংকে অনুরোধ করলেন, এই অস্থির সময়ে গণ-আন্দোলন না করে উচিত হবে দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখা।

হতবাক হলেন ড. কিং। যে আটজন পাদরি তাঁকে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন। কৃষ্ণকায়দের অধিকারের প্রতি তাঁরা এর আগে নৈতিক সমর্থনও জানিয়েছেন। লড়াই যখন শ্বেত আধিপত্যের ব্যূহে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে, তখন সে লড়াইয়ে শামিল হওয়ার বদলে তাঁরা ময়দান ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তাব করছেন। উত্তরে ড. কিং লিখলেন তাঁর সেই বিখ্যাত চিঠি, যা বার্মিংহাম জেল থেকে পাঠানো চিঠি নামে পরিচিত।

ড. কিং লিখলেন, এই প্রজন্মে আমাদের অনুশোচনা করতে হবে শুধু খারাপ মানুষের বিষাক্ত কথাবার্তা ও সহিংস কর্মের জন্য নয়, ভালো মানুষের নিন্দনীয় নীরবতার জন্যও।

এরপর আরও কয়েকবার ড. কিং ‘ভালো মানুষদের লজ্জাজনক নীরবতা’র নিন্দা জানান। ১৯৬৫ সালে সেলমা থেকে মন্টোগোমারি পদযাত্রার সময় তিনি লিখলেন, ভালো মানুষদের এই লজ্জাজনক নীরবতা আমাদের সময়ের গভীরতম একটি ট্র্যাজেডি। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় চোখের সামনে বর্বরতার প্রমাণ পেয়েও যারা চুপ করে ছিল, ড. কিং তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমাদের জীবনে এমন একটা সময় আসে, যখন আমাদের নীরবতা ভাঙতে হয়।

১৯৬৮ সালে, তাঁর মৃত্যুর সামান্য আগে, ড. কিং লিখলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এমন লোকের অভাব নেই, যারা চোখের সামনে ভয়াবহ মানবিক অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করে, অথবা জেগে জেগে ঘুমায়। অনেকে হয়তো অজ্ঞতার কারণে সত্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকে। এই বিশ্বে সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো এসব মানুষের ‘আন্তরিক অজ্ঞতা ও সচেতন মূঢ়তা’।

ভয়াবহ বর্বরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আমাদের জীবদ্দশায় কম ঘটেনি। সে অপরাধের কথা জেনেও চুপ করে থেকেছে—এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আমাদের কাছে সবচেয়ে দীপ্যমান উদাহরণ ১৯৭১। যারা এখনো সে গণহত্যাকে অস্বীকার করে, অথবা তার ভয়াবহতাকে খাটো করে দেখে, তাদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এই মুহূর্তে গাজায় গণহত্যার কথা আমরা ভাবতে পারি। মাত্র গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমস–এ ভাষ্যকার ব্রেট স্টিফেন্স লিখেছেন, না, গাজায় কোনো গণহত্যা হচ্ছে না। একই কথা বলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, গাজায় যা হচ্ছে, তাকে কোনোভাবেই জেনোসাইড বা গণহত্যা বলা যায় না।

মার্টিন লুথার কিং এই ‘ভালো মানুষদের’ লজ্জাজনক ব্যবহারকেই ট্র্যাজেডি বলে উল্লেখ করেছিলেন।

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের ১৫ বছর বাংলাদেশে লাগামহীন অপরাধের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েও যারা হয় নীরব থেকেছে অথবা তার পক্ষে সাফাই গেয়েছে, আমার ধারণা, মার্টিন লুথার কিং তাদেরও সেই একই লজ্জাজনক ভালো মানুষদের তালিকায় ফেলতেন। এমন লোকের অভাব নেই, যারা এখনো পতিত সেই সরকারের পক্ষে সাফাই গাওয়ার অন্য যুক্তি হাতড়ে বেড়ায়। তারাও সেই তালিকার সদস্য।

গত বছর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল এই লাগামহীন দুর্নীতি, অধিকারহীনতা ও গণনির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি নাগরিক প্রতিবাদ। এমন বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা নেহাত কম নয়, যাঁরা নিজ চোখে ছাত্র-জনতার হত্যা দেখে কেবল নীরবই থাকেননি, তার সাফাইও গেয়েছেন।

শেখ হাসিনার আমলে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন কোনো গোপন ব্যাপার ছিল না। আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে আকাশছোঁয়া দুর্নীতি। আইন ও বিচারব্যবস্থা পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রের নিপীড়নযন্ত্রে। দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণভার তুলে দেওয়া হয়েছে একটি মাফিয়া চক্রের হাতে। বাক্‌স্বাধীনতাকে নিরাপত্তাহুমকি বলে তালাবন্দী করা হয়েছে। পুরো দেশকে পরিণত করা হয়েছে একটি পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে।

গত বছর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল এই লাগামহীন দুর্নীতি, অধিকারহীনতা ও গণনির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি নাগরিক প্রতিবাদ। এমন বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা নেহাত কম নয়, যাঁরা নিজ চোখে ছাত্র-জনতার হত্যা দেখে কেবল নীরবই থাকেননি, তার সাফাইও গেয়েছেন।

কেউ কেউ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ রক্ষায় অথবা মৌলবাদের উত্থান ঠেকাতে কিছু মানুষের মৃত্যু—হোক না তা অন্যায় বা অবৈধ—মেনে নেওয়া যায়। জুলাই আন্দোলন যখন তুঙ্গে, অনেক বুদ্ধিজীবী দল বেঁধে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের আনুগত্য ঘোষণা করে এসেছেন। তাঁরা যুক্তি দেখিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে নিলে দেশ শত্রুর হাতে চলে যাবে। অন্য কথায়, শত্রু আর কেউ নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। শাসকগোষ্ঠী জনতাকে শত্রু ভাবতেই পারে, কিন্তু দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীরাও যখন সেই একই কথা বলেন, তখন লজ্জায় মাথা নোয়াতে হয়।

এমন কেউ কেউ আছেন, যাঁরা হত্যা-গুম-খুনের ঘটনা স্বীকার করেও হাসিনার আমলে উন্নয়নের অর্জনকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। হাসিনা নিজেও বুক চাপড়ে বলেছেন, দেশের জন্য এত কিছু করলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ বানালাম, তারপরও আমাকে দেশ ছাড়তে হলো। এসব জ্ঞানপাপীকে কীভাবে বোঝানো সম্ভব যে একজন নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুর মূল্য এক শ পদ্মা সেতু দিয়েও চুকানো সম্ভব নয়।

সেদিন যাঁরা নীরব ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এখনো স্বৈরাচারের পক্ষে সরব। নামে-বেনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের ব্যস্ত উপস্থিতি। জুলাই বিপ্লবকে একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত প্রমাণে তাঁদের চেষ্টার অন্ত নেই।

আমেরিকার ‘ডিপ স্টেট’ কীভাবে এই অভ্যুত্থানের আসল চালিকা শক্তি, সে কথা প্রমাণের জন্য বিদেশে বসে এক বাক্‌বুদ্ধিজীবী আস্ত একখানা বই লিখে ফেলেছেন। জুলাইয়ের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যু পুলিশের হাতে নয়, বিক্ষোভকারীদের হাতে হয়েছে, অথবা মুগ্ধ, বিক্ষোভকারীদের পানি দিতে গিয়ে খুন হওয়া যুবক, আসলে মরেনি, সে ফ্রান্সে আছে, এসব গুজব তাঁরাই ছড়িয়েছেন। কেন, তা বোঝাও কঠিন নয়।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লব শুধু শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নয়, যাঁরা সে স্বৈরশাসনকে মদদ জুগিয়েছেন এবং যাঁরা ফায়দা নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও। যাঁরা এখন সে বিপ্লবের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা প্রায় সবাই এই ফায়দা লোটা ব্যক্তিদের অন্তর্গত।

অন্যদিকে বিপুল ক্ষমতাধর রাষ্ট্রযন্ত্রের দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে যারা সেদিন রাস্তায় নেমেছিল, তারা এই সময়ের সেরা নায়ক—এ কথায় কোনো সন্দেহ নেই। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা যুবকদের ভয় দেখিয়ে বশে আনার চেষ্টা কম হয়নি। তারা মাথা নোয়ায়নি। আমরা আবু সাঈদের প্রসারিত দুই হাত দেখেছি।

টেলিভিশনের পর্দায় আমরা দেখেছি, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বলছে, ‘চালাও গুলি, আমরা রাস্তা থেকে হটব না।’ তাদের সে কথা শুনে আমার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর বলা একটা কথা মনে পড়েছে, আমরা যখন মরতে শিখেছি, আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। হাসিনা তাঁর শিক্ষা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছিলেন, ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে তাঁকে। সঙ্গে নিয়ে গেছেন নিজের পারিষদবর্গ।

প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ—কোনোটাই খুব সহজ কাজ নয়। এর জন্য কখনো কখনো চরম মূল্য দিতে হয়। চলতি সপ্তাহে আল-জাজিরায় পরিবেশিত একটি প্রতিবেদনে আমরা ১৭ বছরের কিশোরী নাফিসার কথা শুনেছি। ৫ আগস্ট, যেদিন হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান, লাখো মানুষের সঙ্গে সে–ও ছিল বিদ্রোহের মিছিলে। মিছিল থেকেই ফোনে সে বাবাকে বলেছিল, লড়াই শেষ না করে সে মাঠ ছাড়বে না। এ কথা বলার সামান্য পরই পুলিশের গুলিতে আহত হয় নাফিসা। রক্তাক্ত অবস্থায় বাবাকে জানায়, ‘বাবা, আমার আর ফেরা হবে না। আমার লাশটা তুমি নিয়ে যেয়ো।’

জানা-অজানা এসব ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনতার রক্তের আগুন থেকেই জন্ম নিয়েছিল জুলাই বিপ্লব। তাঁদের এই আত্মত্যাগ যাতে ব্যর্থ না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের। স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা এখনো তৎপর। এই সময় নীরব থাকার অর্থ হবে নাফিসা ও তার মতো সাহসী মানুষের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।

হাসান ফেরদৌস প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র গণহত য র জন য আম দ র বল ছ ন র সময় ন রবত অপর ধ আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ