দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, “একসময় বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ করতে সংবাদমাধ্যমগুলো দ্বিধাগ্রস্ত হত। আমি মনে করি, সেই সময়টা পার হয়ে গেছে। দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভারতীয় দালাল ও ‘র’ এর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাদের ব্যাপারে আমার দেশ পত্রিকা ক্রমাগতভাবে খবর প্রকাশ করে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমরা যদি  এই ‘র’ কিংবা ভারতের দালালদের মুখোশ উন্মোচন না করি, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ে জয় লাভ করতে পারব না। কারণ ঘরের ভিতরে শত্রু রেখে আপনি বিদেশিদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবেন না।”

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

দায়বদ্ধতা থেকে সাজিদের ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুত নেওয়ার চেষ্টা করেছি: এআইজি আশরাফ

ইবি শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে রাবিতে মানববন্ধন

ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম।

মাহমুদুর রহমান বলেন, “বিপ্লবের বিপদ দুই দিক থেকে আসতে পারে; অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রু। অভ্যন্তরীণভাবে সমাজে ফ্যাসিবাদের দোসর ও ভারতীয় দালালদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যারা বিপ্লব ব্যর্থ করতে চায়। অতিরিক্ত হলো, দেশের ভৌগলিক প্রতিবেশী বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের যেকোনো হুমকি। একটা রাষ্ট্রের ইমিডিয়েট থ্রেট তার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আসে। সব রাষ্ট্রের প্রতিবেশী তার পোটেনশিয়াল ও কম্পিটিটর এনিমি। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “বিপ্লবে ছাত্ররা নেতৃত্ব দিলেও সব শ্রেণির মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছে। তাই কেউ যেন এমন কিছু না করে, যাতে এই বিপ্লব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কেবল এ বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যে সমস্ত ফ্যাসিবাদের দোসর কিংবা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের দালালরা আছেন, তাদের খুঁজে বের করে চিহ্নিত করা আমাদের সবার কর্তব্য।”

তিনি আরো বলেন, “এই সরকারের পক্ষে সব মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। নির্বাচিত সরকারের প্রতি আহ্বান, তারা যেন তরুণদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। বিপদের সময় তারুণ্যের প্রশিক্ষিত শক্তিই হবে আমাদের প্রতিরক্ষা। তরুণদের মধ্যে আমি অসাধারণ পরিবর্তন দেখেছি। বিশেষ করে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এবং ইসলামী মূল্যবোধে তাদের দৃঢ়তা আমাকে আশাবাদী করেছে।”

এর আগে, বেলা সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

পরে অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে দোয়া, নিরবতা পালন ও বিপ্লবের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা সংবলিত বই ‘জুলাই স্মৃতিকথা’ এর মোড়ক উন্মোচন এবং জুলাই উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম দ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

অভিযোগ ফেসবুকে নয়, সরাসরি জানান: চট্টগ্রামের মেয়র

গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহে বাড়তি ফি নিলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে না দিয়ে সরাসরি অভিযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শাহাদাত হোসেন এই অনুরোধ করেন। নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে আগামী এক বছরের কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র।

চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সামাজিক সংগঠন ডাকবাক্স ফাউন্ডেশনের হয়ে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কথা বলেন ব্যাচেলর পয়েন্ট খ্যাত অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। তিনি জানান, ডাকবাক্স কিশোর অপরাধ দূর করতে ও নারীদের সমস্যা নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করবে।

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরে দৈনিক সৃষ্ট সব আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারলে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। বর্জ্য যাতে বাইরে পড়ে না থাকে সে জন্য বাসাবাড়ি ও দোকানপাট থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ জন্য বাসাবাড়ি থেকে ফি নিতে পারবে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। কিন্তু নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ হয়তো বেশি নিচ্ছে। এ বিষয়ে ফেসবুকে দিলে হয়তো ভিউ পাওয়া যাবে, তবে কাজের কাজ হবে না। সিটি করপোরেশনকে সরাসরি অভিযোগ দিলে যারা বেশি নিচ্ছে তাদের বাদ দেওয়া হবে।

নগরে সৃষ্ট সব বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারলে চট্টগ্রামে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন নগরে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করতে পারে ২ হাজার ২০০ টন। কারণ, বাকি বর্জ্য নগরবাসী ডাস্টবিনে না ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন। চলতি পথে গাড়ি থেকে বাইরে থেকে ফেলে দেন। তবে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালুর পর বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। বায়োগ্যাস উৎপন্ন হলে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য নগরবাসীকে এখন যে টাকা দিতে হচ্ছে তা হয়তো আর দিতে হবে না। তবে এ জন্য একটু সময় দিতে হবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন দাবি করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখন নগরের মানুষকে পানির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে না। আগের মেয়রের ঘরেও পানি ঢুকে যেত, বাসা থেকে বের হতে পারত না। বহদ্দারহাট, মুরাদপুরে পানি জমে থাকত। এ নিয়ে মানুষ নানা কৌতুক করতেন। এবার টানা ৫ মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তবু জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে না।’

আগামী এক বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এবার বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নগরবাসীকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাস্তা উপহার দিতে পারেননি। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি বড় সড়ক উপহার দেবেন। সিটি করপোরেশনের ১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপ চালু করা হবে আগামী ডিসেম্বরে। ময়লা, আলো, রাস্তা, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা নিয়ে নগরবাসী তাঁদের মতামত খুব সহজে জানাতে পারবেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কাজ করেছেন বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে শক্ত অবস্থানে আছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে ছাড় দিচ্ছেন না। ২০০ কোটি টাকার মতো গৃহকর যাতে আদায় করতে পারেন সে চেষ্টা করছেন। বন্দরের গাড়ির কারণে নগরের রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাই বন্দরের প্রতি এটি সিটি করপোরেশনের হক।

নগরে কিশোর গ্যাং বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। তারা যাতে সন্ত্রাস–মাদকের পথে না যায় সে উদ্দেশ্যে অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশের টিম (ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। বাইরের কিশোর–তরুণদের সঙ্গেও কাজ করবে।

মেয়র আরও বলেন, নাগরিকদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাইমারি হেলথকেয়ার সিস্টেম চালু করবেন আরবান হেলথকেয়ার সেন্টারগুলোতে। সিটি করপোরেশন হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে কিডনির রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হবে। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র নগরের ৫টি জোনে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার করার ঘোষণা দেন। ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। আগামী মাস থেকে এসব সেন্টার চালু করা হবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখায় মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।

মেয়রের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সিটি করপোরেশন উন্নয়ন প্রতিবেদন ও তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ