চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিলফেরত কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা
Published: 10th, August 2025 GMT
ব্রাজিল থেকে চার বন্দর ঘুরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা এক কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে। বন্দরে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা ‘মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ রেডিয়েশন ডিটেকটিভ সিস্টেমে’ এটি শনাক্ত হয়। এরপরই কনটেইনারটির খালাস স্থগিত করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া কনটেইনারটিতে রয়েছে স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরা। তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্রে প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় কনটেইনারের অভ্যন্তরে তিনটি রেডিওনিউক্লাইড আইসোটোপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই তিনটি হলো থোরিয়াম ২৩২, রেডিয়াম ২২৬ ও ইরিডিয়াম ১৯২।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পাওয়া গেছে এক মাইক্রোসিয়েভার্টস (তেজস্ক্রিয়তা থেকে যে বিকিরণ হয় তার একক)। এটি উচ্চ মাত্রার নয়, তবে পরীক্ষার আগে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তার প্রকৃত মাত্রা কতটুকু। কারণ, লোহার টুকরা ও কনটেইনার ভেদ করে তেজস্ক্রিয়তার সঠিক মাত্রা আসে না। এ জন্য সতর্কতা হিসেবে কনটেইনারটি আলাদা করে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নথিতে দেখা যায়, ঢাকার ডেমরার রড তৈরির কারখানা আল আকসা স্টিল মিলস লিমিটেড ব্রাজিল থেকে পাঁচ কনটেইনারে ১৩৫ টন স্ক্র্যাপ আমদানি করেছিল। তেজস্ক্রিয়তা সংকেত পাওয়া কনটেইনার এই পাঁচটির একটি। ৩ আগস্ট বন্দরের জিসিবি টার্মিনালের ৯ নম্বর জেটিতে ‘এমভি মাউন্ট ক্যামেরন’ জাহাজ থেকে কনটেইনারটি বন্দরে নামানো হয়। এরপর বুধবার বন্দরের ৪ নম্বর ফটক দিয়ে কনটেইনারটি খালাস নেওয়ার সময় মেগাপোর্টের যন্ত্রে তেজস্ক্রিয়তা থাকার সংকেত বেজে ওঠে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সতর্কসংকেত পাওয়ার পর কনটেইনারটি খালাস স্থগিত করে আলাদা স্থানে রাখা হয়েছে। এখন পরমাণু শক্তি কমিশনকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এসে সরেজমিন তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করবেন। এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিকিৎসা, শিল্পকারখানা, গবেষণাসহ নানা কাজে তেজস্ক্রিয় উৎস ব্যবহার হয়। এসব তেজস্ক্রিয় উৎস ব্যবহারের সময় বায়ুরোধী বিশেষ পাত্রে এমনভাবে আবদ্ধ রাখা হয়, যাতে তেজস্ক্রিয় দূষণ না হয়। ব্যবহার শেষে এসব তেজস্ক্রিয় উৎস সংগ্রহ করে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য হিসেবে ব্যবস্থাপনা করতে হয়। তবে অসতর্কতা, দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে এসব তেজস্ক্রিয় উৎস বাইরে চলে আসে। তাতেই এই উৎস মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সতর্কসংকেত পাওয়ার পর কনটেইনারটি খালাস স্থগিত করে আলাদা স্থানে রাখা হয়েছে। এখন পরমাণু শক্তি কমিশনকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এসে সরেজমিন তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করবেন। এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমানচার বন্দর পেরিয়ে চট্টগ্রামে বাজল সংকেতযে কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তার সংকেত পাওয়া গেছে, সেটির গতিপথ পর্যবেক্ষণ করেছেন এই প্রতিবেদক। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির (এমএসসি) ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে দেখা যায়, ব্রাজিলের উত্তরের শহর মানাউস থেকে কনটেইনারটিতে স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরা বোঝাই করা হয়।
গত ৩০ মার্চ দেশটির মানাউস বন্দরে এমএসসির একটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয় কনটেইনারটি। এরপর ১৮ এপ্রিল পানামার ক্রিস্টোবাল বন্দরে নামিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে ৩ মে আরেকটি জাহাজে তুলে নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দরে নেওয়া হয়। রটারড্যাম থেকে ২ জুন আরেকটি জাহাজে তুলে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে নেওয়া হয়। কলম্বো বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনারটি নামানো হয় ১৫ জুলাই। সর্বশেষ ২৮ জুলাই কলম্বোর সাউথ এশিয়া গেটওয়ে টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামমুখী জাহাজ মাউন্ট ক্যামরনে তুলে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায় ৩ আগস্ট।
বন্দরগুলোর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এই চার বন্দরের মধ্যে তিনটিতে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্র রয়েছে। এসব বন্দরে কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়লে তা উৎস দেশে ফেরত পাঠানোর আন্তর্জাতিক নিয়ম রয়েছে। তবে ধরা না পড়ায় বিনা বাধায় কনটেইনারটি চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে স্থাপিত তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্রে তা ধরা পড়ে।
কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কতটুকু, তা পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না। তবে যেহেতু সতর্কসংকেত পাওয়া গেছে, সে জন্য কনটেইনারটি আলাদা করে রাখা উচিত, যাতে মানুষের সংস্পর্শে না আসে। কারণ, সহনীয় মাত্রার বেশি তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে এলে মানবস্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে।বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ কামালব্রাজিল থেকে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারে আগেও শনাক্ত হয়েছিল?ব্রাজিলের মানাউস নামে যে বন্দর থেকে আনা কনটেইনারে এই তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়েছিল, সেই বন্দর থেকে আনা পণ্যে আগেও তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ধরা পড়েছিল। এ ঘটনা এত দিন অপ্রকাশিত ছিল। তবে সাড়ে তিন বছর আগের এই ঘটনা উঠে এসেছে ব্রাজিলিয়ান জার্নাল অব রেডিয়েশন সায়েন্সেস (বিজেআরএস) প্রকাশনায় এক নিবন্ধে। গত ১৫ জুলাই এই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। মূলত কনটেইনারটি থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ কীভাবে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে এবং উৎসটিকে ব্রাজিলের সরকারি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সংরক্ষণাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে, তা তুলে ধরা হয় ওই নিবন্ধে। তাতেই বেরিয়ে আসে সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনা।
এতে বলা হয়, ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রাজিলের মানাউস বন্দর থেকে কনটেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠানো হয়। মানাউস থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি জাহাজ চলাচল না থাকায় তা বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ পাল্টে আনা হচ্ছিল। মাল্টা বন্দরে এক জাহাজ থেকে নামিয়ে আরেক জাহাজে তোলার সময় তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়।পরে মাল্টা থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় এ কনটেইনারটি ব্রাজিলের সুয়াপে বন্দরে ফেরতআনা হয় ২০২২ সালের ২৩ জুন। সেখানে ব্রাজিলের ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার এনার্জি কমিশনের একদল বিজ্ঞানী কনটেইনারটি থেকে তেজস্ক্রিয় উৎস আলাদা করার কাজ শুরু করেন। কনটেইনারটি থেকে তেজস্ক্রিয় উৎস আলাদা করে ব্রাজিলের তেজস্ক্রিয় সংরক্ষণাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরীক্ষা করে কনটেইনারটিতে আরএ–২২৬ আইসোটোপ পাওয়া যায়।
বন্দরগুলোর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এই চার বন্দরের মধ্যে তিনটিতে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্র রয়েছে। এসব বন্দরে কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়লে তা উৎস দেশে ফেরত পাঠানোর আন্তর্জাতিক নিয়ম রয়েছে। তবে ধরা না পড়ায় বিনা বাধায় কনটেইনারটি চট্টগ্রামে পৌঁছেছে।কী করা দরকারবাংলাদেশে প্রথম তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতে রপ্তানি করার পথে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে মরিচারোধী ইস্পাতের টুকরার একটি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়। সেটি ফেরত আনা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। পরে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশসহ চার দেশের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে কনটেইনারটি থেকে ‘রেডিয়াম বেরিলিয়াম’ নামের তেজস্ক্রিয় পদার্থটি আলাদা করেন। পদার্থটি থেকে ঘণ্টায় ১২ হাজার মাইক্রোসিয়েভার্টস বিকিরণ হয়।
প্রথমবার তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিরাপদে উদ্ধার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী মাসুদ কামাল। তেজস্ক্রিয়তার সর্বশেষ বিষয়টি জানানো হলে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কতটুকু, তা পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না। তবে যেহেতু সতর্কসংকেত পাওয়া গেছে, সে জন্য কনটেইনারটি আলাদা করে রাখা উচিত, যাতে মানুষের সংস্পর্শে না আসে। কারণ, সহনীয় মাত্রার বেশি তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে এলে মানবস্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স স পর শ ক স টমস ব যবস থ পদ র থ র ট কর পর ক ষ কলম ব পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিলফেরত কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা
ব্রাজিল থেকে চার বন্দর ঘুরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা এক কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে। বন্দরে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা ‘মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ রেডিয়েশন ডিটেকটিভ সিস্টেমে’ এটি শনাক্ত হয়। এরপরই কনটেইনারটির খালাস স্থগিত করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া কনটেইনারটিতে রয়েছে স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরা। তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্রে প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় কনটেইনারের অভ্যন্তরে তিনটি রেডিওনিউক্লাইড আইসোটোপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই তিনটি হলো থোরিয়াম ২৩২, রেডিয়াম ২২৬ ও ইরিডিয়াম ১৯২।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পাওয়া গেছে এক মাইক্রোসিয়েভার্টস (তেজস্ক্রিয়তা থেকে যে বিকিরণ হয় তার একক)। এটি উচ্চ মাত্রার নয়, তবে পরীক্ষার আগে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তার প্রকৃত মাত্রা কতটুকু। কারণ, লোহার টুকরা ও কনটেইনার ভেদ করে তেজস্ক্রিয়তার সঠিক মাত্রা আসে না। এ জন্য সতর্কতা হিসেবে কনটেইনারটি আলাদা করে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নথিতে দেখা যায়, ঢাকার ডেমরার রড তৈরির কারখানা আল আকসা স্টিল মিলস লিমিটেড ব্রাজিল থেকে পাঁচ কনটেইনারে ১৩৫ টন স্ক্র্যাপ আমদানি করেছিল। তেজস্ক্রিয়তা সংকেত পাওয়া কনটেইনার এই পাঁচটির একটি। ৩ আগস্ট বন্দরের জিসিবি টার্মিনালের ৯ নম্বর জেটিতে ‘এমভি মাউন্ট ক্যামেরন’ জাহাজ থেকে কনটেইনারটি বন্দরে নামানো হয়। এরপর বুধবার বন্দরের ৪ নম্বর ফটক দিয়ে কনটেইনারটি খালাস নেওয়ার সময় মেগাপোর্টের যন্ত্রে তেজস্ক্রিয়তা থাকার সংকেত বেজে ওঠে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সতর্কসংকেত পাওয়ার পর কনটেইনারটি খালাস স্থগিত করে আলাদা স্থানে রাখা হয়েছে। এখন পরমাণু শক্তি কমিশনকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এসে সরেজমিন তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করবেন। এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিকিৎসা, শিল্পকারখানা, গবেষণাসহ নানা কাজে তেজস্ক্রিয় উৎস ব্যবহার হয়। এসব তেজস্ক্রিয় উৎস ব্যবহারের সময় বায়ুরোধী বিশেষ পাত্রে এমনভাবে আবদ্ধ রাখা হয়, যাতে তেজস্ক্রিয় দূষণ না হয়। ব্যবহার শেষে এসব তেজস্ক্রিয় উৎস সংগ্রহ করে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য হিসেবে ব্যবস্থাপনা করতে হয়। তবে অসতর্কতা, দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে এসব তেজস্ক্রিয় উৎস বাইরে চলে আসে। তাতেই এই উৎস মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সতর্কসংকেত পাওয়ার পর কনটেইনারটি খালাস স্থগিত করে আলাদা স্থানে রাখা হয়েছে। এখন পরমাণু শক্তি কমিশনকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এসে সরেজমিন তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করবেন। এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমানচার বন্দর পেরিয়ে চট্টগ্রামে বাজল সংকেতযে কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তার সংকেত পাওয়া গেছে, সেটির গতিপথ পর্যবেক্ষণ করেছেন এই প্রতিবেদক। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির (এমএসসি) ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে দেখা যায়, ব্রাজিলের উত্তরের শহর মানাউস থেকে কনটেইনারটিতে স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরা বোঝাই করা হয়।
গত ৩০ মার্চ দেশটির মানাউস বন্দরে এমএসসির একটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয় কনটেইনারটি। এরপর ১৮ এপ্রিল পানামার ক্রিস্টোবাল বন্দরে নামিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে ৩ মে আরেকটি জাহাজে তুলে নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দরে নেওয়া হয়। রটারড্যাম থেকে ২ জুন আরেকটি জাহাজে তুলে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে নেওয়া হয়। কলম্বো বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনারটি নামানো হয় ১৫ জুলাই। সর্বশেষ ২৮ জুলাই কলম্বোর সাউথ এশিয়া গেটওয়ে টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামমুখী জাহাজ মাউন্ট ক্যামরনে তুলে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায় ৩ আগস্ট।
বন্দরগুলোর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এই চার বন্দরের মধ্যে তিনটিতে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্র রয়েছে। এসব বন্দরে কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়লে তা উৎস দেশে ফেরত পাঠানোর আন্তর্জাতিক নিয়ম রয়েছে। তবে ধরা না পড়ায় বিনা বাধায় কনটেইনারটি চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে স্থাপিত তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্রে তা ধরা পড়ে।
কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কতটুকু, তা পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না। তবে যেহেতু সতর্কসংকেত পাওয়া গেছে, সে জন্য কনটেইনারটি আলাদা করে রাখা উচিত, যাতে মানুষের সংস্পর্শে না আসে। কারণ, সহনীয় মাত্রার বেশি তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে এলে মানবস্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে।বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ কামালব্রাজিল থেকে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারে আগেও শনাক্ত হয়েছিল?ব্রাজিলের মানাউস নামে যে বন্দর থেকে আনা কনটেইনারে এই তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়েছিল, সেই বন্দর থেকে আনা পণ্যে আগেও তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ধরা পড়েছিল। এ ঘটনা এত দিন অপ্রকাশিত ছিল। তবে সাড়ে তিন বছর আগের এই ঘটনা উঠে এসেছে ব্রাজিলিয়ান জার্নাল অব রেডিয়েশন সায়েন্সেস (বিজেআরএস) প্রকাশনায় এক নিবন্ধে। গত ১৫ জুলাই এই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। মূলত কনটেইনারটি থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ কীভাবে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে এবং উৎসটিকে ব্রাজিলের সরকারি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সংরক্ষণাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে, তা তুলে ধরা হয় ওই নিবন্ধে। তাতেই বেরিয়ে আসে সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনা।
এতে বলা হয়, ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রাজিলের মানাউস বন্দর থেকে কনটেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠানো হয়। মানাউস থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি জাহাজ চলাচল না থাকায় তা বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ পাল্টে আনা হচ্ছিল। মাল্টা বন্দরে এক জাহাজ থেকে নামিয়ে আরেক জাহাজে তোলার সময় তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়।পরে মাল্টা থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় এ কনটেইনারটি ব্রাজিলের সুয়াপে বন্দরে ফেরতআনা হয় ২০২২ সালের ২৩ জুন। সেখানে ব্রাজিলের ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার এনার্জি কমিশনের একদল বিজ্ঞানী কনটেইনারটি থেকে তেজস্ক্রিয় উৎস আলাদা করার কাজ শুরু করেন। কনটেইনারটি থেকে তেজস্ক্রিয় উৎস আলাদা করে ব্রাজিলের তেজস্ক্রিয় সংরক্ষণাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরীক্ষা করে কনটেইনারটিতে আরএ–২২৬ আইসোটোপ পাওয়া যায়।
বন্দরগুলোর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এই চার বন্দরের মধ্যে তিনটিতে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ যন্ত্র রয়েছে। এসব বন্দরে কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়লে তা উৎস দেশে ফেরত পাঠানোর আন্তর্জাতিক নিয়ম রয়েছে। তবে ধরা না পড়ায় বিনা বাধায় কনটেইনারটি চট্টগ্রামে পৌঁছেছে।কী করা দরকারবাংলাদেশে প্রথম তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতে রপ্তানি করার পথে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে মরিচারোধী ইস্পাতের টুকরার একটি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়। সেটি ফেরত আনা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। পরে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশসহ চার দেশের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে কনটেইনারটি থেকে ‘রেডিয়াম বেরিলিয়াম’ নামের তেজস্ক্রিয় পদার্থটি আলাদা করেন। পদার্থটি থেকে ঘণ্টায় ১২ হাজার মাইক্রোসিয়েভার্টস বিকিরণ হয়।
প্রথমবার তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিরাপদে উদ্ধার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী মাসুদ কামাল। তেজস্ক্রিয়তার সর্বশেষ বিষয়টি জানানো হলে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, কনটেইনারটিতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কতটুকু, তা পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না। তবে যেহেতু সতর্কসংকেত পাওয়া গেছে, সে জন্য কনটেইনারটি আলাদা করে রাখা উচিত, যাতে মানুষের সংস্পর্শে না আসে। কারণ, সহনীয় মাত্রার বেশি তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে এলে মানবস্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে।