লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে তথ্য দিলে পুরস্কার দেবে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 10th, August 2025 GMT
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্টের আগে-পরে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, তা উদ্ধারে সরকার শিগগিরই বিজ্ঞপ্তি দেবে। অস্ত্র উদ্ধারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে সরকার পুরস্কার দেবে।
আজ রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ।
৫ আগস্টের আগে-পরে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে সহযোগিতা করলে, তথ্য দিতে পারলে কত টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। কতগুলো অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘৭০০-এর বেশি। তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।’
গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ আইনের আওতায় এসেছে। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সরকার তা করবে। যত দ্রুত সম্ভব চার্জশিট দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ জাতি অসহিষ্ণু হয়ে গেছে। ধৈর্য নেই। আগে সমাজে খারাপ ঘটনা ঘটতে থাকলে লোকজন প্রতিহত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ত। এখন জিনিসটি কমে গেছে। সবাই ভিডিও করছে। অথচ ঘটনা মোকাবিলায় মোবাইলটা ছুড়ে মারলেও কিছু একটা হয়। কিন্তু এ জিনিসটা কমে গেছে।’
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গেছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে একজন গার্ডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে কেউ তাঁর ওপর হামলা করতে না পারেন।
ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাখা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম ভূমিকা রাখবে। ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকবে। আবার পুলিশ সদস্যদের কাছে বডি ইন ক্যামেরাও থাকবে। কেন্দ্রে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে জেলায় বার্তা চলে যাবে।
বিজিবি ও বিএসএসফের সীমান্ত সম্মেলনস্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও জানান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে আগামী ২৫ থেকে ২৮ আগস্ট চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন হবে। মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম এই সীমান্ত সম্মেলন ঢাকার পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরে শুরু হবে।
এবারের সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা, পুশ ইন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, ভারত থেকে মাদক, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও অন্যান্য চোরাচালান রোধসহ বিভিন্ন আন্তসীমান্ত অপরাধ দমন বিষয়ে আলোচনা হবে। এবারের সম্মেলনে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে বিজিবি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। দুর্বৃত্তরা যখন এক ভদ্রলোককে নিশানা করে ‘এই পাইছি, তোরা আয়’ বলে সহযোগীদের ডাকছিল, তখন আসাদুজ্জামান পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে ঘটনার ছবি তুলছিলেন। এরপর পাঁচ–ছয়জন দুর্বৃত্ত তাঁকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। তিনি দৌড়ে ঈদগাহ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাননি। তারা দোকানে ঢুকে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এটা গাজীপুরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আগের দিন বুধবার নগরীর সাহাপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের আক্রমণে আনোয়ার হোসেন নামের আরেক সাংবাদিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত সাত মাসে গাজীপুরে শতাধিক হত্যা ও অসংখ্য ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও জননিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ভূমিকা নিতে না পারা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে দেশের আরও অনেক স্থানের মতো গাজীপুরেও মব সন্ত্রাস বেড়ে যায়। এসব সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য যারা দায়ী, সরকার তাদের না ধরে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে একজন নারীও আছেন। এই অপরাধী চক্র দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে এলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যে ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান নিহত হন, তা–ও ছিল অপরাধীদের অপকৌশলের অংশ।
আসাদুজ্জামান দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি, যিনি দুটি কাজ করে সংসার নির্বাহ করতেন। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাজীপুরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার পেছনে পেছনে হাঁটে। তারা যদি জানেই যে সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্র আছে, তাদের ধরতে আগে থেকে অভিযান চালাল না কেন?
পুলিশের লোকবলের অভাব আছে, মানুষ এই অজুহাত শুনতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত আছেন। এতগুলো বাহিনী দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে ছিনতাই–ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটতে থাকলে মানুষ কীভাবে ভরসা পাবে? গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে একজন সাংবাদিক খুন হওয়ার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকদের চৈতন্যোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। তাঁরা বরাবরের মতো সাংবাদিকদের ওপর সরকার কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না বলে সাফাই গাইছেন। সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
কেবল গাজীপুর নয়, সারা দেশেই জননিরাপত্তা হুমকির মুখে। সন্ত্রাসীরা যদি একজন কর্তব্যরত সাংবাদিককে খুন করে পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পর বিশৃঙ্খল অবস্থাকে সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বলে চালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এক বছর পরও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। থানা–পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধের কমবেশি পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা যাবে না। তারা তখনই আশ্বস্ত হবে, যখন দেখবে সরকার সত্যি সত্যি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সন্ত্রাসীদের হাতে যে সাংবাদিক নৃশংসভাবে খুন হলেন, কোনোভাবেই তাঁকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু জননিরাপত্তার স্বার্থে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আগেই সরকারকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।