ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলে প্রকাশ করা ছাত্রদলের কমিটিতে ৫৪ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর নাম রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। আজ রোববার সকালে চট্টগ্রাম নগরে একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি ছাত্রদল যে কমিটি প্রকাশ করেছে; আমাদের প্রাপ্ত তথ্যমতে, সেখানে ৫৪ জন আগে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে ছিল, তাঁদের নাম রয়েছে। মানুষ তো এসব অবজার্ব (পর্যবেক্ষণ) করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লাস টু–এর বাচ্চাও এখন সব দেখছে। মানুষকে বোকা ভাবার কারণ নেই।’

জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্ররাজনীতিকে কলুষিত করা হয়েছে। এ কারণে ছাত্ররাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের ট্রমা তৈরি হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হতে শুরু হয়েছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আবারও কিছু কিছু দল থেকে আগের ফ্যাসিবাদী মানসিকতা আসার কারণে আবার সেই ভীতি সবার মধ্যে কাজ করছে।

ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে শিবিরের সভাপতি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল রাজনীতি চাচ্ছেন না। তাঁদের ভাষ্য, হল রাজনীতির মাধ্যমে হলগুলোকে টর্চার সেল করা হয়। তাই তাঁরা হল রাজনীতি চাচ্ছেন না। শিক্ষার্থীদের দাবিকে সম্মান জানিয়েছে হলগুলোতে কমিটি দিইনি। শুধু সেবামূলক কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছি।’

এদিন সকালে নগরের পাঁচলাইশ এলাকায় এসএসসি/ দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সভাপতি তানজীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম নগরের ভারপ্রাপ্ত আমির মো.

নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, এ কে এম ফজলুল হক, বোয়ালখালী উপজেলার নায়েবে আমির আবু নাছের, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তানভীর মো. হায়দার আরিফ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীর যেসব গুণাবলি অর্জন করা প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম হলো মনোভাব ও আত্মবিশ্বাস। কারণ, এই গুণাবলি একটি সমাজ এবং পরবর্তী সময়ে একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা পর্যন্ত পরিবর্তন করে দিতে পারে। ইনসাফভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে মেধাবীদের এগিয়ে আসতে হবে। দাসত্ব ও পশুত্বের শৃঙ্খল ভেঙে আগে আদর্শ মানুষ হতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ দ ল ইসল ম অন ষ ঠ ন র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মালয়েশিয়া সফরে গুরুত্ব পাবে অভিবাসন, বিনিয়োগ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ সোমবার তিন দিনের সফরে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় এ সফরে অভিবাসন ও বিনিয়োগ অগ্রাধিকার পাবে। সই হবে বেশ কটি সমঝোতা। দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানানো হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আগামীকাল সোমবার (আজ) প্রধান উপদেষ্টা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সফর। এই সফরে অনেকগুলো সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এই সফরের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর থেকে গভীরতর হবে। সফরের মূল ফোকাস অভিবাসন নিয়ে আলাপ, দ্বিতীয় ফোকাস হচ্ছে বিনিয়োগ।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘মালয়েশিয়া আমাদের জনশক্তি খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। আমরা আমাদের অভিবাসন এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারি, যাতে মালয়েশিয়া আমাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক জনশক্তি নেয়। এগুলো নিয়ে কিছু আলাপ হবে এবং এটার আলোকে কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।’ তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার বড় বড় যেসব কোম্পানি আছে, তাদের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কথা হবে।

শফিকুল আলম জানান, ‘১২ আগস্ট একটি বিজনেস কনফারেন্স আছে। এরপর ১৩ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাকে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান (ইউকেএম) সম্মানসূচক ডিগ্রি দেবে। এই অনুষ্ঠানে আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম উপস্থিত থাকবেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১২ আগস্ট একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আছে। সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে সুসম্পর্ক আছে, সেটা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান বলেন, ১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়া যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল যাচ্ছে। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন।

শাহ আসিফ রহমান জানান, সফরের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে, সেখানে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল প্রধান উপদেষ্টাকে গ্রহণ করবেন। ১২ আগস্ট পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। বৈঠকের পর দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।

দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হবে, তা হলো প্রতিরক্ষাবিষয়ক সহযোগিতা; এলএনজি ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণসহ জ্বালানি সহযোগিতা; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ মালয়েশিয়া (আইএসআইএস); বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) ও চিপ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মিমোসের (এমআইএমওএস) সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক চেম্বার এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়িক চেম্বারের মধ্যে সমঝোতা।

সম্ভাব্য এক্সচেঞ্জ নোটগুলো হলো হালাল ইকোসিস্টেম, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং উচ্চশিক্ষা খাতে সহযোগিতাবিষয়ক নথি সই।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর কোনো দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। গত অক্টোবরে প্রায় এক দশক পর মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান বাংলাদেশ সফর করেন।

‘বিদেশে আ.লীগের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার’

ইউএনবি জানায়, দেশে নিষিদ্ধ থাকলেও বিদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে, তাই তাদের দেশের বাইরে কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ তিনি বলেন, ‘তারা দেশজুড়ে কোনো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে কি না, সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি।’

সম্প্রতি বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে আওয়ামী লীগের ‘পার্টি অফিস’ চালু হয়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর সব কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ