বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে মেঘের ঘনঘটা: নুরুল হক
Published: 10th, August 2025 GMT
বাংলাদেশে আগামীতে অনেক ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘সেই সংকট থেকে আগামীতে ওয়ান–ইলেভেনের কিংবা ফ্যাসিবাদের পরিস্থিতির দিকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়ে গেছে। নির্বাচন হবে, কেউ সরকারে যাবে অন্যরা বিরোধী দলে; পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি।’
আজ রোববার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আঠারো থেকে চব্বিশ, কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্রসংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নুরুল হক এ কথা বলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি (সহসভাপতি) নুরুল হক বলেন, ‘এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যদি লক্ষ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে নাই। যখন ছাত্রসংগঠনগুলো সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করেছিল, তখন রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানেও রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই। এখন যদি আসল কথা বলি, অনেকের সাংগঠনিক শক্তি, জনশক্তি আমার বিরুদ্ধে নানান প্রোপাগান্ডা ছড়াবে।’
চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সব রাজনৈতিক দলের সব নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আপনারা ১৯ জুলাইয়ের বীভৎসতা সম্পর্কে জানেন। সেই পরিস্থিতির পরও যদি আমরা কিছু না করতে পারি, তাহলে আমাদের ভয় নিয়ে এ দেশে বাস করতে হবে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলো আর বসে থাকবেন না, সিদ্ধান্ত নেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বরিশালের আঞ্চলিক এক বড় নেতা বললেন, ‘‘তোমাগো কি খাইয়াদাইয়্যা কাম নাই, খালি সরকার পতন খুঁজো সব জায়গায়, কোটার মধ্যেই থাকো।’’ আমরা যে একদফায় যাব, এটায় তিনি একমত নন। এ রকম আরও অনেকেই সরকারের পতনের একদফায় একমত হননি।’
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রসংগঠনগুলোকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘নব্বই দশক থেকে ফ্যাসিবাদী আমল পর্যন্ত অস্ত্রের ঝনঝনানি, পেশিশক্তি ও আধিপত্যের রাজনীতির বিপরীতে সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ ও সৃজনশীল মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চার পদক্ষেপ নিতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখি নাই। কারণ, তারা ছাত্রসংগঠনগুলোকে রাজনীতিতে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। মেধাবীদের পরিবর্তে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য একদল গুন্ডার হাতে ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে। যার জন্য ছাত্ররাজনীতি তরুণদের কাছে ঘৃণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্ররাই আমার ভরসা। তারাই যেকোনো সংকটে লড়াই করেছে, তারাই জীবন দিয়েছে। আগামীতেও ছাত্রদের সজাগ থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ২০১৮ সালের কোটার সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহারিয়া শুভর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি মেহেদী হাসান মারুফ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত র র র জন ত ন র ল হক
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামানের হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি
গাজীপুরে সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন রাজধানীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে সাংবাদিকেরা এ দাবি জানান। সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং সাংবাদিকদের পেশাগত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, জুলাই রেভল্যুশনারি জার্নালিস্ট অ্যালায়েন্স ও বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ–এর ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে আসাদুজ্জামানকে হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে এই সাংবাদিকের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানান সাংবাদিকেরা। তাঁরা বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার পাশাপাশি সাংবাদিক হত্যার ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না। এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ না হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। তাঁরা আসাদুজ্জামান হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান জনকণ্ঠ পত্রিকার এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য জয়নাল আবেদীন (শিশির)। এর সঙ্গে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ছয় সাংবাদিক হত্যার বিচার, সাংবাদিকদের জন্য একটি সুরক্ষা আইন এবং নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি আপনারা দেশের জনগণের, সাংবাদিকের নিরাপত্তা না দিতে পারেন, সুরক্ষা না দিতে পারেন, তাহলে আপনাদের প্রয়োজন নেই।’
জনকণ্ঠের উপপ্রধান প্রতিবেদক ইসরাফিল ফরাজি বলেন, কিছু একটা ঘটলেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চিরুনি অভিযানের কথা বলেন। কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের খুঁজতে হবে। তিনি গাজীপুরে সাংবাদিক খুনের ঘটনায় আটক পাঁচজনের পরিচয় দ্রুত প্রকাশের দাবি জানান এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আসাদুজ্জামান হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেটি করতে না পারলে বাসন থানার ওসি, গাজীপুরের পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসককে বরখাস্ত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকেও এ বিষয়ে আন্তরিকতা দেখাতে হবে।
নিউজ২৪–এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি যত বাড়ছে, রাষ্ট্রের দুর্বলতা যত বেশি প্রকাশ পাচ্ছে, রাষ্ট্রে তত বেশি বিশৃঙ্খলা হচ্ছে এবং একের পর এক লাশ পড়ছে। সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সাংবাদিকেরাও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকিতে আছে। তিনি আসাদুজ্জামানসহ সব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
সভাপতির বক্তব্যে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের অনেক সংগঠন থাকলেও তারা আসাদুজ্জামান হত্যার বিষয়ে কিছু বলছে না। অন্তর্বর্তী সরকার ও সাংবাদিক নেতাদের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে এর সুরাহা করতে হবে। আসাদুজ্জামান তুহিনের পরিবারের দায়দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আকতারুজ্জামানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা পোস্টের হেড অব মাল্টিমিডিয়া সাইফুল ইসলাম, কালবেলার সাংবাদিক অন্তু মোজাহিদ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের জাহিদুল ইসলাম, দেশ টিভির হাসান মাহমুদ, নিউজ টোয়েন্টিফোরের মাহমুদ হাসান, বাংলানিউজ২৪ ডটকমের সাইমুন মুবিন, বার্তা টোয়েন্টিফোরের রাজু আহমেদ, যায়যায়দিন পত্রিকার নাইম আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আজহারুল ইসলাম, এনপিবির আকরাম হোসেন প্রমুখ।