বাংলাদেশে আগামীতে অনেক ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘সেই সংকট থেকে আগামীতে ওয়ান–ইলেভেনের কিংবা ফ্যাসিবাদের পরিস্থিতির দিকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়ে গেছে। নির্বাচন হবে, কেউ সরকারে যাবে অন্যরা বিরোধী দলে; পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি।’

আজ রোববার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আঠারো থেকে চব্বিশ, কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্রসংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নুরুল হক এ কথা বলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি (সহসভাপতি) নুরুল হক বলেন, ‘এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যদি লক্ষ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে নাই। যখন ছাত্রসংগঠনগুলো সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করেছিল, তখন রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানেও রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই। এখন যদি আসল কথা বলি, অনেকের সাংগঠনিক শক্তি, জনশক্তি আমার বিরুদ্ধে নানান প্রোপাগান্ডা ছড়াবে।’

চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সব রাজনৈতিক দলের সব নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আপনারা ১৯ জুলাইয়ের বীভৎসতা সম্পর্কে জানেন। সেই পরিস্থিতির পরও যদি আমরা কিছু না করতে পারি, তাহলে আমাদের ভয় নিয়ে এ দেশে বাস করতে হবে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলো আর বসে থাকবেন না, সিদ্ধান্ত নেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বরিশালের আঞ্চলিক এক বড় নেতা বললেন, ‘‘তোমাগো কি খাইয়াদাইয়্যা কাম নাই, খালি সরকার পতন খুঁজো সব জায়গায়, কোটার মধ্যেই থাকো।’’ আমরা যে একদফায় যাব, এটায় তিনি একমত নন। এ রকম আরও অনেকেই সরকারের পতনের একদফায় একমত হননি।’

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রসংগঠনগুলোকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘নব্বই দশক থেকে ফ্যাসিবাদী আমল পর্যন্ত অস্ত্রের ঝনঝনানি, পেশিশক্তি ও আধিপত্যের রাজনীতির বিপরীতে সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ ও সৃজনশীল মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চার পদক্ষেপ নিতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখি নাই। কারণ, তারা ছাত্রসংগঠনগুলোকে রাজনীতিতে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। মেধাবীদের পরিবর্তে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য একদল গুন্ডার হাতে ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে। যার জন্য ছাত্ররাজনীতি তরুণদের কাছে ঘৃণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্ররাই আমার ভরসা। তারাই যেকোনো সংকটে লড়াই করেছে, তারাই জীবন দিয়েছে। আগামীতেও ছাত্রদের সজাগ থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ২০১৮ সালের কোটার সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহারিয়া শুভর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি মেহেদী হাসান মারুফ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত র র র জন ত ন র ল হক

এছাড়াও পড়ুন:

জবিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) একসময় প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আলাদা পরিচিতি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে আয়োজন করত গান, নাটক, আবৃত্তিসহ সাহিত্যচর্চার বহুমাত্রিক অনুষ্ঠান।

সম্প্রতি এই পরিবেশ ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’ নামক এক অদৃশ্য বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এর প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজেট।

আরো পড়ুন:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবাসন-পরিবহনে ভোগান্তি চরমে, বাড়ছে শুধু বিভাগ

ডেঙ্গুতে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংগঠনগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও নির্দিষ্ট উত্তর আসে— ‘একাডেমিক প্রোগ্রামের জন্য বাজেট দেওয়া হবে, এসব প্রোগ্রামের জন্য নয়।’ এতে সংগঠনগুলো চরম হতাশার মধ্যে পড়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের শেকলে বাধা পড়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রোগ্রামগুলো আগে সংগঠনগুলো আয়োজন করত, তা এখন একেবারেই সীমিত হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাজেট না দেওয়ার কারণে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিজেদের জায়গা হারাচ্ছে। তারা আর স্বাধীনভাবে প্রোগ্রাম করতে পারছে না। যেসব সংগঠন আগে নিয়মিত উৎসব বা শিল্পচর্চার অনুষ্ঠান করত, এখন তাদের কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। গত ১ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেনি সংগঠনগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের জন্যও এক ধরনের ক্ষতি। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, মেধা বিকাশ এবং মানসিক প্রশান্তির অন্যতম মাধ্যম ছিল এসব আয়োজন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক সংকটে সেই পথ আজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও প্রায় বন্ধের পথে হাঁটছে।

বিভিন্ন সংগঠন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট না দেওয়ায় সংগঠনগুলো বাইরের স্পন্সর খুঁজতে চাইলেও নানা জটিলতা পোহাতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেফারেন্স না থাকায় তারা বাইরে থেকেও স্পন্সর আনতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে বাইরের সহযোগিতা গ্রহণও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সংগঠনগুলো কার্যত দ্বিমুখী সংকটে পড়ে আছে—একদিকে অর্থ নেই, অন্যদিকে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার সুযোগও নেই।

এদিকে, আগে যেসব প্রোগ্রাম বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করতো। এখন সেসব প্রোগ্রাম আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই। এতে সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডও বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কয়েকটা প্রোগ্রাম হলেও সেসবে ছিল না আগের মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ছোঁয়া। এ সময়ে তেমন কোনো আয়োজনও করতে পারেনি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট বরাদ্দ না দেওয়ায় মৃতপ্রায় অবস্থা এসব সংগঠনের। চলে না নিয়মিত কার্যক্রমও।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাংস্কৃতিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। অথচ শিক্ষা ও সংস্কৃতি সমানতালে এগোলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে পরিপূর্ণ হয়। শুধু একাডেমিক পড়াশোনা নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও ছাত্রজীবনকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোভাব এমন দাঁড়িয়েছে যে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেন এক প্রকার ‘অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা’। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলাদা বাজেট বরাদ্দ এবং সংগঠনগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই একমাত্র সমাধান। কর্তৃপক্ষ যদি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আস্থা দেখায়, তাদের হাতেই অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়, তবে আবারো প্রাণ ফিরে পাবে জবির সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, “সাংস্কৃতিক চর্চা এককেন্দ্রিক হলে স্বনিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতি গড়ে ওঠে না। বিভিন্ন সংগঠনকে স্বাধীনভাবে প্রোগ্রাম আয়োজনের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের কাজ হলো পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। সরাসরি অর্থ সাহায্য বাধ্যতামূলক নয়, তবে উৎসাহ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, “বর্তমানে অবকাশ ভবনে ১৮টি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এই ১৮টি সংগঠনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বাজেট বরাদ্দ করা হয়। বাজেট ব্যবহারে যথাযথ জাস্টিফিকেশন করতে হয় আমাদের।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দিবস কেন্দ্রীয়ভাবে উদযাপিত হয় এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রোগ্রাম। তাই কোনো সংগঠনকে আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করার সুযোগ নেই। বর্তমান প্রশাসন এবং পূর্ববর্তী প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’