গাজীপুরের পাঁচ এলাকায় বেপরোয়া অপরাধীরা, বাসিন্দারা আতঙ্কে
Published: 12th, August 2025 GMT
ঢাকা থেকে উত্তরার আবদুল্লাহপুর পার হলেই টঙ্গী। গাজীপুর মহানগরীর সীমানা এখান থেকেই শুরু। ছিনতাই, খুনসহ নানা আপরাধের শুরুটাও যেন এখান থেকেই। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে দুই কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই স্টেশন রোড এলাকা। থানার পাশে হলেও এখানে বেপরোয়া আপরাধীরা। সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে চান্দনা চৌরাস্তা এখন অপরাধের রাজত্ব। পাশাপাশি টঙ্গী উড়ালসড়ক, জয়দেবপুর ও কোনাবাড়ী এলাকাও এখন অপরাধীদের বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মহানগর পুলিশের তথ্যমতে, টঙ্গী স্টেশন রোড, টঙ্গী উড়ালসড়ক, চান্দনা চৌরাস্তা, জয়দেবপুর ও কোনাবাড়ী— এই পাঁচ এলাকায় সবচেয়ে বেশি চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এসব এলাকায় টহল পুলিশের সংখ্যা ও নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব ছোট–বড় অপরাধ। গত ৫ আগস্টের পর এই অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলছে পুলিশ। মহানগর পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান বলেন, গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে ক্রাইম বেড়ে যায়। এটা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। আগের রেজিম (সরকার) এই জেলায় শক্তিশালী। সেই দলটি গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করছে। সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে। এই নজরদারি করতে গিয়ে অন্যান্য অপরাধ মনোযোগ নষ্ট করছে।
মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর ৮টি থানায় গত ৭ মাসে ৪৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনের মামলা হয়েছে মহানগরের সদর থানায়। ৭ মাসে এ থানায় ১১টি হত্যা মামলা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১২ মাসে সদর থানায় হত্যা মামলা হয়েছিল ৮টি। গত বছর নগরের আট থানায় মোট হত্যা মামলা হয়েছিল ৪৮টি।
গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেট এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি উপলক্ষে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শান্তিপূর্ণভাবে এই উৎসব শেষ করার জন্য পুলিশ, র্যাব, এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
আরো পড়ুন:
ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা
বুড়িগঙ্গায় চলছে প্রতিমা বিসর্জন
পুলিশ জানায়, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা এবং বিসর্জন স্থানসমূহে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। শুধু ঢাকাতেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য এবং অতিরিক্ত আরো প্রায় ২ হাজার ৪০০ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ৯৪টি টহল টিম সাদা পোশাকে নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছে।
বিশেষ নজরদারি
প্রতিমা বিসর্জনের মূল ঘাটগুলো, যেমন—পলাশীর মোড়, রায়সাহেব বাজার ও ওয়াইজঘাট এলাকায় অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ঘাটকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত
যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত, বোম ডিসপোজালও কে-নাইন ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নৌ-নিরাপত্তা:
নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সাঁতার না জানা ব্যক্তিদের নৌকায় উঠতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার অনুরোধ করা হয়েছে। বিসর্জনস্থলে প্রশিক্ষিত ডাইভার (ডুবুরি দল) প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যদের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ:
শোভাযাত্রার পথ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রার সময় যান চলাচলের জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পূজা কমিটির প্রতি নির্দেশনা:
পূজামণ্ডপগুলোতে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মণ্ডপে ব্যাগ, থলে বা পোঁটলা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সব নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত ও কঠোর তৎপরতায় প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে আশা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এমআর/এসবি