রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে চলতি মৌসুমে ১০ দিনে ৭৪১ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়েছে। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭১৬ টাকা। তবে টানা বৃষ্টি ও হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে মাছের আহরণ কমেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাঙামাটি উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস চার দিন বন্ধ থাকার পর ২ আগস্ট রাত ১২টার পর উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ আহরণ শুরু হয়। প্রথম দিনেই ৭৫ মেট্রিক টন মাছ ওঠে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। গত বছরের প্রথম দিনে আয় হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারী বর্ষণে হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ৫ আগস্ট থেকে মাছ আহরণ কমে যায়। বর্তমানে পানি স্বাভাবিক উচ্চতায় রয়েছে। বৃষ্টি না হলে আহরণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ৭৬১ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়েছিল, যা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ বছর মাছ বেশি ধরা পড়লেও আকারে ছোট হওয়ায় দাম কম পাচ্ছেন জেলেরা।

জেলেদের অভিযোগ, ছোট আকারের মাছের জন্য ক্রেতারা কম দাম দিচ্ছেন। দাদন নেওয়া জেলেরা প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকায় মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, অন্যরা পাচ্ছেন ৭০-৮০ টাকা। অথচ পাইকারি বাজারে এসব মাছ ১২০-১৫০ টাকা, আর ঢাকা-চট্টগ্রামে ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের ৯০ শতাংশ মাছ কাচকি, চাপিলা ও মলা প্রজাতির।

প্রজনন মৌসুমে প্রতিবছর মে, জুন ও জুলাই মাসে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ, বিপণন ও পরিবহন বন্ধ থাকে। এ সময় নিবন্ধিত প্রায় ২৭ হাজার জেলেকে ভিসিএফ সহায়তা দেওয়া হয়। গত বছর হ্রদ থেকে ৮ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়েছিল, যার রাজস্ব আয় ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাঙামাটি উপকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো.

ফয়েজ আল করিম বলেন, গত ১০ দিনে ৭৪১ মেট্রিক টন মাছ আহরণ হয়েছে। বৃষ্টি ও পানি বেড়ে যাওয়ায় আহরণ কিছুটা কমেছে, তবে গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বেশি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গত বছর হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমুদ্রসম্পদ বড় অবদান রাখতে পারে’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমুদ্রসম্পদ একটি বড় অবদান রাখতে পারে। দেশের হাওর-বাওড়, খাল-বিল ও নদী থেকে প্রয়োজনীয় মাছের প্রায় ৫০ শতাংশ আহরণ করা হলেও সমুদ্র থেকে আহরণ হয় মাত্র ৩০ শতাংশ, যা সমুদ্রে বিপুল সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। অথচ সমুদ্রের বিপুল সম্পদ এখনো অনাবিষ্কৃত, যা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বড় ধরনের অবদান রাখা সম্ভব।”

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে জাতিসংঘ গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের উদ্যোগে “ওশান সেন্টারস, বাংলাদেশ” এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অগ্রগতি এবং রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের বিশাল সমুদ্রাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অনাবিষ্কৃত সম্পদ রয়েছে, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল করা সম্ভব।”

তিনি বলেন, “পুষ্টি পূরণে সামুদ্রিক মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে প্রচার-প্রচারণার অভাব, সহজলভ্যতার সীমাবদ্ধতা এবং অভ্যাসগত কারণে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। সামুদ্রিক শুঁটকির প্রতি যেমন আগ্রহ দেখা যায়, তাজা সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে তা ততটা নয়। ইলিশ মাছের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের ব্যবহার এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়নি।”

গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহামিন এস জামানের সভাপতিত্বে আরো বক্তৃতা করেন লয়েডস রেজিস্টার ফাউন্ডেশনের হেরিটেজ ও এডুকেশন সেন্টারের পরিচালক অ্যালেক্স স্টিট, ওশান সেন্টারস বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড কমোডর (অব.) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এবং জাতিসংঘ গ্লোবাল কমপ্যাক্টের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির প্রবৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ খুরশেদ আলম।

প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ মৎস্য শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. খন্দকার আখতার হোসেন এবং বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনাম চৌধুরী।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণ, ব্লু ইকোনমি উন্নয়ন, টেকসই মৎস্যশিল্প এবং সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের নতুন দিগন্ত নিয়ে মতবিনিময় করেন। তাদের মতে, সমুদ্রসম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয় বরং পরিবেশ সুরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা/এএএম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমুদ্রসম্পদ বড় অবদান রাখতে পারে’