Prothomalo:
2025-10-03@04:00:52 GMT

জুলাই সনদের খসড়া দলগুলোর কাছে

Published: 16th, August 2025 GMT

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়া পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সে ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে। সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দলগুলোর কাছে সমন্বিত খসড়া পাঠানো হয়। এতে সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা রয়েছে। যদিও বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়নি। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। আগামী সপ্তাহে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত হওয়ার পর সব দল সই করার মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে।

খসড়ায় জুলাই জাতীয় সনদকে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মোটাদাগে, সনদের খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে আছে ছয়টি সংস্কার কমিশনের যেসব প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন ৮৪টি প্রস্তাব। এর মধ্যে কোন প্রস্তাবে কতটি দল একমত হয়েছে এবং কোন কোন দলের ভিন্নমত আছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। আর তৃতীয় অংশে আছে সনদ বাস্তবায়নের আট দফা অঙ্গীকারনামা।

গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের (সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন) ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’।

গত ২৯ জুলাই দলগুলোকে জুলাই সনদের একটি খসড়া দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়া নিয়ে দলগুলো মতামতও দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে সমন্বিত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সমন্বিত খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিশন আশা করছে, খসড়ায় ভাষাগত বা শব্দগত ত্রুটি নিয়ে কোনো পরামর্শ থাকলে দলগুলো আগামী দু–এক দিনের মধ্যে তা কমিশনকে জানাবে। এ জন্য কমিশন অপেক্ষা করবে। আর বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে। সেটা চলবে। আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যাবে বলে কমিশন আশা করছে।

কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্য হলেও সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা আছে। বিএনপি সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করার বিষয়ে একমত। তবে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল মনে করে, শুধু অঙ্গীকার করলেই হবে না। সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে।

দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদের আইন ভিত্তি দেওয়া এবং সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আইন ও সংবিধানবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে। গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন, জুলাই সনদকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ (রেফারেন্স), বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না দেখা, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের (এলএফও) মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করা—এ ধরনের বেশ কিছু বিকল্প পদ্ধতি আলোচনায় আছে।

গতকাল ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আলোচনা করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সেখানে সনদ বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরির সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানান মনির হায়দার।

৮টি অঙ্গীকার

সনদের খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নে আট দফা অঙ্গীকারনামা রাখা হয়েছে। অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’–এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

২. এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ; তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে বিধায় এই সনদের সব বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করবে এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে, সে ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

৩. এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

৪. সনদের প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

৫. সনদে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমনব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করা।

৬. গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

৭. রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

৮. জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এর যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব স প র শ জ ল ই জ ত য় সনদ সমন ব ত খসড় দলগ ল র ক ছ জ ল ই সনদ র জন ত ক ব যবস থ ই সনদ র জনগণ র প রথম খসড় য়

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় এনসিপির নিন্দা

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা ও তার কুশপুত্তলিকা দাহের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি।

বুধবার (১ অক্টোবর) এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানিয়েছি দলটি।

আরো পড়ুন:

দুর্নীতিগ্রস্ত উপদেষ্টাদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এনসিপি, জানালেন নাসীরুদ্দীন

নিবন্ধন পাচ্ছে এনসিপিসহ ২ দল

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ‘সর্বাত্মক প্রতিরোধ’ এর ব্যাখ্যা জানতে চাই আমরা। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী আমলে আওয়ামী গণহত্যাকারী লীগ কর্তৃক ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সম্মুখসারির নেতাদেরকে নানা সময় নিজ এলাকায় প্রবেশে বাধাপ্রদান, হুমকি-ধমকি ও হামলা করা হতো। আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি, যারা সেই একই কায়দার রাজনীতি আবার ফেরত আনার চেষ্টা করবে, তারা জনগণের গণপ্রতিরোধের মুখোমুখি হবে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে গত রমজানেও চাঁদপুরে নিজ উপজেলায় ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকির শিকার হন মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, কারো রাজনৈতিক মতামতের প্রতিক্রিয়ায় তার নিজ এলাকাতে ‘সর্বাত্মক প্রতিরোধের’ ঘোষণা কোনো রাজনৈতিক আচরণ নয়; বরং হুমকিমূলক ও আগ্রাসী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। রাজনৈতিক মন্তব্যকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে; ত্রাস ও হুমকি দিয়ে নয়। ত্রাস ও হুমকি-ধমকি মূলত রাজনৈতিক পরাজয় প্রকাশ করে।

বিবৃতিতে এনসিপি আরো বলেছে, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে এমন উচ্ছৃঙ্খল ও আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন নেতাকর্মীদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আগামীর বাংলাদেশে যারাই হামলা-মামলা ও ত্রাসের রাজনীতি করবে, তারাই জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হবে।

ঢাকা/রায়হান/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তরুণ নেতৃত্বের বিকল্প নেই: রাশেদ খান
  • প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের পরিস্থিতি অস্থির করে তুলছে: ফারুক
  • জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে
  • ১৭ বছর এক অসুর জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিল: নিপুন রায় 
  • নির্বাচিত সরকার না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি: আমীর খসরু
  • অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • চাঁদপুরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় এনসিপির নিন্দা
  • ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন
  • ১১ দিনের নতুন কর্মসূচি ইসলামী আন্দোলনের