বাংলাদেশে সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি মানেই অসংখ্য তরুণের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা আর নতুন জীবনের সম্ভাবনা। কিন্তু সেই স্বপ্ন যদি পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকে তখন সেটি হয়ে দাঁড়ায় দুঃস্বপ্ন। ঠিক এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-এর চারটি পদে নিয়োগপ্রত্যাশীরা।

২০২০ সালের ২২ অক্টোবর মাউশি ১০ থেকে ১৬তম গ্রেডের মোট ৪ হাজার ৩২টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দেশজুড়ে কয়েক লাখ প্রার্থী আবেদনের পর পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে ২০২১ সালে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ৩ হাজার ৪২২টি পদে নিয়োগও সম্পন্ন হয়। কিন্তু বাকি রয়ে যায় ৬১০ পদ।

যেসব পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে আছে, সেগুলো হলো প্রদর্শক, গবেষণা সহকারী, সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম-ক্যাটালগার এবং ল্যাবরেটরি সহকারী। অভিযোগ ছিল—লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়নে নিয়োগবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এ কারণে দীর্ঘদিন ফল প্রকাশ আটকে রাখা হয়।

অবশেষে ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এর দুই মাস পর, একই বছরের ৬ জুন অনুষ্ঠিত হয় মৌখিক পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন কয়েক হাজার প্রার্থী। কিন্তু আজও সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। ফলে চার ক্যাটাগরির নিয়োগপ্রক্রিয়া কার্যত স্থবির হয়ে আছে।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা বলছেন, পাঁচ বছর ধরে এক অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। চাকরির আশায় অনেকেই উচ্চশিক্ষা বা বিকল্প ক্যারিয়ার বাদ দিয়েছেন।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে পাচ্ছেন উচ্চতর স্কেল ১৫ ঘণ্টা আগে

মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থী জাকারিয়া হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের নিয়োগ অজানা কারণে আটকে আছে। এমনকি মৌখিক পরীক্ষার রেজাল্টও দেয়নি। ফলাফল প্রকাশ হলে অন্তত আমরা বুঝতে পারতাম কার চাকরি হবে আর কার হবে না।’

অন্য এক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। সরকারি চাকরির স্বপ্নে পড়াশোনা করেছি, কোচিং করেছি, অনেকে অন্য চাকরি ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন। অথচ ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে না।’

আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে চাকরি, নেবে ৪৬ কর্মী২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আন্দোলন ও আদালতের দ্বারস্থ চাকরিপ্রার্থীরা

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা রাস্তায় নামেন। চলতি বছরের ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন তাঁরা মাউশি ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন করেন। আন্দোলনের ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে প্রার্থীদের একটি অংশ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ২৪ জুলাই হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ দ্রুত ফলাফল প্রকাশের জন্য রুল জারি করেন। আদালতের নির্দেশনা প্রার্থীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

আরও পড়ুনখাদ্য অধিদপ্তরের ৩য় পর্যায়ে বাছাই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রশাসনিক জটিলতার দোহাই

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির একাধিক কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে স্বীকার করেছেন, প্রশাসনিক জটিলতা ও অভিযোগ যাচাইয়ের প্রক্রিয়াই বিলম্বের মূল কারণ। তবে কেন এত দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে, সে প্রশ্নের জবাব তাঁরা স্পষ্ট করে দিতে চাননি।

এ বিষয়ে মাউশির উপপরিচালক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য মো.

শাহজাহান কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি তথ্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার (সহকারী পরিচালক) এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে অবগত না বলে প্রথম আলোকে জানান।

শিক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘসূত্রতায় শুধু প্রার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও শূন্য পড়ে আছে। এর ফলে প্রশাসনিক কাজে অদক্ষতা ও কর্মক্ষমতার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

প্রার্থীদের জীবনে প্রভাব

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, ‘আমরা চাকরিপ্রত্যাশী থেকে বেকারেই থেকে গেছি। পাঁচ বছরে অনেকের বয়স সরকারি চাকরির জন্য প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আমাদের পরিবারও দুশ্চিন্তায় ভুগছে।’

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দীর্ঘ অনিশ্চয়তা ও বিলম্ব প্রার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকেই হতাশা ও উদ্বেগে ভুগছেন, যা ভবিষ্যতে সমাজের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।

আরও পড়ুনবিধির জালে আটকে আছে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অনিশ্চয়তার শেষ কোথায়

হাইকোর্টের নির্দেশের পরও এখনো ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, প্রয়োজন হলে আবারও তাঁরা আন্দোলনে নামবেন।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা না গেলে সরকারি চাকরির প্রতি আস্থা নষ্ট হবে। একই সঙ্গে দেশের মেধাবী তরুণদের একটি বড় অংশ দীর্ঘসূত্রতার কারণে হতাশ হয়ে পড়বেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ ক পর ক ষ ল খ ত পর ক ষ পর ক ষ র পর ক ষ য় প রক র য় চ কর র সরক র চ বছর সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাছের ওপর বজ্রপাত, সেখান থেকে কিংবদন্তি পেলেন ‘ওয়ান্ডারবয়’ ব্যাট

ঘটনাটা গত মঙ্গলবার রবার্ট রেডফোর্ডের মৃত্যুর পরদিন। লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্সের মাঠ ডজার স্টেডিয়ামে ব্যাটিং কেজের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাউল ইবানেজ ও চেজ ইউটলে। দুজনই বেসবলের সাবেক অলস্টার। এক দর্শনার্থী তাঁদের সামনে ‘রয় হবস’ নামটা উচ্চারণ করতেই রাউল বললেন, ‘দ্য ন্যাচারাল’, ইউটলে সায় দিলেন, ‘আমার পছন্দের সিনেমা।’

রেডফোর্ড হবস চরিত্রে অভিনয়ের সময় ইবানেজের বয়স ১২ বছর। ইউটলে আরও ছোট। হাইস্কুলে থাকতে প্রতিটি ম্যাচের আগেই নাকি ‘দ্য ন্যাচারাল’ দেখতেন মেজর বেসবল লিগে (এমএলবি) ১৯ বছর কাটানো ইবানেজ। তাঁর মতো যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো কিশোর কিংবা তরুণের মানসপটে ছাপ রেখেছেন হবস। বাংলাদেশে বেসবলের পরিচিতি প্রায় নেই। তবে খেলাধুলাপ্রেমী হলে রেডফোর্ডের ‘দ্য ন্যাচারাল’ সিনেমাটা মনে অন্য রকম ছাপ রাখতে পারে।

ফ্যান্টাসি ও বেসবল নিয়ে বানানো এ সিনেমার বিভিন্ন কার্ড রেডফোর্ডের মৃত্যুর পর ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বাজেটে বানানো এই সিনেমা ১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করে। নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, এ সিনেমা হিট হওয়ার পরই হলিউডে ফিরে আসে বেসবলভিত্তিক সিনেমার জনরা।

রয় হবস চরিত্রে অভিনয় করেন রবার্ট রেডফোর্ড

সম্পর্কিত নিবন্ধ