কুড়িগ্রামে হয়ে গেল কলাগাছের ভেলার বাইচ প্রতিযোগিতা
Published: 22nd, September 2025 GMT
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় হয়ে গেলো পাঁচ দিনব্যাপী নৌকা বাইচের আদলে কলাগাছের ভেলার বাইচ প্রতিযোগিতা। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঠের পাড় ছড়ায় প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলার আয়োজন করেন স্থানীয়রা। ব্যতিক্রম এ খেলা উপভোগ করেছেন বিভিন্ন বয়সী হাজারো মানুষ।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ভোগডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের ১৮টি দল। একটি ভেলায় চার থেকে পাঁচজন প্রতিযোগী ছিলেন। রবিবার বিকেলে ফাইনাল খেলায় সুযোগ পায় গরীবের বন্ধু, দশের দোয়া, বটতলী এক্সপ্রেসসহ পাঁচটি দল। ফাইনালে দশের দোয়া দলকে হারিয়ে বিজয়ী হয় গরীবের বন্ধু ভেলা দল।
আরো পড়ুন:
রাবিতে প্রযুক্তি প্রেমীদের নিয়ে ‘রোবটিড ২.
ঝালডাঙ্গা বিলে নৌকা বাইচ, দর্শকদের ঢল
আয়োজকরা জানান, প্রতিযোগিতার বিজয়ী দলের হাতে প্রথম পুরস্কার হিসেবে দুইটি খাসি তুলে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকা দলগুলোর হাতে যথাক্রমে একটি খাসি ও একটি রাজহাঁস তুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিযোগিতা দেখতে আসা রবিন বলেন, “প্রায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে গ্রামীণ জনপদের হাডুডু, গরুর মই দৌঁড়সহ অনেক ঐতিহ্যবাহী খেলা। নৌকা বাইচের মতো কলাগাছের ভেলা প্রতিযোগিতা দেখতে পেয়ে খুব আনন্দিত আমি। এবারই প্রথম গলাগাছের ভেলা প্রতিযোগিতা দেখলাম।”
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈদুর রহমান বলেন, “হাজারো মানুষ আনন্দ আর উল্লাস করে কলাগাছের ভেলা প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছেন। গ্রামাঞ্চলের মানুষের বিনোদনে এমন ব্যতিক্রমী খেলা আরো বেশি বেশি আয়োজন করা প্রয়োজন।”
ঢাকা/বাদশাহ/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল গ ছ র ভ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার শুধু অভিজাত ভিআইপি এলাকাই কেন ‘নীরব’
কাগজে-কলমে রাজধানীর সচিবালয় ও এর আশপাশের এলাকা হচ্ছে ‘নীরব এলাকা’। অর্থাৎ ওই এলাকায় হর্ন বাজানো নিষেধ। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে সচিবালয় ও এর আশপাশের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, চালকেরা ইচ্ছেমতো হর্ন বাজাচ্ছেন। ট্রাফিক সিগন্যালে কিংবা মোড়ে হর্নের আওয়াজে কান ঝালাপালা।
সচিবালয় এলাকার মতো ঢাকার আরও বেশ কয়েকটি এলাকাকে সরকারিভাবে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা আছে। এলাকাগুলো হলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশ (বিমানবন্দরের উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা), আগারগাঁও, সংসদ ভবন এলাকা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ রাজধানীর অভিজাত আরও চারটি এলাকা—গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
নগরবাসী অনেকের প্রশ্ন, কেন শুধু অভিজাত কিংবা ভিআইপি এলাকাকেই নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে? অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের কি শব্দদূষণের কারণে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হচ্ছে না?পরিবেশবিদ ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, নীরব এলাকা ঘোষণার আগে নির্দিষ্ট কোনো এলাকার শব্দদূষণ নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করা হয় না। ঘোষণার পরেও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েই দায় সারছে। এদিকে নগরবাসী অনেকের প্রশ্ন, কেন শুধু অভিজাত কিংবা ভিআইপি এলাকাকেই নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে? অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের কি শব্দদূষণের কারণে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হচ্ছে না?
আরও পড়ুনরাজধানীর চার অভিজাত এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫‘নীরব এলাকা’ কীনীরব এলাকা হলো এমন একটি নির্দিষ্ট এলাকা, যেখানে শব্দদূষণ রোধে হর্ন বাজানো ও উচ্চ শব্দ সৃষ্টি নিষিদ্ধ। সাধারণত হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত বা বিমানবন্দরসংলগ্ন এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব স্থানে যানবাহনের চালকদের হর্ন বাজানো নিষেধ থাকে। শব্দমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার বেশি হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের আদর্শ মান দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের ৪০ ডেসিবেল। এ সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা থাকবে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৪০ ডেসিবেল। ওই বিধিমালার ধারা ৮(২) অনুযায়ী, নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে হর্ন বাজালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথম অপরাধের জন্য কমপক্ষে এক মাস কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। পরে অপরাধের জন্য কমপক্ষে ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের আদর্শ মান দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের ৪০ ডেসিবেল। এ সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
সচিবালয় এলাকায় বাস্তবায়ন কঠিন। কারণ, যানবাহনের চাপে শব্দদূষণ কমানো যায়নি। বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ ছিল শব্দদূষণের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায়। যা নবায়ন হচ্ছে। আর নতুন বিধিমালায় ট্রাফিক পুলিশকে সরাসরি আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হবেপরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদসিগন্যালে থামার আগে–পরে হর্ন বেশিগত বুধবার বিকেলে সচিবালয়ের বাইরে ও চারপাশের সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত বাহনের চালকেরা অহেতুক হর্ন বাজাচ্ছেন। বিশেষ করে মোটরসাইকেলচালক ও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকেরা যেন প্রতিযোগিতা করে হর্ন দেন। বেশি হর্ন বাজাতে দেখা যায় ট্রাফিক সিগন্যালে থামার আগে এবং সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ার পরপর।
নীরব এলাকা ঘোষণাহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশ (বিমানবন্দরের উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা)
আগারগাঁও
সংসদ ভবন এলাকা
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
নীরব ঘোষিত এলাকায় হর্ন বাজালেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা ওই এলাকায় ঘুরে অহেতুক হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
সচিবালয়সংলগ্ন জিপিও মোড়ে দায়িত্ব পালনকারী এক ট্রাফিক সদস্য বলেন, ‘আমরা তো যানবাহন আর যানজট নিয়ন্ত্রণ করেই কূল পাই না।’
বিকেলে সচিবালয়ের বাইরে ও চারপাশের সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত বাহনের চালকেরা অহেতুক হর্ন বাজাচ্ছেন। বিশেষ করে মোটরসাইকেলচালক ও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকেরা যেন প্রতিযোগিতা করে হর্ন দেন। বেশি হর্ন বাজাতে দেখা যায় ট্রাফিক সিগন্যালে থামার আগে এবং সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ার পরপর।ঘোষণার পরেও মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণস্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) সরকারিঘোষিত নীরব এলাকাগুলোতে ঘোষণার আগে ও পরে শব্দদূষণের তারতম্য যাচাই করতে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটি স্বয়ংক্রিয় সাউন্ড লেভেল মিটারের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে শব্দমাত্রা পরিমাপ করে।
আমরা তো যানবাহন আর যানজট নিয়ন্ত্রণ করেই কূল পাই না।ট্রাফিক সদস্যক্যাপসের ১০ সদস্যের একটি গবেষক দল ২০২২ সালের মার্চে ঢাকা শহরের চারটি নীরব ঘোষিত এলাকায় শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে এবং সব এলাকাতেই মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ শনাক্ত করে। এর মধ্যে সচিবালয় এলাকায় গড় শব্দমাত্রা সর্বোচ্চ ১০০ দশমিক ১৭ ডেসিবেল পাওয়া যায়, যা জাতীয় আদর্শ মানের প্রায় দ্বিগুণ। এর পরেই ছিল জাতীয় সংসদ এলাকা, যেখানে শব্দমাত্রা ছিল ৯৯ দশমিক ৩৫ ডেসিবেল।
সচিবালয়ে গড় শব্দমাত্রা ১০০ দশমিক ১৭ ডেসিবেল
জাতীয় সংসদ এলাকায় শব্দমাত্রা ৯৯ দশমিক ৩৫ ডেসিবেল
আগারগাঁও এলাকায় সর্বনিম্ন গড় শব্দমাত্রা ছিল ৭৮ দশমিক ১১ ডেসিবেল
অন্যদিকে আগারগাঁও এলাকায় সর্বনিম্ন গড় শব্দমাত্রা ছিল ৭৮ দশমিক ১১ ডেসিবেল, যা আদর্শ মানের চেয়ে বেশি। জরিপে সচিবালয়ে সর্বোচ্চ ১২৭ ডেসিবেল এবং আগারগাঁওয়ে সর্বনিম্ন ৫৩ দশমিক ৪০ ডেসিবেল রেকর্ড হয়। সার্বিকভাবে সব এলাকার গড় শব্দমাত্রা ছিল ৯৭ দশমিক ৬৩ ডেসিবেল, যা নীরব এলাকা ঘোষণার কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
শুধু অভিজাত বা উন্নত এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা নীতিগত বৈষম্য এবং সমতার পরিপন্থী। অতিরিক্ত শব্দে ঢাকার অন্যান্য এলাকায়ও শ্রবণক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ সেখানে কোনো উদ্যোগ নেই।বিআইপি সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান ঘোষণা সীমাবদ্ধ কাগজে-কলমেক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার মনে করেন, ঢাকার মতো অতিরিক্ত শব্দদূষণের শহরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কিছু এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যেতে পারত। কিন্তু বাস্তবে যেসব এলাকা নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়েছে, সেগুলোতে ঘোষণার আগে কোনো সমন্বয় সভা হয়নি। কোনো বেজলাইন ডেটা সংগ্রহ করা হয়নি এবং নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া পর্যালোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, শুধু অভিজাত বা উন্নত এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা নীতিগত বৈষম্য এবং সমতার পরিপন্থী। অতিরিক্ত শব্দে ঢাকার অন্যান্য এলাকায়ও শ্রবণক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ সেখানে কোনো উদ্যোগ নেই।
নীরব ঘোষিত এলাকাগুলোতেও হর্ন বাজানো বন্ধ করা ও শব্দদূষণ কমানো যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সচিবালয় এলাকায় বাস্তবায়ন কঠিন। কারণ, যানবাহনের চাপে শব্দদূষণ কমানো যায়নি। বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ ছিল শব্দদূষণের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায়। যা নবায়ন হচ্ছে। আর নতুন বিধিমালায় ট্রাফিক পুলিশকে সরাসরি আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।