দেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা শিক্ষার উন্নয়নে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার নানা দিক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষায় বিনিয়োগ বনাম নিষ্ক্রিয়তার মূল্য: শিশু ও তরুণদের শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার বৈশ্বিক ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যয়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ইউনেসকোর ‘দ্য প্রাইস অব ইনঅ্যাকশন’ প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ। আলোচনায় শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ইউনেসকোর ওই প্রতিবেদন বলা হয়, শিক্ষায় বিনিয়োগ না বাড়ালে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার ১০ শতাংশ কমাতে পারলে একটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

আলোচনায় বক্তারা দেশের শিক্ষার উন্নয়নে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার নানা ত্রুটিপূর্ণ দিক উল্লেখ করেন। তাঁদের আলোচনায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলো উঠে আসে।

এ বৈঠক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ, প্রারম্ভিক শিক্ষায় বিনিয়োগের মতো ১০টি সুপারিশ করা হয়। সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর জোর দেন তাঁরা।

অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার এই অবস্থা মূলত একটি রাজনৈতিক ব্যর্থতা। শিক্ষার উন্নয়নে আমরা রাজনৈতিক দল বা শ্রেণিগুলোকে একটি চুক্তিতে আনতে পারছি না। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগের অভাব ও বৈষম্য দেখা যাচ্ছে।’

২০২৩ সালের ব্যানবেইসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাধ্যমিকে এই সংখ্যা ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। মেয়েদের মধ্যে এই ঝরে পড়ার হার বেশি।

আবার যারা পড়াশোনা করছে, তাদের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। দ্য ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্টের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভালোভাবে বাংলা পড়তে পারে। মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে প্রত্যাশিত উত্তর করতে পারে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূরজাহান খাতুন বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, এখানে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে গণমাধ্যম কিছুই করে না।

সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক মো.

জুলফিকার হায়দার বলেন, ‘সমস্যাগুলো চিহ্নিত হচ্ছে, এগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য একটা ওয়েকআপ কল। তবে মনে রাখতে হবে, এগুলো বাইরে থেকে কেউ এসে ঠিক করে দেবে না। এসব আমাদেরই ঠিক করতে হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দিনব্যাপী পুষ্টিমেলা

বগুড়ায় পরিবেশবান্ধব নিরাপদ সবজি উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পারিবারিক পুষ্টি উন্নয়ন ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা, স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের নিয়ে পুষ্টিমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) আয়োজনে বগুড়ার জয়পুরপাড়ায় টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এ মেলা হয়।  

আরো পড়ুন:

আম খাওয়া কেন জরুরি

দুধ পান করলে কী সত্যিই কাশি বাড়ে

টিএমএসএস কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ), ডানিডা ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত রুরাল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফর্মেশন প্রজেক্ট (আরএমটিপি) প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত পুষ্টি ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন পিকেএসএফের প্রোগ্রাম এন্ড নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট কপিল কুমার পাল। 

দিনব্যাপী পুষ্টি ক্যাম্পেইন মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এস এম নূর-ই-শাদীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী আশরাফুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায় ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ। 

এছাড়াও টিএমএসএস পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান গুলনাহার পারভিন, টিএমএসএস উপদেষ্টা আয়েশা বেগম, উপদেষ্টা মিনতি আক্তার বানু, টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শাহজাহান আলীসহ আমন্ত্রিত অতিথি, টিএমএসএস কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

সম্মানিত অতিথি  হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিএমএসএস প্রতিষ্ঠাতা  নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন টিএমএসএস উপনির্বাহী পরিচালক সোহরাব আলী খান।

কৃষি উদ্যোক্তা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পুষ্টি বিষয়ক র‍্যালির মাধ্যমে ক্যাম্পেইন শুরু হয়। র‍্যালির শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা পুষ্টি ক্যাম্পেইনের ভিটামিন, মিনারেল ও পুষ্টিজাত পণ্য বিষয়ক স্টল পরিদর্শন করেন। 

মেলায় মেডিকেল ক্যাম্প, ভিটামিন স্টল, খনিজ, রান্নার কৌশল প্রর্দশনী, ওয়াস স্টল, নিউট্রিশন স্টলসহ সচেতনতামূলক আটটি স্টলের মাধ্যমে শিশু, অভিভাবক ও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের হাতের নাগালে থাকা বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়া হয়। স্টল পরিদর্শন শেষে অতিথিরা এ ধরনের কার্যক্রম দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং পুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক দিকনির্দেশনা দেন। মেলায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়। কৃষি উদ্যোক্তা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পুষ্টি বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ, গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। ক্যাম্পেইন শেষে প্রতিযোগীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। 

মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলার উদ্দেশ্য জনসাধারণের মধ্যে পুষ্টি ও খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, জনগণের মধ্যে পুষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়িয়ে দেওয়া, পুষ্টি সম্পর্কে ভুল ধারণা, ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য অভ্যাস ও কুসংস্কার সম্পর্কে জ্ঞান দান, সুষম খাবার কী এবং এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু এ সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দেওয়া এবং বিভিন্ন বয়সের পুষ্টি চাহিদা সম্পর্কে অবগত করা। বাড়ন্ত শিশুদের খাদ্যের ধরণ ও স্বাস্থ্যকর স্কুল টিফিন সম্পর্কে সচেতন করাসহ জনগণের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো বলেও জানান আয়োজকরা। 

‘ইকোলজি বান্ধব নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক উপপ্রকল্পটি টিএমএসএস কর্তৃক বগুড়ার ৪টি উপজেলায় ১১ হাজার ৫০০ জন সবজি খামারি নিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। 

ঢাকা/এনাম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দিনব্যাপী পুষ্টিমেলা