ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম পর্যায়ে ৬৬টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসি এ তথ্য জানায়।

এবার নির্ধারিত সময়ে ৩১৮টি এবং পরে ১৩টি পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করেছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকেছিল ৭৩টি সংস্থা। দাবি-আপত্তি শেষে ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এসব সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫ অনুসারে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

আবেদন করা আরও ১৬টি সংস্থার বিষয়ে দাবি-আপত্তি জানতে চেয়ে ১৫ কার্যদিবস সময় দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা

দেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা শিক্ষার উন্নয়নে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার নানা দিক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষায় বিনিয়োগ বনাম নিষ্ক্রিয়তার মূল্য: শিশু ও তরুণদের শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার বৈশ্বিক ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যয়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ইউনেসকোর ‘দ্য প্রাইস অব ইনঅ্যাকশন’ প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ। আলোচনায় শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ইউনেসকোর ওই প্রতিবেদন বলা হয়, শিক্ষায় বিনিয়োগ না বাড়ালে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার ১০ শতাংশ কমাতে পারলে একটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

আলোচনায় বক্তারা দেশের শিক্ষার উন্নয়নে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার নানা ত্রুটিপূর্ণ দিক উল্লেখ করেন। তাঁদের আলোচনায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলো উঠে আসে।

এ বৈঠক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ, প্রারম্ভিক শিক্ষায় বিনিয়োগের মতো ১০টি সুপারিশ করা হয়। সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর জোর দেন তাঁরা।

অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার এই অবস্থা মূলত একটি রাজনৈতিক ব্যর্থতা। শিক্ষার উন্নয়নে আমরা রাজনৈতিক দল বা শ্রেণিগুলোকে একটি চুক্তিতে আনতে পারছি না। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগের অভাব ও বৈষম্য দেখা যাচ্ছে।’

২০২৩ সালের ব্যানবেইসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাধ্যমিকে এই সংখ্যা ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। মেয়েদের মধ্যে এই ঝরে পড়ার হার বেশি।

আবার যারা পড়াশোনা করছে, তাদের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। দ্য ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্টের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভালোভাবে বাংলা পড়তে পারে। মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে প্রত্যাশিত উত্তর করতে পারে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূরজাহান খাতুন বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, এখানে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে গণমাধ্যম কিছুই করে না।

সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক মো. জুলফিকার হায়দার বলেন, ‘সমস্যাগুলো চিহ্নিত হচ্ছে, এগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য একটা ওয়েকআপ কল। তবে মনে রাখতে হবে, এগুলো বাইরে থেকে কেউ এসে ঠিক করে দেবে না। এসব আমাদেরই ঠিক করতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ