Risingbd:
2025-11-07@06:48:22 GMT

কবির কর্তব্য

Published: 7th, November 2025 GMT

কবির কর্তব্য

‘কবির কর্তব্য’ কথাটি আপত্তিকর; অন্তত এই যুগে যারা নিজেদের কবি মনে করেন কিংবা যাদের অন্যরা কবি বলে মানেন তাদের আলাদা করে কর্তব্যকর্ম নামের কোনো বিষয় থাকার কথা নয়। কেননা কর্তব্য বিষয়টিকে আমরা অধিকাংশ মানুষ কেবল মৌলিক প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করি, ফলে রবীন্দ্রনাথকেও বলতে হয় ‘অপ্রয়োজনের প্রয়োজন’। কিন্তু মৌলিক প্রয়োজনের যেমন দৃশ্যমান বাস্তবতা আছে, কথিত অপ্রয়োজনের প্রয়োজনে সেটি নেই। দেহ মন আত্মার রসায়নে শুধুই দৃশ্যমান দৈহিক কর্তব্য কবিদের থাকতে পারে না। কেন ‘কবির কর্তব্য’ থাকতে পারে না, সেসব বিশদ আলাপে যাওয়া যাচ্ছে না। তবে কবির কর্তব্য কবিতা লেখা, যা একইসঙ্গে তার কবি অভিধাভুক্ত হয়ে ওঠারও শর্ত। তাহলে আলাদা করে ‘কবির কর্তব্য’ জাতীয় বিষয় কেন উত্থাপিত হচ্ছে?

হচ্ছে কারণ, কবি সেই কবিতা লেখার প্রাথমিক কর্তব্যটি সম্পর্কেও সম্ভবত উদাসীন হয়ে উঠেছেন। এ কথা বললে নিশ্চয়ই অনেক কবি তেড়ে আসবেন, কেননা তারা প্রচুর কবিতা লিখেছেন এবং লিখে চলেছেন। কিন্তু আসলেই কি তারা কবিতা লিখছেন? নাকি কবিতার নামে কোনো সুযোগ সুবিধা সুখ্যাতি অর্জনের জন্য কবিতার স্ট্রাকচার বজায় রেখে এক ধরনের স্থুল শব্দের আবর্জনা তৈরি করছেন? এবং ক্রমাগত পুনরাবৃত্তির একটি গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছেন? বর্তমান বাংলা ভাষায় কবিতা নামে যেসব রচনা তৈরি হচ্ছে এগুলোর মাঝে কত শতাংশ কবিতা হতে পারে? (এখানে কোনটি কবিতা আর কোনটি কবিতা নয়, সেই প্রশ্ন অবান্তর; কেননা কবিতা রচনার ইতিহাসের সূচনা প্রায় লিপি আবিষ্কারের সমসাময়িক এবং বিগত প্রায় তিন হাজার বছর ধরে অসংখ্য কাব্যতাত্ত্বিক অজস্র পন্থায় কবিতা কী? এবং কী কবিতা নয়, সেসব নিয়ে সবিস্তারে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে গিয়েছেন, তাদের সারমর্ম হলো কবিতাকে কবিতা হয়ে উঠতে হবে, কবিতা হয়ে ওঠার বিষয়।) সৃজনশীলতা, ভাব-ভাষ্য-বিন্যাসে আমাদের কবিতা কি কবিতা হয়ে উঠছে? বাংলা কবিতায় কতখানি সৃজনশীলতা আর কতটুকু পুনরাবৃত্তি? সৃজনশীল না হলে কি সেটি কবিতা হয়ে ওঠে? আর কবিতার নামে কতটুকু নির্বোধ অনর্থক ভাষার বিন্যাস তৈরি হচ্ছে?

বাংলা ভাষায় আদৌ কোনো কবিতা কি রচিত হচ্ছে এখন? স্তুতি কবিতা, পুঁথি কবিতা বা বিষোদগার-বিদ্বেষের গুঁতাগুঁতি কবিতা কি কবিতা? পুরনো ভাব-ভাষা-বিন্যাসের হুবহু অনুকরণে নতুন কোনো ব্যক্তি লিখলেই সেটি কবিতা হয়? ইতিহাস সংস্কৃতি সমাজ দর্শন অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের বোধহীন রচনা কি কবিতা? প্রবল জনপ্রিয়তা কি ভালো কবিতার মাপকাঠি? কবিরা হয়তো গলা ফুলিয়ে বলবেন, অবশ্যই কবিতা রচিত হচ্ছে, ভালো কবিতা হচ্ছে, প্রচুর নতুন নতুন সৃষ্টিশীল কাজ হচ্ছে; আদতে হচ্ছে কি? আমরা কি আমাদের কবিতা নামক রচনাকে ইতিহাস সংস্কৃতি মহাকাল দেশ জাতি সম্প্রদায় দর্শন রাজনীতি অর্থনীতি সমাজ সৃষ্টিশীলতা দিয়ে যাচাই করে দেখেছি? যাচাই করে দেখার ধৈর্য কিংবা সাধনা কি আমাদের আছে? আর যাচাই-বাছাই, বিচার-বিবেচনা করার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? যাচাইয়ের মানদ-ই বা কী? সেখানে কি কোনো ঐকমত্য সম্ভব? এসব  প্রশ্নের বিস্তারিত, গ্রহণযোগ্য এবং যৌক্তিক উত্তর আছে, কিন্তু তার জন্যে যে গভীর অধ্যবসায় এবং প্রায়োগিক প্রজ্ঞা দরকার সেটিই বর্তমান কবিদের ভেতর বিরল। ফলে কবির যে কর্তব্য অর্থাৎ ‘কবিতা রচনা’ সেটি হচ্ছে না। কিন্তু এসব বোঝার, বলার কিংবা ধৈর্য সহকারে সেসব শোনার মতো কবি-সমালোচক-রসিক আমাদের নেই, তবে তথাকথিত কবিতা রচয়িতা রয়েছে সংখ্যাতীত। প্রকৃত সমালোচনা নেবার মতো পরিপক্বতা আমাদের হয়ে ওঠেনি এবং প্রকৃত সমালোচনা নামক বস্তুটিও তাই অনুপস্থিত।

সমালোচনার নামে আমরা কেবলি নিন্দা অথবা স্তুতি রচনার বিভীষিকাময় স্তূপ দেখতে পাই। সমালোচনা করতে এবং নিতে পারার মতো বৌদ্ধিক তাত্ত্বিক ও মানসিক প্রজ্ঞা অর্জন করতে আমাদের আরো বহু পথ পারি দিতে হবে। পক্ষের লোকের অন্ধ প্রশংসা ও বিপক্ষের লোকের হিংসাত্মক নিন্দাকে আমরা সমালোচনা আকারে হাজির করেছি, তাই প্রকৃত বিষয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কহীনতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। কবির কর্তব্য কবিতা লেখা, তবে ‘কবি’ এবং ‘কর্তব্য’ বুঝতে অক্ষম হলে যে ধরনের খিচুরি তৈরি হবার আশঙ্কা থাকে তাই হয়ে চলেছে বাংলা কবিতায়। কবি কবিতা কর্তব্য এসবের বোঝাপড়ার জন্য গভীর একাগ্রতায় প্রাণ প্রকৃতি প্রযুক্তি সময় পাঠের সক্ষমতা জরুরি।

সময় ধারণ করে সময়োত্তীর্ণ হয়ে ওঠার যে যোগ্যতা আমরা বিগত কবি-সাহিত্যিকদের ভেতর দেখেছি, তার কিছুই আমাদের নেই; কেন নেই, সেই প্রশ্নটি বড়ো আকারে উত্থাপিত হওয়া দরকার। সমাজে ভোগবাদীতার প্রবল জয়জয়কার, তাৎক্ষণিক লাভের আকাক্সক্ষা, নিবিড় অধ্যবসায়ে অনীহা, উত্তুঙ্গ আসক্তির স্রোত, অপরিণামদর্শিতার বাম্পার ফলন পুরো সামাজিক কাঠামো বদলে দিয়েছে; ‘কবি’ এখানে সাধারণ একটি সামাজিক বর্গ মাত্র। তাই সার্বিক সমাজের নান্দনিক মাত্রার প্রতিফলন ঘটে সাধারণ কবিদের কবিতায়, আর ‘চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত’ অসাধারণ কবিরা সমাজের রুচি-নান্দনিকতাকেই নতুন করে নির্মাণ করেন। বাংলা সাহিত্যে তার অনেক নজির আছে, মধুসূদন রবীন্দ্রনাথ নজরুল জীবনানন্দ সেই তালিকায় প্রথমেই থাকবেন। কিন্তু বর্তমান কালের কবিরা সমাজের দোহাই দেন; পক্ষে-বিপক্ষে মাথা গণনা করেন, সেই মাথায় গোবর না মগজ সেটি বিবেচনা করেন না। স্থুল গণরুচির অনুগামী হয়ে জনপ্রিয় হবার তীব্র বাসনায় নিজেকে কতদূর নামানো যায় সেই প্রতিযোগিতা চলছে কবিদের মাঝে। আগে কবিরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতো এখন বাজার কবিদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং অত্যন্ত হাস্যকর বিষয় হলো কবিদের এই বাজারও আসলে একটি অলীক ধারণায় পরিণত হয়েছে এখন; কেননা সমকালীন প্রকাশনার তথ্য অনুযায়ী বর্তমান কবিদের বই সাধারণত তিনশ কপি ছাপা হয়, সেই তিনশ কপি বইয়ের (অনেক অশ্লীল নির্লজ্জ নি¤œরুচির মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে পরিচিতদের অনেকটা গছিয়ে দেওয়ার মতো প্রক্রিয়ায়, প্রি-অর্ডার, ক্রেতাকে অনেক লোভনীয় অফার, অটোগ্রাফ, ফটোগ্রাফ, বানোয়াট প্রশংসা, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লাউনগিরি ইত্যাদি সহযোগে) দেড়শ কপি বিক্রি হয়, খ্যাতির দুর্দমনীয় বাসনায় কবি নিজেই একশ কপি বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন প্রভাবশালীদের বিলি করেন, আর বাকী পঞ্চাশ কপি প্রকাশকের গোডাউনে উইপোকায় কাটে; এই হলো বাজার। সেই বাজারে সেজেগুজে কবিরা পসরা সাজিয়ে খদ্দের খুঁজে বেড়ান। আঠারো কোটি মানুষের দেশে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ২৯ কোটি বাংলাভাষী মানুষের পৃথিবীতে কবিদের এই তিনশ কপির অলীক বাজারের মোহ কাটে না; এটি কী ধরনের হ্যালুসিনেশন তার ভালো ব্যাখ্যা দেওয়া তুখোড় মনস্তাত্ত্বিকের কাজ। খালি চোখে যা দেখা যায়, সেটি হলো কবিদের কিংবা কবিতার আসলে বাজার নেই। তাহলে সেই না থাকা বাজারের মোহে কবিরা কেন উদয়াস্ত স্বপ্ন দেখে নিজেদের সম্ভাব্য সৃষ্টিশীলতাকে জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত থাকেন? থাকেন কারণ গজদন্তমিনারে বসবাসের হাইপাররিয়েলিটিতে তাদের বসবাস। সমাজকে তারা উল্টো পদ্ধতিতেই পাঠ করতে শিখেছেন। আত্মরতির বর্ণিল পোটলাটির আকৃতি ছাড়া তারা আর কিছুই দেখতে পান না।
কবি সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি সাধকদের সময় বুঝতে হবে, বা সময় পড়তে জানতে হবে; এমন আপ্তবাক্যগুলোও আমাদের বেশ ভালো লাগে। কিন্তু সময় কীভাবে পড়তে হয়? কেন সময় পড়তে হবে? সময় পাঠের ধরন এবং উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই রয়েছে, না হয় সময়ের পাঠ দিয়ে আমরা কী করব? সময়ের পাঠ কি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা? সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার অর্থ তো এক প্রকার আত্মহত্যা, নির্জীবভাবে নিজেকে সঁপে দেওয়ার বিনিময়ে কিছু খুচরা অর্জন নিজের ঝুলিতে ভরা। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পৃথিবীর কোন মহান কর্মটি সাধিত হয়েছিল? আমরা দেখেছি পৃথিবীর মহান সৃষ্টিকর্মগুলোর অধিকাংশই তার নিজস্ব সময়ের সঙ্গে ছিল বেমানান। তাহলে সময় পাঠ করতে পারার অর্থ কী সময়কে ছাড়িয়ে যাওয়া? সময়কে কীভাবে ছাড়িয়ে যাওয়া যায়? সময়কে ছাড়িয়ে কোথায় যাওয়া হয়? কেন যেতে হয়? আমাদের কবি-সাহিত্যিকগণের এ বিষয়ে কোনো গভীরতর অনুধাবন, অনুসন্ধান আছে কি? যদি না থাকে তাহলে সময় পড়ার আপ্তবাক্যটি আকর্ষণীয় ফানুস ছাড়া কিছুই হবার কথা নয়। কবি শিল্পী সাহিত্যিকদের ত্রিকালদর্শী হতে হয় বলে একটি কথা আছে। পূর্বজদের এমনই যোগ্যতা আমরা দেখেছি। কোনো মানুষের পক্ষে কঠোর সাধনার বাইরে ত্রিকালদর্শীতার গুণ অর্জন করা সম্ভব নয়; পর্যাপ্ত পঠন-পাঠন-পর্যবেক্ষণ এবং বাস্তব জ্ঞানের যথার্থ পরিচর্যা না থাকলে এই গুণ ধরা দেবে না। কিন্তু আমাদের কবিরা প্লেটোর সেই ‘ডিভাইন মেডনেস’ আক্রান্ত দৈব প্রতিভার স্মারক মনে করেন নিজেদের, পঠন প্রজ্ঞা অধ্যবসায় এখানে গুরুত্বহীন। প্রকৃতপক্ষে কবিরা বহন করেন কথা, ভাব-ভাষা-ভবিষ্যৎ; সাধকেরা প্রচলিতের সীমা লঙ্ঘনকারী কথা বা ভাব অথবা ভাষ্য বহন করে প্রচলিতের ঊর্ধ্বসীমা অথবা নি¤œসীমা লঙ্ঘন করে নতুন পথ রচনা করেন। কেন তাকে এমন সীমা লঙ্ঘন করতে হয়? সময়ের সীমায় কেন তার অস্বস্তি? কারণ কবি-সাহিত্যিকদের সময় ধারণ করার বিষয়টি সাধারণের মতো নিশ্চয়ই হতে পারে না। তাকে অতীত মন্থন করে বর্তমানের নির্যাস নিয়ে ভবিষ্যতের কথা বলতে হয়, ভবিষ্যতের দিকে চলতে হয়। সময়ের পাঠ কবিদের জন্য সমাজের পঙ্কিলতায় তলিয়ে যাওয়া নয়, রুচিহীনতার সাথে সমঝোতা নয়, জনপ্রিয় হবার চটকধারী প্রচারমূলক পঙ্ক্তি রচনাও নয়; বরং সমাজের নিগূঢ় পর্যবেক্ষণে তার অসুস্থতা সারিয়ে তোলার ক্যাথারসিস। কাজেই সাধারণভাবে সময় পাঠ করতে পারার মতো উপরিস্তরের কথা ভবিষ্যতের কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতি সাধকদের বিভ্রান্ত করবে। আমাদের চারপাশে সময়ের পাঠ বলতে দেখেছি ¯্রােতে গা ভাসিয়ে দিয়ে খড়কুটো জমানোর এক ধরনের অত্যন্ত নি¤œবুদ্ধির ক্রিয়াকা-কে কবি-সাহিত্যিকের সময়জ্ঞান হিসেবে পাঠ করা হচ্ছে। কবিতা, শিল্পসাহিত্য সাধকের সময়বোধ নিতান্ত সাধারণ মানুষের মতো একই পদ্ধতির নয়, এই বিষয়টি অবজ্ঞা করতে কিংবা এড়িয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিম-লে।
উপরিতলের বুদবুদ গুণে সময় পাঠ করার ফলাফল কী? সেটি আমাদের বর্তমান সমাজের দিকে, তার কবি-সাহিত্যিকদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারার কথা। সময়ের দায়বহন করে কবি সাহিত্যিক শিল্পী সমাজ (বলে রাখা ভালো, এখানে সব ধরনের সৃজনশীল ব্যক্তিবর্গের ক্রিয়াকা-কেই বোঝানো হচ্ছে)। কিন্তু কবির কর্তব্যের কথা বলতে গেলেই তেড়ে আসবেন একদল অপোগ-। অজ¯্র অবাঞ্ছিত প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন; কবিকে কেন দায়িত্ব নিতে হবে? তাহলে কবির দায়িত্ব কে বহন করবে? কবিকে কে দিয়েছে সমাজের দায়? এমনকি ‘কবিতার জন্য কবিতা’ ধরনের ফালতু কথাও বেশ জনপ্রিয়; তবে ‘কবিতার জন্য কবিতা’ বিষয়টিও যথার্থ হতে পারতো যদি অন্তত ওসব রচনাকে কবিতা বলা যেতো (এখানে মোটেই মার্ক্সবাদী কাব্যভাবনার কথা বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে তার শিল্পোত্তীর্ণ হয়ে ওঠার কথা)। এই প্রসঙ্গেই কবিতা শিল্প সংস্কৃতি বোঝা না-বোঝার প্রশ্ন। যখন আমরা কবিতা শিল্প সংস্কৃতিকে বুঝতে ভুল করি তখনই এই বিষয়ে হরেদরে শিথিল বাক্যবিনিময় সম্ভব। কবিতা শিল্প সংস্কৃতির ক্ষমতা এবং তার সামাজিক ভূমিকা সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকেই এমন অবিমৃশ্যকারিতার জন্ম। এর বিরুদ্ধতাবাদী তেড়ে আসা গ-ারের দল কবির কর্তব্য বিষয়টি বুঝতেই পারেন না, তাই শিং বাঁকা করে তেড়ে আসেন বক্তার দিকে; তিনি ভেবেছেন তাকে সমাজের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে। কবির দায় নেওয়া আর গৃহকর্তার দায় নেওয়ার ধরন এক নয়। সমাজের চিন্তার দায় কবিকে নিতে হবে তার সৃষ্টির ভেতর দিয়ে। সমাজ যদি অধঃপতিত হয় তাহলে বুঝতে হবে এর কবি শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা আরো অনেক আগেই অধঃপতিত হয়েছেন। মাথা থেকেই পচনের সূচনা। বুদ্ধিবৃত্তি, মন-মানসিকতা, রুচি-নন্দন, আচার-আচরণের দায় সমাজের চিন্তকদের, কবি-সাহিত্যিকগণ তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সক্রিয় অংশ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো কবিদের এই সাধারণ বোধটুকুই দেখা যায় না; তাহলে এখানে কারা কবি হয়ে উঠেছেন? কারা কবি অভিধায় ভেকধারী প্রতারক? এর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণ দরকার। কবিতার গভীরতর বোধ এবং প্রাজ্ঞ সমালোচনাই সেই পথ খুলে দিতে পারে। অন্তত নিজস্ব সৃষ্টির বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সচেতন থাকার মধ্য দিয়ে নতুন সৃষ্টি আর নতুন চিন্তার দিকে সমাজকে ধাবিত করাই কবির দায়িত্ব। যিনি কাব্যচর্চা করেন তিনি নানাভাবেই এই দায়িত্ব জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে পালন করে চলেন, তবে এই বিষয়ে সজাগ ও সচেতন দৃষ্টি না থাকলে কবিতাই ব্যবহৃত হয় কবির নিজের বিরুদ্ধে, তার নিজস্ব সমাজ ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। আমরা সচেতন নই বিধায় আমাদের সৃজিত অধিকাংশ কর্মই কোনো সঠিক নিশানা পাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, আমাদের সৃষ্টি আত্মঘাতী হয়ে উঠছে জাতীয় জীবনের সর্বত্র। আমাদের কবি মহল অত্যন্ত নির্ভার চিত্তে মনে করেন তিনি আনন্দ সৃষ্টি করে জগতের প্রাণীকুলকে সুখী করে তুলছেন, যা নির্মমভাবে কবিতা ও সকল শিল্পকলাসংশ্লিষ্ট সৃষ্টিকর্মের দায় সম্পর্কে অবাঞ্ছিত উপসংহার। কেননা এই কবিতা ও শিল্পকলা অন্তত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখেছি নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয় সত্তার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাই কবিতা ও শিল্পকলাকে নিরীহ নির্দোষ আনন্দ-বিনোদনের উৎস মনে করার ভেতরে মৌলিক বিভ্রম রয়ে গেছে, সময় পাঠের নামে আমরা ক্রমাগত সময়ের বিষ্ঠায় আরো তলিয়ে যাচ্ছি।
সাম্প্রতিককালে কবিতা ও শিল্পকলার সঙ্গে দারুণ আর্কষণীয় হয়ে উঠেছে আরো একটি জনপ্রিয় ভাষ্য যে ‘কবি শিল্পী সাহিত্যিকদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে’, বেশ! ‘মানুষ একটি রাজনৈতিক প্রাণী’ যখন তাহলে রাজনীতির বাইরে তো আর চাইলেই থাকা যায় না। আমাদের কবি সাহিত্যিক শিল্পীরা পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হয়ে উঠলো, এরা বুঝতেই পারলো না, কবি অথবা শিল্পীর রাজনীতি বলতে আসলে কী বোঝায়? রাজনীতিবিদের মতই তারা মাঠেঘাটে রাজনীতি নিয়ে মেতে উঠলো, একদল আরেক দলকে রাজনীতিবিদের মতোই আক্রমণ প্রতিআক্রমণ, নানাবিধ কূটচাল ও ভাষা প্রয়োগ করতে থাকল, আমরাও মনে করলাম বাহ্ আমাদের কবি-শিল্পীরা রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠেছেন। প্রতিবাদ প্রতিরোধে মুখর হয়ে উঠেছেন। প্রবাদে সম্ভবত এরই নাম ‘কাঁঠালের আমসত্ত্ব’ কিংবা ‘সোনারপাথর বাটি’। ফলে কবি সাহিত্যিক শিল্পী হারিয়ে গেলো, অবশ্য এর আগেও খুব ছিল এমন কথাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না; কারণ প্রকৃত কবি এবং কবিতার রাজনীতি যদি কিছু পরিমাণও থাকত তাহলে এই চিত্র আরো কিছুটা আড়ালেই থেকে যেতে পারত। কিন্তু কবি ও শিল্পীদের মাধ্যমে আমরা নতুন করে আরো একদল রাজনীতিবিদ পেলাম, যারা কবিতা শিল্প সংস্কৃতির কিছুই বুঝল না কিন্তু তার একটা নকল আলখেল্লা গায়ে জড়িয়ে রাখলো। তাতে করে ঘটল দ্বিতীয় বিপর্যয়, আমাদের রাজনীতিবিদরা ভাবলো তাহলে আমি আর কবি হওয়া থেকে কেনো বাদ যাবো? তারাও কবি হয়ে উঠলো অবশেষে আমরা কবি শিল্পী সংস্কৃতিসাধক এবং রাজনীতিবিদ দুটোই হারিয়ে ফেললাম। এখন আমাদের রাজনীতিবিদ এবং কবি সাহিত্যিক শিল্পী বুদ্ধিজীবী কিছুই নাই। যা আছে তাদের একপ্রকার হাঁসজারু বলা যায়, সুকুমার রায় যাদের কথা তাঁর ‘খিচুড়ি’ কবিতায় বলেছেন (হাঁস ছিল, সজারুও, (ব্যাকরণ মানি না)/ হয়ে গেল ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না)। কবি ও শিল্পীর রাজনীতি সচেতনতা বা রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ধরন কি হবে সেটি কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারে না, সেটি কবি ও শিল্পী নিজেরাই স্থির করেন কিন্তু সেখানে শিল্পকলাই আরো গভীরতর ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে, নিরেট রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা মেশিন হয়ে ওঠা কবি ও কবিতার সাথে বোঝাপড়া না থাকার লোভনীয় ‘হিঙ্গুল বরণ’ মাকাল ফল।
কবিরা যখন প্রথাগত রাজনীতিবিদ এবং ক্ষমতার চাটুকার হয়ে উঠলেন তখন সমাজে আমরা দেখতে পেলাম সামাজিক ও ব্যক্তিগত রুচির ক্রমশ নি¤œগামীতার প্রবল ¯্রােত। সাংস্কৃতিক-নান্দনিক দিক শূন্যতা আমাদের জনগোষ্ঠীকে ধীরে ধীওে স্থুল অভিব্যক্তির ভাগাড় বানিয়ে ছাড়লো। আমাদের বর্তমান কবিতা, সিনেমা, নাটক, সঙ্গীত, চিত্রকলা, নৃত্য, স্থাপত্য, কথাসাহিত্য, সমাজ, রাজনীতির দিকে নজর ফেরালে এর বাস্তবতা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করা যাবে। কেননা কবি ও শিল্পীরা তাদের আসল কাজ থেকে সরে গিয়ে কৃত্রিম মুখোশের অন্তঃসার শূন্যতা নিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ফলত বর্তমান সময়টাকে বলা যায় রুচিহীনতার তা-বকাল। আমাদের কবি শিল্প-সংস্কৃতিকর্র্মীরা যে কোনো উপায়ে গণরুচির নি¤œগামীতার জোয়ারে তার ভাগ এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাইছেন। সময় থেকে ছিটকে পড়া এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক তাদের মাঝে প্রবল হয়ে উঠেছে। উত্তরাধুনিক কিছু তত্ত্ব আবার তাদের দাঁড়াবার পাটাতন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বলে রাখা ভালো যে উত্তরাধুনিকতা এবং নিজস্বতার শৌর্য দুটিকেই না বোঝার ফল এমন হয়। অরুচির তীব্র প্রতিযোগিতায় আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। কারণ আমরা জনপ্রিয়তার শুধুই কাঙাল নই, একেবারে সর্বস্ব হারানো বিকলাঙ্গ বধির বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ক্ষুধার্ত একদল আগ্রাসী প্রাণী হয়ে উঠেছি, যারা নিজেদের কবি শিল্পী সাহিত্যিক সংস্কৃতিসাধক হিসেবে দাবি করছি। এর মাঝে একদল কিছুটা চৌকস, পশ্চিমা কিছু তত্ত্বের প্যাঁচে প্যাঁচিয়ে যাওয়া মন, তীর্যক চোখা চোখা অর্থহীন কুতর্কে আকীর্ণ মগজ; যারা বুদ্ধিমানের মতো দুয়েকটা প্রশ্ন করে বেশ জব্দ করা গেলো ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। যেমন রুচির মানদ- কী? এটি কে ঠিক করে দেবে? কোনটি ভালো কবিতা, কোনটি মন্দ কবিতা সেটি কে নির্ধারণ করবে? আমরা কেন সেটি মেনে নিতে বাধ্য হবো? এমন কিছু অতি প্রাথমিক অদীক্ষিত চটুল প্রশ্ন তারা উত্থাপন ঠিকই করতে পারেন কিন্তু এই বিষয়ে আরো গভীর বিতর্কে গেলে একেবারে বেলুনের মতোই চুপসে যান। কেননা এসব বিষয় নিয়ে যথার্থ তর্ক-বিতর্ক করার মতো পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ, জানাশোনা কিংবা অধ্যয়ন ও প্রজ্ঞা যদি তাদের থাকত তাহলে এই রুচিহীনতার জোয়ার তৈরিই হতে পারত না। এই সময়ে আপনি যাই বলবেন সেসব বোঝার মতো কাউকে চারপাশে পাওয়া যাবে না। কাজেই নিভৃতে নিজের কাজ করে যাওয়ার কোনো বিকল্প নাই।
এই যে সময়ের পাঠ, সময়ের দায়, রাজনীতির ধরন, কবি শিল্পী সাহিত্যিকের কর্তব্য কিংবা রুচিহীনতার নি¤œগামী তা-বলীলা এসব প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক হওয়া দরকার। পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গেছে, অসংখ্য মনীষী পৃথিবীর নানা ভাষায় রচনা করেছেন অজ¯্র রতœ সম্ভার; সেসবের আলোয়, নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যের উজ্জ্বলতায় নিজেদের পথ চিনে নিতে পারার ব্যর্থতা থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো কবিতা, শিল্পসাহিত্যের ঘরানায় এখন নান্দনিক বোধ বা তার বিচার বিশ্লেষণ নিয়ে আলাপ নেই; আছে ব্যবসা, ভিউ, ফলোয়ার, ভাইরাল, প্রাপ্তি, পুরস্কার, জনপ্রিয়তার আলাপ। অপ্রয়োজনীয় বিতর্কেরও কোনো শেষ নেই। আছে অন্তহীন পক্ষ-বিপক্ষ-প্রতিপক্ষ, বিনাশ করে দেওয়া, ধ্বংস করে, সর্বনাশ করে দেওয়ার প্রভূত প্রেরণা, কিন্তু প্রগাঢ় সাধনায় গভীর প্রত্যয়ে নতুন সম্ভাবনার বীজ বুননের ঐকান্তিক আগ্রহ উধাও হয়ে গেছে। 
এই অবস্থাকে আমাদের কবিগণ যত দ্রুত বুঝতে পারবেন, ততই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার দিকে মনোযোগ দেওয়া যাবে, কিন্তু কোথাও কি আমরা সেই সম্ভাবনার লেশমাত্র নজির দেখতে পাচ্ছি? পাচ্ছি না। আমাদের নিজেদের দিকে তাকানোর সময় নেই, কিন্তু যাদের তাকানোর সময় আছে কিংবা যারা মানুষকে পাঠ করা জরুরি মনে করছেন তারা ঠিকই আমাদের পড়ে নিচ্ছেন, এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের চিন্তাভৃত্য বানিয়ে গলায় শেকল পড়িয়ে দিয়েছেন, আমরা শেকলের ঝনঝনানিকে নিজেদের বগল বাজানোর আনন্দে উপভোগ করছি। এই নি¤œবুদ্ধির আস্তাবল সম্পর্কে খুঁটিনাটি আমাদের নিজেদের সৃষ্টির স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যতের প্রশ্নেই জানতে হবে। পৃথিবী এতোটাই দূরে চলে গেছে যে আমরা হয়তো তার কিছুই এখনো টের পাচ্ছি না, পাচ্ছি না কি? অনেকেই টের পাচ্ছেন আমাদের অধঃপতনের গতি, কিন্তু তারা এই নি¤œরুচির তা-বে অসহায় বোধ করছেন। এখানেই প্রকৃত কবির কর্তব্য, তাকে পরতে পরতে খুলে খুলে গভীরে প্রবেশ করতে হবে। বের করে আনতে হবে এই প্রায় নিরাময়হীন ব্যাধির মহৌষধ। নতুবা কবিদের অসুস্থতার এই তীব্র হলাহল থেকে আমাদের নিস্তার নেই। সমাজ-রাষ্ট্র-সময়ের অবয়ব নির্ধারিত হয় তার চিন্তাশীল মানুষের কর্মকা-ের নিরিখে, চিন্তাশীল মানুষ যখন হাল ছেড়ে দেয়, হতাশা যাপন করে, তখন আমরা পথ হারিয়ে ফেলি। কবির কাজ রুচি নন্দন মনন মানসিকতা ভাবনা ভাব ভাষ্যে তার সময় শোধিত করা, সেই শোধনের ইশতেহার প্রকাশিত হয় তার রচনায়, কবিতায় ভবিষ্যতের পথরেখা বিনির্মাণ করেন কবি। কবিতাকে তাই খ্যাতি প্রতিপত্তি ক্ষমতা অর্জনের খেলো উপকরণে রূপান্তরিত করার অভিশাপ বহন করতে হয় পুরো সমাজকে। কবি ও কবিতা অতীতেও পথ দেখিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেখাবে, আমরা সেই কবি ও কবিতার আকাক্সক্ষায় অধীর হয়ে উঠেছি।
 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ব দ র চ হ নত র সময় র প ঠ র র জন ত আম দ র ন সময় প ঠ শ ল পকল জনপ র য় সময় র স স জনশ ল র জন য প ঠ কর কর ন ক র ভ তর প রক ত ব তর ক ত র জন প রক র প রবল ক ষমত দরক র র সময় ব ষয়ট র ধরন ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

মা হলেন ক্যাটরিনা, বাবা ভিকি

মা হলেন বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন এই অভিনেত্রী। ক্যাটরিনা-ভিকি কৌশল দম্পতির এটি প্রথম সন্তান। ইনস্টাগ্রামে এক যৌথ বিবৃতিতে খবরটি জানিয়েছেন এ দুই তারকা। 

যৌথ বিবৃতিতে ক্যাটরিনা ও ভিকি ইনস্টাগ্রাম লিখেছেন, “আমাদের জীবনে আনন্দ এসেছে। ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আমরা আমাদের পুত্রসন্তানকে স্বাগত জানাই। ৭ নভেম্বর, ২০২৫। ক্যাটরিনা-ভিকি।” 

তারপর থেকে ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসছেন এই তারকা যুগল। অনেক সহকর্মী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন—শ্রেয়া ঘোষাল, পরিণীতি চোপড়া, মাধুরী দীক্ষিত প্রমুখ। 

ভালোবেসে ঘর বেঁধেছেন ক্যাটরিনা-ভিকি। তবে বিয়ের আগে প্রেমের খবর গোপন রেখেছিলেন এই জুটি। বিয়ের পর ‘কফি উইথ করন’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে প্রেম জীবন নিয়ে মুখ খুলেন এই অভিনেত্রী। ক্যাটরিনা কাইফ বলেছিলেন, “ভিকির বিষয়ে আমি বেশি কিছু জানতামও না। তার নাম শুনেছিলাম। তার সঙ্গে কখনো যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু তারপর যখন দেখা হলো, আমার মন জয় করে নিলো।”  

ভিকির প্রতি দুর্বলতার কথা প্রথম নির্মাতা জয়া আখতারের কাছে জানিয়েছিলেন ক্যাটরিনা। কারণ তার পার্টিতেই দুজনের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। ক্যাটরিনার দাবি, ভিকির সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি অপ্রত্যাশিত ছিল। হঠাৎ করেই হয়েছে। তার ভাষায়, “এটি সম্পূর্ণই ভাগ্যের লিখন। এমনটাই মনে করি। এক সময় কাকতালীয় অনেক কিছু ঘটেছে। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল।”  

২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজস্থানের সাওয়াই মাধপুরে অবস্থিত সিক্স সেন্সেস ফোর্ট বারওয়ারা রিসোর্টে ভিকি-ক্যাটরিনার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে শুধু এই জুটির কাছের বন্ধু ও পরিবার-আত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ