নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে 'কমিউনিস্ট' আখ্যা দিয়ে ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট সমাজতন্ত্রী মামদানিও ট্রাম্পের মতোই কৌশল দেখাচ্ছেন। বিজয়ী ভাষণে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন!' রিপাবলিকানদের জন্য সতর্কবার্তা দিয়ে স্টিভ ব্যানন বলেন, 'তাঁদের সামনে এখন সত্যিকারের যোদ্ধা এসেছেন।' তবে নিউইয়র্কের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন মামদানি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম মদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়র নির্বাচনে জয়ের পর এবার আসল চ্যালেঞ্জের মুখে মামদানি

নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির যাত্রাটা শুরু হয়েছিল গত বছর। তখন তাঁর না ছিল পরিচিতি, না ছিল খুব বেশি তহবিল, না ছিল ততটা দলীয় সমর্থন। এত সীমাবদ্ধতার পরও জনপ্রিয়তার চূড়ায় উঠেছেন মামদানি। তাঁর তারুণ্য ও অনন্যসাধারণ চরিত্র ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে। এই জনপ্রিয়তায় ভর করে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচন হয়েছেন তিনি।

মামদানি নিজের পরিচয় দেন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে। তাঁর পরিচয়ে সমাজতন্ত্রী শব্দটা নিয়ে অনেকের, বিশেষ করে ডানপন্থী রিপাবলিকানদের উষ্মা আছে। তবু নির্বাচনী লড়াইয়ে পিছু হটেননি মামদানি। বরং গর্বের সঙ্গে বামপন্থী বিষয়গুলোকে সমর্থন করেছেন। যেমন শিশুদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং মুক্তবাজার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ।

নির্বাচনের পরও এই পরিচয় মামদানির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে সতর্ক করছেন সমালোচকেরা। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, ১২ বছর আগে মেয়র পদে বসা ডেমোক্র্যাট বিল ডি ব্লাসিওর কথা। নিউইয়র্কের অর্থনীতি ও সামাজিক বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার হয়ে নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন তিনি। মামদানির মতো ব্লাসিওর ওপরও বামপন্থীদের আশা ছিল, তিনি উদার শাসনব্যবস্থার উদাহরণ সৃষ্টি করবেন।

তবে আট বছর পর ব্লাসিওকে মেয়রের কার্যালয় ত্যাগ করতে হয়েছিল সফলতা, ব্যর্থতা ও হতাশার মিশ্র এক অভিজ্ঞতা নিয়ে। মেয়রের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাগুলো, তাঁর নতুন অনেক নীতি বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ব্লাসিওর মতো মামদানির প্রতিও এখন নিউইয়র্কবাসীর একই ধরনের আশাবাদ থাকবে। তাই সফল মেয়র হতে নানা সীমাবদ্ধতা পেরোনোর চেষ্টা করতে হবে মামদানিকে।

এ ছাড়া মামদানি যে উচ্চাকাঙক্ষী লক্ষ্য নিয়ে মেয়র হিসেবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন, তা বাস্তবায়নে তহবিল জোগাড় করাও কষ্টসাধ্য হবে। কারণ, এই তহবিল গড়তে যে ধরনের কর বৃদ্ধির প্রয়োজন, তার বিরোধিতা করেছেন নিউইয়র্কের গভর্নর ও আরেক ডেমোক্র্যাট ক্যাথি হোকুল। আর মামদানি যদি যথেষ্ট তহবিলও পান, তাহলে এককভাবে তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা সম্ভব নয়।

নির্বাচনের প্রচারে নিউইয়র্কের বিভিন্ন বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অভিজাত শ্রেণির কড়া সমালোচনা করেছিলেন মামদানি। এই ব্যবসা ও অভিজাতদের কারণেই নিউইয়র্কের ম্যানহাটান বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাই মেয়রের কাজ কার্যকরভাবে করতে হলে মামদানিকে অবশ্যই তাঁদের স্বার্থ রক্ষায় কিছুটা হলেও ছাড় দিতে হবে। কাজটি হবে তাঁর নিজের নীতিবিরুদ্ধ।

মামদানির নির্বাচনী প্রচারের বড় অংশজুড়ে ছিল গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরোধিতা। নিউইয়র্কে পা রাখলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। এখন মেয়র হিসেবে নিজের মেয়াদের কোনো না কোনো সময়ে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে মামদানিকে পরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে। যদিও প্রগতিশীল কিছু ইহুদি তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন।

মামদানির জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারের সময় মামদানিকে নাজেহালের কম চেষ্টা করেননি তিনি। মামদানির ভোট কাটতে শেষ মুহূর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ডু কুমো সমর্থন দিয়েছেন। অথচ রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার এই সমর্থন পাওয়ার কথা ছিল। মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলের দ্বার বন্ধের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুননিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির ভোটাররা ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করে কী বার্তা দিলেন৪ ঘণ্টা আগে

নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্পের উদ্দেশে বেশ কড়া ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন মামদানি। ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন হয়তো বেশ আগ্রহ নিয়েই মামদানির সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ে জড়াবেন। নতুন মেয়রের যাত্রা জটিল করতে বহু পথ রয়েছে তাঁর সামনে। রিপাবলিকানরা মামদানির ত্রুটিবিচ্যুতি, নেতিবাচক অর্থনৈতিক সূচক বা অপরাধের পরিসংখ্যানগুলো আরও বড় করে দেখাবেন, এটা নিশ্চিত।

তবে মামদানির জন্য বড় একটি সুবিধা হলো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিকদের মতো তাঁর অতীত কোনো বদনাম নেই। তিনি যখন আগামী জানুয়ারিতে মেয়র পদে বসবেন, তখন হোঁচট খেতে খেতে আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবেন। এখন পর্যন্ত মামদানির প্রতিভাই তাঁকে আজকের উচ্চতায় এনেছে। এখন দেখার পালা, সামনের বছরগুলোয় এই প্রতিভা কাজে লাগিয়ে প্রতিকূলতাগুলো কতটা সামাল দিতে পারেন তিনি।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে সর্বশেষ হিসাবে কোন প্রার্থী কত ভোট পেলেন১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সালাম বম্বে!’, থেকে ‘মুনসুন ওয়েডিং’, মামদানির মাকে কতটা চেনেন
  • ট্রাম্প–মামদানি কি সমানে সমান
  • মামদানিপত্নী কে এই রমা, কীভাবে তাঁদের প্রেম–পরিণয়
  • জোহরান মামদানির ‘ট্রানজিশন’ দলের সবাই নারী
  • জোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে আমরা সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি: ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর
  • মামদানির জয়, ট্রাম্পকে বার্তা
  • ধনকুবেরদের ৪ কোটি ডলার ব্যয়েও জিততে পারেননি কুমো
  • মেয়র নির্বাচনে জয়ের পর এবার আসল চ্যালেঞ্জের মুখে মামদানি