৪০ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন দেলোয়ার হোসেন
Published: 7th, November 2025 GMT
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের পত্রিকা বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন (৬৩) অসুস্থ থাকেন প্রায়ই। পায়ে পানি নামে, ফুলে যায়। হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা। আছে উচ্চ রক্তচাপসহ আরও নানা শারীরিক সমস্যা। তবু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা পাশ কাটিয়ে প্রতিদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে হেঁটে পাঠকদের কাছে বিভিন্ন খবরের কাগজ বিলি করেন তিনি। একটানা প্রায় ৪০ বছর ধরে এ কাজ করে চালাচ্ছেন সংসারের খরচ।
দেলোয়ার হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার অলিপুর গ্রামে। পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। মতলব দক্ষিণ উপজেলার টিঅ্যান্ডটি এলাকায় বসবাস করেন দেলোয়ার। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৯৮৫ সাল থেকে হেঁটে হেঁটে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা বিলি করছেন তিনি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কলেজ গেট এলাকায় হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিক্রির সময় কথা হয় দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। অভাবের টানাপোড়েনে তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি। ধরতে হয় সংসারের হাল। কিছু একটা করে জীবিকা চালাতে ১৯৮৫ সাল থেকে সামান্য কিছু টাকা জোগাড় করে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করেন।
প্রথম দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার ভবেরচর এলাকা থেকে ১৩ কপি জাতীয় পত্রিকা এনে মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরে হেঁটে বিক্রি করতেন। কয়েক বছর পর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর এলাকা থেকে পত্রিকা আনতে শুরু করেন। সকাল ৬টা থেকে বিকেল পর্যন্ত হেঁটে বিভিন্ন দপ্তরে ও বাড়িতে পৌঁছে দেন পত্রিকা। এখন প্রতিদিন গড়ে বিলি করেন প্রায় ২৫০ জাতীয় পত্রিকা। কিছু আঞ্চলিক পত্রিকাও বিলি করেন। পত্রিকা বিক্রি করে প্রতিদিন গড়ে আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ টাকায় চলে সংসারের খরচ। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়েছেন পত্রিকা বিক্রির টাকায়। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নিজের ছোটখাটো একটি বাড়িও বানিয়েছেন।
দেলোয়ার হোসেন বলতে থাকেন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রতিদিন পত্রিকা বিলি করেন তিনি। তাঁকে কিছুটা সহযোগিতা করেন তাঁর সম্বন্ধীর ছেলে রাকিব হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছেন। তবু প্রতিদিন সকাল থেকেই কাজে নামেন। কয়েক বছর আগেও এক হাজারের বেশি জাতীয় পত্রিকা বিক্রি করতেন। এখন পত্রিকার পাঠক আগের চেয়ে অনেক কম। অধিকাংশ লোকই অনলাইনে পত্রিকার খবর দেখেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য আগেভাগেই জেনে যান। পত্রিকা বিক্রি কমে যাওয়ায় তাঁর আয়ও কমেছে। এর ওপর ১২ টাকার পত্রিকা কিনে অনেকে ১০ টাকা দিয়ে চলে যান। বাকির ঝামেলা তো আছেই।
কিছুটা হতাশা ও কষ্ট নিয়ে দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত কষ্ট কইরা প্রতিদিন পত্রিকার খবর মানুষের কাছে পৌঁছাই, কিন্তু আমাগো খবরই তেমনভাবে কেউ রাখে না। এ ছাড়া যেভাবে দিন দিন পত্রিকার পাঠক কমতাছে, তাতে কত দিন এই কাম চালাইতে পারুম তা উপরওয়ালাই জানেন।’
মতলব সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অশোক কুমার রায় বলেন, দেলোয়ার হোসেন তাঁর খুবই প্রিয় ও পরিচিত মানুষ। হকার হলেও খুব বড় মনের মানুষ তিনি। বৃদ্ধ বয়সে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যেভাবে তিনি পাঠকের কাছে খবরের কাগজ নিয়মিত পৌঁছে দিচ্ছেন, তা তাঁর অদম্য মানসিকতার পরিচায়ক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমজাদ হোসেন বলেন, তাঁর কার্যালয়ে প্রতিদিন দেলোয়ার সঠিক সময়ে পত্রিকা পৌঁছে দেন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও থেমে নেই তাঁর পত্রিকা বিলির কাজ। বয়স তাঁর কাছে একটা সংখ্যা মাত্র। তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ডায়েরিতে লুকানো না–বলা কথা, টাবু বলেন, ‘একদিন প্রকাশ করব’
সেই কবে দেব আনন্দের ‘হাম নওজোয়ান’-এ কিশোরী মুখে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন টাবু। বছরটা ১৯৮৫। প্রায় চার দশকের পেরিয়ে গেছে, তবু সময় যেন থেমে আছে তাঁর সামনে।
অবশ্য তখনো তিনি ছিলেন ‘তাবাসসুম ফাতিমা হাশমি’—একজন ছাত্রী, যে জানত না একদিন বলিউডের অন্যতম শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবে তাঁকে চিনবে সবাই। আজ ৪ নভেম্বর, সেই টাবুর জন্মদিন।
এক অন্তর্মুখী মেয়ের যাত্রা
তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে জন্ম টাবুর। খুব অল্প বয়সেই বাবা–মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। মা ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা, বাবা নতুন সংসার পেতেছিলেন অন্যত্র। ছোটবেলা কেটেছে মামাবাড়িতে, নানা-নানীর কোলে। বই ছিল তাঁর একমাত্র সঙ্গী। টাবু বলেন, ‘আমি খুব শান্ত স্বভাবের ছিলাম। সিনেমায় আসার পরও নিজের জগৎটা ছোট রাখতেই ভালোবাসি।’
শৈশবে ‘বাজার’ (১৯৮২) ছবিতে শিশু চরিত্রে অভিনয়, আর ‘হাম নওজোয়ান’ (১৯৮৫)-এ আত্মপ্রকাশ—দুটোই ছিল জীবনের বড় বাঁক। এরপর একে একে ‘মাচিস’, ‘হু তু তু’, ‘অস্তিত্ব’, ‘চাঁদনি বার’, ‘মকবুল’, ‘হায়দার’, ‘দৃশ্যম’, ‘গোলমাল এগেইন’—সব মিলিয়ে এক অনন্য যাত্রা।