ক্লাস-পরীক্ষার মধ্যে কলেজে গিয়ে ‘নির্বাচনে যাত্রা শুরুর’ কথা বললেন বিএনপির প্রার্থী
Published: 6th, November 2025 GMT
ক্লাস-পরীক্ষা চলাকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম সরকারি কলেজে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ‘নির্বাচনের যাত্রা শুরু’ করেছেন নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল আজিজ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে শিক্ষকদের সঙ্গে এবং সেমিনারকক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথা বলেন তিনি।
তবে কলেজে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও মতবিনিময় করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিএনপির প্রার্থী আবদুল আজিজ। এদিকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন একই আসনের জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী আবদুল হাকিম।
কলেজের অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে কলেজে যান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আজিজ। এ সময় কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের (আইসিটি) ব্যবহারিক পরীক্ষা ও অন্যদের ক্লাস চলছিল। কলেজে এসেই অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল হেলাল বাকীর কক্ষে যান আবদুল আজিজ। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে একটি চেয়ারে বসান অধ্যক্ষ। সেখানে তিনি কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে তিনি কলেজের সেমিনারকক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর কলেজ ত্যাগ করেন আবদুল আজিজ।
কলেজের শিক্ষার্থী ইদুল প্রামাণিক বলেন, তাঁদের আইসিটি বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল। দুপুরে এমপি প্রার্থী আবদুল আজিজ কলেজে এসেছিলেন। তিনি শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে সভা করেন। সভায় তিনি শিক্ষার্থীদের আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। দেখেশুনে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল আজিজ বলেন, ‘আমার দুজন আত্মীয় ওই কলেজে চাকরি করেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেই সেখানে গিয়েছিলাম।’ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। কলেজে যাওয়ায় ক্লাস-পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটেছে কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি বেশিক্ষণ ছিলাম না।’
অধ্যক্ষের পাশে বসে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল আজিজ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বড়াইগ্রাম সরকারি কলেজে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন ন ত প র র থ আবদ ল আজ জ দ ল আজ জ কল জ র পর ক ষ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সাহায্যের আবেদন
পেশেন্ট ইউসুফ মিরপুর, নুরুল নোয়াখালী, আনোয়ার ডেমরা, নাজমুল কুষ্টিয়া, ওবায়দুল নওগাঁ, মাহফুজ লক্ষ্মীপুর, মাহমুদা মোহাম্মদপুর, ইয়াসমিন আরা ধানমন্ডি, রাশেদুল দিনাজপুর, তাসনিম নর্থ সাউথ, আনিসুর কাজীপাড়া, জুবায়ের যশোর, জিনিয়া নীলফামারী—মুঠোফোনে এমনভাবে কয়েক ডজন মানুষের নাম-ঠিকানা সংরক্ষণ করা।
এ মানুষগুলোর সঙ্গে কখনো সামনাসামনি দেখা হয়নি। সে অর্থে পরিচয়ও নেই। তারপরও তাঁদের সঙ্গে বা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দিনের পর দিন যোগাযোগ চলেছিল। এখনো কারও কারও সঙ্গে চলে। তাঁদের কেউ এপারে রয়েছেন, আবার কেউ ওপারে পরলোকে চলে গেছেন!
এই তো! দিন কয়েক আগে শিশু জিনিয়ার হৃদ্যন্ত্রের ছিদ্রের চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকার জোগান হলো। মনটা খুশিতে ভরে গেল। ১১ বছরের রোগা শিশুটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সে সুস্থ হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে—এমনটাই আশা। গ্রাম পুলিশ বাবার মনঃকষ্ট কিছুটা দূর হবে, সেই প্রার্থনা।
ক্যানসারে আক্রান্ত শিক্ষক ইয়াসমিন আরার খোঁজ নিতে গিয়ে এখনো মুষড়ে পড়ি। সিঙ্গেল মাদার, ছেলেটা মাধ্যমিকের পাঠ চুকাতে যাচ্ছে। কিন্তু এই মাকে মাসে ৪৪ হাজার টাকার ওষুধ খেতে হচ্ছে। কোথা থেকে এত টাকার জোগান হবে? ভাবতেই মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা আমাদের কত সুখে রেখেছেন!
মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ করা ক্যানসারে আক্রান্ত তাসনিমের মৃত্যুর সংবাদ কয়েক দিন আগে তাঁর বাবাই হোয়াটসঅ্যাপে জানালেন। বয়োজ্যেষ্ঠ বাবাটাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাইনি। ‘আঙ্কেল, আসার সিরিয়াল আছে, যাওয়ার সিরিয়াল নাই। মেয়ের জন্য শুধু দোয়া করেন’ বলে তাঁর কষ্টটা হালকা করার বৃথা চেষ্টা করলাম।
রাশেদুল তাঁর হাঁটতে না পারা ছেলের উন্নতিতে যে আনন্দ পাচ্ছেন, তা কয়েক বছর ধরে প্রায়ই ফোন করে ভাগ করে নেন। ভ্যানচালক রাশেদুলের আনন্দ ও আশীর্বাদ অমূল্য। ফোন করে তাঁর যে কৃতজ্ঞতা ও বিনয়, তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।
বাস্তব এ গল্পগুলো প্রথম আলোর ৪ নম্বর পাতার অনিয়মিত একটা ‘সেগমেন্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত। নাম: সাহায্যের আবেদন। কঠিন রোগে সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষদের কেউ কেউ এর মাধ্যমে দেশের মানুষের দ্বারস্থ হন—যদি কিছু মেলে, এই আশায়। মানুষ বাঁচতে চায়। মানুষের বাঁচার যে কী আকুতি, তা এই মানুষগুলোর ঘটনা না জানলে বোঝানো যাবে না। জীবননাশী রোগাক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী মানুষটিকেও পরিবারের সদস্যরা শেষ সম্বল ভিটেমাটি বিক্রি করে বাঁচাতে চায়। তাতে কুলিয়ে উঠতে না পারলে সমাজের দ্বারস্থ হয়।
কয়েক বছর ধরে অধিকাংশ সাহায্যের আবেদন আমার হাতে লেখা। চেষ্টা করি, ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দুর্দশায় পড়া মানুষগুলোর জন্য কিছু করার। নিজের পকেটের তো ততটা জোর নেই, তবে একটা হৃদয় আছে, যেটা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
প্রথম আলোতে সাহায্যের আবেদন প্রকাশের পর অনেকেই বিশ্বাস থেকে সাড়া দেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, প্রথম আলো যা ছাপিয়েছে, তা সত্যি। আসলে আমরা হলাম মাধ্যম মাত্র। সব কৃতিত্ব আমাদের দেশ-বিদেশের হৃদয়বান পাঠকদের। তাঁরা তাঁদের কষ্টের টাকা থেকে এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, দাঁড়াচ্ছেন, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবেন।
সংশ্লিষ্ট রোগী যাতে একটু বেশি চিকিৎসা সহায়তা পান, সে জন্য প্রধানত দুই ধরনের কৌশল প্রয়োগ করছি। ১. ছাপা সংস্করণের খবরটি পরের দিন বাংলাদেশ সময় রাত দুটো থেকে চারটার মধ্যে অনলাইনে প্রকাশ করি। এর কারণ হলো তখন প্রবাসীদের জেগে থাকার সময়। এ কৌশলটি বেশ কাজ দিচ্ছে। এর কারণে অর্থপ্রাপ্তির হার প্রিন্টের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি বলে আমার পর্যবেক্ষণ। ২. কয়েক মাস হলো এই কৌশলটি প্রয়োগ করছি—বিকাশ বা নগদে সাহায্য পাঠানো যাতে সহজ হয় সে জন্য মুঠোফোন নম্বরটা অনলাইনে প্রকাশের সময় ইংরেজিতে করে দিই। এটাও ভালো ফল দিচ্ছে। কারণ, সাহায্যের আবেদন পড়ার পর অনেকের মনেই তাৎক্ষণিক মানবিক বোধ জাগ্রত হয়। তাঁরা চট করে ইংরেজি মুঠোফোন নম্বরটি কপি করে টাকা পাঠাতে পারেন। কিন্তু বাংলা নম্বর দেখে লেখার ঝামেলায় অনেকেই তাৎক্ষণিক সাহায্য পাঠাতে পারেন না। পরে দেবেন বলে ভুলে যান বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
মানুষের পাশে দাঁড়ালে ক্ষয় হয় না, দিলের ভেতর আলো জ্বলে। অন্যের দুঃখের ভাগ নিলে মন ভরে, ভালোবাসা ফেরে দ্বিগুণ করে। এক মুঠো সাহায্য, এক ফোঁটা মায়া, জীবন বদলায়, মুছে দেয় গ্লানি। যে দেয় সে-ই থাকে চিরজীবন্ত।
আসুন! আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে সমাজের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই, মুখ ফিরিয়ে না থাকি। আজকে অন্যের কষ্টের দিন, কালকে যে আমার হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা কি আছে?