বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে একটি বেতন প্যাকেজ অনুমোদন করেছেন। এর বদৌলতে টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক বিশ্বের প্রথম ‘ট্রিলিয়নার’(লাখো কোটি ডলারের মালিক) হয়ে উঠতে পারেন।

টেসলা কর্তৃপক্ষ বলেছে, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সাধারণ সভায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি ভোট এই বেতন প্যাকেজ প্রস্তাবের পক্ষে পড়েছে। তবে ভোটের গণনায় ইলন মাস্কের নিজস্ব ১৫ শতাংশ শেয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

ফলাফল ঘোষণা করা হলে সভায় উপস্থিত লোকজন উল্লাসে ফেটে পড়েন। এর পরপরই মাস্ক শেয়ারহোল্ডার ও টেসলা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

মাস্ক কোনো বেতন নেন না। অনুমোদিত এই বেতন প্যাকেজটি শেয়ার আকারে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে আগামী ১০ বছরে তিনি টেসলার জন্য অতিরিক্ত ৪২ কোটি ৩৭ লাখ শেয়ার পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

সব মিলিয়ে এই শেয়ারগুলোর মূল্য দাঁড়াতে পারে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলার। মাস্ককে সম্পূর্ণ বেতন প্যাকেজের যোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার ক্ষেত্রে টেসলার বাজারমূল্য ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারে পৌঁছাতে হবে।

তা ছাড়া পুরোপুরি শেয়ার পেতে টেসলাকে একাধিক কার্যক্রম পরিচালনা–সংক্রান্ত ও আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। এসব শেয়ার ১২টি সমান ভাগে ভাগ করে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুনইলন মাস্কের বেতন-ভাতা নিয়ে আজ শেয়ারহোল্ডারদের ‘গণভোট’০৬ নভেম্বর ২০২৫

মাস্ক যদি আগামী ১০ বছরে এই প্যাকেজের আওতায় থাকা সব শেয়ার পেয়ে যান, তাহলে দৈনিক আয়ের গড় দাঁড়াবে প্রায় ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমতুল্য, যা ইতিহাসে অন্য যেকোনো নির্বাহী কর্মকর্তার বেতন প্যাকেজের চেয়ে বেশি।

টেসলার বাজারমূল্য ৮ লাখ কোটি ৫০ হাজার ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শেয়ারগুলোর মূল্য বর্তমান মূল্য থেকে ৪৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। নির্ধারিত এ বাজারমূল্য বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বাজারমূল্য থাকা কোম্পানি এনভিডিয়ার চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। গত সপ্তাহে এনভিডিয়া ৫ লাখ কোটি ডলারের রেকর্ড বাজারমূল্য অর্জন করেছে।

ব্লুমবার্গের বিলিয়নিয়ার ট্র্যাকার অনুযায়ী, মাস্কের বর্তমান সম্পদের মূল্য প্রায় ৪৭ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। টেসলা ছাড়াও স্পেসএক্স ও এক্সএআই কোম্পানির মালিকও তিনি।

আরও পড়ুনবিশ্বের প্রথম লাখ কোটিপতি হওয়ার পথে ইলন মাস্ক১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গতকাল টেসলার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটির ফল যদি মাস্কের পক্ষে না যেত, তাহলে হয়তো তিনি পদত্যাগ করতেন। টেসলা কর্তৃপক্ষ বলেছে, মাস্ক নিজেই এমনটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি যদি এ প্যাকেজের পক্ষে সমর্থন না পান, তাহলে তিনি কোম্পানি থেকে সরে যেতে পারেন।

তবে চলতি বছরটা কোম্পানি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার করছে। বছরের প্রথমার্ধে বিক্রি ও লাভ কমে গেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন কমে যাওয়ার কারণে টেসলা বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব হারানোরও ঝুঁকিতে আছে।

তবে মাস্ক ও টেসলার অন্য কর্মকর্তারা এ ধরনের সমস্যা থাকার কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, টেসলা এখন আর শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তারা চালকবিহীন গাড়ি বিক্রি, একটি ‘রোবোট্যাক্সি’ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ও মানবসদৃশ রোবট বিক্রি করার দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র শ য় রহ ল ড শ য় রহ ল ড র

এছাড়াও পড়ুন:

সুনামগঞ্জে হাফ ম্যারাথনে অংশ নিল ১০ বছরের শিশু, ছিলেন ৭৪ বছরের ‘দাদু’

‘আমি নিয়মিত দৌড়াই, এ জন্য সুস্থ্ আছি। দৌড়ালে ওষুধ খেতে হবে না। শরীর-মন সুস্থ রাখার জন্য এটিই প্রাকৃতিক ওষুধ’ বলছিলেন জমির হোসেন (৫৫)। দেশের যে প্রান্তেই ম্যারাথন হয়, জমির হোসেন অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

সুনামগঞ্জে আজ শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হাফ ম্যরাথনে অংশ নিয়ে ২১ কিলোমিটার দৌড়েছেন জমির হোসেন। তাঁর গ্রুপে (৪৫ বছরের বেশি) পেয়েছেন সেরার পুরস্কার। শুধু জমির হোসেন একা নন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাড়ে ৩০০ জন এই ম্যারাথনে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ১০ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭৪ বছর বয়সী বৃদ্ধও ছিলেন।

‘সুরমা রানার্স সুনামগঞ্জ’–এর উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো সুনামগঞ্জ শুক্রবার হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হলো। সকাল ছয়টায় পৌর শহরের ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণ থেকে ম্যারাথন শুরু হয়। এতে দুটি ক্যাটাগরিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৩৫০ রানার (নারী-পুরুষ) অংশ নেন। ১০ কিলোমিটার ও ২১ কিলোমিটার দুই ভাগে ম্যারাথন হয় সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা ম্যারাথনে অংশ নেওয়া লোকদের জন্য পানি, স্যালাইন, হালকা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে সেগুলো নিচ্ছেন দৌড়ে অংশ নেওয়া লোকজন। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা ও অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত আছে।

দৌড় শেষে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা জমির হোসেন বলছিলেন, ‘আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর দৌড়াই। এটা বহুদিন থেকে আমার অভ্যাস। আমি কোনো ওষুধ খাই না। এটিই (দৌড়) আমার ওষুধ।’

রাজবাড়ী থেকে আসা বিশ্বজিৎ রায় জানান, তিনি ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত দৌড়ান। দেশে এবং দেশের বাইরে একাধিক ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। এবার সুনামগঞ্জ ম্যারাথনে এসে ভালো লেগেছে জানিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়াম করতে হবে। দৌড়ানো চমৎকার ব্যায়াম। দৌড়ালে অসুখ হবে না, ওষুধ খেতে হবে না।’
চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে রাইয়ানকে সঙ্গে নিয়ে ম্যারাথনে অংশ নেন সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা মারুফ আহমদ মান্না। তিনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। মারুফ বলেন, ‘সুস্থ থাকাটা জরুরি। নিজের শহরে এত চমৎকার একটি আয়োজন হচ্ছে জেনে অংশ নিলাম।’

ঢাকা থেকে আসা ৭৪ বছর বয়সী খবির উদ্দিন খান ছিলেন ম্যারাথনের মূল আকর্ষণ। ম্যারাথনে অংশ নিতে আগের দিন তিনি চলে আসেন সুনামগঞ্জে। তাকে ঘিরে সবার ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরে অনেক জায়গায় তিনি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। রানারদের কাছে তিনি ‘দাদু’ হিসেবে পরিচিত। সবাইকে জমিয়ে রাখেন। খবির উদ্দিন খান বলেন, ‘পরিমিত খান, নিয়মিত দৌড়ান, দেখবেন আপনি ভালো থাকবেন। নিজে ভালো থাকা এবং অন্যদের ভালো থাকতে উৎসাহ দিতেই ম্যারাথনে অংশ নিই। সুনামগঞ্জে প্রথম ম্যারাথনেও আমি অংশ নিয়েছিলাম।’

বিজয়ীদের অর্থ, সনদ, মেডেল, ক্রেস্টসহ নানা উপহার দেওয়া হয়েছে। আজ সকালে সুনামগঞ্জ শহরের ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণের মুক্ত মঞ্চে

সম্পর্কিত নিবন্ধ