জোহরান মামদানির জয়ে ভারতের মুসলিমরা খুশি হলেও বিজেপি-সমর্থকেরা চুপ কেন
Published: 7th, November 2025 GMT
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়ের খবর কয়েক হাজার মাইল দূরে ভারতের মুম্বাই ও দিল্লিতেও ধাক্কা দিয়েছে।
একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যখন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহরের মেয়র নির্বাচিত হন, তখন ভারতের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ও সংবাদমাধ্যমে সেটি উদ্যাপনের কারণ হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক।
জোহরান মামদানি শুধু ভারতীয় নন; গুজরাটি বংশোদ্ভূতও, যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিণামগত পার্থক্য রয়েছে। জোহরান মামদানি একজন মুসলিম এবং ভারতের শাসক হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির কঠোর সমালোচক।
জোহরান মামদানির জয়ের পর ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপগুলোয় দেখা গেছে, ৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট ও নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি সদস্য তাঁর বিজয় ভাষণে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উদ্ধৃতি দিচ্ছেন।
কিছু আন্তর্জাতিক শহরের রং পরিবর্তিত হচ্ছে। যদি কেউ মুম্বাইতে খান বসাতে চান, তা সহ্য করা হবে না!অমিত সাতম, মুম্বাইয়ের বিজেপিপ্রধান‘ইতিহাসে খুব কম সময়ে এমন এক মুহূর্ত আসে, যখন আমরা পুরোনো থেকে নতুনের দিকে এগিয়ে যাই। এটি তখনই ঘটে, যখন একটি যুগের শেষ হয় ও দীর্ঘদিন দমন করা জাতির আত্মা কণ্ঠ পায়’, ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার প্রারম্ভে নেহরুর বিখ্যাত ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ঘোষণা করেন জোহরান মামদানি।
‘আজ রাতে, নিউইয়র্ক ঠিক সেটাই করেছে’, আরও বলেন জোহরান মামদানি। বিজয় ভাষণ শেষে হাত নেড়ে সমর্থকদের অভিবাদন জানান তিনি। এ সময় স্ত্রী সিরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন রমা দুওয়াজিকে মঞ্চে ডেকে নেন তিনি। ঠিক তখনই আবহ সংগীত হিসেবে বেজে ওঠে বলিউডের ২০০৪ সালের জনপ্রিয় ‘ধুম মাচালে’ গানটি। একই সময় মঞ্চে আসেন জোহরান মামদানির পাঞ্জাবি মা মীরা নায়ার ও গুজরাটি বাবা মাহমুদ মামদানি।
বিজেপি বনাম মামদানি
জোহরান মামদানি তাঁর ভারতীয় পরিচয় কখনো লুকাননি। তিনি প্রায়ই প্রচার ভিডিওতে ভারতীয় পোশাক পরে উপস্থিত হন এবং একবার আঙুল দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার ছবি প্রকাশিত হলে উগ্র দক্ষিণপন্থী মার্কিন সমালোচকদের কাছ থেকে বর্ণবাদী মন্তব্যের মুখোমুখি হন।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভারতের শাসক বিজেপির অনেক নেতা জোহরান মামদানির বিজয়ের প্রতিক্রিয়ায় অস্বাভাবিকভাবে নীরব রয়েছেন।
অনেকে এখনো প্রধানমন্ত্রী মোদির অভিনন্দন সূচক টুইটের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু কয়েকজন বিজেপি নেতা তাঁদের কণ্ঠ আটকে রাখতে পারেননি; বিশেষ করে মুম্বাইয়ের বিজেপি প্রধান অমিত সাতম।
সাতম সতর্ক করে বলেন, ‘কিছু আন্তর্জাতিক শহরের রং পরিবর্তিত হচ্ছে।’ কিছু মেয়রের পদবির নাম আংশিকভাবে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘যদি কেউ মুম্বাইতে খান বসাতে চান, তা সহ্য করা হবে না!’ তাঁর এ বক্তব্য দৃশ্যত মুসলিমবিরোধী ইঙ্গিত বহন করে।
জোহরান মামদানি শুধু ভারতীয় নন; গুজরাটি বংশোদ্ভূতও, যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিণামগত পার্থক্য রয়েছে। জোহরান একজন মুসলিম এবং ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসক বিজেপির কঠোর সমালোচক।এর আগে বিজেপির এক সংসদ সদস্য রেখা শর্মা মঙ্গলবার নিউইয়র্কে প্রবাসী ভারতীয়দের জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে ভোট দিতে অনুরোধ করেছিলেন।
‘ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা, ভোট দিতে গেলে দুবার ভাবুন। মি.
জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির ছয় লাখ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পান; যদিও যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো তাঁর নিন্দা জানায়।
‘ভারতের বাস্তবতার প্রতিফলন’
হাজার হাজার ভারতীয় মুসলিম জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয় উদ্যাপন করেছেন। অনেকের কাছে এটি খুবই প্রতীকী ও মিশ্র অনুভূতির মুহূর্ত।
যেখানে ভারতীয় মুসলিমরা নিজ দেশে ক্রমশ তীব্রতর হওয়া বৈষম্যের শিকার, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচিত হলেন।
ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক রানা আইয়ুব গত বুধবার জোহরান মামদানির বিজয়কে ‘ভারতের সামনে একটি আয়না, যা হারানো প্রতিশ্রুতি ও বিদ্যমান সম্ভাবনা উভয়কে প্রতিফলিত করে’ বলে বর্ণনা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয র ক
এছাড়াও পড়ুন:
রোমান সম্রাজ্ঞী মেসালিনাকে যেকারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো
রোমান সম্রাজ্ঞী ভ্যালেরিয়া মেসালিনা ছিলেন ‘ভয়ংকর সুন্দরী’। তার সময়ে সময়ে রাজনীতিতে একজন নারীর হস্তক্ষেপ ভালোভাবে দেখা হতো না। কেউ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করলে তাকে নিয়ে নানা সরল ব্যাখ্যা তৈরি হয়ে যেতো।
ইতিহাসবিদ রবার্ট গ্রেভস বলেছেন, ভ্যালেরিয়া মেসালিনার উচ্চ রাজনৈতিক জ্ঞান ছিলো এবং তিনি ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিতেন। অথচ তিনি ইতিহাসে একজন কুখ্যাত রোমান সম্রাজ্ঞী। ভ্যালোরিয়া মেসালিনা ছিলেন রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের তৃতীয় স্ত্রী। বলা হয়ে থাকে তিনি আলোচনায় রয়েছেন তার ক্ষমতা লিপ্সা, নৃশংসতা এবং চরম যৌন স্বেচ্ছাচারিতার জন্য।
আরো পড়ুন:
সকালে গোসল করার উপকারিতা
ময়ূর সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?
ভ্যালেরিয়া মেসালিনা সম্রাট নিরোর চাচাতো বোন, সম্রাট ক্যালিগুলার দ্বিতীয় চাচাতো বোন এবং সম্রাট অগাস্টাসের প্রপৌত্রী ছিলেন। ৩৮ বা ৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্লডিয়াসকে বিয়ে করেন। ৪১ খ্রিস্টাব্দে ক্যালিগুলা নিহত হলে ক্লডিয়াস সম্রাট হন এবং মেসালিনা সম্রাজ্ঞী হিসেবে ক্ষমতা লাভ করেন।
ভ্যালেরিয়া মেসালিনা প্রায় এক দশক ধরে রোমের অন্যতম প্রভাবশালী নারী ছিলেন এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। নিজের অবস্থান ধরে রাখতে তিনি রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্বাসন এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।
তার সম্পর্কে প্রচলিত গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি রাতের বেলা গোপনে পতিতালয়ে যেতেন এবং সেখানে সেচ্ছাচারিতা করতেন। এমনকি তিনি নামকরা পতিতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করতেন। এক রাতে তিনি ২৫ জন পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হয়েছিলেন!
৪৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি সম্রাট ক্লডিয়াসের অনুপস্থিতিতে তার প্রেমিক গাইয়াস সিলিয়াসের সাথে প্রকাশ্যেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজ। পরে ক্লডিয়াস তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং তার নাম ও মূর্তি মুছে ফেলার জন্য ‘ড্যামনেশিও মেমোরি’ ঘোষণা করা হয়। রাজনীতিতে সরাসরি এক দশক প্রভাব রাখা সম্রাজ্ঞী ইতিহাসে একজন কলঙ্কিত নারীর তকমা পেয়ে যান।
তথ্যসূত্র: এনসিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন
ঢাকা/লিপি