মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখনই কোনো আক্রমণাত্মক নীতি ঘোষণা করেন, তখনই তিনি তাঁর জন্য একটি ভয়াবহ, অযৌক্তিক গল্প তৈরি করেন। তিনি একটি বানানো ব্যাখ্যা দাঁড় করান, যা মানুষের মনে সহিংসতাকে ন্যায্য প্রমাণ করার মতো করে বসে যায়।

এ মিথ্যাগুলো আমরা যত বেশি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে নতুন মিথ্যা চ্যালেঞ্জ করা আমাদের জন্য তত কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, তা আমাদের নিজেদের বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে ভাবার ধারণাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলে।

এ কৌশলকেই হিটলার তাঁর ‘মাইন কাম্ফ’ বইয়ে ‘বড় মিথ্যা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। এটি এমন মিথ্যা, যা এত বড় ও ভয়াবহ যে মানুষ সেটিকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করতে পারে না।

হিটলারের সবচেয়ে বড় মিথ্যা ছিল—একটি আন্তর্জাতিক ইহুদি ষড়যন্ত্রই জার্মানির দুরবস্থার মূল কারণ। এ মিথ্যার মাধ্যমে তিনি একটি গোষ্ঠীকে বলির পাঁঠা বানিয়ে অন্যদের দায়মুক্তি দেন।

আরও পড়ুনট্রাম্প কি রাজার শাসন চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় হিটলার ও তাঁর প্রচারযন্ত্র আরেকটি মিথ্যা ছড়ায়। সেটি হলো, পোল্যান্ড আসলে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রই নয় এবং তারা আক্রান্তও নয়, বরং তারাই যুদ্ধ শুরু করেছে।

ট্রাম্পের মিথ্যার সংখ্যাও অগণিত। তবে সবচেয়ে বহুমুখী মিথ্যাগুলোর একটি হলো তাঁর নীতির উদ্দেশ্য নাকি মাদক ফেন্টানিলের পাচার বন্ধ করা।

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প দাবি করেন, কানাডা নাকি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমে আক্রমণ করেছে; কারণ, তারা ফেন্টানিলকে সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবাধে ঢুকতে দিচ্ছে! তিনি এমনটাও বলেছেন, কানাডার এখন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়া উচিত।

ফেন্টালিন পাচারের অজুহাতেই ট্রাম্প কানাডার রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি যখন কানাডা ও মেক্সিকোকে একসঙ্গে দোষারোপ করে বলেন, এ দুই দেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফেন্টানিল ঢুকছে’, তখন বোঝা যায়, তিনি স্পষ্টতই মিথ্যা বলছেন।

গত কয়েক মাসে ট্রাম্প প্রশাসন আরও ভয়ংকর একটি ভূরাজনৈতিক কল্পকাহিনি দাঁড় করিয়েছে। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছোট নৌকাগুলোর ওপর সামরিক হামলা নাকি মাদক পাচার ঠেকানোর জন্য খুব জরুরি! এই হামলাগুলো মূলত ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে চালানো হয়েছে এবং তাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ স্পষ্টভাবে এ হামলাকে অবৈধ বলেছেন।

আদতে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীরা যত ফেন্টানিল আটক করেছেন, তার মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ এসেছে কানাডা থেকে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ডিইএ) ২০২৪ সালের ন্যাশনাল ড্রাগ থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টেও কানাডার নাম নেই।

এরপর গত কয়েক মাসে ট্রাম্প প্রশাসন আরও ভয়ংকর একটি ভূরাজনৈতিক কল্পকাহিনি দাঁড় করিয়েছে। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছোট নৌকাগুলোর ওপর সামরিক হামলা নাকি মাদক পাচার ঠেকানোর জন্য খুব জরুরি! এই হামলাগুলো মূলত ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে চালানো হয়েছে এবং তাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ স্পষ্টভাবে এ হামলাকে অবৈধ বলেছেন।

সবাই জানে, এসব হামলায় ফেন্টানিলের প্রবাহ বন্ধ হবে না। তবু ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, সরকার ‘আমাদের দেশে মাদক আনা লোকদের হত্যা করতে থাকবে’।
আসলে এই তথাকথিত মাদক পাচারকারীদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য মাদক নয়। এটি আসলে ক্ষমতার প্রদর্শন আর হয়তো ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা।

আরও পড়ুনট্রাম্প তাঁর ভূ-অর্থনৈতিক যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন ০৭ অক্টোবর ২০২৫

এ হামলার ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু টার্গেট করা নৌকাগুলো সত্যিই মাদকবাহী ছিল, তার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
খবর এসেছে, ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলায় সিআইএকে গোপন অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছে এবং দেশের সবচেয়ে আধুনিক বিমানবাহী রণতরিকে ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করেছে।

এই সামরিক প্রদর্শন মূলত রাজনৈতিক নাটক হিসেবে সাজানো। কিন্তু এর বিপদ হলো, এটি এমন এক সংঘাতে রূপ নিতে পারে, যাতে জেতা সম্ভব নয় এবং যার শেষও অনিশ্চিত।

আসল ট্র্যাজেডি হলো যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ বছর ধরে অপিওয়েড সংকট (মাদকজাত ব্যথানাশকের আসক্তি) যুক্তরাষ্ট্রে এত সাধারণ ও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সেটি আর শুধু ‘একটা সংকট’ নয়, বরং তা দেশটির দৈনন্দিন জীবনেরই অংশ হয়ে গেছে।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অপিওয়েডজনিত মৃত্যুর হার যুক্তরাষ্ট্রে। এর প্রধান কারণ এ দেশের মুনাফানির্ভর ‘স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা’, যেখানে মানুষকে ব্যথার ওষুধের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, কিন্তু আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদি যত্ন দেওয়া হয় না।

আরও পড়ুনআর্জেন্টিনার নির্বাচনে ট্রাম্প কেন বিজয় দাবি করছেন?০১ নভেম্বর ২০২৫

পার্ডু ফার্মা নামের একটি মার্কিন ওষুধ কোম্পানির মুনাফার ষড়যন্ত্র থেকে এ সংকটের শুরু হয়েছিল। তারা অক্সিকনটিন নামে একটি জনপ্রিয় ব্যথানাশক তৈরি করে এবং বেপরোয়াভাবে বাজারজাত করে।

প্রথমে এই ওষুধের অতিরিক্ত ডোজে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। পরে অনেক ব্যবহারকারী প্রেসক্রিপশন না পেয়ে হেরোইনে ঝুঁকে পড়ে। আর এখন তারা ফেন্টানিলে আসক্ত হচ্ছে, যা কিনা হেরোইনের চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ শক্তিশালী।

এই মাদকাসক্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই রিপাবলিকান ভোটার। তাঁদের সমর্থন ছাড়া ট্রাম্প কখনোই নির্বাচিত হতেন না।

ট্রাম্প ও ভ্যান্স এই সংকটকে বোঝেন, তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং এটিকে তাঁরা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁরা জনগণের এই দুঃখ ও হতাশাকে এমনভাবে পরিচালিত করেন, যাতে সেটা তাদের ‘শত্রু’র বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে তাঁদের নিশানায় মিত্রদেশের নেতা কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিও হতে পারেন; আবার শত্রুরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোও হতে পারেন।

ভ্যান্স তাঁর ২০১৬ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘হিলিবিলি এলিজি’তে লিখেছেন, তাঁর মা একজন নার্স ছিলেন। এ কারণে তিনি সহজেই ওষুধ পেতেন এবং সে কারণে তিনি আসক্তির শিকার হন।

আরও পড়ুনট্রাম্প আবার যেভাবে মোদিকে ধোঁকা দিলেন২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কিন্তু রাজনীতিতে এসে ভ্যান্স অভিবাসন ও নিরাপত্তার প্রসঙ্গে বললেন, এসব মাদকের জন্য দায়ী ‘আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে আসা বিষ’; অর্থাৎ তিনি সব দায় চাপালেন অন্য দেশের ঘাড়ে।

আমেরিকানদের এখন বলা হচ্ছে, ‘তোমাদের আসক্তি হলো তোমাদের ওপর আক্রমণ, আর এই আক্রমণ বাইরের শত্রুর কাজ।’ ট্রাম্প ও ভ্যান্স এই মনস্তত্ত্বকেই কাজে লাগাচ্ছেন।

মাদকাসক্তরা সাধারণত নিজেদের দুরবস্থার জন্য অন্যকে দায়ী করতে চান। এ মানসিকতা এখন ডানপন্থী রাজনীতির কেন্দ্রীয় যুক্তিতে পরিণত হয়েছে।
দেশের সব সমস্যার জন্য ‘অন্য কেউ দায়ী’—এ বিশ্বাস এখন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে।

ফলে ট্রাম্প প্রশাসন এখন গাঁজাখুরি গল্পের মতো করে বলছে, একটি ভেনেজুয়েলীয় নৌকায় বোমা ফেললেই ২৫ হাজার আমেরিকানের জীবন বাঁচে। মিথ্যার কার্যকারিতা এখানেই। এগুলো দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনসি চিন পিংয়ের কাছে লড়াইয়ে পরিষ্কারভাবে হেরে যাচ্ছেন ট্রাম্প২১ অক্টোবর ২০২৫

অপিওয়েড সংকটের দায় অন্য দেশের ওপর চাপানো আমেরিকানদের কাছে নৈতিকভাবে আরামদায়ক। কিন্তু এত বড় মিথ্যা টিকিয়ে রাখতে হলে পুরো একটা ‘বিকল্প বাস্তবতা’ (অলটারনেটিভ রিয়েলিটি) তৈরি করতে হয়।

আমেরিকায় চলমান অপিওয়েড সংকট নিয়ে নিজেদের দায় এড়াতে এবং অন্যদের ওপর দায় চাপাতে ট্রাম্প প্রশাসন সেই বিশাল বিকল্প বাস্তবতা গড়ে তুলেছে। এই বিকল্প বাস্তবতার ভেতরে তারা এমন একটি বর্ণনা তৈরি করছে, যা আমেরিকান জনগণকে বিশ্বাস করায়—মাদক পাচারের সব দোষ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর, অভিবাসীদের। এতে দেশীয় মাদক ব্যবসায়ীদের, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর (যাদের কারণে সংকট শুরু) এবং সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টি আড়াল হয়ে যায়।

এটি আমেরিকার ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। অতীতেও দেখা গেছে, যখনই যুক্তরাষ্ট্র কোনো ‘যুদ্ধ’ শুরু করতে চেয়েছে (সেটা আফগানিস্তান হোক, ইরাক হোক, বা অন্য কোথাও) তখন তারা যুদ্ধের যৌক্তিকতা তৈরি করতে শব্দ বা গল্পের মাধ্যমে মিথ্যা বাস্তবতা দাঁড় করিয়েছে। সেই মিথ্যা গল্পের ভেতরেই মানুষকে বিশ্বাস করানো হয়েছে যে, ‘আমরা ভালো কাজ করছি’, ‘আমরা ন্যায়ের পক্ষে লড়ছি’, ‘আমরা আমাদের দেশ রক্ষা করছি’। তবে বাস্তবে যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা।

আরও পড়ুনট্রাম্প যা করছেন, তাতে তুরস্ক আর হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ট্রাম্প প্রশাসনও এখন একই কৌশল নিচ্ছে। তারা মাদকের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করে আসলে জনগণকে অন্যদিকে দৃষ্টি দিতে বাধ্য করছে। তারা চায় মানুষ ভাবুক, সমুদ্রপথে মাদক আটকানো মানেই নৈতিক বিজয়। তারা চায় ‘নৌকায় হামলা = মাদক ঠেকানো’—এই সমীকরণটাই মানুষ মেনে নিক।

কিন্তু এটি সেই প্রোপাগান্ডার ধরন যা ইতিহাসে বহুবার ‘অর্থহীন যুদ্ধ’ শুরুর আগে সাম্রাজ্যবাদীরা ব্যবহার করেছে।

আসরে সব যুদ্ধ শুরু হয় শব্দ দিয়ে। অর্থাৎ মিথ্যা প্রচার, বিকৃত গল্প, আর ভয়ের বর্ণনা দিয়েই যুদ্ধের ভিত্তি গড়ে ওঠে। তাই কোনো সংঘাত শুরু হওয়ার আগেই সেই মিথ্যাগুলো চিহ্নিত করা জরুরি।

ট্রাম্প বা তাঁর মতো শাসকদের আগ্রাসী নীতিকে থামাতে হলে বড় বড় মিথ্যাবাদীদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। সাহসের সঙ্গে ছোট ছোট সত্যগুলো বলতে হবে।

এই ‘ছোট ছোট সত্যগুলো’ (যেমন প্রকৃত পরিসংখ্যান, আক্রান্ত মানুষের কণ্ঠ, মাদক কোম্পানির অপরাধের তথ্য) সময়ের সঙ্গে একত্র হয়ে সেই ‘বিকল্প বাস্তবতার’ ভেতরে ফাটল ধরাতে পারে।

টিমোথি স্নাইডার লেখক ও টরন্টো ইউনিভার্সিটির আধুনিক ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রথম চেয়ার অধ্যাপক

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ব শ ব স কর র জন ত ক বড় ম থ য আম র ক ন র জন য আম দ র আসক ত র একট সবচ য় ন আরও র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানের টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত গোপালগঞ্জের রতন

পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা রতন ঢালী (২৯) নামে এক যুবক। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশটির খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে তিনি এবং ফয়সাল হোসেন (২২) নামে অপর এক বাংলাদেশি নিহত হন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রতনের বাবা জানান, দেড় বছর ধরে ছেলের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। ছেলে নিহত হয়েছে এ খবর জানে না তার মা।

গোপালগঞ্জের মকুসুদপুর উপজেলার হরিশ্চর গ্রামের আনোয়ার ঢালী এবং সেলিনা বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন রতন। বর্তমানে তার বাবা-মা এক মেয়েকে নিয়ে গ্রামের একটি টিনের ঘরে বসবাস করছেন। এর আগে তারা ঢাকায় থাকতেন।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে নিহত ৫ নারীর দাফন সম্পন্ন

মনিরামপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী নিহত

রতন ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মেডিকেল সেন্টারে কাজ করতেন, তার বাবা আনোয়ার ঢালী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালাতেন। আনোয়ার ঢালী স্ত্রীকে নিয়ে মকুসুদপুর চলে আসলেও ছেলে রতন  আসেননি। সবশেষ ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল ফোনে কথা হয় রতনের সঙ্গে তার বাবার।

সে সময় রতন তার বাবাকে জানান, তিনি ভারতে আছেন। সেখান থেকে দুবাই যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। এরপর আর তাদের যোগাযোগ হয়নি।

মেডিকেল সেন্টারে কাজ করা ফয়সাল হোসেনকে নিয়ে রতন গত বছরের ২৭ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তারা অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে যান এবং তারা টিটিপিতে যোগ দেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে রতন ও ফয়সাল নিহত হন। 

রতনের বাবা আনোয়ার ঢালী বলেন, “রতন শেষবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল। সে বলেছিল, ভারতে আছে, শিগগিরই দুবাই যাবে। এরপর রতনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি পরিবারের। কয়েকদিন আগে পুলিশ বাসায় এসে রতনের নিহত হওয়ার খবর জানায়। সে কীভাবে পাকিস্তান গেল আর কীভাবে টিটিপিতে যোগ দিল তা জানা নেই।” 

মকুসুদপুর উপজেলার হরিশ্চর গ্রামের একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন রতনের বাবা-মা

তিনি জানান, রতন যে কাজ করেছে এ কারণে তাদের কোনো শোক নেই। যারা রতনকে এমন কাজে জড়িয়েছেন তাদের বিচারের দাবি করেন আনোয়ার ঢালী।

রতনের মা সেলিনা বেগম বলেন, “২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল শেষবার রতনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল, মা আমি দুবাই যাচ্ছি, এখন দিল্লিতে আছি। আমি জানতে চাই, দুবাই যেতে এত টাকা কিভাবে পেলি। তখন রতন বলে, যেখানে কাজ করছি তারাই টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এরপর আর কথা হয়নি।”

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত ফয়সাল হোসেনের ঠিকানা এখনো জানা যায়নি। 

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ