দেশের ইতিহাসের ঘটনাবহুল দিন আজ ৭ নভেম্বর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন পৃথক নামে দিনটি পালন করে। বিএনপি দিনটিকে পালন করে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে। এরপর ওই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। শুরু হয় সেনাবাহিনীতে পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থানের ঘটনা। এসব ঘটনার এক পর্যায়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দী হন। ৭ নভেম্বর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি মুক্ত হন।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ ৯ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের মুক্তির পথ প্রসারিত হয়েছে। এখন চূড়ান্ত গণতন্ত্রের চর্চার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জাসদ দিনটিকে পালন করে ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে। আর প্রগতিশীল অনেক দল ও সংগঠন ৭ নভেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে।
বিএনপির কর্মসূচি৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সকাল ছয়টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোয় দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতিহা পাঠ করবেন নেতা-কর্মীরা। একই দিন বেলা তিনটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে র্যালি বের করা হবে। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও একই দিন র্যালির আয়োজন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার টিএসসিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করবে ছাত্রদল, শনিবার তাদের আলোচনা সভাও রয়েছে; ৯ নভেম্বর এতিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করবে ওলামা দল; তাঁতী দল আলোচনা সভা করবে ১০ নভেম্বর, কৃষক দল করবে ১১ নভেম্বর; ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে জাসাস।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের পেছনে ছিল রাজনৈতিক বিদ্বেষ: অ্যাটর্নি জেনারেল
দেড় দশক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে যে রায় সর্বোচ্চ আদালত দিয়েছিল, তার পেছনে রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছিল বলে আদালতে শুনানিতে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
আজ বুধবার আসাদুজ্জামান আপিল বিভাগে এ–সংক্রান্ত শুনানিতে বলেছেন, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ‘শর্ট অর্ডার’ (সংক্ষিপ্ত রায়) যেদিন ঘোষণা করেন, সেদিনই রায়ের দিন। ঘোষিত রায় ১৬ মাস পর পরিবর্তন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আইন ও রীতি অনুসরণ করা হয়নি। ঘোষিত রায় নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারার অপরাধ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ অষ্টম দিনের মতো শুনানি হয়। গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়েছিল। পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখা হয়েছে।
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন।
ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। সংক্ষিপ্ত রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আরও দুটি নির্বাচনের জন্য রাখার বিষয়টি সংসদ বিবেচনা করতে পারে বলে উল্লেখ ছিল। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে কিছু ছিল না।
আজ শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দেশের মেঠো পথ ধরে যারা হাটে যায়, তারাও জানে হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। হুকুমটা নড়ানোর জন্য যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে হুকুম নড়াতে হয়। উনি (খায়রুল হক) হুকুম নাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য প্রক্রিয়া আছে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ করতে পারে কিংবা আদালত সুয়োমটো (স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে) পারে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস ভঙ্গ হয়েছে। আইন ও রীতি অনুসারে হয়নি। এই রায় আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর।’
আসাদুজ্জামান বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি দুর্নীতিগ্রস্ত বা বিদ্বেষপূর্ণভাবে এমন কোনো প্রতিবেদন, আদেশ, রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদান করে, যা সে জানে যে আইনের পরিপন্থী, তাহলে তাঁকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানি শুরুর আগে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০১১ সালের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। তারপর এই শুনানি শুরু হয়।
‘সামরিক শাসনে মানুষের মুক্তি বিরল ঘটনা’
গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হলে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের হাঁটা শুরু হয়েছিল। দুই বছরের মাথায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। বাক্স্বাধীনতার কণ্ঠরুদ্ধ করা হয়। জনগণ তখন ফুঁসে উঠেছিল।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তখন গণতন্ত্র হত্যার সাথে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা বললেন, আমরা যেটা বলব, সেটাই গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন থাকবে। আমি যেটা বলব, সেটা গণতন্ত্র, আমি রাষ্ট্রপতি যেটা বলব, সেটি বিচার বিভাগ। আইনের শাসন বলতে আমি যেটা বলব, বাকশাল রক্ষীবাহিনী যেটা বলবে, সেটা আইনের শাসন। কথা বলবেন, আপনার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হবে। সব পত্রিকার স্বাধীনতা হরণ করলেন। প্রতিবাদ উঠেছিল, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিগত দুই বছর সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিরল ঘটনা সামরিক শাসনে সেই মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন।’
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের একটি পর্বের পরে দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন একটি সামরিক শাসন। গণতন্ত্রের স্বাদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের আওয়ামী লীগ, সেটা কিন্তু সামরিক শাসনের করুণায়।’
পদ ছেড়ে ভোট করবেন আসাদুজ্জামান
পদ ছেড়ে দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। আজ বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পাওয়া আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি ভোট করব, আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’
গত বছরের ৮ আগস্ট রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান আসাদুজ্জামান। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
তাহলে এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল কে হচ্ছেন, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ যাকে মনে করে।’
আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি০৪ নভেম্বর ২০২৫