জামদানির ‘মিথ’ ভাঙলেন ফরিদপুরের মোস্তাফিজুর
Published: 7th, November 2025 GMT
৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের একটি টিনের ঘর। এর মধ্যে সারিবদ্ধভাবে সাজানো ছয়টি তাঁত। প্রতিটি তাঁতে দুজন করে বসে একসঙ্গে কাজ করছেন ১২ জন। রেশম সুতা, বাইনা সুতা ও জরির বুননে তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য জামদানি শাড়ি।
এভাবেই মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট্ট টিনের ঘরে মাসে ২২ থেকে ২৫টি জামদানি শাড়ি তৈরি হচ্ছে। সেগুলো বিক্রিও হয়ে যাচ্ছে। তাঁর এই কারখানার অবস্থান ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল গ্রামে।
অজপাড়াগাঁয় বসেই বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া জামদানি বুনছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, ‘অনেকে বলেন শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে তৈরি জামদানি শাড়ির মান ভালো। এ মিথ আমি ভেঙে দিয়েছি। সঠিক উপকরণের সঠিক ব্যবহার করলে এবং কাজের প্রতি মমত্ববোধ ও একাগ্রতা থাকলে দেশের যেকোনো জায়গা থেকেই ভালো মানের জামদানি শাড়ি প্রস্তুত করা সম্ভব।’
মোস্তাফিজুরের শাড়ির মান ভালো হওয়ার কারণে ক্রেতারা বাড়িতে এসে কিনে নেন। আবার বিভিন্ন পার্বণ উপলক্ষে আগে থেকেও তাঁকে শাড়ির ফরমাশ দিয়ে রাখেন অনেকে। আবার অনেক সময় রূপগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীতেও পাঠান তাঁর শাড়ি।
প্রথমে শিখেছেন, এখন শেখাচ্ছেন
জামদানির নকশা সুচিকর্মে ফুটিয়ে তোলা হয় না, ছাপাও হয় না। এর বুনন এক বিস্ময়কর বয়নকৌশল। বাবা থেকে ছেলে, ওস্তাদ থেকে শাগরেদ—শ্রুতি ইতিহাস আর হাতে–কলমে শেখার মধ্য দিয়ে পরম্পরায় প্রবাহিত হয়ে চলেছে এই বয়নশিল্প।
অভাবের সংসারে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি মোস্তাফিজুর রহমানের। এ কারণে শৈশব থেকেই জীবিকার সন্ধানে নিয়োজিত করেন নিজেকে। ১৬ বছর বয়সে ২০০৭ সালে তিনি চলে যান নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার জামদানিপল্লিতে। সেখানেই তিনি জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ শেখেন। এরপর রূপগঞ্জেই একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। সেখানে কাটিয়ে দেন ১৪ বছর।
একসময় মন চায় নিজ এলাকায় ফিরতে। ২০২১ সালে তিনি ফিরে আসেন ফরিদপুরের পানাইল গ্রামের নিজ বাড়িতে। সেখানেই একটি তাঁত বসিয়ে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। আগ্রহী অন্যদেরও বুননের কাজ শেখাতে থাকেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাঁত ও কারিগরের সংখ্যা। এখন তাঁর মোট ছয়টি তাঁত। এতে কাজ করছেন তিনিসহ ১২ জন। ইতিমধ্যে স্ত্রী নিলা বেগম তাঁতের কাজ শিখে নিয়েছেন। তিনিও সংসারের কাজের ফাঁকে স্বামীর সঙ্গে জামদানি বোনায় হাত লাগান।
নিজের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নেই মোস্তাফিজুরের। শাড়ি বিপণনের জন্য তিনি একটি নামও দিয়েছেন—‘মুসলিম জামদানি ঘর’। যদিও বাড়ির কোথাও এ নামে কোনো সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়নি। মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শাড়ি উৎপাদনে এখন পর্যন্ত তিনি পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। একটা শাড়িতে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ রেশমি সুতা থাকে। রেশমি সুতা কেনা হয় রাজশাহী থেকে। একটি শাড়িতে সুতা বাবদ ব্যয় হয় অন্তত দুই হাজার টাকা। সুতা কেনা থেকে শুরু করে কারিগরদের বেতন দেওয়ার পরও প্রতি মাসে তাঁর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
মোস্তাফিজুর রহমানের মোট ছয়টি তাঁত। এতে কাজ করেন তিনিসহ ১২ জন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ত ফ জ র রহম ন জ মদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদো বললেন, ‘স্পেনের চেয়ে সৌদি আরবে গোল করা কঠিন’
ব্রিটিশ সাংবাদিক পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে কথার আগল খুলে দিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অন্তরঙ্গ এই সাক্ষাৎকারে রোনালদো তাঁর ক্যারিয়ার, অর্জন, অবসর এবং ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কথা বলেছেন।
একই সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশেও সামনে এসেছে ‘সিআর সেভেনের’ চমকপ্রদ সব মন্তব্য। যেখানে তিনি দিয়েগো জোতার শেষকৃত্যে না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি কথা বলেছেন নিজের গোল করার ক্ষমতা, সৌদি ফুটবল ও বিশ্বকাপ নিয়েও।
লিভারপুল ও পর্তুগালের ফরোয়ার্ড দিয়োগো জোতা এবং তাঁর ভাই আন্দ্রে সিলভা গত জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মারা যান। ক্লাব ও জাতীয় দলের বেশ কিছু সতীর্থ পর্তুগালে অনুষ্ঠিত জোতা ও তাঁর ভাইয়ের শেষকৃত্যে যোগ দিলেও রোনালদো ছিলেন অনুপস্থিত। রোনালদো বলেছেন, তিনি জোতার শেষকৃত্যে যাননি। কারণ, তিনি চাননি বিষয়টা ‘একটা সার্কাস’–এ পরিণত হোক।
আরও পড়ুনবিশ্বকাপ জিতলেই কি ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হয় কেউ—প্রশ্ন রোনালদোর০৫ নভেম্বর ২০২৫পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোনালদো বলেন, ‘মানুষ আমার অনেক সমালোচনা করে। আমি তাতে কিছু মনে করি না। যখন তোমার বিবেক পরিষ্কার থাকে, তখন কে কী বলল, তা নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। আমি একটা কাজ আর করি না, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি আর কখনো কবরস্থানে যাইনি। আমাকে যারা চেনে, তারা বিষয়টা জানে। আমি যেখানে যাই, সেখানে ভিড় জমে, হইচই হয়, মানে একরকম সার্কাস শুরু হয়ে যায়।’
রোনালদো যোগ করেন, ‘আমি বাইরে যাই না। কারণ, গেলে সবার দৃষ্টি আমার দিকেই চলে যায়। আমি এমন মনোযোগ চাই না। আমি দেখছিলাম যে কিছু লোক সেই সংবেদনশীল মুহূর্তে সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল বা ফুটবল নিয়ে কথা বলছিল, আমি এটা পছন্দ করি না।’
পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশে রোনালদো কথা বলেছেন নিজের গোল করার ক্ষমতা নিয়েও, ‘বাজে একটি মৌসুমেও যখন আল নাসর কোনো ট্রফি জেতেনি, তখনো আমি ২৫টি গোল করেছি। যদি আমি প্রিমিয়ার লিগে খেলতাম, তাহলে এখনো একই রকম গোল করতাম। ভালো দলে থাকলে ৪০ বছর বয়সেও একই রকম পারফর্ম করতাম।’
সাংবাদিক পিয়ার্স মরগানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো