Prothomalo:
2025-11-06@19:30:00 GMT

সাহায্যের আবেদন

Published: 6th, November 2025 GMT

পেশেন্ট ইউসুফ মিরপুর, নুরুল নোয়াখালী, আনোয়ার ডেমরা, নাজমুল কুষ্টিয়া, ওবায়দুল নওগাঁ, মাহফুজ লক্ষ্মীপুর, মাহমুদা মোহাম্মদপুর, ইয়াসমিন আরা ধানমন্ডি, রাশেদুল দিনাজপুর, তাসনিম নর্থ সাউথ, আনিসুর কাজীপাড়া, জুবায়ের যশোর, জিনিয়া নীলফামারী—মুঠোফোনে এমনভাবে কয়েক ডজন মানুষের নাম-ঠিকানা সংরক্ষণ করা।

এ মানুষগুলোর সঙ্গে কখনো সামনাসামনি দেখা হয়নি। সে অর্থে পরিচয়ও নেই। তারপরও তাঁদের সঙ্গে বা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দিনের পর দিন যোগাযোগ চলেছিল। এখনো কারও কারও সঙ্গে চলে। তাঁদের কেউ এপারে রয়েছেন, আবার কেউ ওপারে পরলোকে চলে গেছেন!

এই তো! দিন কয়েক আগে শিশু জিনিয়ার হৃদ্‌যন্ত্রের ছিদ্রের চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকার জোগান হলো। মনটা খুশিতে ভরে গেল। ১১ বছরের রোগা শিশুটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সে সুস্থ হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে—এমনটাই আশা। গ্রাম পুলিশ বাবার মনঃকষ্ট কিছুটা দূর হবে, সেই প্রার্থনা।

ক্যানসারে আক্রান্ত শিক্ষক ইয়াসমিন আরার খোঁজ নিতে গিয়ে এখনো মুষড়ে পড়ি। সিঙ্গেল মাদার, ছেলেটা মাধ্যমিকের পাঠ চুকাতে যাচ্ছে। কিন্তু এই মাকে মাসে ৪৪ হাজার টাকার ওষুধ খেতে হচ্ছে। কোথা থেকে এত টাকার জোগান হবে? ভাবতেই মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা আমাদের কত সুখে রেখেছেন!

মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ করা ক্যানসারে আক্রান্ত তাসনিমের মৃত্যুর সংবাদ কয়েক দিন আগে তাঁর বাবাই হোয়াটসঅ্যাপে জানালেন। বয়োজ্যেষ্ঠ বাবাটাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাইনি। ‘আঙ্কেল, আসার সিরিয়াল আছে, যাওয়ার সিরিয়াল নাই। মেয়ের জন্য শুধু দোয়া করেন’ বলে তাঁর কষ্টটা হালকা করার বৃথা চেষ্টা করলাম।

রাশেদুল তাঁর হাঁটতে না পারা ছেলের উন্নতিতে যে আনন্দ পাচ্ছেন, তা কয়েক বছর ধরে প্রায়ই ফোন করে ভাগ করে নেন। ভ্যানচালক রাশেদুলের আনন্দ ও আশীর্বাদ অমূল্য। ফোন করে তাঁর যে কৃতজ্ঞতা ও বিনয়, তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।

বাস্তব এ গল্পগুলো প্রথম আলোর ৪ নম্বর পাতার অনিয়মিত একটা ‘সেগমেন্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত। নাম: সাহায্যের আবেদন। কঠিন রোগে সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষদের কেউ কেউ এর মাধ্যমে দেশের মানুষের দ্বারস্থ হন—যদি কিছু মেলে, এই আশায়। মানুষ বাঁচতে চায়। মানুষের বাঁচার যে কী আকুতি, তা এই মানুষগুলোর ঘটনা না জানলে বোঝানো যাবে না। জীবননাশী রোগাক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী মানুষটিকেও পরিবারের সদস্যরা শেষ সম্বল ভিটেমাটি বিক্রি করে বাঁচাতে চায়। তাতে কুলিয়ে উঠতে না পারলে সমাজের দ্বারস্থ হয়।

কয়েক বছর ধরে অধিকাংশ সাহায্যের আবেদন আমার হাতে লেখা। চেষ্টা করি, ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দুর্দশায় পড়া মানুষগুলোর জন্য কিছু করার। নিজের পকেটের তো ততটা জোর নেই, তবে একটা হৃদয় আছে, যেটা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

প্রথম আলোতে সাহায্যের আবেদন প্রকাশের পর অনেকেই বিশ্বাস থেকে সাড়া দেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, প্রথম আলো যা ছাপিয়েছে, তা সত্যি। আসলে আমরা হলাম মাধ্যম মাত্র। সব কৃতিত্ব আমাদের দেশ-বিদেশের হৃদয়বান পাঠকদের। তাঁরা তাঁদের কষ্টের টাকা থেকে এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, দাঁড়াচ্ছেন, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবেন।

সংশ্লিষ্ট রোগী যাতে একটু বেশি চিকিৎসা সহায়তা পান, সে জন্য প্রধানত দুই ধরনের কৌশল প্রয়োগ করছি। ১.

ছাপা সংস্করণের খবরটি পরের দিন বাংলাদেশ সময় রাত দুটো থেকে চারটার মধ্যে অনলাইনে প্রকাশ করি। এর কারণ হলো তখন প্রবাসীদের জেগে থাকার সময়। এ কৌশলটি বেশ কাজ দিচ্ছে। এর কারণে অর্থপ্রাপ্তির হার প্রিন্টের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি বলে আমার পর্যবেক্ষণ। ২. কয়েক মাস হলো এই কৌশলটি প্রয়োগ করছি—বিকাশ বা নগদে সাহায্য পাঠানো যাতে সহজ হয় সে জন্য মুঠোফোন নম্বরটা অনলাইনে প্রকাশের সময় ইংরেজিতে করে দিই। এটাও ভালো ফল দিচ্ছে। কারণ, সাহায্যের আবেদন পড়ার পর অনেকের মনেই তাৎক্ষণিক মানবিক বোধ জাগ্রত হয়। তাঁরা চট করে ইংরেজি মুঠোফোন নম্বরটি কপি করে টাকা পাঠাতে পারেন। কিন্তু বাংলা নম্বর দেখে লেখার ঝামেলায় অনেকেই তাৎক্ষণিক সাহায্য পাঠাতে পারেন না। পরে দেবেন বলে ভুলে যান বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

মানুষের পাশে দাঁড়ালে ক্ষয় হয় না, দিলের ভেতর আলো জ্বলে। অন্যের দুঃখের ভাগ নিলে মন ভরে, ভালোবাসা ফেরে দ্বিগুণ করে। এক মুঠো সাহায্য, এক ফোঁটা মায়া, জীবন বদলায়, মুছে দেয় গ্লানি। যে দেয় সে-ই থাকে চিরজীবন্ত।

আসুন! আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে সমাজের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই, মুখ ফিরিয়ে না থাকি। আজকে অন্যের কষ্টের দিন, কালকে যে আমার হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা কি আছে?

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আলোচনার জন্য মির্জা ফখরুলকে জামায়াত নেতা তাহেরের ফোন

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে আলোচনার জন্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। বিএনপির মহাসচিব বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে তুলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে বিকেলে জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করে আলোচনায় বসার বিষয়ে কথা বলেছেন। বিএনপির মহাসচিব দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে তাঁদের জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের সঙ্গে ওই প্রস্তাবের তফসিলে উল্লেখিত সনদের নানা অসংগতি রয়েছে জানিয়ে তাতে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। এ ছাড়া সনদ বাস্তবায়নে গণভোট কবে হবে, তা নিয়েও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে।

বিএনপি সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট করার পক্ষে। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামী চায়, আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার পর তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত রোববার উপদেষ্টা পরিষদের এক সভা থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা

বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তারেক রহমানের সভাপতিত্বে রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ ও বিস্তারিত আলোচনা শেষে কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) যেসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ১৭ অক্টোবর যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার অংশীদার হিসেবে সনদে বর্ণিত সব বিষয় ধারণ করে বিএনপি। দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ দলটি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সর্বসম্মতভাবে গৃহীত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে নতুন প্রশ্ন কিংবা সংকট সৃষ্টির সব অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে বিএনপি। দলটি মনে করে, দীর্ঘ আলোচনায় উপনীত ঐকমত্য বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং কোনো মতেই নিত্যনতুন প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা সংকট সৃষ্টি করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জুলাই জাতীয় সনদের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার আইনানুগ বাস্তবায়নের জন্য এবং যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ