বিজ্ঞানী মারিয়া সালোমিয়া স্ক্লদোভস্কাকে আমরা চিনি মেরি কুরি হিসেবে। পোল্যান্ডে ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মানব ইতিহাসে বিজ্ঞান গবেষণার এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে। তিনি কেবল পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে নোবেল পুরস্কার জেতা প্রথম নারী নন, দুটি ভিন্ন বৈজ্ঞানিক শাখায় নোবেলজয়ী একমাত্র ব্যক্তি তিনি। তাঁর কাজ তেজস্ক্রিয়তার ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব এসেছে তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে।

পোল্যান্ডের ওয়ারশতে জন্মগ্রহণকারী মারিয়ার শৈশব কেটেছে কঠিন পরিস্থিতিতে। পোল্যান্ড তখন রুশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সেখানে সীমাবদ্ধ ছিল। অর্থাভাবে মারিয়াকে গৃহশিক্ষিকা হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল। ১৮৯১ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি প্যারিসে পাড়ি জমান। সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানেই তিনি ‘মেরি’ নাম গ্রহণ করেন। ১৮৯৫ সালে সহকর্মী বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরিকে বিয়ে করেন।

মেরি কুরি এমন এক সময়ে গবেষণা শুরু করেন যখন পদার্থবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছিল। ১৮৯৬ সালে হেনরি বেকেরেল ইউরেনিয়াম থেকে অদৃশ্য রশ্মির নির্গমন আবিষ্কার করেন। মেরি এ ঘটনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে এই রশ্মির তীব্রতা শুধু ইউরেনিয়ামের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে, এর রাসায়নিক অবস্থার ওপর নয়। তিনিই প্রথম এই ঘটনাকে ‘তেজস্ক্রিয়তা’ নাম দেন।

কুরি দম্পতি ইউরেনিয়াম আকরিক পিচব্লেন্ড নিয়ে কাজ করেন। তাঁরা বুঝতে পারেন যে ইউরেনিয়ামের চেয়ে শক্তিশালী তেজস্ক্রিয়তা উপস্থিত থাকে পিচব্লেন্ডে। সীমিত সম্পদ নিয়ে কাজ করে তাঁরা দুটি নতুন মৌলিক উপাদান আবিষ্কার করেন। ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে আবিষ্কার করেন পোলোনিয়াম। এর নামকরণ করা হয় মেরির জন্মভূমি পোল্যান্ডের নামে। একই বছর তাঁরা রেডিয়ামও আবিষ্কার করেন। এই মৌল বিখ্যাত হয় তীব্র তেজস্ক্রিয়তার কারণে।

মেরি কুরি তাঁর গবেষণার জন্য অভূতপূর্ব স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য মেরি কুরি, পিয়েরে কুরি ও হেনরি বেকেরেল যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১১ সালে মেরি কুরি দ্বিতীয় নোবেল জয় করেন। রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কার এবং রেডিয়ামের উপাদানগত প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য মেরি কুরি রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই দ্বিতীয় পুরস্কার তাঁকে ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

১৯০৬ সালে পিয়েরে কুরির মৃত্যুর পরও মেরি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। ফ্রান্সের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মেরি কুরি তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহারিক প্রয়োগে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মোবাইল এক্স-রে ইউনিট তৈরি করেন, যা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের দ্রুত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সামগ্রিকভাবে মেরি কুরির কাজ আধুনিক পরমাণুবিজ্ঞান, ক্যানসার থেরাপি রেডিওথেরাপি ও পারমাণবিক শক্তি বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে।

সূত্র: আমেরিকান নিউক্লিয়ার সোসাইটি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ক র ইউর ন য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

যে বিজ্ঞানীর হাত ধরে পারমাণবিক গবেষণার শুরু

বিজ্ঞানী মারিয়া সালোমিয়া স্ক্লদোভস্কাকে আমরা চিনি মেরি কুরি হিসেবে। পোল্যান্ডে ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মানব ইতিহাসে বিজ্ঞান গবেষণার এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে। তিনি কেবল পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে নোবেল পুরস্কার জেতা প্রথম নারী নন, দুটি ভিন্ন বৈজ্ঞানিক শাখায় নোবেলজয়ী একমাত্র ব্যক্তি তিনি। তাঁর কাজ তেজস্ক্রিয়তার ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব এসেছে তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে।

পোল্যান্ডের ওয়ারশতে জন্মগ্রহণকারী মারিয়ার শৈশব কেটেছে কঠিন পরিস্থিতিতে। পোল্যান্ড তখন রুশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সেখানে সীমাবদ্ধ ছিল। অর্থাভাবে মারিয়াকে গৃহশিক্ষিকা হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল। ১৮৯১ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি প্যারিসে পাড়ি জমান। সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানেই তিনি ‘মেরি’ নাম গ্রহণ করেন। ১৮৯৫ সালে সহকর্মী বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরিকে বিয়ে করেন।

মেরি কুরি এমন এক সময়ে গবেষণা শুরু করেন যখন পদার্থবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছিল। ১৮৯৬ সালে হেনরি বেকেরেল ইউরেনিয়াম থেকে অদৃশ্য রশ্মির নির্গমন আবিষ্কার করেন। মেরি এ ঘটনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে এই রশ্মির তীব্রতা শুধু ইউরেনিয়ামের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে, এর রাসায়নিক অবস্থার ওপর নয়। তিনিই প্রথম এই ঘটনাকে ‘তেজস্ক্রিয়তা’ নাম দেন।

কুরি দম্পতি ইউরেনিয়াম আকরিক পিচব্লেন্ড নিয়ে কাজ করেন। তাঁরা বুঝতে পারেন যে ইউরেনিয়ামের চেয়ে শক্তিশালী তেজস্ক্রিয়তা উপস্থিত থাকে পিচব্লেন্ডে। সীমিত সম্পদ নিয়ে কাজ করে তাঁরা দুটি নতুন মৌলিক উপাদান আবিষ্কার করেন। ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে আবিষ্কার করেন পোলোনিয়াম। এর নামকরণ করা হয় মেরির জন্মভূমি পোল্যান্ডের নামে। একই বছর তাঁরা রেডিয়ামও আবিষ্কার করেন। এই মৌল বিখ্যাত হয় তীব্র তেজস্ক্রিয়তার কারণে।

মেরি কুরি তাঁর গবেষণার জন্য অভূতপূর্ব স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য মেরি কুরি, পিয়েরে কুরি ও হেনরি বেকেরেল যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১১ সালে মেরি কুরি দ্বিতীয় নোবেল জয় করেন। রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কার এবং রেডিয়ামের উপাদানগত প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য মেরি কুরি রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই দ্বিতীয় পুরস্কার তাঁকে ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

১৯০৬ সালে পিয়েরে কুরির মৃত্যুর পরও মেরি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। ফ্রান্সের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মেরি কুরি তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহারিক প্রয়োগে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মোবাইল এক্স-রে ইউনিট তৈরি করেন, যা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের দ্রুত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সামগ্রিকভাবে মেরি কুরির কাজ আধুনিক পরমাণুবিজ্ঞান, ক্যানসার থেরাপি রেডিওথেরাপি ও পারমাণবিক শক্তি বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে।

সূত্র: আমেরিকান নিউক্লিয়ার সোসাইটি

সম্পর্কিত নিবন্ধ