একদিন দেখি আইইআরে আমাদের ব্যাচের সব মেয়ে সেজেগুজে এসেছে। একেকটা ডানাকাটা পরি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্লাসের দিকে তাদের মন নেই।

কী ব্যাপার?

আমার তৎকালীন সহপাঠী মিতু বলল, আজ ডিপার্টমেন্টের সব মেয়ে ঘুরতে যাবে। তাদের নিয়ে যাবে নওরোজ ইমতিয়াজ।

নওরোজ আমাদের ব্যাচেরই ছাত্র। তাকে আমি পছন্দ করতাম না। কারণ, সে দেখতে সুন্দর। বড়লোক। গাড়ি চালিয়ে ক্লাস করতে আসে। তার হাতে থাকে বিশাল আকৃতির ডিএসএলআর ক্যামেরা। সেটা দিয়ে সে অক্লেশে মেয়েদের ছবি তোলে। আর সব মেয়ে তার পেছন পেছন ঘোরে।

এ রকম ছেলেকে পছন্দ করার কোনো কারণ নেই।

আমি মিতুকে বললাম, ‘নওরোজ একটা ফাউল পোলা। ওর পাল্লায় অ্যাটলিস্ট তুমি পইড়ো না।’

মিতু মাথা কাত করে আমার কথা মেনে নিল।

কিন্তু দুপুরবেলায় এক কাণ্ড হলো। আমরা সবাই মিলে ক্লাস ‘বাং’ করলাম।

‘বাং’ শব্দটার মানে ঠিক জানি না। এর প্রচলিত অর্থ হচ্ছে, পারস্পরিক যোগসাজশে ক্লাস বর্জন করা।

আমরা সবাই মিলে ক্লাস বর্জন করলাম। আমাদের যেহেতু করার কিছু নেই, ব্যাচের সবাই রওনা দিল নওরোজের সঙ্গে এবং এটা আজও রহস্য, কেন আমিও সেই দলে ঢুকলাম। ফাউল নওরোজের সঙ্গে হাঁটা দিলাম।

নওরোজ আমাদের নিয়ে গেল একটা অফিসে। সেই অফিসে লিফট বেয়ে উঠতে হয়। কারওয়ান বাজারের সিএ বিল্ডিং। টেবিল–চেয়ার ঠিকমতো সেট হয়নি। লাইন ফিটিং আর এসি লাগানোর কাজ চলছে।

শুনলাম, নতুন একটা পত্রিকা বের হবে। নাম: দৈনিক একুশে।

যা–ই হোক। নওরোজ সেই অফিসের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে দলবল নিয়ে রাউন্ড মারছে। দলে যেহেতু নারীর সংখ্যা বেশি, কাজেই সে বেশ খাতির পাচ্ছে।

এর মধ্যে একটা টেবিলে বসে আছেন একজন লোক। দেখতে অনেকটা হিন্দি সিনেমার নায়ক গোবিন্দর মতো। শুনলাম, তাঁর নাম সুমন্ত আসলাম।

আরে.

..এই লোককে তো আমি চিনি! ‘চলতিপত্রে’ আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল। এই সুমন্ত আসলাম সেই লেখা ছেপেছিলেন। আমি তাঁকে গিয়ে বললাম, আমার নাম অমুক। আমার একটা লেখা...

আমার নাম শুনে সুমন্ত.... বলতে লজ্জা লাগছে, মোটামুটি লাফ দিয়ে উঠলেন। বললেন, ‘আরে আপনারেই তো খুঁজছি।’

এই কথা বলে তিনি আমার হাত ধরে নিয়ে গেলেন আরেক ভদ্রলোকের কাছে।

তাঁর নাম আনিসুল হক।

আনিসুল হক ও সুমন্ত যৌথভাবে জানালেন, তাঁরা ‘ফান ডে’ নামে একটি ফান ম্যাগাজিন বের করবেন। ‘উন্মাদ’ পত্রিকার আদলে। রম্যলেখকের বড়ই অভাব।

এই কথা বলে তাঁরা আমাকে কাগজ ধরিয়ে দিলেন। নিউজপ্রিন্টের ছোট ছোট টুকরা। বললেন, ‘এই সাবজেক্টে এখনই একটা লেখা লিখে দেন। এই যে, এই কোনায় বসেন। তারপর লেখেন। চা খাবেন? এই, এরে একটা চেয়ার দাও।’

আমার মনে আছে, ওই দিন আমি সেই অফিস থেকে বের হয়েছিলাম, রাত ১০টার কিছু পরে।

খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হচ্ছে, সুমন্ত তখন থাকতেন মিরপুরে। এবং তিনি তখন ব্যাচেলর। এবং আমার বাসাও মিরপুরে। এবং সুমন্ত খুবই আঠালো টাইপের লোক। এবং তিনি প্রতিদিন অলমোস্ট ভোরবেলায় আমার বাসায় এসে হাজির হতেন। এবং আমাকে নিয়ে বের হতেন। এবং কারওয়ান বাজারে গিয়ে পরোটা ডিম দিয়ে নাশতা করাতেন। এবং লিখতে বসিয়ে দিতেন। এবং রাত ১০টার আগে ছাড়তেন না। এবং তারপর ১১টার দিকে আমাকে নিয়ে রিকশায় করে মিরপুরে ফিরতেন। এবং আমাকে বসাতেন রিকশার ডান দিকে। বলতেন, ‘কিছু মনে করবেন না, আমার ওপরে অনেক বড় দায়িত্ব। রিকশায় অ্যাকসিডেন্ট ডান দিকে হয়। এ জন্য আপনি ডানে। আমি বাঁয়ে। আমার বেঁচে থাকা দরকার ভাই।’

সে সময় আমি দুই হাতে লিখতাম। রাশিফল, সিনেমা সমালোচনা, রাজনীতি—কী নেই সেখানে। সব লেখা আমার নামে যেত না। কোনো লেখা আমার নামে। কোনো লেখা আমার ছোট ভাইয়ের নামে। কোনো লেখা মিতুর নামে। এবং কোনো কোনো লেখা মিতুর মায়ের নামে।

তত দিন সবকিছু সেটল হয়ে গেছে। পত্রিকার নাম: প্রথম আলো। আর ফান ম্যাগাজিনের নাম: আলপিন।

তখন প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক ছিলেন আনিসুল হক। তিনি বসতেন ফিচার বিভাগে। তাঁর একটা বড় টেবিল ছিল। পুরো ফিচার বিভাগের একটা টেলিফোন সেট ছিল। সেটা তার সেই বড় টেবিলে। আমি প্রায়ই সেই ফোনে মিতুর সঙ্গে কথা বলতাম।

আমি যখন মিতুর সঙ্গে ফোনে কথা বলতাম, আড়চোখে আনিস ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আনিস ভাই তখন গভীর মনোযোগে ঘোরগ্রস্ত সময় পার করছেন, ফিচার বিভাগের কোনো লেখা এডিট করছেন। কিন্তু আজ বুঝতে পারি, কিসের লেখা এডিট। তিনি আড়ি পেতে আমার সব কথা শুনতেন। কেননা একদিন, ফোন রাখার আগে তিনি বললেন, ‘দাঁড়ান, লাইন কাইটেন না। ফোনটা দ্যান।’

তারপর ফোন নিয়ে মিতুকে বললেন, ‘আপনি রবির হুমকিতে ভয় পাইয়েন না। আপনার সাথে আমি সুমনা শারমীনের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এই রকম সিচুয়েশনে তাঁর সাথে পরিচয় থাকা দরকার।’

যথাসময়ে সুমনা শারমীনের সকাশে মিতুর বৈঠক হলো। এর ফল হলো মারাত্মক। মিতুর সঙ্গে কথা বলার আগে আমাকে হিসাব করে নিতে হয়। ২০ বছর পার হয়ে গেল। আজও।

এভাবেই একদিন কোরবানির ঈদ এল। আমি বাসা থেকে পালালাম। মিতুকে নিয়ে। মিতুর পরিবার ও আমার পরিবার হন্যে হয়ে আমাদের দুজনকে খুঁজছে। তখন প্রথম আলোতে ঈদের ছুটি চলছে। আমি অজ্ঞাত স্থান থেকে আনিস ভাইকে ফোন দিলাম, ‘মিটুনদা, আমি কয়েক দিন অফিসে আসতে পারব না, কাহিনি হলো, একটু আগে আমি মিতুকে নিয়ে পালিয়েছি...’

আনিসুল হক সম্পর্কে তৎকালীন সময়ে প্রচলিত ধারণা ছিল, তিনি ঝামেলা এড়িয়ে চলতে ভালোবাসেন। কিন্তু তিনি একটা অদ্ভুত কাজ করলেন। আমাকে বললেন, ‘আপনি কোথায় আছেন? রাত্রে কোথায় থাকবেন? যাবেন কোথায়? খাবেন কী?’

সেই রাতে মিতু আর আমি তাঁর এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিলাম। আনিসুল হক, আমাদের মিটুনদা তাঁর স্টাডিরুম আমাদের দুজনের জন্য ছেড়ে দিলেন। অফিশিয়ালি এই রেকর্ড মোছার কোনো উপায় নেই যে মিতু আর আমার দুই যুগের দাম্পত্য জীবনের বাসররাত উদ্‌যাপিত হয়েছিল—আনিসুল হকের বাসায়।

দুই পলাতক প্রেমিক–প্রেমিকার সন্ধানে মিতুর পরিবার শেষমেশ হাজির হয়েছিল প্রথম আলোতে। আনিস ভাইয়ের টেবিলে। তিনি তাঁদের সামলেছিলেন। কীভাবে, আজও জানি না।

তবে এরপর আমাদের দুই পরিবারের সেটেলমেন্ট পজিটিভ দিকেই আগাতে লাগল।

মিতু আর আমি সংসার শুরু করলাম, আমার মিরপুরের বাসায়।

তখন আনিস ভাইয়ের পরামর্শে আমি প্রথম আলো ছাড়লাম। তিনিই আমাকে বললেন, ‘অ্যারোমেটিক সাবান কোম্পানি একটা পত্রিকা বের করছে। আপনি ওদের সাথে যোগাযোগ করেন...’

প্রথম আলোর বাঁধা লেখক ছিলাম আমি। ভেবেছিলাম, হয়তো এখানেই চাকরি করে থিতু হব। কিন্তু প্রফেশনাল ঝুঁকির ব্যাপারে আনিস ভাই আমাকে সতর্ক করলেন। প্রথম আলোতে চাকরি করলে সবাই বলবে রবি তো মিটুনদার লোক...

যা–ই হোক। সাবান কোম্পানির পত্রিকা যুগান্তরে আমি অবিশ্বাস্য অফার পেলাম। সাব–এডিটর হিসেবে যাত্রা শুরু করলাম। আমার হাতে জন্মাল ‘বিচ্ছু’।

তবে প্রথম আলোতে আমার চাকরি হলো না, এই ক্ষোভ আমার মধ্যে রয়ে গেল অনেক দিন। বিচ্ছু ম্যাগাজিনের একদম মাঝের পাতা, যেটাকে বলা হয় সেন্টার ফোল্ড—ওখানে আমি একটা নতুন স্যাটায়ার পত্রিকা বের করা শুরু করলাম। নাম দিলাম—লাল বাত্তি। হুবহু প্রথম আলোর লোগো। এর মূল লক্ষ্য ছিল—প্রথম আলো পত্রিকাকে ব্যঙ্গ করা।

আমি সগর্বে ঘোষণা করছি, স্যাটায়ারের একদম একটি নতুন ধারণা ছিল এটা। আপনারা যাঁরা মতিকণ্ঠ পড়তেন বা এখন আনোয়ার টিভি দেখেন, বা যাঁরা ওনিয়ন ফলো করেন, তাঁরা এটা বুঝতে পারবেন। অবিকল খবরের মতো করে একদম ফালতু কিছু সংবাদ দেওয়া। যেটা পড়ে আপনি হাসবেন। আবার অনেক খবর পেয়েও যাবেন।

সার্ফ এক্সেলের একটা বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে দাগই ভালো। লাল বাত্তির ক্ষেত্রে কথাটা একই রকম: রাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে রাগই ভালো।

লাল বাত্তি কি লেভেলের ফাইজলামি করত, তার একটা উদাহরণ দিই। তখন প্রথম আলো পত্রিকার লোগোর পাশে লেখা থাকত, আজ প্রথম আলো ছাপা হলো ১ লাখ ৮৮ হাজার কপি। লাল বাত্তির ক্ষেত্রে একই কথা লেখা থাকত। আজ লাল বাত্তি ছাপা হলো ১ লাখ ৮৮ হাজার। এরপর একটা বাড়তি লাইন যোগ করতাম আমি। এটাই ছিল পাঞ্চ লাইন—অবিক্রীত কপি ফেরত এসেছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯ শত ৯৯ কপি।

আজ এত বছর পর বলতে হয়, লাল বাত্তি টিকে নেই। মতিকণ্ঠও বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু টিকে আছে প্রথম আলো। সগর্বে, সদর্পে।

মতি ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। একদিন, বোধ হয় সুমন্তের একটা প্রমোশন আটকে আছে। এ জন্য তিনি রাত ১২ পর্যন্ত কাজ করেন। ভোর থেকে তাঁর কাজ শুরু। আমাকেও একই রুটিন ফলো করতে হয়।

অথচ ফিচার বিভাগ সন্ধ্যার পরই ফাঁকা হয়ে যায়। তখন ভিড় বাড়তে থাকে নিউজ রুমে। একদিন মতি ভাই দেখলেন, ফিচার বিভাগে লাইট জ্বলছে। আমি তখন আনমনে কিছু লিখছি। হঠাৎ মাথায় কেউ হাত দিলেন। ওমা, মতি ভাই। এই প্রথম মতি ভাইকে এত কাছ থেকে দেখছি। আমি উঠে দাঁড়ালাম। মতি ভাই বললেন, ‘এত রাতে কী করো? কোথায় পড়ালেখা করো? ক্লাস করো? নাকি খালি পত্রিকা নিয়েই আছো?’

সুমন্ত আসলাম আশপাশেই ছিলেন। তিনি সুমন্তকে একটা ১০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, ‘তোমরা কাবাব খেয়ো। এই ছেলে তো মনে হয়, সারা দিন কিছু খায় নাই।’

মতি ভাই, আপনার ১০০ টাকার মধ্য থেকে সুমন্ত মাত্র ৯০ টাকা দিয়ে আমাকে কাবাব খাইয়েছে। সে নিজেও খেয়েছে। এখনো ১০ টাকার হিসাবে গরমিল আছে। ২০ বছর আগের কথা। তখন ১০ টাকার অনেক দাম।

এবার একটু সিরিয়াস কথা বলি। যেকোনো পদার্থ তৈরি হয় অসংখ্য অণু-পরমাণু নিয়ে। প্রথম আলো তৈরি হয়েছে দুটি পরমাণু মিলে। একটির নাম লতিফুর রহমান, আরেক পরমাণু মতিউর রহমান।

বাংলাদেশের ইতিহাস আপনি ঘেঁটে দেখেন। আমাদের দেশে ‘সেই রকম’ কোনো ব্র্যান্ড তৈরির ইতিহাস নেই। শক্তিশালী ও একই সঙ্গে সব বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কোনো ব্র্যান্ড এই দেশে দাঁড়ায়নি। লতিফুর রহমান ও মতিউর রহমান—সেই রকম একটা ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন।

আপনি যখন আপনার দুরবস্থার জন্য আর কাউকে দায়ী করতে পারছেন না, তখন আপনার হাতে একটা নিরাপদ অপশন আছে। যাকে আপনি নির্দ্বিধায় ব্লেইম করতে পারেন। আপনি বলতে পারেন, আজকের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী প্রথম আলো গং।

আবার আপনি ডুবছেন ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে। চারদিকে কোনো কূলকিনারা নাই। তখন আল্লাহর পর আপনি একজনকেই খুঁজবেন। ভাই, প্রথম আলোর কোনো সাংবাদিকের লিংক আছে। তাঁরা যদি এ বিষয়ে নিউজ করেন, তাইলেই সব সমস্যার সমাধান।

প্রথম আলো কী করেছে এই দেশের জন্য?

একটা উদাহরণ দিই। যাঁরা আমার মতো বয়স্ক, তাঁরা জানেন, একসময় বাংলাদেশের মেয়েদের গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হতো। প্রথম আলো এই সিঙ্গেল ইস্যুকে নিয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যেভাবে কাজ করেছে, এখন এই রকম খবর আমরা আর দেখি না।

প্রথম আলোর দুর্বলতা কী?

দুইটা।

এক নম্বর হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে মানুষের অবচেতন মনের আশা–আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী।

দ্বিতীয় দুর্বলতা। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যম স্তরের অনেক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

আর দ্বিতীয় দুর্বলতায় প্রথম আলোর সবলতা। মধ্যম স্তরে বা হাই লেভেলের কেউ কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করলেও দুজন মানুষ কখনো পাওয়ারকে মিস হ্যান্ডেল করেননি বা অ্যাডভানটেনজ নেননি। মতি ভাই ও লতিফুর রহমান। তাঁরা সৎ।

লেখা শেষ করি।

খুবই কাকতালীয়ভাবে, গত রাতে আমি আনিসুল হককে স্বপ্নে দেখেছি। (জানি, লেখার এই প্রান্তে এসে সবাই হাসাহাসি শুরু করবেন)।

স্বপ্নে দেখলাম, আনিস ভাই ও মেরিনা আপা আমাদের এলাকায় বেড়াতে এসেছেন। সবাই খুব খাতির করছেন। উনাকে কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন। কেউ কেউ উনাদের লেখা বই উপহার দিচ্ছেন।

আমি সেখানে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। কেননা, আমার পোশাক খারাপ। পকেটে পয়সা নেই।

আমি গেলাম আমার মায়ের কাছে। (স্বপ্ন বলেই এটা সম্ভব। আমার মা থাকেন মানিকগঞ্জে, ভার্জিনিয়া থেকে অনেক দূরে।) বললাম, আম্মু আমাকে এক হাজার টাকা দাও।

এই রকম কথা শুনলে আমার মা খেপে যান, ‘তুই যে আমার কাছে টাকা চাস, আমি টাকা কই পাই? আর এইভাবে উল্টাসিধা খরচ করোস ক্যান?’

আশ্চর্যের ব্যাপার আনিস ভাই, স্বপ্নে আমার মা একটা কথাও বললেন না। শুধু বললেন, ‘আচ্ছা এই যে এক হাজার টাকা। সাবধানে খরচ করিস।’

টাকা আমি নিলাম।

তারপর আপনার জন্য একটা খাবার কিনতে বের হলাম।

আনিস ভাই, মেরিনা আপা, আমার ঘুমটা ভেঙে গেল।

আমি আপনাদের আপ্যায়ন করতে পারলাম না।

আমার ভয়ংকর কষ্ট হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ত ন প রথম আল প রথম আল র আম র ন ম আম দ র দ র রহম ন হয় ছ ল স মন ত পর ব র এই প র আম র ম র পর ব র জন য করল ম বলল ন ই রকম একদ ন র বলত ত রপর নওর জ র একট আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, কারণ কী

চট্টগ্রামের বাজারে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত অক্টোবর মাসজুড়ে খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। তবে চলতি নভেম্বর মাসের শুরুতেই প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে দাম। আমদানি না থাকা ও দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর পেঁয়াজের আমদানি খুব বেশি হয়নি। দেশি পেঁয়াজের ওপর বাজার নির্ভর ছিল। অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হতে পারে। তখন দাম কমবে। নভেম্বরে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।

চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ হয় দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জ থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে আকার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯২ থেকে ১০০ টাকার দরে বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। বাজারে এই মুহূর্তে আমদানি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, বাজারে কোনো আমদানি পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজ দিয়েই বাজার চলছে। দাম এ মাসে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। আমদানির অনুমতি দিলে হয়তো কিছুটা কমবে। নাহয় কয়েক মাসে আগাম পেঁয়াজ এসে যাবে বাজারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৯১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন ছিল ৬৭১ টন। চলতি অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০২ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯২ টন। অর্থাৎ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর চট্টগ্রামের পেঁয়াজও এখানকার বাজারে চাহিদা পূরণ করবে।

আমদানি কমেছে ৯৫ ভাগ

চট্টগ্রামের বাজার মূলত আমদানি পেঁয়াজনির্ভর। দেশে প্রতিবছর যে পেঁয়াজ আমদানি হয় তাঁর অধিকাংশ ভারত থেকে আসে। দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা চট্টগ্রামে তুলনামূলক বেশি। পাশাপাশি পাকিস্তানি, চীনা ও মিসরের পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।

দাম এ মাসে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। আমদানির অনুমতি দিলে হয়তো কিছুটা কমবে। নাহয় কয়েক মাসে আগাম পেঁয়াজ এসে যাবে বাজারে।মোহাম্মদ ইদ্রিস, সাধারণ সম্পাদক, খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি

তবে এ বছর চট্টগ্রামের বাজারে ‘রাজত্ব’ ছিল দেশি পেঁয়াজের। আমদানির অনুমতি বন্ধ ও পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাজারে আমদানি পেঁয়াজের চাহিদা ছিল না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে দেশে পেঁয়াজ এসেছে ১৩ হাজার টন। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) একই সময় আমদানি ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় এবার আমদানি কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ। দেশের কৃষকদের জন্য এটি ভালো দিক বলে মনে করছেন পাইকারি আড়তদারেরা। তাঁরা বলছেন, কৃষকেরা দাম পাচ্ছেন, পাশাপাশি অন্য দেশের বাজারের ওপর আর দাম নির্ভর করছে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পেঁয়াজের আবাদ ভালো হবে এবারও।

দেশের আমদানি পেঁয়াজের অধিকাংশই ভারতীয়। এ অর্থবছরেও আমদানির ৯৯ শতাংশ এসেছে ভারত থেকে। গত বছর ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়। এরপর দেশে উৎপাদন বাড়লে আমদানি অনুমতি (আইপি) বন্ধ রাখা হয়। তবে গত এপ্রিল ও আগস্ট মাসে দাম বাড়লে আইপি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রামে বাড়ছে উৎপাদন

বাজারে সাধারণ ডিসেম্বর মাসে আগাম পেঁয়াজ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসে। এরপর জানুয়ারিতে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ বাজারে এসে যায়। সেটি সরবরাহের মধ্যেই মেহেরপুর, জামালপুরসহ অন্যান্য জেলার পেঁয়াজও বাজারে আসে। গত বছর থেকে এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার পেঁয়াজও। গত বছর জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৯১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন ছিল ৬৭১ টন। চলতি অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০২ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯২ টন। অর্থাৎ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর চট্টগ্রামের পেঁয়াজও এখানকার বাজারে চাহিদা পূরণ করবে।

এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, দাম বাড়লেও ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ক্রেতারা মানিয়ে নেন। এক লাফে ২০ টাকার বেশি বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, এক মাস হয়তো দাম একটু বাড়তি। কিছু সার্বিকভাবে কৃষকেরা এবার লাভবান হয়েছেন। আমদানির খবরে বাজারে দাম কিছুটা নেমে আসে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে সামনেই মুড়িকাটা এসে যাবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাবে আবার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ