ভারত ও মিয়ানমারে আটক জেলেদের মুক্তি চান স্বজনেরা
Published: 22nd, September 2025 GMT
ভারতের মেঘালয় ও মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে আটক জেলেদের মুক্তি দাবি করেছেন স্বজনেরা। তাঁরা বলেছেন, ভারতের মেঘালয়ে আটক কুড়িগ্রামের সাতজন জেলে এবং মিয়ানমারের আরাকান আর্মির হাতে আটক দেড় শতাধিক জেলেকে ছাড়াতে সরকারি সহযোগিতা ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে তোপখানা রেডের মেহেরবা প্লাজায় শতাধিক জেলের মুক্তির দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি ও আটক জেলেদের স্বজনেরা এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার সাতজন জেলে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলবশত ভারতের সীমানায় প্রবেশ করলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে মেঘালয়ের কালাইচরে পাঠায়। ভারতীয় এক আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ শুনানি হয়েছে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল।
১১ সেপ্টেম্বর একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে বলা হয়, কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের অদূরে সমুদ্র থেকে পাঁচটি ট্রলারসহ ৪০ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এর আগে আরও ৮১ জন জেলেকে একইভাবে আটক করা হয়েছিল।
স্থানীয় ট্রলার মালিক সমিতি বলছে, সাগরে মাছ ধরার সময় হঠাৎ আরাকান আর্মি অস্ত্রের মুখে তাঁদের জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। ঘটনাটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও প্রশাসনকে জানানো হলেও এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভারতে আটক জেলেদের স্বজনেরা তাঁদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। বকুলের শাশুড়ি জমিলা বেগম বলেন, তাঁরা খুব দরিদ্র। দুঃখকষ্টে মাছ ধরতে যান। ভুলে ভারতের সীমানায় চলে গেছেন তাঁরা। এখন তাঁদের ছাড়া পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যদিকে আটক জেলে মোহাম্মদ বিপ্লব মিয়ার স্ত্রী কাজলী বেগম বলেন, তাঁদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বামীকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
গণকমিটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, ‘ভারতে আটক জেলেদের মুক্তি এখন মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এর আগে ২৬ জন জেলেকে একই প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা হলেও বর্তমানে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। সীমানা অতিক্রম করাটা ছিল আসলে অনিচ্ছাকৃত ভুল।’ এখন সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, বাংলাদেশ ভূমি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও কৃষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম আটক জ ল দ র স বজন র
এছাড়াও পড়ুন:
অভিযোগ ফেসবুকে নয়, সরাসরি জানান: চট্টগ্রামের মেয়র
গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহে বাড়তি ফি নিলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে না দিয়ে সরাসরি অভিযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শাহাদাত হোসেন এই অনুরোধ করেন। নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে আগামী এক বছরের কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র।
চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সামাজিক সংগঠন ডাকবাক্স ফাউন্ডেশনের হয়ে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কথা বলেন ব্যাচেলর পয়েন্ট খ্যাত অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। তিনি জানান, ডাকবাক্স কিশোর অপরাধ দূর করতে ও নারীদের সমস্যা নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করবে।
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরে দৈনিক সৃষ্ট সব আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারলে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। বর্জ্য যাতে বাইরে পড়ে না থাকে সে জন্য বাসাবাড়ি ও দোকানপাট থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ জন্য বাসাবাড়ি থেকে ফি নিতে পারবে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। কিন্তু নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ হয়তো বেশি নিচ্ছে। এ বিষয়ে ফেসবুকে দিলে হয়তো ভিউ পাওয়া যাবে, তবে কাজের কাজ হবে না। সিটি করপোরেশনকে সরাসরি অভিযোগ দিলে যারা বেশি নিচ্ছে তাদের বাদ দেওয়া হবে।
নগরে সৃষ্ট সব বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারলে চট্টগ্রামে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন নগরে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করতে পারে ২ হাজার ২০০ টন। কারণ, বাকি বর্জ্য নগরবাসী ডাস্টবিনে না ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছেন। চলতি পথে গাড়ি থেকে বাইরে থেকে ফেলে দেন। তবে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালুর পর বর্জ্য সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। বায়োগ্যাস উৎপন্ন হলে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য নগরবাসীকে এখন যে টাকা দিতে হচ্ছে তা হয়তো আর দিতে হবে না। তবে এ জন্য একটু সময় দিতে হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন দাবি করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখন নগরের মানুষকে পানির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে না। আগের মেয়রের ঘরেও পানি ঢুকে যেত, বাসা থেকে বের হতে পারত না। বহদ্দারহাট, মুরাদপুরে পানি জমে থাকত। এ নিয়ে মানুষ নানা কৌতুক করতেন। এবার টানা ৫ মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তবু জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে না।’
আগামী এক বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এবার বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নগরবাসীকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাস্তা উপহার দিতে পারেননি। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি বড় সড়ক উপহার দেবেন। সিটি করপোরেশনের ১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপ চালু করা হবে আগামী ডিসেম্বরে। ময়লা, আলো, রাস্তা, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা নিয়ে নগরবাসী তাঁদের মতামত খুব সহজে জানাতে পারবেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কাজ করেছেন বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে শক্ত অবস্থানে আছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে ছাড় দিচ্ছেন না। ২০০ কোটি টাকার মতো গৃহকর যাতে আদায় করতে পারেন সে চেষ্টা করছেন। বন্দরের গাড়ির কারণে নগরের রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাই বন্দরের প্রতি এটি সিটি করপোরেশনের হক।
নগরে কিশোর গ্যাং বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। তারা যাতে সন্ত্রাস–মাদকের পথে না যায় সে উদ্দেশ্যে অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশের টিম (ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। বাইরের কিশোর–তরুণদের সঙ্গেও কাজ করবে।
মেয়র আরও বলেন, নাগরিকদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাইমারি হেলথকেয়ার সিস্টেম চালু করবেন আরবান হেলথকেয়ার সেন্টারগুলোতে। সিটি করপোরেশন হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে কিডনির রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হবে। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র নগরের ৫টি জোনে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার করার ঘোষণা দেন। ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। আগামী মাস থেকে এসব সেন্টার চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখায় মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।
মেয়রের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সিটি করপোরেশন উন্নয়ন প্রতিবেদন ও তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।