কর কমাতে থাকলে বেতন–ভাতাও পাওয়া যাবে না: সালেহউদ্দিন আহমেদ
Published: 22nd, September 2025 GMT
শেয়ারবাজারে ঝুঁকি আছে ঠিকই, কিন্তু লভ্যাংশও পাওয়া যায়। তবে শেয়ারবাজার স্থায়ী লাভের জায়গা নয়, এখানে ক্ষতিও হতে পারে। কোম্পানি ভালো না করলে বিনিয়োগকারীকেও ক্ষতির ভাগ নিতে হয়।
আজ সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বন্ড ও সুকুক মার্কেটের সম্ভাবনা নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসই আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্ভাগ্যজনক দিক হলো, অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ভাবেন, শেয়ারবাজার থেকে চিরস্থায়ী আয় হবে। ফলে বাজারে সূচকের পতন হলে তাঁরা দায় চাপায় আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকদের ওপর। অথচ শেয়ারবাজার স্থায়ী লাভের জায়গা নয়, এখানে ক্ষতিও হতে পারে। কোম্পানি ভালো না করলে বিনিয়োগকারীকেও ক্ষতির ভাগ নিতে হয়। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এসব বিষয়ে শিক্ষিত ও সচেতন করার দায়িত্ব আছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের, যেন তাঁরা বুঝতে পারেন, শেয়ার বা বন্ড স্থায়ী আয়ের নিশ্চয়তা নয়।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখনো উন্নত হয়নি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শেয়ারবাজারে সরকারি বন্ডের একটি অংশ আছে, কিন্তু বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ খুবই কম। এখানে ইকুইটি মার্কেট কার্যত নগণ্য। পৃথিবীর কোথাও—হোক তা সরকারি খাত বা বেসরকারি খাত, শুধু ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরে তা খেলাপি করে দায় এড়িয়ে যাওয়া বৈধ নয়। অথচ বাংলাদেশে এটা এক করুণ বাস্তবতা।
সাধারণত বড় প্রকল্প বা নতুন অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ভাগাভাগি করা প্রয়োজন বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ঝুঁকি ভাগাভাগির মানে হলো, বন্ড কিনতে হবে, ডিবেঞ্চার কিনতে হবে বা ইকুইটিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সুকুকের বড় অংশ বিনিয়োগ হয়েছে স্যানিটেশন বা প্রাথমিক শিক্ষার মতো খাতে, যেখান থেকে রিটার্ন কম পাওয়া যায়। শুরুর দিকে তহবিলের অভাবে বাধ্য হয়েই এভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুকুক বন্ড হওয়া উচিত বেসরকারি খাতের জন্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করে আয় করবে, আর তাতে ব্যাংকের ওপর চাপ কমবে। এটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, তবে প্রচেষ্টা চলছে।
পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো বিভিন্ন অবকাঠামোকে সিকিউরিটাইজ (কোনো স্থায়ী সম্পদ বা আয়প্রবাহকে, যেমন টোল আদায়, ভাড়া, ঋণের কিস্তি, ভবিষ্যৎ আয়ের প্রতিশ্রুতি বাজারে কেনাবেচার উপযোগী আর্থিক কাগজ বা সিকিউরিটিতে রূপান্তর করা) করার পরামর্শ দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদ্যমান প্রকল্পগুলোও সিকিউরিটাইজ করা যেত, যেমন যমুনা সেতু। টোল আদায়ের মতো স্থায়ী আয়ের নিশ্চয়তার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এতে আগ্রহী হতেন। কিন্তু সরকার সে পথে যায়নি। এখন আমাদের গুরুত্বসহকারে বিষয়টি ভাবতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবেশ রক্ষায় জাতি হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি: রিজওয়ানা হাসান
পরিবেশ রক্ষায় জাতি হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আমাদের অগ্রাধিকার প্রকৃতিকেন্দ্রিক বা প্রকৃতিবান্ধব হয়নি।
বাংলাদেশের নদীগুলো ঘিরে সংকট রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নদীগুলো মূলত জৈবিকভাবে মৃত। যখন ১৮০টি দেশের মধ্যে আপনার পরিবেশগত কার্যক্ষমতার র্যাংক ১৭৯; তখন সেটাকে ৫০ পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ১৭৯ থেকে ৫০, ৬০ বা ৭০-এ যাওয়া আসলেই খুব কঠিন। কিন্তু একবার আপনি এটিকে ৭০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে, সেখান থেকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া সম্ভব। আমরা এখন ১৭৯-এ আছি, এটা দেখায়, আমরা ব্যর্থ হয়েছি, একটি জাতি হিসেবে সমষ্টিগতভাবে।’
‘রিভাইভিং ঢাকা’স রিভার্স: পলিসি অপশনস ফর সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক নীতি সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ সোমবার বেলা ১১টায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সিন্ডিকেট হলে এ সংলাপের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)। সংলাপে নদীদূষণ নিয়ে একটি নিবন্ধ তুলে ধরা হয়। তাতে রাজধানীর নদীদূষণের কারণ, প্রতিকারসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।
উন্নয়ন চিন্তায় মৌলিক পরিবর্তন আনার ওপর জোর দেন পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা ইকোসিস্টেম হত্যা করছি। আপনি যা হত্যা করছেন, সেটিকে আপনি জন্ম দিতে পারবেন না। আপনি সেটিকে পুনঃসৃষ্টি করতে পারবেন না। আপনি শত শত ট্যানারি কারখানা বানাতে পারবেন। আপনি আরেকটি বুড়িগঙ্গা তৈরি করতে পারবেন না।’
নদীব্যবস্থা পুনরুদ্ধার দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব নয় উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এক-দেড় বছরের মধ্যে সমাধান খুঁজে পাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব।’ এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
আজকের সংলাপে পরিবেশ উপদেষ্টা নদী রক্ষায় সরকারের কিছু কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে নদী পুনরুদ্ধার কাঠামো প্রণয়ন; নদীর তলদেশ পরিষ্কার করা, দূষক অপসারণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা; নদীর পানি ও পরিবেশের গুণমান নিয়মিত নজরদারি এবং মানোন্নয়ন এবং পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করা। পাশাপাশি ভারত এবং নেপালের নদী পুনরুদ্ধারে উদাহরণ দিয়ে নদী এবং পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন একেবারেই জরুরি কি না, এমন প্রশ্ন তুলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এগুলো রাজনৈতিক নেতাদের তৈরি করা হাইপ এবং আমরা শুধু শিখেছি সেই হাইপের বিপরীতে ডেলিভার করতে, যা তারা তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থে তৈরি করেছে।’ এর ফলে প্রাকৃতিক বন এবং হাতির করিডর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজকের সংলাপে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হকের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা প্রমুখ।