ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিক্রিয়া হিসেবে গতকাল রোববার দেশগুলো এ স্বীকৃতির দিয়েছে। শিগগিরই ফ্রান্স স্বীকৃতি দিচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।

ইসরায়েল সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আগ্রাসী অবস্থান আরও জোরদার করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক মুখপাত্র বলেন, এই স্বীকৃতি ‘হাস্যকর’। এটি ‘সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করবে’ বলে উল্লেখ করেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

১৫ সেপ্টেম্বর অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে দম্ভভরে বলেন, ‘ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্র হবে না।’

কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের এই স্বীকৃতি সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। আন্তর্জাতিক খবরের প্রধান শিরোনাম। বিশ্লেষকেরা আল-জাজিরাকে বলেছেন, অবমাননা, হত্যাকাণ্ড ও শত–সহস্র ফিলিস্তিনিকে ঘরছাড়া করার বিরুদ্ধে এটি একটি ক্ষুদ্র ও প্রতীকী পদক্ষেপ। তবে এর বাইরেও পদক্ষেপটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক রয়েছে।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবু রাস আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা কেবল একটি সমঝোতাপূর্ণ চুক্তির পরই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু তার আগেই প্রচলিত ধারা ভেঙেই দেশগুলো স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছে। এ কারণেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ইসরায়েল আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। আমি মনে করি, এটি তাৎপর্যপূর্ণ।’

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে চার দেশের স্বীকৃতি দেওয়ার দিনও গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় অন্তত ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩৭ জনই গাজা নগরীর।

লোকদেখানো স্বীকৃতি

ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে চরম দুর্দশায় জীবন কাটছে ফিলিস্তিনিদের। এই স্বীকৃতি কি তাঁদের দুর্দশার অবসান ঘটাবে? কোনো বাস্তবসম্মত পরিবর্তন কি আসবে?—সংশয়ে আছেন বিশ্লেষকেরা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৬৫ হাজার ২৮৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধে আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৫ জন। তবে অনেক বিশ্লেষকের বিশ্বাস, হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের এই স্বীকৃতি সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে, হয়েছে খবরের প্রধান শিরোনাম। বিশ্লেষকেরা আল–জাজিরাকে বলেছেন, অবমাননা, হত্যাকাণ্ড ও শত–সহস্র ফিলিস্তিনিকে ঘরছাড়া করার বিরুদ্ধে এটি একটি ক্ষুদ্র ও প্রতীকী পদক্ষেপ। তবে এর বাইরেও পদক্ষেপটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক রয়েছে।

অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস হামলায় এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সরকার হুমকি দিয়েছে, তারা পুরো অঞ্চলটি নিজেদের দেশের সঙ্গে যুক্ত করে নেবে।

বিশ্লেষকেরা বলেছেন, রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে চার দেশের স্বীকৃতি গাজায় যুদ্ধ থামাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এ যুদ্ধকে ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিগত হত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলোর একটি জেরুজালেমে অবস্থিত পবিত্র আল-আকসা মসজিদ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই স ব ক ত য ক তর জ য ইসর য় ল পদক ষ প

এছাড়াও পড়ুন:

শীর্ষ ১০ বৈজ্ঞানিক ভুল

বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের অনেক ভুল আছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ভুল করে বলেছিলেন, পরমাণু থেকে কোনো শক্তি পাওয়া যাবে এমন সামান্যতম ইঙ্গিত নেই। পারমাণবিক যুগ শুরুর আগে তিনি এ কথা বলেছিলেন। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার হয়। যেকোনো গবেষকই আপনাকে বলবেন বিজ্ঞানের অগ্রগতি হয় চেষ্টা ও ত্রুটির মাধ্যমে। যেখানে বেশির ভাগ কাজেই ত্রুটির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হয়। এক ধাপ এগিয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে যাওয়াই যেন গবেষণার নীতিবাক্য। ত্রুটি ছাড়াও অনেক বড় বড় বৈজ্ঞানিক ভুল ইতিহাসে আলোচিত হয়। এসব ভুল কখনো কখনো অনিচ্ছাকৃত, আবার কখনো কখনো অনিচ্ছাকৃত নয় বলা যায়। বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী স্টিফেন জে গোল্ড যুক্তি দিয়েছেন, বিজ্ঞানীরা যেন নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করেন। কখনো কখনো ভুল অত্যন্ত সৌভাগ্যজনক হতে পারে। ভুলের কারণেই একটি উন্মুক্ত পেট্রি ডিশ থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কার হয়েছিল। এমনই কয়েকটি বৈজ্ঞানিক ভুলের তথ্য জেনে নিন।

ব্রিটিশদের মস্তিষ্কের শক্তি পরীক্ষা

১৯৯০–এর দশকে যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গের ইনস্টিটিউট ফর অ্যানিমেল হেলথের বিজ্ঞানীরা গরু ও ভেড়ার প্রজাতি নিয়ে পরীক্ষা করেন। তাঁরা ২ লাখ পাউন্ড সরকারি অনুদান পান। পাঁচ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ভুলবশত ভেড়ার মগজের পরিবর্তে গরুর মগজ পরীক্ষা করছেন বলে ২০০১ সালে ধরা পড়ে।

বৈজ্ঞানিক ওয়াটারগেট

ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ তদন্ত প্যানেল দেখেন, রোগ প্রতিরোধবিষয়ক বিজ্ঞানী থেরিজা ইমানিশি-কারি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ডেভিড বাল্টিমোরের সঙ্গে ১৯৮৬ সালের একটি গবেষণাপত্রের তথ্য জাল করেছিলেন। সেই গবেষণাপত্রে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার জিনগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

ডায়েরি নিয়ে জালিয়াতি

অক্সব্রিজের ইতিহাসবিদ হিউ ট্রেভর-রোপার জার্মানভিত্তিক স্টার্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হিটলারের ডায়েরিকে খাঁটি বলে প্রমাণ করেছিলেন। পরে সেই ডায়েরি নকল বলে প্রমাণিত হয়।

পানি দিয়ে জ্বালানি সমস্যা

১৯৮৯ সালে ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ স্ট্যানলি পনস ও মার্টিন ফ্লিশম্যান কোল্ড ফিউশন আবিষ্কার করে বিশ্বের জ্বালানি সমস্যার সমাধান করার দাবি করেন। তবে সেই থেকে কেউই পানির পারমাণবিক ফিউশনের মাধ্যমে জ্বালানি তৈরি করতে পারেননি।

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ

নাসার বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভিত্তিক লেন্সের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী একটি লেন্স তৈরি করতে হাবল টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করেন। ১৯৯০ সালের এপ্রিলে উৎক্ষেপণের পরপরই প্রধান আয়নাতে একটি গুরুতর নকশার ত্রুটি ধরা পড়ে। আয়নাটি মেরামতের জন্য নভোচারীর মাধ্যমে শত শত কোটি পাউন্ডের প্রয়োজন হয়।

এন-রে

বিজ্ঞানী রন্টজেন কর্তৃক এক্স-রে আবিষ্কারের কিছুদিন পর ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী রেনে ব্লন্ডলট এক নতুন ধরনের বিকিরণ আবিষ্কারের দাবি করেন। তবে মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট উড প্রকাশ করেন, এন-রে সামান্য বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। উড এন-রে শনাক্তকরণ ডিভাইস থেকে প্রিজমটি সরিয়ে ফেলেন, যা ছাড়া যন্ত্রটি কাজ করতে পারত না। যদিও বিজ্ঞানী ব্লন্ডলটের সহকারীর দাবি ছিল তাঁরা এন-রে খুঁজে পেয়েছেন।

শিক্ষাগত মানদণ্ড নিয়ে বিতর্ক

১৯৬০-এর দশকে ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী সিরিল বার্ট অভিন্ন যমজদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করেন। যমজদের শিক্ষাগত মান হ্রাস পাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বহু বছর পরে দেখা যায়, যমজদের মধ্যে এমন প্রভাব নেই।

পিল্টডাউন মানব

১৯১৩ সালে যুক্তরাজ্যে পিল্টডাউনের কাছে একটি স্থানে মানুষের দাঁতের মতো ক্ষয়প্রাপ্ত কুকুরের চোয়াল ও বানরের চোয়ালের অংশ পাওয়া যায়। ব্রিটিশ জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা খুলি ও চোয়ালকে বিবর্তন শৃঙ্খলে বানর ও মানুষের মধ্যেকার অনুপস্থিত সংযোগ বলে দাবি করেন। ১৯৫৩ সালে পিল্টডাউন মানবকে জালিয়াতি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। মাথার খুলিটি ছিল আধুনিক ও বানরের চোয়ালের দাঁত ঘষে ক্ষয় করা হয়েছিল।

বিজ্ঞানী নিউটনের আলকেমি

স্যার আইজ্যাক নিউটনকে এককভাবে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করেন বলে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি আলকেমি নামের বিশেষ রহস্যময় রসায়নে বিশ্বাস করতেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় ধরেই তিনি নিশ্চিত ছিলেন, সাধারণ ধাতুকে সোনায় রূপান্তর করা যাবে।

সমতল পৃথিবী

ক্রিস্টোফার কলম্বাস বহু বছর আগে পৃথিবী অভিযানের মাধ্যমে গোলাকার বলে প্রমাণ করেছিলেন। তারপরেও অনেকে বিশ্বাস করেন পৃথিবী সমতল। অনেকেই বিশ্বাস করেন, পৃথিবী আসলে প্যানকেকের মতো আকৃতির।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

সম্পর্কিত নিবন্ধ