রংপুরে ‘মব সৃষ্টি’ করে দৈনিক সংবাদের বিভাগীয় প্রতিনিধি ও বাংলা ট্রিবিউনের রংপুর প্রতিনিধি লিয়াকত আলীকে তুলে নিয়ে হেনস্তার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রতন মিয়া নামের মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী (সিও) উম্মে ফাতিমাসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন লিয়াকত আলী। মামলায় সিটি করপোরেশনের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একজন সাবেক কাউন্সিলর আসামি হিসেবে আছেন। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ জনকে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় বেআইনি জনতাবদ্ধ, অবৈধ অবরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে সাধারণ ও গুরুতর আঘাত, অপহরণ, খুন-জখমের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রংপুর নগরের কাছারি বাজার এলাকায় অবস্থিত জেলা পুলিশ কার্যালয়ের উল্টো দিকে কোর্ট মসজিদের সামনে এসে মব তৈরি করে মামলার বাদীকে মারধর শুরু করে আসামিরা। একপর্যায়ে আসামিরা তাঁদের হাতে থাকা ছোরা বুকের ওপর ধরে বলে, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর করছিস, তোকে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেম্বারে গিয়ে মাফ চাইতে হবে।’

আরও পড়ুনরংপুরে সাংবাদিককে হেনস্থার প্রতিবাদে মানববন্ধন, থানায় মামলা৫ ঘণ্টা আগে

লিয়াকত আলী অভিযোগ করেন, ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন করেন তিনি। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর লাইসেন্স বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হওয়া চক্র তাঁকে তুলে নিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায়। সেই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাঁকে ক্ষমা চাওয়ানোর চেষ্টা চালানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী উম্মে ফাতিমার দাবি, প্রতিবেদনের কারণে মাফ চাওয়ার জন্য সাংবাদিকদের নিয়ে আসার প্রশ্নই ওঠে না। এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ।

‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি ও মামলার ১ নম্বর আসামি এনায়েত আলী (রকি) গতকাল সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁকে আপসে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো অসম্মান করা হয়নি।

এদিকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক লিয়াকত আলীকে ‘মব সৃষ্টি করে’ হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন রংপুরের স্থানীয় সাংবাদিকেরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে রংপুরে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা অংশ নেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার মধ্যে আসামিরা গ্রেপ্তার না হলে পরের দিন মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতারা।

আরও পড়ুনরংপুরে ‘মব’ করে সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ ‘জুলাই যোদ্ধার’ বিরুদ্ধে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

আলব্যের কামুর দর্শন, চরিত্র ও পাঠক

আগামীর আশা নিয়েই আমাদের জীবনের বেশির ভাগ গড়া। যদিও কালকের দিনটি আমাদেরকে আমাদের সবার চরম শত্রু মৃত্যুর কাছে নিয়ে যাবে। লোকেরা এমন করে বাঁচে, যেন নিশ্চিত মরণ সম্পর্কে তাদের আদৌ কিছু জানা নেই। এর গতানুগতিক এই কল্পনাবিলাসিতা একবার খসে পড়লে, বিশ্বকে ভিনদেশি, অদ্ভুত আর অমানবিক একটি জায়গা বলে মনে হবে। সত্যিকার জ্ঞান অসম্ভব এবং যৌক্তিকতা আর বিজ্ঞান বিশ্বকে প্রকাশ করতে পারে না; এমন সব ব্যাখ্যা চূড়ান্তভাবে শূন্যগর্ভ বিমূর্ততা এবং রূপকের মাঝে গিয়ে শেষ হয়—অতিমূল্যবান এ কথাগুলোর মাধ্যমে আলব্যের কামু তাঁর দার্শনিক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘লা মিথ দ্য সিসিফ’ (দ্য মিথ অব সিসিফাস)-এর বর্ণনা শুরু করেন। এরপর তিনি জানান, যে মুহূর্ত থেকে এই নিরর্থকতা শনাক্ত হয়, তখন থেকে তা তীব্র একটি উৎসাহে পরিণত হয়। আর সবকিছুর মধ্যে এটিই সবচেয়ে মর্মন্তুদ।’

রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও দার্শনিক আলব্যের কামুর জন্ম আজ থেকে ১১২ বছর আগে ফরাসি আলজেরিয়ায়। কামুর শৈশবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গিয়ে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। বধির ও অশিক্ষিত মায়ের প্রতি তিনি গভীর অনুরক্ত ছিলেন। এসবের দ্বারা কামুর নিরভিমান শিশুবেলার দিনগুলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। মনে করা হয়, এসব কারণে তাঁর ভেতর অন্য রকম এক বিনয় কাজ করত। অবশ্য পরে তাঁর অপ্রতিরোধ্য সাহিত্যিক খ্যাতির কাছে তা ম্লান হয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে নোবেল বক্তৃতায় কামু তাঁর সেই বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। মর্যাদাসম্পন্ন এই পুরস্কারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এ সময় তিনি বলেন, ‘বাস্তবে আমি যা, সেই প্রতিধ্বনির সঙ্গে তুলনা না করে আমি আপনাদের সিদ্ধান্ত বুঝে উঠতে সক্ষম হইনি। যে লোকটি কেবল তার সন্দেহবাতিকতার দিক দিয়েই ধনী। পুরোদস্তুর একজন তরুণ এবং যার সৃষ্টিশীলতা এখনো বিকাশমান। যে তার কাজের নিরিবিলিত্যের যাপনে বা বন্ধুত্বের মধ্যে ফিরে যেতে অভ্যস্ত; কী করে সে এমন একটি ঘোষণা শুনে ভীত না হয়ে পারে, যা তাকে হঠাৎ, দীপ্যমান এক আলোক কেন্দ্রের মধ্য থেকে, সম্পূর্ণ একা এবং নিজের মাঝে চুপসে দেবে? এবং ঠিক কোন অনুভূতিসহকারে সে এমন একটি সম্মাননা গ্রহণ করতে পারে, যেখানে ইউরোপের অন্য লেখকেরা, নিজেরা খুব বিখ্যাত হওয়ার পরও, নীরবতার দোষে দুষ্ট। এমনকি এমনই একটি সময়ে যখন তার আপন জন্মভূমি অশেষ দুঃখ-দুর্গতির মাঝ দিয়ে দিনাতিপাত করছে?’

সত্যিকার জ্ঞান অসম্ভব এবং যৌক্তিকতা আর বিজ্ঞান বিশ্বকে প্রকাশ করতে পারে না; এমন সব ব্যাখ্যা চূড়ান্তভাবে শূন্যগর্ভ বিমূর্ততা এবং রূপকের মাঝে গিয়ে শেষ হয়। যে মুহূর্ত থেকে এই নিরর্থকতা শনাক্ত হয়, তখন থেকে তা তীব্র একটি উৎসাহে পরিণত হয়। আর সবকিছুর মধ্যে এটিই সবচেয়ে মর্মন্তুদ।আলব্যের কামু

কামুর এই উদ্বেগের মধ্যে আরও একটি নিশ্চায়ক বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়, একটি রাজনৈতিক কার্যকলাপ হিসেবে তাঁর লিখে যাওয়ার উপলব্ধি। বামদের একজন সাংবাদিক হিসেবে এবং উপনিবেশবিরোধী সংবাদপত্রগুলোর মাধ্যমে যা তিনি শান দিচ্ছিলেন। বিশেষ করে ফরাসিবিরোধী কাগজ কম্বেট–এ ১৯৪৩ থেকে ’৪৭ পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার সময়। যুদ্ধ চলাকালীন এই বছরগুলোতে কামু তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু রচনা লিখে শেষ করেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবন্ধ ‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’ এবং উপন্যাস ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’। এ সময় জ্যঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সময় সার্ত্রেও কম্বেটের হয়ে লিখতেন। ঘটনাক্রমে তাঁদের এই বন্ধুত্ব তিক্ততায় মোড় নেয়। এর কারণ অংশত কমিউনিস্ট জান্তার ইঙ্গিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং যন্ত্রণাভোগ মেনে নিতে কামুর অনিচ্ছা। এর বেশ আগেই, ১৯৩৭–এ, কমিউনিজমের গোঁড়ামি মেনে নিতে অসম্মতি জানানোয় কামুকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

লেখক ও দার্শনিক আলব্যের কামুর জন্ম আজ থেকে ১১২ বছর আগে ফরাসি আলজেরিয়ায়। কামুর শৈশবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গিয়ে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। বধির ও অশিক্ষিত মায়ের প্রতি তিনি গভীর অনুরক্ত ছিলেন। এসবের দ্বারা কামুর নিরভিমান শিশুবেলার দিনগুলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

কামু পার্টিকে জনতার ওপরে ঠাঁই দিতে পারেননি। শিল্পকে তিনি রাজনৈতিকতার ওপরে বিশেষ একটি স্তরে উন্নীত করতে পারেননি। নোবেল বক্তৃতার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি আমার শিল্প ছাড়া প্রাণবন্তভাবে বেঁচে থাকতে পারি না। কিন্তু আমি কখনোই একে আমার সবকিছুর ওপরে স্থান দিই না। অপর দিকে যদি আমার শিল্পের প্রয়োজনই হয়ে থাকে, তবে তার একটিই মাত্র কারণ থাকবে। তা হলো, শিল্পকে আমার লোকেদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়নি...এটি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য নয়।’ এই শিল্পই তাঁকে সবচেয়ে বিনম্র এবং চিরন্তন সত্যপ্রবণ করে তোলে।

শিল্পীর সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি কঠোর বিশ্বাস রেখে, কামু তাঁর লেখনীকে ‘বাতুল এক ইতিহাসের’ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণের ‘অঙ্গীকার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই বক্তৃতায় তিনি ‘লেখকের শিল্প-কৈাশলের আভিজাত্য’ হিসেবে নিজের লেখালেখির বিশেষ এই দায়বদ্ধতার রূপরেখা তুলে ধরেন। এরপর কামু তাঁর বিনয়ী বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে ফিরে আসেন এবং লেখককে ‘তাঁর সশস্ত্র কমরেডদের’ পাশাপাশি রেখে নিজেকে তিনি তাঁর ‘সঠিক জায়গাতে’ স্থাপন করেন। কেননা তিনি এমন একজন লেখক, যিনি নিজেকে তাঁর ‘সীমাবদ্ধতা এবং সন্দেহে’র মাঝে রেখেই নির্ণয় করেন। আর এ প্রক্রিয়াতেই সৃষ্টি হয়েছে কামুর অনন্য সব সিদ্ধান্ত ও সমৃদ্ধ কর্ম। যেমন এই দলীয় রাজনীতির বাইরে এসে দাঁড়ানো। এসব লেখা তিনি এমন একটি সময় রচনা করেছেন, যখন তিনি সক্রিয়ভাবে সবচেয়ে প্রগতিবাদী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর নিজস্ব মানবিক অস্তিত্বের অসমঞ্জস্যের কারণে বা সত্ত্বেও জনতার একের অপরের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি এসব লিখেছেন।

নোবেল বক্তৃতা-রত আলব্যের কামু। স্টকহোম, সুইডেন, ১০ ডিসেম্বর ১৯৫৭

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের নির্বাচনে ব্রাজিলের মডেল কীভাবে ‘২২ বার ভোট’ দিলেন
  • জাহানারার পাশে বাংলাদেশ, কিন্তু…
  • গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরির ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
  • প্রাথমিকে শারীরিক ও সংগীত শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবি
  • আলব্যের কামুর দর্শন, চরিত্র ও পাঠক
  • সড়ক দুর্ঘটনায় আরিফুল, সৌভিকের মৃত্যু হত্যাকাণ্ড কি না, প্রশ্ন জোনায়েদ সাকির
  • নিজস্ব পরিবহন নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • বিএনপি থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবিতে হরিপুরে বিক্ষোভ–মানববন্ধন
  • সিলেট চেম্বারের নির্বাচন দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
  • বিএনপি নেতা শহিদুলকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ