রাজনীতির মাঠে দলবদল নতুন কিছু নয়। কিন্তু একজন হত্যা মামলার আসামি, যিনি একসময় যুবলীগের দাপুটে নেতা হিসেবে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন, সেই ব্যক্তি রাতারাতি যুবদল নেতা বনে যাওয়ায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রাজনীতিতে।

তিনি আর কেউ নন পিরোজপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পিরোজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ মেম্বারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এলাকায় তার পরিচিতি ছিল।

বলা হয়, মোশারফ মেম্বারের প্রধান ক্যাডার ছিলেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের ক্ষমতাবান সময়ে তিনি প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল, চাঁদাবাজি, মারামারি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন।

রাজনৈতিক পালাবদলের আগে পর্যন্তও তিনি যুবলীগের দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মোশারফ মেম্বার গা-ঢাকা দিলে মোহাম্মদ আলীও কিছুটা সময় গা-ঢাকা দেন। পরে সুযোগ বুঝে বিএনপির রাজনীতিতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তিনি নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন প্রকাশ্যে।

খোঁজনিয়ে জানাযায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সোনারগাঁয়ের আলোচিত যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী আশ্রয় নেন কথিত বিএনপি নেতা মাসুদ রানার ছায়ায়। উল্লেখ্য, মাসুদ রানা অতীতে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।

কিন্তু রাজনৈতিক টিকে থাকার স্বার্থে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজাহারুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন হয়ে বিএনপিতে প্রবেশ করেন এবং উপজেলা বিএনপির সদস্যপদ পান।

এরপর থেকেই মাসুদ রানার ছত্রছায়ায় যুবলীগের দাপুটে নেতা মোহাম্মদ আলী যুবদলের কার্যক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি এখনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তবে রঙ পাল্টে বিএনপির নামে।

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো মোহাম্মদ আলী একজন হত্যা মামলার আসামি। সোনারগাঁ থানার বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলা ছাড়াও কাচপুরে ছাত্র আন্দোলনের সময় শরীফ হত্যা মামলায় তিনি ৩৯তম আসামি হিসেবে চার্জশিটভুক্ত। এমন একজন আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মিছিল-মিটিং করছে, আবার ব্যানার-ফেস্টুন লাগাচ্ছে এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে তার নেতৃত্বে বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজিবও উপস্থিত ছিলেন। খোদ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতার উপস্থিতিতে এমন বিতর্কিত আসামির সক্রিয়তা দলীয় অভ্যন্তরে নানা প্রশ্ন তুলেছে।

স্থানীয় বিএনপির অনেক কর্মী অভিযোগ করছেন, তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে ছিলেন না, বরং আওয়ামী লীগের হয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন, তারাই এখন হঠাৎ করে যুবদল নেতা বনে যাচ্ছেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

তারা বলছেন যে ব্যক্তি গতকাল পর্যন্ত যুবলীগের হয়ে ত্রাস চালাতো, সে আজকে কিভাবে বিএনপির হয়ে মাঠে নামতে পারে? তাদের মতে, এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এবং তৃণমূলের কর্মীরা আরও হতাশ হবে।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, একজন হত্যা মামলার আসামি কিভাবে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে এটি বড় প্রশ্ন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে নীরব থাকায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কি আইন প্রয়োগের নিয়ম আলাদা হয়ে যায়? অপরাধীরা কি কেবল দলের রঙ পাল্টে পার পেয়ে যায়?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলবদল দীর্ঘদিনের একটি সংস্কৃতি। ক্ষমতাসীন দলের পতনের পর পরাজিত দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা টিকে থাকার স্বার্থে প্রতিপক্ষ দলে যোগ দেন।

তবে সোনারগাঁয়ের এই ঘটনাটি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ এখানে একজন হত্যা মামলার আসামি, যিনি দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন দলের হয়ে অপকর্ম চালিয়েছেন, তিনি হঠাৎ করে বিরোধী দলের নেতৃত্বে চলে এসেছেন।

এটি কেবল রাজনীতির বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, একইসাথে সাধারণ মানুষের মনে জন্ম দিচ্ছে—রাজনীতি কি শুধুই অপরাধীদের রঙ বদলের খেলা?

পিরোজপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ বলছেন, রাজনৈতিক রঙ যাই হোক, অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত। তারা মন্তব্য করেছেন—“আমাদের এলাকায় মোহাম্মদ আলীর মতো মানুষ যতদিন থাকবে, ততদিন শান্তি আসবে না। সে একসময় আওয়ামী লীগ করে অপরাধ করেছে, এখন বিএনপি করছে। কিন্তু ভুক্তভোগী আমরা সাধারণ মানুষ।

এইবিষয়ে মোহাম্মদ আলী জানায়, আমার নামে কে বা কারা যুবদলের ফেস্টুন বানিয়েছে আমার জানা নেই। আর একসময় মোশারফ সাহেব তিনি মেম্বার ছিলেন তখন এলাকার প্রয়োজনে ডাকলে সেখানে আমাকে যেতে হয়েছে আর আমি কোন যুবলীগ নেতাও ছিলাম না। 

সোনারগাঁয়ের এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি নগ্ন চিত্র তুলে ধরছে। যেখানে অপরাধীরা বিচারহীনতার সুযোগ নিয়ে রঙ বদলিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে টিকে থাকে। মোহাম্মদ আলীর মতো আসামিরা যদি দলে দলে জায়গা করে নেয়, তবে সাধারণ মানুষ রাজনীতির প্রতি আস্থা হারাবেএটাই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন রয়ে গেল—বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙবে কবে? অপরাধীরা কি কখনো রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়া টিকতে পারবে না? আর দলগুলো কি সত্যিই অপরাধীদের দলে ভিড়ানো বন্ধ করবে?

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: হত য স ন রগ ও য বল গ য বদল ন র য়ণগঞ জ র পতন র পর য বদল ন ত য বল গ র র জন ত ক র জন ত র র র জন ত ব এনপ র স ন রগ অপর ধ আওয় ম বদল র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ

ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা—এই প্রবণতা স্বাধীনতার পর থেকেই দেখা গেছে। যখন যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কাজে লাগিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের অনেক সদস্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়েছেন। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে দেশে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন বা স্বায়ত্তশাসিত পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

‘পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা: নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনদের আলোচনায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত এই বৈঠকে আলোচকদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পুলিশের বর্তমান ও সাবেক আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজীবীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ছিলেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ। তিনি বলেন, পুলিশের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠা করা উচিত। সাবেক ও বর্তমান বিচারপতি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯-১১ সদস্যের এই কমিশন হতে পারে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, চীন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এমন কমিশন আছে।

সাবেক এই অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৪০০ মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ থাকার কথা। বাংলাদেশে ৮৪৩ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এমনকি এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়েও বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। ভারতে ৬৬৭ জনের বিপরীতে একজন, পাকিস্তানে ৫৫২, থাইল্যান্ডে ২৯৭ এবং মালয়েশিয়ায় ৩১৩ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য আছেন।

বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠানের আগে পুলিশ সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রের উপস্থিতি প্রথমেই পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে শুরু হয়। অথচ যুগ যুগ ধরে পুলিশকে অপব্যবহার করা হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় এই বাহিনীর যে ভূমিকা দেখা গেছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের কারণেই ঘটেছে। দেশ পরিচালনার অংশ না হয়ে পুলিশ দল চালানোর জন্য কাজ করেছে। তখন যে দল ক্ষমতাসীন ছিল, তারা মনে করত পুলিশ তাদের দলেরই একটি বর্ধিত অংশ।

মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, কাজের স্বাধীনতা দিতে হবে পুলিশকে। রাজনৈতিক কারণে পুলিশকে যেন অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা না যায়, সেই সংস্কার করতে হবে। এ জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে পুলিশকে ব্যবহার

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে যারাই সরকারের এসেছি, তারাই এই পুলিশকে বিনষ্ট করেছি। সবাই রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত বা শক্তিশালী করতে অথবা পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পুলিশকে ব্যবহার করেছি। এতে কমবেশি অসত্য কিছু নেই। কিন্তু পুলিশ ব্যবহৃত হয়েছে, এটাও সত্য। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি পর্যন্ত সব জায়গায় যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে, সেই পুলিশ দিয়ে কী আশা করা যায়?’

জনমুখী পুলিশ করতে চাইলে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা দিতে হবে। বাহারুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর যত মামলা হয়েছে এবং মব ক্রাইসিস হয়েছে, এই দুটো জিনিস এই সরকার এবং জনগণের সবচেয়ে বেশি ড্যামেজ করেছে। একটি মামলায় দুই হাজার, পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলো নিয়েছে পুলিশ।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, যারাই সরকারে যাক, তাদের মধ্যে যেন এমন বদ্ধমূল ধারণা না থেকে যে আগামীবার তারা বিরোধী দলে যাবে না। বিরোধী দলে যাওয়ার মানসিকতা থাকলে রাষ্ট্রে সুশাসন জারি হবে। তাহলেই পুলিশ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হবে না। প্রশাসন স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারবে।’

পুলিশকে নির্যাতকের ভূমিকায় মানুষ আর দেখতে চায় না বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মো. মোবারক হোসাইন। তিনি বলেন, জনবান্ধব করতে পুলিশকে নৈতিক প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের সময় পুলিশের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার

বৈঠকে হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, মামলার তদন্তে বিলম্বের অন্যতম কারণ ক্ষমতাসীনদের নির্দেশ পুলিশ পরিচালিত হয়। ধীরে চলার নির্দেশনা এলে পুলিশের তদন্তের গতিও কমে যায়। রাজনৈতিক প্রভাব ও হস্তক্ষেপের বাইরে আসতে হবে পুলিশকে। একই সঙ্গে পুলিশের নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ হতে হবে।

স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিরোধিতা করা হয়েছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে কোনো কিছুই কার্যত কাজে আসবে না।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আরেকজন সদস্য ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত সময়ে পুলিশের মূল কর্তৃত্বের অধিকারী যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এমন কোনো অপরাধ বাকি রাখেননি, যেটা অপরাধ বইয়ে নেই। এটা কেবল রাজনৈতিক কারণে হয়েছে—এমন ন্যায্যতা দেওয়ার সুযোগ নেই।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শেষ সময় পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত হয়নি। এর কারণ পরিষ্কার। রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক এবং পুলিশ নিজেই সেটি হতে দেয়নি। ক্ষমতাকে জবাবদিহির জায়গায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক শক্তি যেমন চায় না, তেমনি আমলাতন্ত্র এবং পুলিশও চায় না।

ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতা

পুলিশ সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি দরকার বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বৈঠকে বলেন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন পরিবর্তন করতে হবে। এই আইন পরিবর্তন হয় না ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতা থেকে। যতগুলো পুলিশ কমিশন হয়েছে, এর মধ্যে এবারের কমিশন সবচেয়ে আশাহীন এবং অকার্যকর কমিশন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘আমরা ভালো হতে চাই’

বৈঠকে পুলিশের বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘পুলিশের তরফ থেকে ২০০৬-০৭ সাল থেকেই বলছিলাম, আমাদের সংস্কার হোক। আমরা ভালো হতে চাই। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করেন। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন পরিবর্তন করতে বলেছিলাম। কিন্তু ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের দেওয়া সেই প্রস্তাবনা ঘুমন্ত অবস্থাতেই আছে।’

বাহারুল আলম বলেন, জনমুখী পুলিশ করতে চাইলে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা দিতে হবে। পুলিশকে মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। পুলিশ একটি স্বাধীন সংস্থার কাছে থাকুক। তিনি বলেন, মামলায় কাকে গ্রেপ্তার করা হবে, কার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে—সেটা যেন কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাপিয়ে দিতে না পারে। এই জায়গাটা পুলিশ চেয়েছে।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পুলিশ অনেক কাজ সঠিকভাবে করতে পারছে না বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ।

বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ ইকবাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিজওয়ানুল ইসলাম, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজির (প্রশাসন) দায়িত্বে থাকা কাজী মো. ফজলুল করিম, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও ফাহমিদা আক্তার, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্দান্ত প্রকৌশলী, প্রাণবন্ত মানুষ
  • ‘আপনাদের কার্যক্রম তো সন্ত্রাসীদের মতো’ সাংবাদিকদের বললেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ভিডিও ভাইরাল
  • ‎ বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বেরোবির ৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
  • ব্যাংকিং খাতে আস্থা বাড়াতে নিজের কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগের গল্প বললেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
  • ভারত ম্যাচের আগে দলে মনোবিদ যুক্ত করেছে পাকিস্তান
  • প্রকাশ্য থেকে গুপ্ত: ভেতর থেকে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি
  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...
  • রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ