জয়পুরহাট সদর উপজেলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে এসে স্থানীয় লোকজনের হাতে দুজন আটক হয়েছেন। পরে পুলিশে সোপর্দ করা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার আমদই ইউনিয়নের মাধাইনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন ক্ষেতলাল উপজেলার দেওগ্রামের মজনু মণ্ডল (৪০) ও সদর উপজেলার মাধাইনগর গ্রামের মশিউর রহমান (৩৮)। তাঁদের কাছ থেকে পুলিশের লোগো–সংবলিত একটি সেফটি ভেস্ট ও একটি হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়েছে। জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তামবিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে আটটার পর মজনু ও মশিউর মাধাইনগর বাজারে গিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। এ সময় তাঁরা কয়েকজনকে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির চেষ্টা করেন। তবে তাঁদের আচরণে সন্দেহ হলে বাজারের লোকজন জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিচয়পত্র দেখতে চান। পরিচয়পত্র না দেখিয়ে তাঁরা পুলিশের লোগো–সংবলিত সেফটি ভেস্ট ও একটি হ্যান্ডকাফ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে তাঁরা নিজেদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেন। উত্তেজিত জনতা তাঁদের আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে রাত নয়টার দিকে পুলিশ এসে দুজনকে থানায় নিয়ে যায়।

ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, মজনু ও মশিউরকে বাজারের একটি দোকানে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁদের কাছেই পাওয়া যায় সেফটি ভেস্ট ও হ্যান্ডকাফ। সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শাহিন কাদির ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আটক মজনু দাবি করেন, কালাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর আমিন তাঁকে হ্যান্ডকাফটি দিয়েছেন। তবে এসআই নুর আমিন বলেন, ‘আমি ওদের চিনি না। আমার হ্যান্ডকাফ আমার কাছেই আছে। কাউকে হ্যান্ডকাফ দিইনি।’

মাধাইনগর বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, ‘তাঁরা বাজারে এসে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। কয়েকজনকে টার্গেট করে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করতে চেয়েছিলেন। সন্দেহ হলে আমরা তাঁদের আটক করি।’

ওসি তামবিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার দুজনের কাছ থেকে পুলিশের লোগো–সংবলিত একটি সেফটি ভেস্ট ও পুরোনো একটি হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপপরিদর্শক মিনারুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁদের আদালতে পাঠানো হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শীর্ষ ১০ বৈজ্ঞানিক ভুল

বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের অনেক ভুল আছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ভুল করে বলেছিলেন, পরমাণু থেকে কোনো শক্তি পাওয়া যাবে এমন সামান্যতম ইঙ্গিত নেই। পারমাণবিক যুগ শুরুর আগে তিনি এ কথা বলেছিলেন। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার হয়। যেকোনো গবেষকই আপনাকে বলবেন বিজ্ঞানের অগ্রগতি হয় চেষ্টা ও ত্রুটির মাধ্যমে। যেখানে বেশির ভাগ কাজেই ত্রুটির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হয়। এক ধাপ এগিয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে যাওয়াই যেন গবেষণার নীতিবাক্য। ত্রুটি ছাড়াও অনেক বড় বড় বৈজ্ঞানিক ভুল ইতিহাসে আলোচিত হয়। এসব ভুল কখনো কখনো অনিচ্ছাকৃত, আবার কখনো কখনো অনিচ্ছাকৃত নয় বলা যায়। বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী স্টিফেন জে গোল্ড যুক্তি দিয়েছেন, বিজ্ঞানীরা যেন নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করেন। কখনো কখনো ভুল অত্যন্ত সৌভাগ্যজনক হতে পারে। ভুলের কারণেই একটি উন্মুক্ত পেট্রি ডিশ থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কার হয়েছিল। এমনই কয়েকটি বৈজ্ঞানিক ভুলের তথ্য জেনে নিন।

ব্রিটিশদের মস্তিষ্কের শক্তি পরীক্ষা

১৯৯০–এর দশকে যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গের ইনস্টিটিউট ফর অ্যানিমেল হেলথের বিজ্ঞানীরা গরু ও ভেড়ার প্রজাতি নিয়ে পরীক্ষা করেন। তাঁরা ২ লাখ পাউন্ড সরকারি অনুদান পান। পাঁচ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ভুলবশত ভেড়ার মগজের পরিবর্তে গরুর মগজ পরীক্ষা করছেন বলে ২০০১ সালে ধরা পড়ে।

বৈজ্ঞানিক ওয়াটারগেট

ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ তদন্ত প্যানেল দেখেন, রোগ প্রতিরোধবিষয়ক বিজ্ঞানী থেরিজা ইমানিশি-কারি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ডেভিড বাল্টিমোরের সঙ্গে ১৯৮৬ সালের একটি গবেষণাপত্রের তথ্য জাল করেছিলেন। সেই গবেষণাপত্রে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার জিনগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

ডায়েরি নিয়ে জালিয়াতি

অক্সব্রিজের ইতিহাসবিদ হিউ ট্রেভর-রোপার জার্মানভিত্তিক স্টার্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হিটলারের ডায়েরিকে খাঁটি বলে প্রমাণ করেছিলেন। পরে সেই ডায়েরি নকল বলে প্রমাণিত হয়।

পানি দিয়ে জ্বালানি সমস্যা

১৯৮৯ সালে ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ স্ট্যানলি পনস ও মার্টিন ফ্লিশম্যান কোল্ড ফিউশন আবিষ্কার করে বিশ্বের জ্বালানি সমস্যার সমাধান করার দাবি করেন। তবে সেই থেকে কেউই পানির পারমাণবিক ফিউশনের মাধ্যমে জ্বালানি তৈরি করতে পারেননি।

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ

নাসার বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভিত্তিক লেন্সের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী একটি লেন্স তৈরি করতে হাবল টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করেন। ১৯৯০ সালের এপ্রিলে উৎক্ষেপণের পরপরই প্রধান আয়নাতে একটি গুরুতর নকশার ত্রুটি ধরা পড়ে। আয়নাটি মেরামতের জন্য নভোচারীর মাধ্যমে শত শত কোটি পাউন্ডের প্রয়োজন হয়।

এন-রে

বিজ্ঞানী রন্টজেন কর্তৃক এক্স-রে আবিষ্কারের কিছুদিন পর ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী রেনে ব্লন্ডলট এক নতুন ধরনের বিকিরণ আবিষ্কারের দাবি করেন। তবে মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট উড প্রকাশ করেন, এন-রে সামান্য বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। উড এন-রে শনাক্তকরণ ডিভাইস থেকে প্রিজমটি সরিয়ে ফেলেন, যা ছাড়া যন্ত্রটি কাজ করতে পারত না। যদিও বিজ্ঞানী ব্লন্ডলটের সহকারীর দাবি ছিল তাঁরা এন-রে খুঁজে পেয়েছেন।

শিক্ষাগত মানদণ্ড নিয়ে বিতর্ক

১৯৬০-এর দশকে ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী সিরিল বার্ট অভিন্ন যমজদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করেন। যমজদের শিক্ষাগত মান হ্রাস পাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বহু বছর পরে দেখা যায়, যমজদের মধ্যে এমন প্রভাব নেই।

পিল্টডাউন মানব

১৯১৩ সালে যুক্তরাজ্যে পিল্টডাউনের কাছে একটি স্থানে মানুষের দাঁতের মতো ক্ষয়প্রাপ্ত কুকুরের চোয়াল ও বানরের চোয়ালের অংশ পাওয়া যায়। ব্রিটিশ জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা খুলি ও চোয়ালকে বিবর্তন শৃঙ্খলে বানর ও মানুষের মধ্যেকার অনুপস্থিত সংযোগ বলে দাবি করেন। ১৯৫৩ সালে পিল্টডাউন মানবকে জালিয়াতি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। মাথার খুলিটি ছিল আধুনিক ও বানরের চোয়ালের দাঁত ঘষে ক্ষয় করা হয়েছিল।

বিজ্ঞানী নিউটনের আলকেমি

স্যার আইজ্যাক নিউটনকে এককভাবে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করেন বলে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি আলকেমি নামের বিশেষ রহস্যময় রসায়নে বিশ্বাস করতেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় ধরেই তিনি নিশ্চিত ছিলেন, সাধারণ ধাতুকে সোনায় রূপান্তর করা যাবে।

সমতল পৃথিবী

ক্রিস্টোফার কলম্বাস বহু বছর আগে পৃথিবী অভিযানের মাধ্যমে গোলাকার বলে প্রমাণ করেছিলেন। তারপরেও অনেকে বিশ্বাস করেন পৃথিবী সমতল। অনেকেই বিশ্বাস করেন, পৃথিবী আসলে প্যানকেকের মতো আকৃতির।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

সম্পর্কিত নিবন্ধ