শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ‘অকৃতকার্য ‘অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা
Published: 23rd, September 2025 GMT
রংপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদের (ইমতি) বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ইমতিয়াজ আহম্মদ ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক। সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল শুনে ‘অকৃতকার্য হওয়া’ শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর একে একে তিনটি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটান।
রংপুর মহানগরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে ৪ সেপ্টেম্বর। শিক্ষার্থীদের পিটুনি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর সংক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা স্কুলে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে ঘটনার ১৮ দিন পার হলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি প্রধান শিক্ষক। অবশ্য প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আহম্মেদের দাবি, তাঁরা ঘটনাটি মীমাংসা করেছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়নি।
স্থানীয় লোকজন ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটির আহ্বায়ক হন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহম্মদ। তখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বিলুপ্ত হলে গত ১৮ জুলাই বাগছাসের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক হন ইমতিয়াজ।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ২৩০ জন। মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী অন্তত ১৫ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাদের অভিযোগ, গত ৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের টিফিন শেষে ক্লাস চলছিল। এমন সময় ইমতিয়াজ আহম্মদ মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে গিয়ে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির কক্ষে যান। সেখানে উপস্থিতি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল জানতে চান। যেসব শিক্ষার্থী ‘অকৃতকার্য’ হয়েছে, তাঁদের একে একে ডেকে বেধড়ক পেটান। তখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ছিলেন, তাঁরাও কোনো প্রতিবাদ করেননি।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত ইসলাম ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে প্রথম আলোকে বলে, ‘টিফিনের পর পঞ্চম ক্লাসে স্যারের (শ্রেণিশিক্ষক) সঙ্গে আমরা সবাই উপস্থিত আছি। ক্লাস চলাকালীন উনি (সভাপতি) একটা বেত নিয়ে ঢুকে বলতেছে, কে কে ফেল করছো, দাঁড়াও। আমরা দাঁড়াইলাম। পরে একেকজন করে ডাকছে, আর মারছে। আমাদের মারছে মারছে, মেয়েদেরও মারছে। মাইরে শরীরের অংশ লাল হয়ে গেছে। নবম ক্লাসে মারধর করতে বেত ভেঙে ফেলেছে।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমান্ত শীল ও শিমুল শর্মা বলে, তাঁদের বই দেওয়া হয়েছিল গত এপ্রিলে। ক্লাস হয়েছিল অল্প কয়েক দিন। আবার প্রশ্ন ছিল নতুন। এ কারণে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বেশি কঠিন ছিল। বই দেরিতে দেওয়া ও পাঠ্যক্রম নতুন সৃজনশীল হওয়ায় তাঁদের ক্লাসের তিন ভাগের আড়াই ভাগ ফেল করেছিল। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, সভাপতি এসে এসব কিছু শোনেননি। তিনি শিক্ষার্থীদের গরু পেটানোর মতো করে মারধর করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, ওই দিন পঞ্চাশের বেশি শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়। জ্বর ও ব্যথা না কমায় শিক্ষার্থী আইরিন আক্তারকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন ভর্তি রাখতে হয় বলে জানান তার মা দুলালী বেগম। আইরিনের চাচা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘মাইরে ছাওয়ার (আইরিন) হাত ফুলে গেছে।’
এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের চিহ্ন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমত য় জ আহম ম দশম শ র ণ পর ক ষ র কম ট
এছাড়াও পড়ুন:
জয়পুরহাটে শিশু তাসনিয়া হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় স্কুলছাত্রী তাসনিয়া খাতুনের হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বটতলী বাজারে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এতে তার সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা অংশ নেন।
তাসনিয়া বড়তাড়া ইউনিয়নের শালবন গ্রামের বাসিন্দা ও বটতলী সানরাইজ মডেল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। দুই দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী একরামুল হোসেনের গোয়ালঘর থেকে শিশুটির বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুনজয়পুরহাটে নিখোঁজের দুই দিন পর শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার, দুই নারী আটক২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বটতলী সানরাইজ মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবর রহমান, শালবন মাদ্রাসার মহতামিম মাওলানা উসমানী, ক্ষেতলাল পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল আলিম, বড়তাড়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নরুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেতলাল পৌর শাখার সেক্রেটারি আবদুল কুদ্দুস ও নিহত তাসনিয়ার বাবা এরশাদ হোসেন।
মাহবুবর রহমান বলেন, ‘তাসনিয়া খাতুন আমাদের স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
তাসনিয়ার বাবা এরশাদ হোসেন বলেন, ‘আমার একমাত্র আদরের সন্তান তাসনিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর কীভাবে বেঁচে আছি—তা বলতে পারব না। আমার সন্তানের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি করছি।’
২০ সেপ্টেম্বর তাসনিয়ার লাশ উদ্ধারের পর গ্রামবাসীরা একরামুলের স্ত্রী হাবিবা আকতার কুমকুম ও তাঁদের বাড়ির কাজের লোক আঞ্জুয়ারাকে আটক করে পুলিশে দেন। এ ঘটনায় তাসনিয়ার বাবা ছয়জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় একরামুল স্ত্রী ও বাড়ির কাজের লোককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তবে একরামুলসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, তাসনিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামি একরামুলের স্ত্রী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।