Prothomalo:
2025-09-24@09:17:30 GMT

নবী–তনয়া জয়নবের (রা.) কাহিনি

Published: 24th, September 2025 GMT

নবীজির (সা.) জ্যেষ্ঠ কন্যা জয়নব বিনতে মুহাম্মদ (রা.) জন্ম হিজরিপূর্ব ২৩ সালে, ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে। উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.) তাঁর আপন বোন হালাহ বিনতে খুওয়াইলিদের ছেলে আবুল আসকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতেন।

জয়নবের বয়স ১০ পেরোনোর আগেই আবুল আসের সঙ্গে তিনি তাঁর বিয়ের প্রস্তাব করলেন।

নবীজি (সা.) কখনো জীবনসঙ্গী খাদিজার কথা ফিরিয়ে দিতেন না, তিনি এই সম্পর্ক কবুল করেন এবং আল্লাহর নামে দুজনকে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করেন। এরপর একে অপরের প্রতি নির্ভরতা আর ভালোবাসায় সুখেই দিন কাটছিল।

এরই মধ্যে নবীজি (সা.

) নবুয়ত পেয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। জয়নব (রা.) ইসলামে দীক্ষিত হন; কিন্তু তাঁর স্বামী আবুল আস নিজ ধর্মেই অটল রইলেন। (ইদরীস কান্ধলবী (র.), সীরাতে মুস্তফা, ২/১০৯-১১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০১৩)

নবুয়তের প্রথম দিকে নিয়ম ছিল জীবনসঙ্গীর যেকোনো একজন মুশরিক থাকলেও সম্পর্ক বহাল রাখতে পারবে।

নবুয়তের প্রথম দিকে নিয়ম ছিল জীবনসঙ্গীর যেকোনো একজন মুশরিক থাকলেও সম্পর্ক বহাল রাখতে পারবে। জয়নব (রা.) আবু আসের সঙ্গে সংসার করতে থাকেন, ধর্মের ফারাক থাকলেও তাঁদের মধ্যে প্রেমে কোনো ঘাটতি ছিল না।

এ সময় হিংসুক কাফেররা নবীজিকে (সা.) কষ্ট দিতে আবুল আসের কাছে গিয়ে জয়নবকে তালাক দিতে বলল, সঙ্গে লোভনীয় প্রস্তাবও দিল; কিন্তু আবুল আস সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি কোনো বিনিময়েই জয়নবকে (রা.) ছাড়বেন না।

আরও পড়ুনইয়াজিদের সামনে জয়নাবের সাহসিকতা১৫ জুলাই ২০২৫

মক্কায় বসবাস যখন কঠিন হয়ে গেল, নবীজি (সা.) হিজরত করে মদিনায় চলে যান। কিন্তু সেই সময়েও ‘মুশরিক’ জামাতার কাছে নিজ কন্যাকে নিরাপদ ভেবেছিলেন; কিন্তু বিপত্তি বাধে বদরের যুদ্ধের সময়, অন্য সব কুরাইশ বংশীয়র মতো আবুল আসকেও বাধ্য হয়ে শ্বশুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে হয়।

যুদ্ধে যে ৭০ জন কুরাইশ বন্দি হন, এর মধ্যে তিনিও ছিলেন। কথা ছিল যুদ্ধবন্দিরা অর্থদান অথবা হরফ শিক্ষাদানের বিনিময়ে মুক্তি পাবেন।

আবুল আসকে মুক্ত করতে তখন তাঁর স্ত্রী জয়নব বিনতে মুহাম্মদ মক্কা থেকে কিছু ধনসম্পদ পাঠিয়ে দেন, তার মধ্যে একটি গলার হার ছিল, যা খাদিজা (রা.) মেয়ের বিয়েতে উপহার দিয়েছিলেন। সেই হার দেখামাত্র নবীজি চিনে ফেললেন এবং প্রিয়তম স্ত্রী ও কন্যার কথা ভেবে দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলেন।

তিনি সেই বিখ্যাত বাক্যটি বলেন, যা পরবর্তী সময়ে প্রবাদ হয়ে যায়—‘পুরুষদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব যেন নারীদের সম্পর্কে কোনো প্রভাব না ফেলে!’

তিনি সাহাবিগণের কাছে বললেন, ‘তোমরা যদি ভালো মনে করো, তবে আবুল আসকে কোনো বিনিময় ছাড়াই ছেড়ে দাও এবং তার সব ধনসম্পদ ফিরিয়ে দাও।’ সাহাবিগণ তা-ই করলেন; কিন্তু নবীজি (সা.) শর্ত দিলেন—আবুল আস ফিরে গিয়ে তাঁর স্ত্রী জয়নবকে মদিনায় তাঁর বাবার কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে।

ইচ্ছা না থাকলেও আবুল আস মঞ্জুর করে নিলেন।

এ ঘটনা তৃতীয় হিজরির, ওহুদ যুদ্ধের আগের। বদরের পরাজয়ে প্রতিশোধপরায়ণ কুরাইশরা মুসলমানদের পৃথিবী থেকে মুছে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছিল আবু সুফিয়ান। ওদিকে সন্তানসম্ভবা জয়নব (রা.) প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাদের প্রধান শত্রুর আবাসভূমি মদিনায় যাওয়ার।

এমন সময় একদিন আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ, বদরযুদ্ধে যাঁর পিতা উতবা, ভাই হানজালা ও চাচা শায়বা—তিনজনই নিহত হন, যিনি এর প্রতিশোধ নিতে নবীজির আপন চাচা হামজার (রা.) কলিজা চিবিয়ে খাওয়ার শপথ নিয়েছেন, তিনি জয়নবের কাছে এসে বলেন, ‘হে মুহাম্মদের মেয়ে, শুনলাম তুমি তোমার পিতার কাছে চলে যেতে চাইছ।’

জয়নব (রা.) তার সামনে সত্য বলা আত্মঘাতী মনে করলেন, তাই কথা লুকিয়ে বললেন, ‘আমি এমন কিছু ভাবিনি।’

হিন্দ বিনতে উতবা বললেন, ‘হে আমার চাচাতো বোন, তুমি এমন কাজ কোরো না। তবু যদি যেতে চাও, আর পথ খরচের জন্য অর্থকড়ির প্রয়োজন পড়ে, আমাকে বলতে পারো। আমি তোমার প্রয়োজন পূরণ করব। আমার কাছে চাইতে লজ্জাবোধ করবে না।’

এরপর তিনি সেই বিখ্যাত বাক্যটি বলেন, যা পরবর্তী সময়ে প্রবাদ হয়ে যায়—‘পুরুষদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব যেন নারীদের সম্পর্কে কোনো প্রভাব না ফেলে!’

জয়নব (রা.) জানতেন হিন্দ বিনতে উতবা এ কথাগুলো বলছেন মন থেকেই, তবু সতর্কতার খাতিরে তিনি তাঁকে কিছু বলেননি, তার সাহায্য চাননি। (ইবনে হিশাম, সীরাতুন নবী, ২/৩৩২-৩৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০০৭)

আরও পড়ুনহিজরতে মহানবী (সা.)–কে সাহায্য করলেন দৃঢ়চেতা এক নারী২৯ জুন ২০২৫

এদিকে নবীজিও নিজ কন্যার নিরাপদ হিজরতের জন্য একজন সঙ্গীসহ পালক পুত্র জায়েদ ইবনে হারিসাকে (রা.) মক্কায় পাঠান। নবীজি (সা.) তাদের হাতে একটি আংটি দিয়েছিলেন। জায়েদ মক্কার কাছাকাছি এসে একজন রাখালকে দিয়ে সেই আংটি জয়নবের (রা.) কাছে পাঠান।

তিনি তা দেখামাত্রই বুঝে ফেলেন কী করতে হবে। তিনি দ্রুত একটি উটের হাওদায় চড়ে বসেন। তার দেবর কিনানা ইবনে রবি উটের রশি ধরে তাঁকে এগিয়ে দিতে যান। কিন্তু ‘জু-তুওয়া’ নামক স্থানে যাওয়ার পর কুরাইশদের একটি দল তাদের দেখে ফেলে এবং পথ আটকে দেয়।

একপর্যায়ে হাব্বার ইবনে আসওয়াদ গিয়ে জয়নবকে (রা.) বর্শা দিয়ে ভয় দেখায় এবং ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সে সময়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, প্রচণ্ড আতঙ্কে তার গর্ভপাত হয়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে কিনানা ইবনে রবি সবার দিকে তির নিশানা করে বসে পড়েন এবং ঘোষণা দেন, ‘আল্লাহর কসম, যে-ই আমার সামনে আসবে, আমি তাকে খতম করে ফেলব।’

হাব্বার ইবনে আসওয়াদ গিয়ে জয়নব (রা.)–কে বর্শা দিয়ে ভয় দেখায় এবং ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সে সময়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, প্রচণ্ড আতঙ্কে তার গর্ভপাত হয়ে যায়।

পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক হয়ে যায় যে একে সামাল দিতে না পারলে কুরাইশদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তখন কুরাইশদের সরদার আবু সুফিয়ান এগিয়ে আসেন। তিনি কিনানাকে কৌশলে শান্ত করে বলেন, এভাবে প্রকাশ্যে জয়নবের চলে যাওয়া কুরাইশদের দুর্বলতা প্রকাশ করে। তাই আপাতত তাকে মক্কায় ফিরিয়ে নাও। পরে সুযোগ বুঝে গোপনে মদিনায় পাঠানো যাবে।

কিনানা এই প্রস্তাবে রাজি হন। কিছুদিন পর রাতের অন্ধকারে জয়নবকে (রা.) নিরাপদে মক্কা থেকে বের করে জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) ও তার সঙ্গীর হাতে তুলে দেন। তাঁরা তাঁকে নিয়ে মদিনায় পৌঁছে দেন। (ইবন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/৫৭১-৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০০৩)

এ ঘটনার প্রায় ছয় বছর পর আবুল আস ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজি (সা.) জয়নবের সঙ্গে তাদের আগের বিয়ের ভিত্তিতেই একসঙ্গে থাকতে দেন; কিন্তু তাদের এই পুনর্মিলন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

হিজরতের সময় যে দুর্ঘটনায় তাঁর গর্ভপাত হয়েছিল, এর কারণে তিনি কখনোই সুস্থ হতে পারেননি। অষ্টম হিজরি মোতাবেক ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে পুত্র আলী ও কন্যা উমামাকে রেখে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

নবীজি (সা.) প্রায় বলতেন, ‘জয়নব আমার সবচেয়ে গুণবতী মেয়ে, তিনি আমার জন্য অনেক অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন।’

[email protected]

মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক

আরও পড়ুনসাহাবি ইবনে বিশরের অলৌকিক লাঠি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জয়নব র প রস ত মদ ন য় থ কল ও হ জরত ইসল ম করল ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাতের পর সকালেও একজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে পাঁচ

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলা সীমান্তের চরপাড়া এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের গুদামে বিস্ফোরণে দগ্ধ আরেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত শ্রমিকের নাম মোহাম্মদ হারুন ওরফে হারেজ (২৯)। তিনি চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের ছৈয়দাবাদ পর্দার ডেবা এলাকার নুরুল ইসলাম ছেলে। এর আগে গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেকজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দুর্ঘটনাটিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

গত বুধবার ভোরে গ্যাস সিলিন্ডারের গুদামটিতে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ সময় আগুনে পুরো গুদাম পুড়ে যায়। দগ্ধ হন ১০ জন। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ওই দিনই অবস্থা শঙ্কাজনক হওয়ায় চারজনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে বাকি ছয়জনকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।

মোহাম্মদ হারুনের মৃত্যুর বিষয়টি চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোলাইমান ফারুকী নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাটির পর প্রথমে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া চারজনেরই মৃত্যু হয়েছে। পরে নিয়ে যাওয়া ছয়জনের মধ্যে একজন আজ মারা গেছেন। বাকি পাঁচজন সেখানে চিকিৎসাধীন, তাঁদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে ডাকাত সন্দেহে পিটুনিতে একজন নিহত
  • ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত রায়ান রাউথ
  • জুবিনকে নিয়ে যা লিখলেন প্রিন্স মাহমুদ
  • নোবেল পেতে চাইলে গাজা যুদ্ধ বন্ধ করুন, ট্রাম্পকে মাখোঁ
  • অনলাইনে ভিডিও দেখে রকেট বানিয়ে ফেললেন চীনা তরুণ
  • বিসিবির খসড়া ভোটার তালিকায় কারা আছেন, কারা নেই
  • মহাখালীতে পেট্রলপাম্পের ট্যাংক বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৭
  • আশুলিয়ায় থানার সামনে ৬ লাশ পোড়ানোর পর কেউ সেগুলো মসজিদের সামনে রেখে আসে
  • রাতের পর সকালেও একজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে পাঁচ