ঢাকার সরকারি সাত কলেজ নিয়ে কয়েক পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে অনার্সের শিক্ষার্থীরা চাইছে কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হোক; অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন, তাদের শিক্ষা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এদিকে ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজের নারী শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে—অর্থাৎ সেখানে কেবল নারী শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনা করবে। অপর দিকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা চান না এই সাত কলেজ তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যাক, কারণ এটি সরাসরি তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত। ফলে বিষয়টি এখন শুধু জটিল নয়, অতি জটিল অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।

প্রশ্ন হলো, শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি বা চাপের মুখে, কোনো গবেষণা বা তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই কি আমরা এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারি? এই কলেজগুলোর সুদীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পরম্পরা রয়েছে। ঢাকা কলেজের নাম তো বাংলাদেশের আধুনিক শিক্ষার জন্মলগ্নের সঙ্গে মিশে আছে। এখন হুট করে যদি আমরা সেই ঐতিহ্য বিলীন করি, তবে তার প্রভাব বহুমাত্রিক হবে। ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের পড়াশোনার কী হবে? প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদ হারিয়ে গেলে শিক্ষা ক্যাডার কাঠামোর ওপর এর প্রভাব কী হবে? আবার প্রতিদিন আমরা সংবাদমাধ্যমে পড়ছি—বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এর সমাধান খোঁজার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া বা হুট করে রূপান্তর করাই কি যৌক্তিক হবে? এখানেই আসে গবেষণা, ভাবনার আদান-প্রদান এবং একটি সুসংগঠিত রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তা।

একটি সম্ভাব্য মডেল—

এই সাত কলেজের জন্য একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা যেতে পারে। এটি হবে গবেষণানির্ভর প্রতিষ্ঠান, যেখানে শুধু মাস্টার্স, পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরাল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বও নেবে।

সাত কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ও অনার্স চালু থাকবে। তবে অনার্সে আসনসংখ্যা যৌক্তিকভাবে কমাতে হবে। একাডেমিক মান বজায় রাখতে বিদেশি মাস্টার্স ডিগ্রি, এমফিল বা পিএইচডিধারী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদায়ন করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করতে আলাদা বৃত্তির ব্যবস্থা এবং গবেষণা ফান্ড গঠন অপরিহার্য।

অনার্স সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। তাঁদের জন্য আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মাস্টার্স শেষে যাঁরা পিএইচডি করতে আগ্রহী হবেন, তাঁদেরও ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সুযোগ দিতে হবে এবং গবেষণাকালীন মাসিক বৃত্তি প্রদান করতে হবে।

প্রশ্ন হলো শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি বা চাপের মুখে, কোনো গবেষণা বা তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই কি আমরা এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারি? এই কলেজগুলোর সুদীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পরম্পরা রয়েছে। ঢাকা কলেজের নাম তো বাংলাদেশের আধুনিক শিক্ষার জন্মলগ্নের সঙ্গে মিশে আছে। এখন হুট করে যদি আমরা সেই ঐতিহ্য বিলীন করি, তবে তার প্রভাব বহুমাত্রিক হবে। ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের পড়াশোনার কী হবে?

শিক্ষক নিয়োগ ও গবেষণার মানদণ্ড—

কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে হবে। এমফিল/পিএইচডিধারী এবং স্বনামধন্য জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশকারীদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে। শুরু থেকেই গবেষণা ফান্ড নিশ্চিত করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি শক্তিশালী গবেষণামুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ—

গবেষণা টেকসই করতে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতগুলো থেকে জানতে হবে তারা কোন কোন ক্ষেত্রে গবেষণা চায়। এতে স্থানীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। সরকার ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান উভয়ে সমানভাবে ফান্ড প্রদান করবে এবং গবেষণার ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ভাগাভাগি করবে। সেই ফেলোশিপে পিএইচডি সম্পন্নকারীরা সংশ্লিষ্ট শিল্পক্ষেত্রে চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবে। ধীরে ধীরে গবেষণার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, যা বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির পথে এগিয়ে নেবে।

কোনো গবেষণা ছাড়া, হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্ত কল্যাণের পরিবর্তে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে। তাই একেবারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার নয়, এক শ বার ভেবে দেখা জরুরি। ঐতিহ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও গবেষণার সমন্বিত রূপেই ঢাকা সরকারি সাত কলেজ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য মডেল হয়ে উঠতে পারে।

*লেখক: সুব্রত কুমার মল্লিক, সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান, ওএসডি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, পিএইচডি শিক্ষার্থী (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ), ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, যুক্তরাজ্য। [email protected]

আরও পড়ুনসাত কলেজ ঘিরে নতুন সংকট২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ত কল জ প এইচড অন র স কল জ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা

টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।

স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেম

বর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।

ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণ

রিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।

মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগ

বর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।

বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।

আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল
  • আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
  • এআইইউবিতে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে দিনব্যাপী সম্মেলন