সরকারি সাত কলেজ: জটিলতার মাঝে সম্ভাবনার খোঁজ যেভাবে
Published: 26th, September 2025 GMT
ঢাকার সরকারি সাত কলেজ নিয়ে কয়েক পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে অনার্সের শিক্ষার্থীরা চাইছে কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হোক; অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন, তাদের শিক্ষা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এদিকে ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজের নারী শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে—অর্থাৎ সেখানে কেবল নারী শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনা করবে। অপর দিকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা চান না এই সাত কলেজ তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যাক, কারণ এটি সরাসরি তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত। ফলে বিষয়টি এখন শুধু জটিল নয়, অতি জটিল অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন হলো, শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি বা চাপের মুখে, কোনো গবেষণা বা তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই কি আমরা এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারি? এই কলেজগুলোর সুদীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পরম্পরা রয়েছে। ঢাকা কলেজের নাম তো বাংলাদেশের আধুনিক শিক্ষার জন্মলগ্নের সঙ্গে মিশে আছে। এখন হুট করে যদি আমরা সেই ঐতিহ্য বিলীন করি, তবে তার প্রভাব বহুমাত্রিক হবে। ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের পড়াশোনার কী হবে? প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদ হারিয়ে গেলে শিক্ষা ক্যাডার কাঠামোর ওপর এর প্রভাব কী হবে? আবার প্রতিদিন আমরা সংবাদমাধ্যমে পড়ছি—বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এর সমাধান খোঁজার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া বা হুট করে রূপান্তর করাই কি যৌক্তিক হবে? এখানেই আসে গবেষণা, ভাবনার আদান-প্রদান এবং একটি সুসংগঠিত রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তা।
একটি সম্ভাব্য মডেল—
এই সাত কলেজের জন্য একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা যেতে পারে। এটি হবে গবেষণানির্ভর প্রতিষ্ঠান, যেখানে শুধু মাস্টার্স, পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরাল কার্যক্রম পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বও নেবে।
সাত কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ও অনার্স চালু থাকবে। তবে অনার্সে আসনসংখ্যা যৌক্তিকভাবে কমাতে হবে। একাডেমিক মান বজায় রাখতে বিদেশি মাস্টার্স ডিগ্রি, এমফিল বা পিএইচডিধারী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদায়ন করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করতে আলাদা বৃত্তির ব্যবস্থা এবং গবেষণা ফান্ড গঠন অপরিহার্য।
অনার্স সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। তাঁদের জন্য আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মাস্টার্স শেষে যাঁরা পিএইচডি করতে আগ্রহী হবেন, তাঁদেরও ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সুযোগ দিতে হবে এবং গবেষণাকালীন মাসিক বৃত্তি প্রদান করতে হবে।
প্রশ্ন হলো শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি বা চাপের মুখে, কোনো গবেষণা বা তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই কি আমরা এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারি? এই কলেজগুলোর সুদীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পরম্পরা রয়েছে। ঢাকা কলেজের নাম তো বাংলাদেশের আধুনিক শিক্ষার জন্মলগ্নের সঙ্গে মিশে আছে। এখন হুট করে যদি আমরা সেই ঐতিহ্য বিলীন করি, তবে তার প্রভাব বহুমাত্রিক হবে। ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের পড়াশোনার কী হবে?শিক্ষক নিয়োগ ও গবেষণার মানদণ্ড—
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে হবে। এমফিল/পিএইচডিধারী এবং স্বনামধন্য জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশকারীদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে। শুরু থেকেই গবেষণা ফান্ড নিশ্চিত করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি শক্তিশালী গবেষণামুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ—
গবেষণা টেকসই করতে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতগুলো থেকে জানতে হবে তারা কোন কোন ক্ষেত্রে গবেষণা চায়। এতে স্থানীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। সরকার ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান উভয়ে সমানভাবে ফান্ড প্রদান করবে এবং গবেষণার ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ভাগাভাগি করবে। সেই ফেলোশিপে পিএইচডি সম্পন্নকারীরা সংশ্লিষ্ট শিল্পক্ষেত্রে চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবে। ধীরে ধীরে গবেষণার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, যা বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির পথে এগিয়ে নেবে।
কোনো গবেষণা ছাড়া, হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্ত কল্যাণের পরিবর্তে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে। তাই একেবারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার নয়, এক শ বার ভেবে দেখা জরুরি। ঐতিহ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও গবেষণার সমন্বিত রূপেই ঢাকা সরকারি সাত কলেজ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য মডেল হয়ে উঠতে পারে।
*লেখক: সুব্রত কুমার মল্লিক, সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান, ওএসডি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, পিএইচডি শিক্ষার্থী (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ), ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, যুক্তরাজ্য। [email protected]
আরও পড়ুনসাত কলেজ ঘিরে নতুন সংকট২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ত কল জ প এইচড অন র স কল জ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ১৩টি বিভাগে
গাজীপুর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েটে) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে প্রথম সেমিস্টারে পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ইনস্টিটিউটে যে প্রোগ্রামে ভর্তি করা হবে
১. সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম: এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, পিএইচডি।
২. ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম: এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, পিএইচডি।
৩. মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম: এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, পিএইচডি।
৪. কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম: এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, পিএইচডি।
৫. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম: এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, পিএইচডি।
৬.ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম: এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং।
৭. ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম: এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং।
৮. রসায়ন প্রোগ্রাম: এমএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
৯. গণিত প্রোগ্রাম: এমএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
১০. পদার্থবিজ্ঞান প্রোগ্রাম: এমএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
১১. ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম: পিজিডি, এমএসসি ইন ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট, মাস্টার্স ইন ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট।
১২. ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি প্রোগ্রাম: পিজিডি, এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং।
১৩. ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম: পিজিডি, এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং।
ভর্তির দরকারি তারিখ
১. ভর্তির নিমিত্তে আবেদন করার যোগ্যতা যাচাইয়ের আবেদন করার শেষ তারিখ: ৫ অক্টোবর ২০২৫।
২. ভর্তির নিমিত্তে আবেদন করার যোগ্যতা যাচাইয়ের ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের তারিখ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫।
৩. ভর্তির আবেদনের শুরু ও শেষ তারিখ: ১৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ২০২৫।
৪. প্রাথমিকভাবে বাছাই করা প্রার্থীদের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের তারিখ: ৬ নভেম্বর ২০২৫।
৫. ভর্তি পরীক্ষার তারিখ: ৯ থেকে ১১ নভেম্বর ২০২৫।
৬. ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫।
৭. ভর্তির তারিখ: ১৭ থেকে ২০ নভেম্বর ২০২৫।
৮. কোর্স রেজিস্ট্রেশনের তারিখ: ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০২৫।
৯. ক্লাস শুরুর তারিখ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫।
সাধারণ শর্তাবলি
১. ভর্তির বিস্তারিত তথ্য–সংবলিত প্রসপেক্টাস এবং অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এ পাওয়া যাবে।
২. দেশের সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রিধারীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভর্তির নিমিত্তে আবেদন করার যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ফি বাবদ তিন হাজার টাকা মাত্র পেমেন্ট–সম্পর্কিত নির্দেশনা অনুসরণ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হবে। যোগ্যতা যাচাইকরণ করার প্রাথমিক যোগ্যতা হিসাবে BNOF–এর ন্যূনতম মোট Credit-Hours সম্পন্ন থাকতে হবে।
৩. ভর্তির জন্য আবেদন করার ফি ১ হাজার ৭৫০ টাকা পেমেন্ট–সম্পর্কিত নির্দেশনা অনুসরণ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হবে।
৪. পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী Fellowship/Teaching/Research Assistantship প্রদান করা যেতে পারে।
৫. চাকরি করা প্রার্থী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতিসহ খণ্ডকালীন বা পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে এবং সে ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ডেপুটেশন বা ছুটির আদেশ বা NOC অনলাইনে আপলোড করতে হবে।
৬. ডুয়েটের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সমাপনী বর্ষের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শুধু গ্রেডশিট দাখিল বা অনলাইনে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার দিন সাময়িক সনদপত্র দাখিল করতে হবে।
৭. ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনয়নের জন্য প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এ–সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলি সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা ইনস্টিটিউট থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট: