রুমিন ফারহানাকে ঠেকাতে একজোট বিএনপির সাত মনোনয়নপ্রত্যাশী
Published: 28th, September 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির নেত্রী রুমিন ফারহানাকে ‘বহিরাগত’ উল্লেখ করে তাঁকে ঠেকাতে একজোট হয়েছে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাতজন নেতা। শনিবার দুপুরে আশুগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁয় তাঁরা বৈঠক করেছেন। সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দার বাইরে কাউকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চাইছেন না তাঁরা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রার্থী হতে চান সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রুমিন ফারহানাকে ঠেকাতে শনিবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ উপজেলার একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করেন বিএনপির ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া আরেকজন নেতা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। তাঁরা হলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শেখ মো.
বৈঠক উপস্থিত বিএনপি নেতারা বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপি থেকে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে কাজ করছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন দলের পাশে ছিলেন, কারাভোগ করেছেন। গত ১৬ থেকে ১৭ বছর নেতা-কর্মীদের নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন। তাঁরা সবাই আসনের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু এখান থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী রুমিন ফারহানা সরাইল ও আশুগঞ্জের বাসিন্দা কিংবা ভোটার নন। তাঁদের দাবি, দুই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্য থেকে দল যেন কাউকে মনোনয়ন দেয়।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর পক্ষে ছিলেন রুমিন ফারহানা। বিপক্ষে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী খালেদ হোসেন মাহবুবসহ (শ্যামল) স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মী।
‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই মাঠে নেমেছিলেন রুমিন ফারহানা। এখনো মাঠে আছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে এলাকায় এসে গণসংযোগসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তবে দলের ভেতরে একটি অংশ তাঁকে ‘বহিরাগত’ হিসেবে মনে করেন। তাঁরা এ আসনে রুমিন ফারহানাকে দল মনোনয়ন দিক, এটা চান না।
রুমিন ফারহানার বাবা ভাষাসংগ্রামী অলি আহাদ ছিলেন বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে রুমিন ফারহানা এখন সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিজয়নগর উপজেলা সদর উপজেলার অধীন ছিল। ২০১২ সালে সদর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়নসহ ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে বিজয়নগর উপজেলার যাত্রা শুরু হয়। আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারিত হওয়ায় ‘বহিরাগত’ বলে তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রচারণা ছিল, তা কেটে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জানতে চাইলে সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আশুগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজ করেছেন। তাঁরা কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছেন। তাঁরা এ আসনের স্থায়ী বাসিন্দার বাইরে কাউকে চান না। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক, তিনি যেন দুই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন। বিষয়টি তাঁরা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের জানাবেন। রুমিন ফারহানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি সরাইল-আশুগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা নন। ১৭ বছর দুর্দিনে যাঁরা দলের পাশে ছিলেন, দল যেন তাঁদের মূল্যায়ন করে।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা ১৬-১৭ বছর দলের জন্য কাজ করেছেন, দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন, কারাবরণ করেছেন—তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে যেন দল মনোনয়ন দেয়। আপাতত দুই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের বাইরে কাউকে চাইছেন না। তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁকে তাঁরা মেনে নেবেন। রুমিন ফারহানার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা কাউকে ইঙ্গিত করছি না। তবে আমি যত দূর জানি, তিনি সরাইল-আশুগঞ্জের বাসিন্দা নন। এমনকি ভোটারও নন।’
তবে সরাইল উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, রুমিন ফারহানা সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরের ভোটার। বিজয়নগরের বুধন্তি তাঁর আদি বাড়ি। বিজয়নগরের দুটি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তাই তাঁকে আর কোনোভাবেই বহিরাগত বলা যাবে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জয়নগর উপজ ল র ম ন ফ রহ ন ক উপজ ল র স থ য় ব র হ মণব ড় য় ব এনপ র স ল উপজ ল আসন র স কর ছ ন ২ আসন
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে আট ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার সমর্থনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার এসব কর্মসূচিকে স্থানীয় লোকজন ‘পাল্টাপাল্টি শোডাউন’ হিসেবে মনে করছেন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মতবিনিময় সভা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে ৫ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।
আরিফুল হকের এমন ঘোষণার পর ‘স্থানীয় প্রার্থী’ হিসেবে আসনটিতে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। একই দাবিতে সভা–সমাবেশ করছেন জেলা বিএনপির আরেক উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের অনুসারীরাও।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি। কোনো দিন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তে আমি আপনাদের খেদমতে এসেছি। কারণ, বিগত ১৭ বছর যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, এর ছিটেফোঁটাও গোয়াইনঘাটে লাগেনি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’
সভা শেষে উপজেলা সদরে আরিফুল হকের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। পরে তিনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব রব চৌধুরী ও ইকবাল আহমদ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস শুকুর ও কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপির একাংশ। মিছিল থেকে সিলেট-৪ আসনে আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা ‘লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল’, ‘হাকিম ভাই হাকিম ভাই, হাকিম ছাড়া উপায় নাই’, ‘মানি না মানব না, হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
যোগাযোগ করলে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনে জামায়াত শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বিপরীতে জয় পেতে হলে বিএনপিকে একজন “স্থানীয় ও শক্তিশালী” প্রার্থী দেওয়া উচিত। যেহেতু আমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা, তাই স্থানীয়রা আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল করছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’
স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আরিফুল, হাকিম ও হেলাল ছাড়াও সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন দলটির জেলা কমিটির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।