সার নীতিমালার খসড়ায় সংশোধন দাবি ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের
Published: 29th, September 2025 GMT
নতুন সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ)। নতুন খসড়ার কিছু সিদ্ধান্ত বিতরণ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। সেই সিদ্ধান্ত সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জেলা শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরা হয়।
আরো পড়ুন:
সার খাতে গ্যাসের দাম পুনর্নির্ধারণে গণশুনানি ৬ অক্টোবর
বিএনপি নির্বাচিত হলে কৃষকদের জন্য ফারমার্স কার্ড করা হবে: টুকু
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকবর হোসেন নতুন নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও খসড়ার কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ইউনিয়নভিত্তিক ৩ জন করে সার ডিলার নিয়োগের যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, তা বিতরণ ব্যবস্থায় সুফল আনবে না। গত ৩০ বছর ধরে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নিরবচ্ছিন্ন সেবাদানকারী ডিলারদের বিপরীতে নতুন ডিলারদের অবকাঠামোগত ঘাটতি ও আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা থাকবে।’’ এই কারণে তিনি ওয়ার্ড পর্যায়ে ডিলার নিয়োগের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
খুচরা সার বিক্রেতাদের বিলোপের উদ্যোগ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন আকবর হোসেন। তার মতে, ‘‘এই খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকেরা বিভিন্ন সুবিধা পান। তাদের বিলোপ করা হলে গভীর শূন্যতা দেখা দিবে। এ সংকট নিরসনে বিএফএ’র সঙ্গে গ্রহণযোগ্য সমন্বয় জরুরি।’’
সংবাদ সম্মেলনে আকবর হোসেন ডিলারদের পরিবহন ও কমিশন খরচ বাড়ানোর দাবি জানান। লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘জ্বালানি তেলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহুগুণ বাড়ার পরও পরিবহন খরচ ও বিক্রয় কমিশন বৃদ্ধি হয়নি।’’ তিনি শিগগির কমিশন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির দাবি জানান।
ভর্তুকি মূল্যের সারের ওপর ৫ শতাংশ উৎস কর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাতিলের আহ্বান জানান তিনি। বাণিজ্যিক সংগঠনটির সভাপতি সতর্ক করে বলেন, ‘‘এই কর বহাল থাকলে সারের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।’’
মাঠ পর্যায়ের মতামত গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, ‘‘সার ডিলার নীতিমালা-২০০৯ এর আলোকে নীতিমালা-২০২৫-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা ও বিএফএ’র প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণ করা হোক। সকলের মতামত নিয়ে একটি যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব।’’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সভাপতি কাজী সেতাউর রহমান, সহ-সভাপতি দানিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা।
ঢাকা/শিয়াম/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ আকবর হ স ন ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন: প্রধান উপদেষ্টা
দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংকট নিরসনে সাত দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
তিনি বলেন, “অর্থায়ন কমে আসছে। একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা।”
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, “গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই। আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মক ঘাটতিতে ভুগছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সমাধানও সেখানেই নিহিত।”
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় জিম্মি করে রাখা উচিত নয়।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার তুলনায় প্রত্যাবাসনে অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা বরাবরই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চেয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ সংকটের শিকার। আমাদের সামাজিক, পরিবেশগত ও আর্থিকভাবে বিপুল চাপ সহ্য করতে হচ্ছে।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ—যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য—বিবেচনায় দেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।”
টেকসই সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাত দফা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেন—
প্রথমত, রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু।
তৃতীয়ত, রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় এবং তা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির জন্য আস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ।
পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
ষষ্ঠত, জবাবদিহি ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
সপ্তম, মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য অপেক্ষায় রাখার সামর্থ্য রাখে না।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ আমাদের সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”
ঢাকা/ইভা