এশিয়া কাপের ব্যর্থতার পর একটি সাফল্যের প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। আফগানিস্তানকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে সে সাফল্য খুঁজে পেল। তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিল বাংলাদেশ।
আরো পড়ুন:
সিরিজ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৮
দ. আফ্রিকাকে লজ্জায় ডুবিয়ে ইংল্যান্ডের ঝলমলে শুরু
শারজাতে পরপর দুইদিন দুই ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। শুক্রবারের লড়াইটা জমেছিল আরেকটু বেশি। ১৪৮ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ ৫ বল ও ২ উইকেট হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে৷ কিন্তু শেষটা ছিল চরম রোমাঞ্চকর।
১২ বলে ১৯ রানের জয়ের সমীকরণে সোহান ও শরিফুল ছিলেন প্রচন্ড চাপে। কিন্তু নুরের করা ১৯তম ওভারে ১৭ রান তুলে জয়ের কাজটা সহজ করে ফেলে বাংলাদেশ।
সোহান পর পর দুই ম্যাচে দলকে উদ্ধার করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিনিশার হিসেবে তিনি পরিচিত। দলে ফিরে সেই ভূমিকাতেই অবতীর্ণ। ৩টি ছক্কা ও ১টি চারে ২১ বলে ৩১ রানের ইনিংসটি ছিল মহামূল্যবান৷ পায়ের নিচে মাটি শক্ত করার প্রয়োজন ছিল তার৷ দুইটি ইনিংসই তার পক্ষে কথা বলবে।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শতরানের বেশি জুটি গড়া তানজিদ ও পারভেজ আজ শুরুতেই ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ২ রানের বেশি করতে পারেননি কেউ। ২টি দৃষ্টিনন্দন ছক্কা ও ১টি চারে সাইফ আশা দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু মুজিবের বলে ইনসাইড আউট শট খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন। ১৮ রানে থেমে যায় তার ইনিংস। ২৪ রান তুলতেই ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের।
সেখান থেকে প্রতি আক্রমণে গিয়ে অধিনায়ক জাকের ও শামীম অনায়াসে রান তোলেন। কোন চাপ না নিয়েই ৩৭ বলে ৫৬ রান যোগ করেন। তাতে লক্ষ্য অনেকটা নাগালে চলে আসে।
ওখানে রশিদ খানকে একটু সতর্ক হয়ে খেললেই অর্ধেক কাজ হয়ে যেত৷ জাকের লম্বা সময় পর ব্যাটে রান পেলেও রশিদকে সামলাতে পারেনি। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ২৫ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩২ রান করেন।
ভরসা হয়ে উঠেছিলেন শামীম। নতুন ব্যাটসম্যান সোহানকে নিয়ে শামীম প্রতিরোধ করেছিলেন ভালোভাবেই। চার-ছক্কা আসছিল তাদের জুটিতে৷ কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাসী হতে গিয়েই শামীম ডেকে আনেন বিপদ। নূর হোসেনকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন শামীম৷ ২২ বলে তিনটি চার ও দুইটি ছক্কায় ৩৩ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান৷
এরপর ম্যাচে আবারো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস। নাসুম, সাইফুদ্দিন, রিশাদ দ্রুত সাজঘরে ফেরেন৷ ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার এই মিছিল এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখেছেন সোহান। তবে বিচলিত হননি৷ নবীকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা উড়িয়েছেন চোখের পলকে। ১২ বলে ১৯ রানের লড়াইয়ে নুরকে সুইপ করে যে ছক্কা উড়িয়েছেন তা স্বাগতিকদের মনোবল নষ্ট করে দেয়৷
এরপর শরিফুল একটি ডাবল, একটি চারে ম্যাচ নাগালে নিয়ে আসেন। ১৭ রান তুলে হাসি ফোটান ড্রেসিংরুমে। শেষ ওভারের প্রথম বলে চার মেরে জয়সূচক রানটাও নেন তিনি৷ ৬ বলে ১১ রান করেন শরিফুল। ৷
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানিস্তানের শুরুটা একটুও জমেনি। পাওয়ার প্লে'তে উইকেট না হারিয়ে রান তুলেছিল ৩৫। মোস্তাফিজের শেষ ওভার বাদে রানের চাকায় লাগাম টেনে ধরেছিলেন শরিফুল ও নাসুম। নিজের প্রথম ওভারে মোস্তাফিজ ১টি করে চার ও ছক্কা হজম করেছিলেন।
অষ্টম ওভারে রিশাদ হোসেন বোলিংয়ে এসে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন। বাহাতি ব্যাটসম্যান সেদিকুল্লাহকে ফেরানোর আগে দুই ছক্কা অবশ্য হজম করেছিলেন রিশাদ। ২৩ রান করেন তিনি। ইনিংসের অর্ধেকতম ওভারে তাদের রান ৬৯।
সেখান থেকেও আফগানিস্তানকে খুব বেশি দূরে যেতে দেননি বোলাররা৷ নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়েছেন তারা। সঙ্গে আটসাট বোলিংয়ে চাপে রেখেছিলেন ব্যাটসম্যানদের।
দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করা ইব্রাহিম জাদরানকে ফেরান নাসুম৷ শরিফুল ৩০ রানে বোল্ড করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। শেষ দিকে দারউইস, আজমতউল্লাহ উমারজাই ও মোহাম্মদ নবীর অবদানে লড়াই করার পুঁজি পায় আফগানিস্তান৷
আজমতউল্লাহ ১৭ বলে ১৯ রান করেন ১ ছক্কায়। দারউইস ৯ বলে ২ ছক্কায় ১৪ রান করেন। অভিজ্ঞ নবীর ব্যাট থেকে ১২ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২০ রান আসে।
রিশাদ ৪৫ ও নাসুম ২৫ রানে ২টি করে উইকেটে নেন। শরিফুল ১৩ রানের ১ উইকেট নেন। সাইফুদ্দিন উইকেট না পেলেও ২২ রানের বেশি দেননি। ফর্মে থাকা মোস্তাফিজ বাজে দিন কাটিয়েছেন। ৪০ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট পাননি কোন।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
ভারতকে প্রথমে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা। স্পিনাররা ইডেনের ২২ গজকে স্রেফ রণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিল। বল সারাদিন ছোবল দিল।
অসমান বাউন্সে প্রতিকূল উইকেট। যেখানে সারাদিন ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল লেগেছিল। কলকাতার নন্দনকাননে ১৫ উইকেটের দিন দেখল সমর্থকরা। যার ১২টিই নিয়েছেন স্পিনাররা।
দিন শেষে হাসিটা ফুটেছে ভারতের মুখে। ভারত ১ উইকেটে ৩৭ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছিল। শনিবার দ্বিতীয় দিনে তাদের ইনিংস আটকে যায় ১৮৯ রানে। এতে ৩০ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা।
দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নেমেই এলোমেলো হয়ে যায় কুলদীপ যাদব ও রাভীন্দ্র জাদেজার বোলিংয়ে। দ্বিতীয় দিন শেষে তাদের স্কোরবোর্ডের চিত্র এরকম, ৯৭/৭। হাতে ৩ উইকেট নিয়ে তাদের লিড কেবল ৬৩ রান।
জাদেজা ৪ ও কুলদীপ পেয়েছেন ২ উইকেট। অক্ষরের শিকার ১টি। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া জসপ্রিম বুমরাহ এখন পর্যন্ত উইকেটশূন্য।
প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ২৯ ও করবিন বোস ১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। আউট হওয়া ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেবল রায়ান রিকেলটন ও উইয়ান মুল্ডার দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেন। দুজনই ১১ রান করে করেন।
এর আগে, দিনের শুরুতে ভারত হোঁচট খায় গিলকে হারিয়ে। ঘাড়ের চোটে মাঠ ছেড়ে গিল উঠে যান ৪ রানে। এরপর যারা এসেছেন কেউ ভরসা হয়ে উঠতে পারেননি। রিশাভ পান্ত ও জাদেজা ২৭ রানের দুটি ইনিংস খেলে। সুন্দরের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। এছাড়া ধ্রুব জুরেল ১৪ ও অক্ষর পাটেল ১৬ রান করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন সাইমন হারমার। ৩ উইকেট পেয়েছেন মার্কো জানসেন।
ইডেনের ফাটল ধরা ২২ গজে প্রথম দুদিনেই ২৬ উইকেট নেই। সামনে কী অপেক্ষা করছে বোঝাই যাচ্ছে।
ঢাকা/ইয়াসিন