একই দিনে ২ শিক্ষার্থীকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান চবি
Published: 4th, October 2025 GMT
আকস্মিক দুর্ঘটনায় একই দিনে মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই মেধাবী শিক্ষার্থী। তাদের অকাল মৃত্যুতে শোকাভিভূত হয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
ওই শিক্ষার্থীরা হলেন, সোহান আল মাফি ও দেবপ্রিয় সুপ্ত। সোহান বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও চবি আবৃত্তি মঞ্চের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। ঢাকার মিরপুরে তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
আরো পড়ুন:
আহমদ রফিকের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার শোক
সাংবাদিক শহীদ রানার বাবার ইন্তেকাল
অন্যদিকে, দেবপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যান্ড ইস্যুরেন্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়।
জানা গেছে, সোহান ও তার বন্ধু শাকিল শুক্রবার (২ অক্টোবর) সকালে ঢাকা থেকে লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মিনঝিরি সাদা পাথর এলাকায় অবস্থিত হোয়াইট পিক স্টেশন রিসোর্টে ওঠেন। পরে দুপুর দেড়টার দিকে তারা রিসোর্টের পাশের মাতামুহুরি নদীতে গোসলে নামেন। এ সময় শাকিল কূলে উঠতে পারলেও প্রবল স্রোতের টানে তলিয়ে যান সোহান।
এদিন নদীতে সোহানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরদিন শুক্রবার বেলা ১১টায় মাতামুহুরি নদী থেকে সোহানের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন।
ফায়ার সার্ভিস লামা স্টেশনের সাব অফিসার মো.
এদিকে, দেবপ্রিয় সুপ্ত দুর্গাপূজোর বন্ধে নানাবাড়ি বেড়াতে যান। সেখানে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) পূজা শেষ করে ফেরার পথে অসুস্থতা অনুভব করায় প্রথমে তাকে মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সুপ্ত সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুপ্ত।
সোহানকে ঘিরে ভালোলাগার স্মৃতি ফেসবুকে তুলে ধরেছেন তারই লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক কায়সার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি লিখেছেন, “শিক্ষকদের কিছু প্রিয় শিক্ষার্থী থাকে। সোহান ছিল আমার এ রকম একজন ছাত্র। সামনের বেঞ্চেই বসতো। নিয়মিত ক্লাস করত ভদ্র ছেলেটা। সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছিল সমান পারদর্শী। ক্যাম্পাসে আবৃত্তি নিয়ে কাজ করত। এমন একটা শিক্ষার্থীকে হারিয়ে ফেললাম চিরতরে।”
লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, “সোহান আমাদের বিভাগ থেকে গেল বছরে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করে বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত ছিল। তার আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। সোহান বিভাগে একজন ভালো ও নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। সবসময় ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে বসতো। তার জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা তার পরকালীন মঙ্গল কামনা করছি।”
ব্যাংকিং অ্যান্ড ইস্যুরেন্স বিভাগের সভাপতি মো. আবু বকর বক্কর সিদ্দিক বলেন, “পূজার কার্যক্রম শেষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় তাকে ঢামেকে নেওয়া হয়। সেখানে দুপুরের দিকে সুপ্ত মারা গেছে।”
তিনি বলেন, “ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয়ে সে মারা গেছে বলে আমাদের ধারণা। আমাদের বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থী গতকালই (শুক্রবার) সেখানে গেছেন। এখনো তারা সেখানে আছেন। সুপ্তের মৃতদেহ সৎকার করা হয়েছে।”
সুপ্তের স্মৃতিচারণে করে তিনি বলেন, “সে পড়াশোনাসহ সবকিছুতে ভালো একজন ছাত্র ছিল। সে ভালো গান গাইত। বিশেষ করে বিভাগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে সুপ্ত নিয়মিত অংশ নিত। একজন সংস্কৃতিবান শিক্ষার্থী ছিল সে। গত ২৫ সেপ্টেম্বরও সে ক্লাস করেছিল।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইদুল ইসলাম শামীম বলেন, “একইদিনে দুই চবিয়ানের অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর। গত দেড় বছরে জুলাই আন্দোলন, আত্মহত্যা, অসুস্থতা ও সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের প্রায় ১২-১৩ জন ভাই-বোন মারা গেছেন। জাতিকে পথ দেখাবার অগ্রনায়কদের এরকম মৃত্যুতে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, “চবির এ দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অপূরণীয় ক্ষতি কখনো পূরণ হবার নয়। যেকোনো মৃত্যুই আমাদের ব্যথিত করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যেখানে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূমিকা রাখবে, সেখানে তাদের অকালে ঝরে যাওয়াটা আমাদের ভারাক্রান্ত করে তুলে। আমরা এ দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক রব র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
সিদ্ধিরগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৭ কেজি গাঁজাসহ হোসেন মনা (৪২) নামে এক চিহ্নিত ও একাধিক মামলার আসামি এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১ অক্টোবর) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউস গেট এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত হোসেন মনা সিদ্ধিরগঞ্জ উত্তর আজিবপুর বাগানবাড়ী এলাকার মৃত আঃ লতিফ স্বর্ণকারের ছেলে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে থানা এলাকায় ওয়ারেন্ট তামিল ও মাদক উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে ডিউটি করছিলেন তিনি।
এমন সময় গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল কাঠপট্টি এলাকায় মনির হোসেনের শাহ-দেওয়ানবাগী ফার্নিচার মার্ট নামক দোকানের সামনের পাকা রাস্তার ওপর একজন মাদক ব্যবসায়ী বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ গাঁজা নিয়ে অবস্থান করছে।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক কারবারি হোসেন মনা কৌশলে পালানোর চেষ্টা করে।
পুলিশ সদস্যরা তাকে ধাওয়া করে আটক করে। পরে পবর্তীতে তার হাতে থাকা একটি প্লাস্টিকের বস্তা তল্লাশি করে ৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত গাঁজার আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত হোসেন মনার বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যা মামলাসহ পূর্বেও একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনূর আলম এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন মাদকের বিরুদ্ধে আমরা 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় এই সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি এবং তার বিরুদ্ধে পূর্বেরও একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমরা তার সহযোগীদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
সিদ্ধিরগঞ্জে মাদকমুক্ত করতে আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।