রাজধানীর ১৯০ বছরের পুরোনো ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকদের বসার কক্ষে একজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ চলছিল (১১ সেপ্টেম্বর)। তখন ক্লাস শেষ করে এলেন আরেকজন শিক্ষক। ওই শিক্ষক বললেন, তিনি একই সময়ে দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছেন। বাংলা ও কৃষিশিক্ষার। তবে তিনি হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক। শিক্ষকসংকটের কারণেই তাঁকে আরেক বিষয়ের ক্লাস নিতে হচ্ছে।

পাশে বসে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক। তিনি যোগ করলেন, তাঁকেও নিজের বিষয়ের পাশাপাশি শারীরিক শিক্ষার ক্লাস নিতে হয়। দিনে পাঁচ-ছয়টি করে সপ্তাহে প্রায় ২৫টি ক্লাস নিতে গিয়ে ভালোভাবে পড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলটি সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত। এটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই স্কুলে গিয়ে জানা যায়, সেখানে দুই পালায় শিক্ষার্থী প্রায় দুই হাজার। শিক্ষক আছেন মাত্র ৩৯ জন। শিক্ষকের পদসংখ্যা ৫৩। ১৪টি খালি। গড়ে ৫১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক। শিক্ষকেরা পড়ানোর চাপে হিমশিম খান। ক্লাসে মানসম্মত পড়াশোনা করানো কঠিন হয়ে পড়ে।

বিদ্যালয়টির দুজন শিক্ষার্থী জানাল, তারা নিয়মিত কোচিং ও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে। একজন বলল, সে বাসায় দুজন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে। খরচ মাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা।

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের এ চিত্র আসলে পুরো দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিচ্ছবি; বরং কোথাও কোথাও পরিস্থিতি আরও খারাপ। শিক্ষকের অভাব, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট এবং দুর্বল পাঠদানের কারণে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। এতে পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে অনেকে।

সর্বশেষ বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৩ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার ৩৩ শতাংশ।

সচ্ছল মা-বাবা সন্তানদের বাসায় গৃহশিক্ষক রেখে পড়াতে পারেন। কোচিং-বাণিজ্য রমরমা। মধ্যম আয়ের মা-বাবা সন্তানদের কোচিং ও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াতে গিয়ে বড় ধরনের আর্থিক চাপে পড়ছেন। নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা কোচিংয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না, বাসায় গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্য পরিবারগুলোর নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো করতে পারছে না।

অবশ্য সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুলের পেছনে জনগণের করের টাকা ঠিকই খরচ হচ্ছে। বেসরকারি বিদ্যালয়ে উচ্চ হারে বেতন ও ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পড়াশোনার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া এবং কোচিংয়ের এই প্রবণতা কেবল ঢাকা নয়, সারা দেশে মোটামুটি একই। ময়মনসিংহের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তান সকালে কোচিংয়ে পড়ে। তারপর বিদ্যালয়ে যায়। এরপর বিকেলে আবারও কোচিং। সন্ধ্যায় বাসায় আসেন গৃহশিক্ষক। তিনি বলেন, খরচ অনেক। কিন্তু কিছু করার নেই। ভালো পড়াশোনা তো করাতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও বাদ দিয়েছে শিক্ষাকে। প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে পরামর্শ দিতে শিক্ষাবিদ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদকে প্রধান করে কমিটি হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি সামান্যই।প্রথম আলো ফাইল ছবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন শ ক ষ সন ত ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সহকারী শিক্ষকের বেতন কম্পিউটার অপারেটরের সমান, কলেজ অধ্যাপকের বেতন যুগ্ম সচিবেরও নিচে

শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড কম্পিউটার অপারেটরের স্কেলের সমান। আর সরকারি কলেজের অধ্যাপকের স্কেল একজন যুগ্ম সচিবেরও নিচে। এটি  মনে রাখতে হবে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এসব কথা বলেন। আজ রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের সম্মান জানাতে আজ সারা বিশ্বেই পালিত হচ্ছে দিবসটি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। অবশ্য বাংলাদেশে এমন সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে, যখন বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকেরা আর্থিক ও মর্যাদার দাবিতে নানা রকমের আন্দোলন করছেন।

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশি শিক্ষকের নেই উচ্চতর ডিগ্রি০৪ অক্টোবর ২০২৫

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শিক্ষা ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে আমরা দেখব, সবচেয়ে নিচে রয়েছেন আমাদের প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষকেরা। তাঁরা কত গ্রেডে বেতন পান? ১৩ (জাতীয় বেতনস্কেলের ১৩তম গ্রেড)। অর্থাৎ একজন কম্পিউটার অপারেটরের স্কেলে...। এই হচ্ছে তাঁর সম্মান। উপজেলা হেড কোয়ার্টারে যেখানে তিনি বেতন পান, সেই হিসাবরক্ষক, তাঁর স্কেল হচ্ছে ১২তম। তাঁকে স্যার ডাকার মতো অবস্থা।’

অন্যান্য স্তরের শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘সরকারি কলেজের অধ্যাপকের স্কেল কত, চার (চতুর্থ গ্রেড)। অর্থাৎ একজন যুগ্ম সচিবেরও নিচে অবস্থান করেন। আমরা এই মর্যাদা দিচ্ছি শিক্ষকদের। সুতরাং শিক্ষকদের যদি সত্যি মর্যাদা দিতে হয়, তাহলে শুধু মুখের কথায় চিড়া ভিজবে না। এই কথাটা আমাদের মনে রাখতে হবে।’

আরও পড়ুনপ্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পেলেন ১০ জন১৫ ঘণ্টা আগে

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ১২ গুণী শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সিআর আবরার)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের মহাসচিব সালিম এম. আল মালিক, ইউনেসকোর ঢাকা অফিসের প্রধান সুসান ভাইজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিগ ব্যাশ, পন্টিং প্রেম ও হোবার্ট হারিকেনস নিয়ে রিশাদের উচ্ছ্বাস
  • রংপুরে গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, একজন গ্রেপ্তার
  • ভোগান্তির আরেক নাম ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • বন্দরে যোগাযোগ মাধ্যমে সম্মানহানি, থানায় অভিযোগ  
  • একজন ভালো শিক্ষক পাওয়া এবং না পাওয়াই হয়তো জীবনের রেখা অনেকটাই নির্ভর করে
  • আমি ব্যর্থ হয়েছি: বাঁধন
  • নাটোরে পাখি শিকার করতে নিষেধ করায় গুলি, একজন আহত
  • আলোচনায় নুহাশ হুমায়ূনের ফেসবুক পোস্ট
  • সহকারী শিক্ষকের বেতন কম্পিউটার অপারেটরের সমান, কলেজ অধ্যাপকের বেতন যুগ্ম সচিবেরও নিচে