ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসে ব্যালট ছাপানোর দাবি
Published: 6th, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনার দাবি তুলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে কঠোর নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যালট ছাপানোর দাবিও তোলা হয়েছে ওই স্মারকলিপিতে।
আজ সোমবার দুপুরে প্যানেলের প্রার্থীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিনের হাতে এই স্মারকলিপি তুলে দেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে প্রতি প্যানেল থেকে অন্তত একজন করে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যও পোলিং এজেন্ট রাখার সুযোগ দিতে হবে। ভোট প্রদান ও গণনা পর্যবেক্ষণের জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিটি ব্যালটে সিরিয়াল নম্বর যুক্ত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স রাখতে হবে।
স্মারকলিপিতে ভোট দেওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা, নারী প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনের দিন শহর থেকে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাস ও ট্রেনের ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনস্মারকলিপি দেওয়ার পর বেলা দুইটায় চাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা। এতে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী সুদর্শন চাকমা, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী জাকিরুল ইসলাম, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক প্রার্থী মোশরেফুল হক ও পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আকিব।
লিখিত বক্তব্যে সুদর্শন চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন না হলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এর অস্বচ্ছতা থেকে যে অভিজ্ঞতা লব্ধ হয়েছে, তার ভিত্তিতে প্রশাসনের কাছে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য চাকসু নির্বাচনের জন্য আরও স্পষ্ট ও জোরদার ভূমিকা দাবি করছি।’
এজিএস পদপ্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ১০টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বৈচিত্র্যের ঐক্যের প্রত্যাশা, প্রশাসন তাদের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ যথা শিগগিরই প্রকাশ করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, ‘প্রশাসন বলেছে, আমাদের সব দাবি যথার্থ, তবে দাবিগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এরপর আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, স্বচ্ছতার খাতিরে কার কাছ থেকে ওএমআর নেওয়া হচ্ছে, সেটি যেন অন্তত জানানো হয়, যাতে দীর্ঘদিন পর হওয়া এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ক্যাম্পাসের কলার ঝুপড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা করা হয়। প্যানেল ঘোষণা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রোনাল চাকমা। তখন জানানো হয়, প্যানেলে রয়েছে সাতটি রাজনৈতিক সংগঠনের ১১ পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও পাঁচ নারী শিক্ষার্থী।
১৫ অক্টোবর তিন দশক পর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে হল সংসদ নির্বাচনও। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী চাকসু ও হল সংসদে চূড়ান্ত প্রার্থী আছেন ৯০৭ জন। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন ও হল সংসদ নির্বাচনে ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম রকল প পদপ র র থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য না হলে সনদ বাস্তবায়নে একাধিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তাব দেবে কমিশন: আলী রীয়াজ
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে একাধিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রস্তাব দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ রোববার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দিনের আলোচনার শুরুতে এসব কথা বলেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এ আলোচনা হয়।
আজ মূলত সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য কতটা কমেছে, তা শুনতে চাইবে ঐকমত্য কমিশন। দলগুলো চাইলে বিশেষজ্ঞদের সুনির্দিষ্ট ও পরিমার্জিত পরামর্শগুলোও প্রস্তাব আকারে তুলে ধরবে কমিশন।
৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দলগুলোর। আজ আলোচনা শেষ করার কথা রয়েছে। তবে শেষ করতে না পারলে আর এক দিন আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দলগুলোর স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে চায় কমিশন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, এই ছয়টি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি এটাকে একটি জায়গায় আনা যায়। উপস্থিত ৩০টি রাজনৈতিক দল যদি একটি প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সানন্দে সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারব। আমরা বলব, সেই একটি প্রস্তাব আছে, এটা বাস্তবায়নের পথ; এভাবে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিবেচনা করতে পারেন।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বরের আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছিল, সেগুলো বিশেষজ্ঞদের জানিয়েছেন বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি। তিনি বলেন, তারই ভিত্তিতে তাঁরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের আগের অবস্থানকে ব্যাখ্যাও করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে একমত হওয়ার জায়গা তৈরি হলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজতর হবে। দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব হবে।’ এসব বিষয় নিয়ে কমিশন সকালে প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বলেও জানান আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টা সব সময় এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াসহ বিশেষত সনদকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে সবার স্বাক্ষরিত রাজনৈতিক দলিলে পরিণত করা যায় কি না, সে বিষয়ে তাঁদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
১৫ অক্টোবরের আগে এই প্রক্রিয়া শেষ করার ওপর জোর দেন আলী রীয়াজ। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক ব্যস্ততা আছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে। আপনারা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন, সেগুলো যেন বাধাবিঘ্ন না হয়, সেটা আমরা করতে চাই। তা ছাড়া মেয়াদের দিক থেকে ১৫ অক্টোবরই মেয়াদ শেষ হবে। তারও আগে আমরা এটা শেষ করতে চাই।’
রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলগত বিবেচনার বাইরে গিয়ে সম্মিলিতভাবে কোনো প্রস্তাব দিতে পারে, সেটা নিয়ে কমিশন আলাপ–আলোচনা করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, তারই পটভূমিতে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যদি আজকে ৩০টি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় আসে, তাহলে আমরা আর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবই না। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসার, তাহলে সেটা আমরা বসব।’
বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।