বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। দুই দেশের আর্থিক খাত একসঙ্গে কাজ করলে অর্থ পাঠানোর এই খরচ কমানো সম্ভব।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে সৌদি আরব-বাংলাদেশ ব্যবসা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই ব্যবসা সম্মেলনের আয়োজন করেছে সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই)।

অনুষ্ঠানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে আন্তদেশীয় বিনিয়োগ ও অর্থ লেনদেন দুটি বড় আলোচ্য বিষয়। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস সৌদি আরব। এটি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহেরও সবচেয়ে বড় উৎস।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সৌদি আরব থেকে প্রবাসীরা তাঁদের রেমিট্যান্স পাঠাতে ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ দেন। এটি তাঁদের জন্য বিশাল চাপ। সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের আরও দক্ষ ও কম খরচে অর্থ স্থানান্তরের ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ জন্য দুই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘এখন আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের পথে অগ্রসর হচ্ছি। ফলে এই অঞ্চলে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অসংখ্য সম্ভাবনা রয়েছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত সহনশীল রাষ্ট্র—প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, বৈশ্বিক নানা ধাক্কা সত্ত্বেও আমাদের প্রবৃদ্ধি কখনোই নেতিবাচক হয়নি। গত ৩০ বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি কখনোই সাড়ে তিন শতাংশের নিচে নামেনি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, কোভিড কিংবা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা—কোনো কিছুই আমাদের অর্থনৈতিক গতিকে থামাতে পারেনি। এ কারণে আমি সৌদি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন বাংলাদেশকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করেন।’

গভর্নর আরও বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অনেক পুরোনো ও দৃঢ়। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও গভীরতা আনা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমরা এখনো যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করিনি। যেমন বাণিজ্য, অর্থনীতি, আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ও শ্রমবাজারের উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে কাজ করা প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে, তবে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা চাই সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের জীবন আরও উন্নত হোক, তাঁদের আয় বৃদ্ধি পাক। অন্যদিকে, সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) মতো বিশাল তহবিল থেকে বাংলাদেশও যেন বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ পায় সেই অনুরোধ থাকবে।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনিই প্রথম সরকারি পর্যায়ে প্রবাসী শ্রমিক পাঠাতে চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠানো আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে বেসরকারি উদ্যোগে শ্রমিক যেতেন। বর্তমানে সৌদি আরব থেকে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে, তা প্রশংসনীয়। তবে দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা গেলে এই পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,  ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বড় তহবিল প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য হলো পুঁজিবাজারকে ‘ফ্রন্টিয়ার ইকোনমি’ থেকে ‘ইমার্জিং মার্কেট’-এ উন্নীত করা। এ ক্ষেত্রে সৌদি তহবিল বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া শুধু জ্বালানি খাত বা বস্ত্র খাতেই নয়, আরও বহু খাতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব আমাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু। তবে দুঃখজনকভাবে গত ৫৩ বছরে দুই দেশের মধ্যে কোনো যৌথ ব্যবসায়ী চেম্বার গড়ে ওঠেনি। অবশেষে আমরা সেটি করতে পেরেছি৷ এখন আমরা বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, তৈরি পোশাক, কৃষি পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, দক্ষ নার্স ও শ্রমিক রপ্তানি বাড়াতে পারি। বিপরীতে বাংলাদেশে অবকাঠামো, সরবরাহ, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে সৌদি বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করব।’

সম্মেলনের একটি অংশে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা বিশাল। তবে এখনো বাংলাদেশ বা সৌদি আরব কেউই একে অপরের শীর্ষ পাঁচ বাণিজ্য অংশীদারের তালিকায় নেই। ফলে পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ অনেক। বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাকশিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া পণ্য, জুতা, প্লাস্টিক পণ্য, ওষুধ প্রভৃতি পণ্য সৌদি আরবে রপ্তানি করতে পারে। অন্যদিকে সৌদি আরব খনিজ ও রাসায়নিক পণ্য, এলএনজি, সার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সরবরাহ খাতে রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়াতে পারে।

মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে মানবসম্পদ ও দক্ষতা উন্নয়ন আরেকটি বড় ক্ষেত্র। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২১ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক। সৌদি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ হার বাড়ানো গেলে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন আরব থ ক প রব স আম দ র ক জ কর র বল ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

হোয়াটসঅ্যাপে কারিগরি ত্রুটির সন্ধান, তথ্য ফাঁসের ঝুঁকিতে ছিলেন ব্যবহারকারীরা

হোয়াটসঅ্যাপে বড় ধরনের কারিগরি ত্রুটির সন্ধান পেয়েছেন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় ও এসবিএ রিসার্চের সাইবার নিরাপত্তা গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, অ্যাপটির একটি গুরুতর দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে গোপনে ব্যবহারকারীদের প্রোফাইলে থাকা সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। এই ত্রুটির কারণে হোয়াটসঅ্যাপের সব ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঝুঁকিতে ছিলেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

গবেষকদের তথ্যমতে, হোয়াটসঅ্যাপের কন্ট্যাক্ট ডিসকভারি ফিচারের সার্চ ব্যবস্থায় কোনো সীমা নির্ধারণ করা নেই। সাধারণত এই ফিচার ফোনের কন্ট্যাক্ট তালিকা স্ক্যান করে জানায়, কারা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন। ফলে গবেষণা চলাকালে কন্ট্যাক্ট ডিসকভারি ফিচারের সার্চ ব্যবস্থার ত্রুটি কাজে লাগিয়ে ২৪৫টি দেশের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে থাকা তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপে সন্ধান পাওয়া কারিগরি ত্রুটিটির বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান গ্যাব্রিয়েল গেগেনহুবার বলেন, ‘একটি উৎস থেকে এত বড় সংখ্যক অনুরোধ গ্রহণ করা স্বাভাবিক নয়। এই অস্বাভাবিক আচরণই ত্রুটিটি প্রকাশ করেছে এবং আমাদের প্রায় অসীম সংখ্যক অনুরোধ পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছে।’ গবেষক দলের সদস্য আলইওশা ইউডমায়ার বলেন, ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তি বার্তার বিষয়বস্তু সুরক্ষিত রাখে, কিন্তু মেটাডেটা সব সময় সুরক্ষিত থাকে না। বিপুল পরিমাণ মেটাডেটা বিশ্লেষণ করলেই গোপনীয়তার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আমাদের গবেষণা এটা পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে।’

গবেষকদের কাছ থেকে জানার পর দ্রুত কারিগরি ত্রুটিটির সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মেটা। এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহসভাপতি নীতীন গুপ্ত জানিয়েছেন, ‘বাগ বাউন্টি কর্মসূচির আওতায় গবেষকেরা দায়িত্বশীলভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের দেখানো নতুন কৌশল আমাদের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে কিছু তথ্য স্ক্র্যাপ করতে সহায়তা করেছে। আমরা যে অ্যান্টি–স্ক্র্যাপিং ব্যবস্থা চালু করেছি, এই গবেষণা তা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই ত্রুটির কারণে ব্যবহারকারীদের আদান–প্রদান করা বার্তায় ব্যবহৃত এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’

সূত্র: ডেইলি মেইল

সম্পর্কিত নিবন্ধ