জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রাহকেরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও এই কর্মসূচি চলছিল। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এই ঘেরাও কর্মসূচি তাঁরা চালিয়ে যাবেন।

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এটা প্রায়ই হচ্ছে। সেবাগ্রহীতারা কোনো অফিসে ঢুকতে পারছে না। এতে সেবাগ্রহীতাসহ আমরাও ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এতে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এক বছর ধরে এই ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।

ভুক্তভোগীরা জানান, তাঁরা লাভের আশায় কষ্টার্জিত অর্থ সমবায় সমিতি নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। তবে এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বেলা ১১টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভুক্তভোগীরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তাঁরা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয়টি ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে ভুক্তভোগীরা প্রতিটি অফিসে ঢুকে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বাইরে বের হওয়ার আহ্বান করেন। তাঁরা আন্দোলনকারীদের আহ্বানে বাইরে চলে যান। এরপর প্রতিটি অফিসের ফটকে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। এতে অফিসগুলোর ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম।

বক্তারা জানান, লাভের আশায় ২৩টি সমবায় সমিতিতে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক টাকা জমা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়েছিলেন তাঁরা। এভাবে জামালপুর থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ভুক্তভোগীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তিন বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সমবায় সমিতির মালিকেরা আত্মগোপনে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীরা মাদারগঞ্জ থানা ও জামালপুরের আদালতে একাধিক মামলা করেছেন। জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমানতের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

হঠাৎ করে আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদের সব কার্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে জানিয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সত্যি কথা, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। তারপরও গত এক বছরে বহু চেষ্টা করা হয়েছে তাঁদের টাকা ফেরতের বিষয়ে। কিন্তু কোথায় জানি গিয়ে সবকিছু আটকে যায়। কিছুতেই কিছু হয় না। এটার কোনো সমাধান আমাদের কাছে নেই। সমিতিগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত। আমরা শুধু নিবন্ধনপ্রক্রিয়া বাতিল করতে পারি। সেটা করলে আবার গ্রাহকেরা আরও ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই নিবন্ধন বাতিল করা যাচ্ছে না। জামালপুরের সব প্রশাসনই এই টাকা উদ্ধারে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।’

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।

আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, কয়েক বছর ধরেই এই আন্দোলন চলছে। সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে প্রশাসন সমিতিগুলোর মালিকপক্ষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তা না হলে এত দিনেও কেন কোনো ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রায়ই গোপনে মালিকপক্ষ ও তাঁদের দালাল নিয়ে সভা করেন। প্রশাসনের ভূমিকা সন্দেহজনক। যে সমবায় এই ঘটনার জন্য দায়ী, সেই সমবায়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাউকে গ্রেপ্তার করছেন না। পুরো প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন গ্রাহকদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা ফেরতের সঠিক নিশ্চয়তা না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম দ রগঞ জ কর মকর ত উদ ধ র গ র হক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আমার বক্তব্য গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে: মির্জা ফখরুল

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবর বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। 

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেছেন, “আজ ১১ নভেম্বর ২০২৫, বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলাধীন সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর শাপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক মতবিনিময় সভায় দেয়া আমার একটি বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আমার বক্তব্যে বলেছি যে, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি করতে চাই না। আওয়ামী লীগের মতো হয়রানিমূলক মামলা করতে চাই না। আমি আমার দেয়া বক্তব্যে আরও বলেছি যে, এই ইউনিয়নে হয়রানিমূলক কোন মামলা হলে আমরা তুলে নিবো। কিন্তু দেশব্যাপী হয়রানিমূলক মামলা দায়ের কিংবা মামলা তুলে নেয়ার বিষয়ে আমি কোন বক্তব্য প্রদান করিনি।”

দেশের জনগণ ও দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল বক্তব্যের বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।

ঢাকা/হিমেল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ