নিউক্লিয়ার বর্জ্য সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে
Published: 11th, November 2025 GMT
একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি থেকে শক্তি সংগ্রহ করা হয়। শক্তিসংগ্রহের পর যে অবশিষ্ট বর্জ্য থাকে, তা লাখ লাখ বছর ধরে তেজস্ক্রিয় থাকে। এই বর্জ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টিকারী উপাদানের মধ্যে একটি আয়োডিন-১২৯ বা আই-১২৯। এটি একটি শক্তিশালী আইসোটোপ, যা সহজে ক্ষয় হয় না। এই উপাদান মানবদেহের মধ্যে বিশেষ করে থাইরয়েডে প্রবেশ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এ কারণেই আই-১২৯ নিউক্লিয়ার বর্জ্য মোকাবিলাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কিছু দেশ বর্জ্যকে মাটির গভীরে পুঁতে রাখে। আবার অন্য অনেক দেশ ফিল্টার করে পরিবেশে ছেড়ে দেয়। ফ্রান্স সরাসরি সমুদ্রে ছেড়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় গবেষণাগার বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে তুলনা করেছে। গবেষকেরা আই-১২৯ পরিবেশে নিঃসরণ করলে কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে তথ্য বের করেছেন।
আই-১২৯ এমন কিছু নয়, যা আমরা দেখতে ও গন্ধ নিতে পারি। অনুভব করা যায় না। আই-১২৯ নিউক্লিয়ার বর্জ্যের একটি বড় সমস্যা। এটি দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকে। আই-১২৯ উপাদানের অর্ধজীবন প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ বছর। আই-১২৯ মাটি ও পানির মধ্য দিয়ে সহজে ভ্রমণ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্জ্য সংরক্ষণ নিরাপত্তা পরিকল্পনায় আই-১২৯ বর্জ্যকে একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা পানিতে আই-১২৯ পরিমাণ প্রতি লিটারে মাত্র ৫ দশমিক ৬৬ ন্যানোগ্রাম পর্যন্ত সীমিত করেছে। যেকোনো তেজস্ক্রিয় উপাদানের জন্য নির্ধারিত সর্বনিম্ন সীমা এটি।
বিভিন্ন দেশে নিউক্লিয়ার বর্জ্য ও পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় ভিন্নতা দেখা যায়। ফ্রান্স তাদের খরচ হয়ে যাওয়া পারমাণবিক জ্বালানি পুনর্ব্যবহার করে। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ১৫৩ কিলোগ্রাম আই-১২৯ সমুদ্রে নিষ্কাশন করা হয়। নিয়ন্ত্রক সীমার মধ্যে থাকলেও গবেষকেরা দেখেছেন, এই পদ্ধতিতে জ্বালানিতে ব্যবহৃত আই-১২৯ উপাদানের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিউক্লিয়ার বর্জ্যকে পাত্রে সিল করে মাটির গভীরে পুঁতে দেওয়া। এ ছাড়া অনেক দেশে আই-১২৯ উপাদানকে অগভীর ভূগর্ভস্থ স্থানে সংরক্ষণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে অনেক ঝুঁকি থাকে। শত শত বছর পরে মানুষ ভুলবশত ভূগর্ভস্থ স্থান খনন করলে আরও ঝুঁকি বাড়বে।
নিউক্লিয়ার বর্জ্য সংরক্ষণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। ভবিষ্যতে কোনো ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। বিজ্ঞানী হারুকো ওয়েনরাইট বলেন, আই-১২৯ সংরক্ষণ জরুরি। কিছু দেশ বিপুল পরিমাণে আই-১২৯ পরিবেশে ছেড়ে দিচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষার ইতিহাসে ১৯৬০ দশক থেকে পারমাণবিক বর্জ্য নিক্ষেপ ও নিঃসরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। বায়ু ও পানিতে বর্জ্য মুক্ত করার কারণে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
সূত্র: আর্থ ডটকম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ দ ন র র বর জ য স রক ষ পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
আচরণবিধি মেনে চলতে প্রার্থী-দলকে দিতে হবে অঙ্গীকারনামা: ইসি সচিব
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) থেকে সংলাপ শুরু করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই সঙ্গে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে পোস্টার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল উভয়কেই আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকারনামা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সাংবাদিকদের কাছে সীমানা সংক্রান্ত মামলা, আচরণবিধির পরিবর্তন এবং গণভোট নিয়ে কমিশনের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।
আরো পড়ুন:
যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য ছাব্বিশে নির্বাচন নাই: জামায়াত আমির
নির্বাচন পেছালে দায়ী থাকবে বিএনপি-জামায়াত: নাসীরুদ্দীন
ইসি সচিব জানান, আচরণবিধি প্রকাশের জন্য কমিশন অপেক্ষা করছিল। আচরণবিধি হাতে পাওয়ায় এখন ১৩ নভেম্বর থেকে সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সংলাপে আরপিও এবং আচরণবিধির পরিবর্তনগুলো, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চাওয়া এবং তাদের নিজস্ব প্রস্তাব বা মতামত শোনা হবে।
আখতার আহমেদ বলেন, “সংলাপে পর্যায়ক্রমে সব নিবন্ধিত দলকেই ডাকা হবে। ১৩ নভেম্বর কোন দলগুলোকে ডাকা হবে, সে বিষয়ে দ্রুতই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
সচিব বলেন, “আমরা আশা করি সব রাজনৈতিক দল ইতিবাচক সাড়া দেবে। আমরা চাই, এই মাসের মধ্যেই সংলাপসহ নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের কার্যক্রম শেষ করতে।”
নির্বাচন কমিশন সচিব সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রকাশিত আচরণবিধির মৌলিক পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেন।
আখতার আহমেদ জানান, এবার থেকে পোস্টার পুরোপুরি নিষিদ্ধ, কোনো প্লাস্টিকজাতীয় উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না। তবে নির্দিষ্ট আকার-আকৃতির ফেস্টুন ও লিফলেট বিতরণ করা যাবে। এছাড়া কোনো প্রার্থী রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে প্রার্থী ও দল উভয়কেই আচরণবিধি ও প্রাসঙ্গিক আইন মেনে চলার অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এককভাবে এই অঙ্গীকারনামা দেবেন।
সচিব জানান, ৪৪ ধারা অনুযায়ী একটি নির্বাচনী সময়ে সহায়ক হিসেবে তিনটির অধিক মাইক্রোফোন ব্যবহার করা যাবে না–এই সীমা বহাল রয়েছে। একটি নির্বাচনী এলাকা বা জনসভায় একসঙ্গে তিনটির বেশি মাইক্রোফোন ব্যবহার করা যাবে না। তবে একজন প্রার্থী যদি একাধিক সভা করেন, প্রতিটি সভায় আলাদাভাবে তিনটি করে ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ব্যবহার করা যাবে নির্দিষ্ট সীমায়। তবে কোনো প্রচারণায় এমন স্থাপনা তৈরি করা যাবে না, যা চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন বা সচিবালয় পর্যায়ে এখনো পর্যন্ত গণভোট নিয়ে কোনো নির্দেশনা বা আলোচনা হয়নি। কমিশনের অবস্থান অপরিবর্তিত, এ বিষয়ে এখনো কোনো কার্যক্রম নেই। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ইতোমধ্যে একটি মতবিনিময় সভা করা হয়েছে এবং এই মাসের শেষে অগ্রগতি যাচাই করার জন্য আরেকটি পর্যালোচনা সভা করা হবে।”
এছাড়া লাঙ্গল প্রতীকের দাবির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, সিদ্ধান্ত হলে জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন সচিব।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ