বিএনপি কোনো প্রতিশোধের রাজনীতি করতে চায় না বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে মামলা করেছে, আমরা সেভাবে মামলা করতে চাই না। যদি মামলা হয়ে থাকে, তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সমস্ত মামলা তুলে নেওয়া হবে।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের শাপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এদিকে এই বক্তব্য দেওয়ার পর সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে স্বাক্ষর করেছেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মো.

তাইফুল ইসলাম।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আজ ১১ নভেম্বর বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর শাপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক মতবিনিময় সভায় দেওয়া আমার একটি বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আমার বক্তব্যে বলেছি যে, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি করতে চাই না। আওয়ামী লীগের মতো হয়রানিমূলক মামলা করতে চাই না। আমি আমার দেওয়া বক্তব্যে আরও বলেছি যে, এই ইউনিয়নে হয়রানিমূলক কোনো মামলা হলে, আমরা তুলে নিব। কিন্তু দেশব্যাপী হয়রানিমূলক মামলা দায়ের কিংবা মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আমি কোনো বক্তব্য প্রদান করিনি। দেশের জনগণ ও দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল বক্তব্যের বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

এর আগে মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৫টা বছর ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের খুব একটা মিছিল-মিটিং করতে দেয়নি। আপনাদের কাছে আসতেও দেয়নি। উল্টো আরও মামলা-মকদ্দমা করে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যারা বিএনপির কাজ করে তারা ভয় পেয়ে ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। আমরা এখন সেই অবস্থাটা পার হয়ে গেছি।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সেই কথা আবার বলতে চাই, আমরা কোনো প্রতিশোধের রাজনীতি করতে চাই না। আওয়ামী লীগ যেভাবে মামলা করেছে, আমরা সেভাবে মামলা করতে চাই না। যদি মামলা হয়ে থাকে, তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সমস্ত মামলা তুলে নেওয়া হবে। যত মামলা আছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, আমরা সমস্ত মামলা তুলে নেব। আমরা একটা ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, সম্পৃতি নিয়ে চলতে চাই।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শান্তির রাজনীতি করতে চাই। আমরা বাংলাদেশে শান্তি দেখতে চাই। দেশে আর অশান্তি চাই না। সেই কারণে আমরা নির্বাচন চেয়েছি। এই সরকারটা সকলের সরকার। এটাকে বলছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অর্থাৎ নির্বাচন করে তারা জনগণের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাবে। এক বছরের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে সরকার একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।’

মতবিনিময় সভায় জামায়াতের পিআরের দাবি নিয়ে সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে অশান্তি চাই না। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একটা রাজনৈতিক দল, আমি নামটাই বলি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ; তারা আরও চার-পাঁচটা দল নিয়ে জবরদস্তি করতে চাচ্ছে জনগণের ওপরে। তারা জবরদস্তিমূলকভাবে সরকারকে বাধ্য করতে চাচ্ছে যে তাদের দাবিটা মানতেই হবে। কী দাবি? দাবিটা হচ্ছে ওদের পিআর লাগবে, পিআর। পিআর বোঝেন কেউ? মুইতো বুঝুনা বা। ইংরেজিতে বলে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন, কঠিন শব্দ। আর বাংলাতে বলতেছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, এটা আরও কঠিন। তারা এমন একটা সিস্টেম গড়তে চায়, যে সিস্টেমে আমরা পরিচিত না।’

আরও পড়ুনজামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল১০ নভেম্বর ২০২৫

মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা তো জানি এক ব্যক্তির এক ভোট। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। কিন্তু তারা বলছে না, আমার দলটাকে দিতে হবে। আর দল ঠিক করবে কোন আসনে কে এমপি হবে। ভোট দিবেন এখানে, আর এমপি হবে ঢাকায়? এই সিস্টেম কি আমরা মেনে নিতে পারি? সেই কারণে আমরা বলেছি, আমরা ওই সিস্টেম মানি না। আবার তারা বলছে, গণভোট সংসদ নির্বাচনের আগে হতে হবে। কিন্তু আমরা বলছি, হ্যাঁ–না ভোট আর এমপির ভোট একই দিন হতে হবে।’

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি হিন্দু ভাইবোনদের বলতে চাই, আপনারা সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। এই আতঙ্কে আর থাকবেন না। আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতে থাকব। পূজার সময় দেখেছেন আমাদের নেতা-কর্মীরা কীভাবে আপনাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সব একসঙ্গে, একজোট হয়ে এখানে বাস করব। আমরা এখানে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করতে দেব না।’

মতবিনিময় সভায় জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আল মামুন আলম, জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সাল আমিন, সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলীসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনভোট হলে তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না: জামায়াতকে নিয়ে মির্জা ফখরুল৪ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফখর ল ইসল ম র র জন ত ব এনপ র আপন দ র আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বন্দ্ব নয় কামনার দাগ

গানের ছবি

দুটো শূন্য রাস্তা পাশাপাশি শুয়ে আছে
তবু এক নিবিড় দূরত্ব
অমাবস্যা রঙে মৃত্তিকার উর্বী ইন্দুর মতন
ঘরের খিলান ভেঙে স্রোত
ঢুকে পড়া নদী
তারা যেন স্বপ্নহীন শঙ্খ
দিনহীন রাত
বস্তুত সর্পিল কোনো পবিত্রতামগ্ন
দ্বন্দ্ব নয় কামনার দাগ
প্রতীতির মতো ক্রমবিবর্তিত ব্যথার প্রকাশে
উথিত মথের মতো বিবসনে আছে
রক্তের ফেনিল ঢেউ চেনেনি বালিকা
দেখেনি চশমা গলে পড়া টনটনে মৃগনাভি
পোমোদোরো খেলা ঈশ্বরের প্রেম চিহ্ন ভালোবাসা
হেমন্তের আহ্বানে তাই বুক ভরেনি নদীর
পুরোনো নাব্যতা জলে ফলে রঙিন সকালে
এখনো আশ্বিনের হয়নি ভাসান
বালিকার বুক ভরে আছে ভুলের সুধায়…

প্রথম প্রেমের কবিতা

তোমার জন্য দূরের দেশে একলা আমি পাখির বেশে
তোমার জন্য পথের দাবি দারুণ ক্রোধে বুকের বিষে
তোমার জন্য ক্রনিক ব্যথা বিরস বাজে বুকের মাঝে
তোমার জন্য সকাল-দুপুর গল্প সাজাই চোখের ভাঁজে
তোমার জন্য নিদাঘ রাখি জমাই টাকা হাতের কোষে
তোমার জন্য স্বপ্নগুলো যাচ্ছে ফুটে দারুণ জোশে
তোমার জন্য একটা পুকুর কিনব এবার মাঘের শেষে
তোমার জন্য জমির দলিল রাখব তুলে ফুলতোশকে
তোমার জন্য ঘর সাজাব তুলতুলে ঘুম রাখব তুলে
তোমার জন্য গোপন কুসুম ফল ধরাবে বেদন ভুলে।

পাখি বৃত্তান্ত

পাখিটির বাসা ছিল উঠানের জলপাইগাছে
মাধবীলতার মতো বেদনার নীল ছিল ঠোঁটে
গান শুনে রোজ প্রভাতের ঘুম হয়েছে রচনা
অথচ আগেই চোখ ছিল তার রঙিন বসনে;
প্রতিবার ভুল করে শূন্য হাতে শিকারির দল
যেভাবে মানিয়ে নেয় শহরের ফ্যানের বাতাসে
বাকি থাকা খরচের খাতে জীবনের কিছু ভুল
অন্যভাবে না হলেও এভাবেই রোজ মিশে থাকে।
অভিনেতা নই, আলো জ্বেলে ভুল কখনো খুঁজিনি
পৃথিবী দেয়নি অধিকার সবকিছু পাওয়ার
একাকার যার বুকে সুখ খুঁজে নেবে সে একাকী
দেখেছি সেদিন তাকে, ম্লান চোখে হয়েছি ফেরার;
কোনো দোষ নেই তার, দোষ নেই ভাগ্যদেবতার
ততটা ছাড়তে হয়, যতটুকু যার হারাবার।

মেটামরফোসিস

শ্রাবণ প্রহর মাথিময় হয়ে উঠেছে কি দেখো
বাস্তবে শ্রুশ্রুষা দেয় যে প্রহরে তাকে লাগে ভালো
প্রহর কখনো জলে সাজায় না আলোর বরাখ
আনত মিছিল শেষে যদি মন পোড়ে তুমি ভাবো;
সাধের পরাগ তার নিদারুণ সংকটের কালে
চাঁদের তিলক মেখে চোখে তোলে দুধের বলক
মুখের মেকআপ তার ভেসে যায় শহরের জলে
কবিতায় ফোটে সব সকরুণ সুখের সনক;
কবির হৃদয়ে মৃত্যু বারবার দিয়ে যায় নাড়া
আহত সাপের মতো বিষাক্ততা নেই তবু তার
প্রেমিকার তিল দিয়ে সাজায় সে কথার মহড়া
দীনতা নিয়তি তার আর্তিভরা শোকের বাহার।
সঞ্চয় রাখে না কবি জমা করে লাল অভিমান,
প্রিয়তম, প্রেম কোনো দিন তার হয় না আপন।

একটি অরাজনৈতিক কবিতা

লাল-নীল চাপা খোলা বিহঙ্গ বিতস্তা জমেছে বাকির খাতায়
ফুটেছে ফুল পুষ্প বৃক্ষের মতো
নেবে বালিকা, জলডোরা খেলা জলজ রাত্রির সহজ সে ফুল?
কত অস্ত্র টলটলে অস্ফুট অশ্রুত কাঁঠালের কোয়ার মতন
দিবারাত্রিজুড়ে কোয়ান্টাম খেলে কাচপোকা
সশব্দ গরুর গাড়ি হেঁটে যায় মেঘের ওপর
শরীরের মদ ছুঁয়ে নিথর শূন্যতা
নেবে বালিকা, বাহুডোর খোলা সুবর্ণ সন্ধ্যার ফুল?
হাতে মন্ত্রের কেকা মুকুলের ছি! ছি! ধী ধী মাতম
গ্রীবা ছুঁয়ে নেমে আসে সাপ
ফুল নেবে বালিকা, ছোঁয়াবে ঠোঁটের উষ্ণ আগুনে?

সম্পর্কিত নিবন্ধ