আনন্দ মোহন কলেজে সিট বরাদ্দ নিয়ে সংঘর্ষ, হল বন্ধ
Published: 13th, January 2025 GMT
ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে হলের সিট বরাদ্দের নবায়ন নিয়ে দুই দল শিক্ষার্থীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী তিন দিন কলেজের পাঠদান কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) রাত পৌনে ৮টার দিকে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ। তিন দিন পাঠদান বন্ধ থাকলেও পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা চলবে এবং মেয়েরা হলে থাকবে বলে জানান অধ্যক্ষ।
সংঘর্ষের বিষয়ে হল সুপার শাহজাহান করিম বলেন, হলের সিট বরাদ্দের নবায়ন নিয়ে আবাসিকের সঙ্গে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিন বিকেল ৫টা থেকে শুরু হওয়া ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি সফিকুল ইসলাম খান জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলার সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, হলের শিক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষকে ক্ষমা চাইতে বলে অপমান করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। অবিলম্বে হলে থাকা ছাত্রলীগের দোসর ও সহযোগীদের বের করতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ম অনুযায়ী হলের সিট বরাদ্দ দিতে হবে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদলকে জড়িয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন আনন্দ মোহন কলেজ, জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতারা।
এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দাউদ রায়হান ও মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহম্মেদ রবিন জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে। কিন্তু একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রদলকে জড়িয়ে অপপ্রচার করছে। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’