‘মার্চ ফর ফেলানী’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয় সারজিস আলম বলেছেন, আর যদি আমার কোনো ভাই বা বোনের লাশ সীমান্তের তারকাঁটায় ঝুলে থাকে তাহলে সেই কাঁটাতার লক্ষ্য করে আজকের মার্চ ফর ফেলানীর মতো লংমার্চ করা হবে। আর যদি পরবর্তীতে আমাদের সেই মার্চ তারকাঁটাকে উদ্দেশ্য করে হয় তাহলে আমাদের লক্ষ্য- তাঁরকাটাকে ভেদ করে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর যাবে। সীমান্তে লাশ দেখলে সীমান্ত (তারকাঁটার বেড়া) ভেঙে দেব।

লংমার্চটি সকাল ১১টায় কুড়িগ্রাম জেলা শহরের কলেজ মোড় থেকে শুরু হয়। লংমার্চ শেষ হবে কুড়িগ্রামের নাগশ্বরী উপজেলা রামখানা ইউনিযনের নাখারগন্জ গ্রামে ফেলানীর বাড়িতে। লংমার্চে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশকে একটি কথাই বলতে চাই, এই যে সীমান্ত হত্যা, তারকাঁটা দেওয়ার নামে জোর করে বাধা দেওয়ার জন্য যে প্রয়াস তা রুখে দেওয়ার জন্য নতুন করে যে অভ্যুথান হয়েছে এই অভ্যুথানের স্ফুলিং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানী থেকে বলতে চাই, আমরা বাংলাদেশের সীমান্তে কোনো লাশ দেখতে চাই না। বাংলাদেশের যত নাগরিক সীমান্তে লাশ হয়েছে তার বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করতে হবে।’

সারজিস আলম বলেন, ‘ছাত্রজনতা আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ দিয়েছে সেই চাত্র জনতা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি মেনে নেবে না। আগামীতে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যদি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য কোনো দেশের দালাল হয় তাহলে তাদের পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে।’

লং মার্চের শুরুতে ফেলানী হত্যাসহ সীমান্তে সকল নাগরিক হত্যার বিচার, সীমান্তে মরণঘাতী অস্ত্র বন্ধ, শহীদ ফেলানীর নামে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের নামকরণ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাতিল করে সাম্যের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ এবং কুড়িগ্রামের চরের জীবন-জীবিকা উন্নয়নে নদী সংস্কারের ৫ দফা দাবি জানান তিনি।

লং মার্চে আরও উপস্থিত রয়েছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক ড.

আতিক মুজাহিদ, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক জাহিদ আহসান, সমন্বয়ক রকিব মাসুদসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা। লংমার্চে ফেলানীর বাবা নুর ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। লংমার্চ শেষে নাগেশ্বরীর নাখারগঞ্জ বাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণসহ ৯ বিষয়ে সুপারিশের জন্য নতুন উপদেষ্টা কমিটি

বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণসহ ৯ বিষয়ে সুপারিশের জন্য ১১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশিদের বিদেশে নিয়োগ–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই প্রজ্ঞাপনে ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল জারি হওয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটিতে ১১ জন উপদেষ্টা রয়েছেন। তাঁরা হলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আগের সরকারের একই কমিটি ছিল ১৩ সদস্যের।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, অর্থসচিবসহ ১৬ জন সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হচ্ছেন কমিটির সহায়তাদানকারী কর্মকর্তা। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী বৈঠক করবে এবং চাইলে নতুন সদস্য যুক্ত করতে পারবে।

কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে বিদেশে জনশক্তি নিয়োগসংক্রান্ত কাজের সমন্বয়, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণের দিকনির্দেশনা, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অভিবাসী কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণ, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দক্ষতা উন্নয়ন, বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো ইত্যাদি ৯ ধরনের বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করা। ২০২৪ সালের কার্য পরিধি যা ছিল, গতকালের কার্যপরিধিও একই। দুই কার্যপরিধিতে দাঁড়ি, কমা ও সেমিকোলনের কোনো পরিবর্তন নেই।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিদেশে তিন লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান কমে গেছে। কারণ, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান—এ তিন শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। বড়দের মধ্যে টিকে আছে শুধু সৌদি আরবের শ্রমবাজার।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, করোনা চলাকালীন ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার কর্মী। ২০২২ সালে গেছেন ১১ লাখের বেশি। ২০২৩ সালে গেছেন আরও বেশি অর্থাৎ ১৩ লাখ। তবে ২০২৪ সালে ৩ লাখ কমে ১০ লাখে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই গেছেন ৫ দেশে। এগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ ২০২৪ সালের জুন থেকে। ওমানে ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন যেখানে সোয়া লাখের বেশি, ২০২৪ সালে গিয়েছেন মোটে ৩৫৮ জন। একই অবস্থা সংযুক্ত আমিরাতেও। এ দেশে ২০২৩ সালে কর্মী গিয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ, আর ২০২৪ সালে গেছেন অর্ধেকের কম অর্থাৎ ৪৭ হাজার। তবে সৌদি আরবে ২০২৩ সালে প্রায় ৫ লাখ কর্মী গেলেও ২০২৪ সালে গেছেন সোয়া ৬ লাখ।

সূত্রগুলো জানায়, সরকারিভাবে ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠানোর দাবি করা হলেও ২০২৪ সালে ১৩৫টি দেশে কর্মী গেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ দেশে কর্মী গেছেন নামমাত্র। যেমন ১৪টি দেশে কর্মী গেছেন একজন করে। ১৪টি দেশে গেছেন দুজন করে। ১০ হাজার কর্মী গেছেন, এমন দেশ ৮টি। আর লাখের বেশি কর্মী পাঠানো দেশ শুধু সৌদি আরব।

কমিটির নাম ‘বাংলাদেশিদের বিদেশে নিয়োগসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ রাখা হলো কেন এবং ‘নিয়োগ’ শব্দটিই রাখার উদ্দেশ্য কী—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, নিয়োগের বদলে এটা হওয়া উচিত ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’। কিন্তু মন্ত্রীদের বদলে উপদেষ্টাদের নাম বসানো ছাড়া আগের প্রজ্ঞাপন থেকে হুবহু সব নেওয়ার কারণে ঘটনাটি এমন হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ